Thikana News
১৯ অক্টোবর ২০২৪
  1. ই-পেপার
  2. চলতি সংখ্যা
  3. বিশেষ সংখ্যা
  4. প্রধান সংবাদ
  5. আমেরিকার অন্দরে
  6. বিশ্বচরাচর
আমেরিকা শনিবার, ১৯ অক্টোবর ২০২৪


 

সর্বোচ্চ উচ্চতায় বিজেপি আওয়ামী লীগ সম্পর্ক

সর্বোচ্চ উচ্চতায় বিজেপি আওয়ামী লীগ সম্পর্ক ড. মো. আব্দুর রাজ্জাক ও বিজেপি’র সভাপতি জেপি নাড্ডা


আওয়ামী লীগ সরকারের সঙ্গে ভারত সরকারের সম্পর্ক সব সময়ই ভালো। বাংলাদেশের ক্ষমতাসীন দল আওয়ামী লীগের সঙ্গে যুগের পর যুগ সুসম্পর্ক রয়েছে ভারতের বর্তমান প্রধান বিরোধী দল কংগ্রেসের। যেখানে আওয়ামী লীগ-কংগ্রেস সম্পর্ক অর্ধশতাব্দীরও বেশি, সেখানে কংগ্রেসের প্রতিপক্ষ হিসেবে ভারতীয় জনতা পার্টির (বিজেপি) সঙ্গে আওয়ামী লীগের দূরত্ব হওয়ার কথা।     
কিন্তু বাস্তবে তা হয়নি, বরং কংগ্রেস ও বিজেপি উভয়ের সঙ্গে সমান্তরাল সুসম্পর্ক বজায় রেখে চলছে শেখ হাসিনার নেতৃত্বাধীন আওয়ামী লীগ। বাংলাদেশের জাতীয় নির্বাচনের আগে আওয়ামী লীগের পাঁচ সদস্যের উচ্চপর্যায়ের প্রতিনিধিদল ভারত সফর করে দেশে ফিরেছে। এ সফর নিয়ে দেশের রাজনৈতিক মহলে বেশ আগ্রহসহ চলছে নানা ব্যাখ্যা-বিশ্লেষণ। দুই দেশের বিশ্লেষকেরা এ নিয়ে নানা বিশ্লেষণও করছেন। আওয়ামী লীগের প্রতিনিধিদল ভারতীয় জনতা পার্টির শীর্ষ দুই নেতা, দেশটির পররাষ্ট্রমন্ত্রীসহ শীর্ষ বেশ কয়েকজন মন্ত্রীর সঙ্গে বৈঠকের পর দুই দলের পক্ষ থেকেই বলা হয় সম্পর্কটা অনেক উঁচুতে। অতীতের সব সময়ের চেয়ে গভীর। ফলে একে আওয়ামী লীগের রাজনৈতিক দূরদর্শিতা বলছেন অনেকেই।
ভারত সফরে আওয়ামী লীগ প্রতিনিধিদলের নেতৃত্ব দেন দলটির সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য কৃষিমন্ত্রী ড. আব্দুর রাজ্জাক। সঙ্গে ছিলেন দলটির যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক তথ্য ও সম্প্রচারমন্ত্রী ড. হাছান মাহমুদ, সাংগঠনিক সম্পাদক সুজিত রায় নন্দী, কেন্দ্রীয় কার্যনির্বাহী সংসদের সদস্য মেরিনা জাহান কবিতা এবং সংরক্ষিত নারী আসনের সংসদ সদস্য আরমা দত্ত। ৯ আগস্ট রাতে তারা ঢাকায় ফেরেন। ভারত সফর শেষে ১০ আগস্ট আওয়ামী লীগ সভাপতির ধানমন্ডিস্থ রাজনৈতিক কার্যালয়ে এক সংবাদ সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয় প্রতিনিধিদলের পক্ষ থেকে। ওই প্রতিনিধিদলের প্রধান কৃষিমন্ত্রী ও আওয়ামী লীগ সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য ড. আব্দুর রাজ্জাক সংবাদ সম্মেলনে জানান, ভারতের সঙ্গে তার দলের সম্পর্ক অনেক উঁচুতে। দ্বিপক্ষীয় সফরের মাধ্যমে এ সম্পর্ক আরও মজবুত হয়েছে। দেশটির প্রধানমন্ত্রী লিখিত বক্তব্যে বলেছেন, দুই দেশ সম্পর্কের সোনালি অধ্যায় পার করছে।
ভারত সফর নিয়ে বিস্তারিত বর্ণনায় আব্দুর রাজ্জাক জানান, ভারতীয় জনতা পার্টির আমন্ত্রণে বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের পাঁচ সদস্যবিশিষ্ট একটি প্রতিনিধিদল গত ৬ থেকে ৯ আগস্ট পর্যন্ত ভারত সফর করে। ৬ আগস্ট আওয়ামী লীগ প্রতিনিধিদল ভারতের দিল্লিতে পৌঁছায় এবং ৭ ও ৮ আগস্ট বিভিন্ন কর্মসূচিতে অংশগ্রহণ ও বিজেপি নেতৃবৃন্দ এবং ভারত সরকারের গুরুত্বপূর্ণ মন্ত্রীদের সঙ্গে বৈঠকে মিলিত হয়। তিনি আরও বলেন, ৭ আগস্ট সকালে ভারতীয় জনতা পার্টির প্রেসিডেন্ট জগত প্রকাশ নাড্ডার সঙ্গে তার বাসভবনে এক বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়। অত্যন্ত আন্তরিকতাপূর্ণ বৈঠকে দ্বিপাক্ষিক ও বহুপাক্ষিক বিষয়ের মধ্যে রাজনৈতিক স্থিতিশীলতা, জঙ্গিবাদ দমন ও আঞ্চলিক সহযোগিতার ওপর গুরুত্ব আরোপ করা হয়। বিজেপির প্রেসিডেন্ট জেপি নাড্ডা বলেন, তার দল এ অঞ্চলে রাজনৈতিক স্থিতিশীলতা ও সন্ত্রাস দমনের স্বার্থে অতীতের মতো আগামীতেও আওয়ামী লীগের সঙ্গে কাজ করতে আগ্রহী। ওইদিন দুপুরে বিজেপির প্রধান কার্যালয়ে বিজেপির জেনারেল সেক্রেটারি বিনোদ তড়ের সঙ্গে বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়। ওই বৈঠকে বিনোদ তড়ে বলেন, ভারত ও বাংলাদেশের বর্তমান বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক অতীতের যেকোনো সময়ের চেয়ে সর্বোচ্চ পর্যায়ে রয়েছে। আমাদের দুই বন্ধুপ্রতিম দল এ সম্পর্ক অটুট রাখতে কাজ করে যাবে। একই দিন বিকেলে ভারতের পার্লামেন্টে পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. জয়শঙ্করের সঙ্গে তার দপ্তরে বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়। বৈঠকে ড. জয়শঙ্কর বলেন, ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি ও বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার আমলে দুই দেশের মধুর সম্পর্ক যেকোনো সময়ের চেয়ে বেশি উচ্চতায়।
৮ আগস্ট ভারতের পার্লামেন্টের লিডার অব দ্য আপার হাউস (রাজ্যসভা) ও বাণিজ্যমন্ত্রী পীযূষ গয়াল এবং ভারতে জি-২০ সম্মেলনের কো-অর্ডিনেটর ও ভারতের সাবেক পররাষ্ট্রসচিব হর্ষবর্ধন শ্রিংলার সঙ্গে বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়। রাজ্যসভায় বিজেপির দলনেতা পীযূষ গয়াল বৈঠকে আশা প্রকাশ করেন, এ অঞ্চলের রাজনৈতিক স্থিতিশীলতার মাধ্যমে বাংলাদেশের অগ্রগতি ও সমৃদ্ধি অব্যাহত থাকবে। তিনি আরও বলেন, খাদ্যশস্য রপ্তানিতে নিষেধাজ্ঞার কারণে বাংলাদেশ যাতে কোনোভাবেই ক্ষতিগ্রস্ত না হয়, সে বিষয়টি ভারত সক্রিয়ভাবে বিবেচনা করবে। একইসঙ্গে ভারত যাতে বাংলাদেশ থেকে আরও পণ্য আমদানি করতে পারে, সে জন্য তিনি আওয়ামী লীগ প্রতিনিধিদলের কাছ থেকে সক্রিয় সহযোগিতা প্রত্যাশা করেন এবং বাংলাদেশের রপ্তানিযোগ্য পণ্যের তালিকা প্রস্তাবের অনুরোধ জানান।
বিশ্বের শীর্ষ অর্থনীতির দেশগুলোর জি-২০ ফোরামের ভারতের কো-অর্ডিনেটর হর্ষবর্ধন শ্রিংলার সঙ্গে অনুষ্ঠিত পৃথক বৈঠকে তিনি আগামী ৯-১০ সেপ্টেম্বর ভারতে অনুষ্ঠিতব্য জি-২০ সম্মেলনে বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে আমন্ত্রণের বিষয়টি উল্লেখ করেন। এ ছাড়া আওয়ামী লীগের প্রতিনিধিদল ভারত সফরকালে বিজেপির মহিলা সংগঠন মহিলা মোর্চা, যুব সংগঠন যুব মোর্চা, বিজেপির আন্তর্জাতিক বিষয়ক কমিটি ও ভারতীয় গণমাধ্যমের সঙ্গে মতবিনিময় করে। প্রতিনিধিদলের সদস্যরা নয়াদিল্লির ওয়ার মিউজিয়ামও পরিদর্শন করেন।
আওয়ামী লীগ প্রতিনিধিদল যখন ভারতে, তখন জার্মানভিত্তিক প্রভাবশালী একটি সংবাদমাধ্যম বলেছে, ‘শেখ হাসিনার পাশেই দাঁড়াল বিজেপি।’ অর্থাৎ ওই সংবাদমাধ্যমটি বলতে চাচ্ছে, সাম্প্রতিক ওই সফরের বার্তা হচ্ছে  আওয়ামী লীগের পাশে যে বিজেপি রয়েছে, তা ভোটের আগে বুঝিয়ে দেওয়া। আন্তর্জাতিক সংবাদমাধ্যমগুলো বলছে, আর ক’মাস পরই বাংলাদেশের সাধারণ নির্বাচন। এই পরিস্থিতিতে বিজেপির সদর দপ্তরে এসে আওয়ামী লীগ নেতাদের বিজেপির প্রধান জেপি নাড্ডার সঙ্গে আলোচনা খুবই তাৎপর্যপূর্ণ। বিশেষজ্ঞদের মতে, এতে একটি বার্তা স্পষ্ট, ভোটের আগে বিজেপি পুরোপুরি আওয়ামী লীগের পাশে আছে।
আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিশ্লেষক ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিভাগের অধ্যাপক ড. ইমতিয়াজ আহমেদ বলেন, আঞ্চলিক নিরাপত্তার বিষয়টি ভারতের কাছে খুবই গুরুত্বপূর্ণ। এই নিরাপত্তার বিষয়ে ভারতকে নিশ্চিন্ত থাকতে সহযোগিতা করেছে শেখ হাসিনা সরকার। এটা ভারত সব সময়ই মনে রাখে। তিনি মনে করেন, এ সফরে রাজনৈতিক বিষয়ের চেয়ে জঙ্গি দমন ও আঞ্চলিক নিরাপত্তার বিষয়টিই বেশি গুরুত্ব পায়।
ভারতের প্রবীণ সাংবাদিক শুভাশীস মৈত্র মনে করেন, ভারত যে বংলাদেশে আওয়ামী লীগ সরকার চায়, এটা তো ওপেন সিক্রেট। একটি আন্তর্জাতিক সংবাদমাধ্যমকে তিনি বলেন, আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় না থাকলে পাকিস্তানের সঙ্গে বাংলাদেশের সম্পর্ক আরও ঘনিষ্ঠ হতে পারে। যেটা ভারত একেবারেই চায় না। তাই আওয়ামী লীগের সঙ্গে বিজেপি যে সম্পর্ক আরও ঘনিষ্ঠ করতে চাইবে, ভোটের আগে শেখ হাসিনার দলের পাশে থাকবে-সেটাই স্বাভাবিক।
ভারতের আরেক প্রবীণ সাংবাদিক জয়ন্ত ভট্টাচার্যও মনে করেন, বাংলাদেশে ভোটের আগে স্পষ্ট বার্তা দিল বিজেপি। বার্তাটা হলো বিজেপি আওয়ামী লীগের পাশে আছে। শেখ হাসিনাকেই তারা পরবর্তী প্রধানমন্ত্রী হিসেবে দেখতে চায়।
 

কমেন্ট বক্স