Thikana News
২৫ এপ্রিল ২০২৫
  1. ই-পেপার
  2. চলতি সংখ্যা
  3. বিশেষ সংখ্যা
  4. প্রধান সংবাদ
  5. আমেরিকার অন্দরে
  6. বিশ্বচরাচর
আমেরিকা শুক্রবার, ২৫ এপ্রিল ২০২৫
মুজিবনগরে যাননি মুজিব ►১৭ মে হাসিনার প্রত্যাবর্তন দাবি উত্তাল ভারত 💣 ইউনূসের প্রতি বিজেপি’র বার্তা-

আগে নির্বাচন পরে ট্রান্সশিপমেন্ট

আগে নির্বাচন পরে ট্রান্সশিপমেন্ট সংগৃহীত
গত ১৪ এপ্রিল ছিলো পয়লা বৈশাখ-এর মহোৎসব। সারা বাংলাদেশে সৌহার্দ্য-সাম্প্রীতিতে উদযাপিত হয়। তেমন সহিংস ঘটনা রেকর্ডে নেই। কিন্তু প্রতিবেশী দেশ ভারতে উত্তাল পরিস্থিতি। হিন্দু বনাম মুসলিম এবং বিজেপি বনাম বাঙালি সহিংসতা। মুসলিমদের ধর্মীয় ওয়াকফ সম্পত্তির দখল নিয়ে দাঙ্গা। অন্যদিকে মন্দির সংলগ্ন মাছবাজার নিয়ে বিজেপি-বাঙালি লড়াই। দিাল্লর বিখ্যাত চিত্তরঞ্জন পার্কে অচল পরিস্থিতি। পয়লা বৈশাখের ইলিশ বা অন্যান্য মাছ পায়নি ক্রেতারা। কলকাতাসহ অসংখ্য শহরে খোলা মাছ-মাংস বিক্রিতে নিষেধাজ্ঞা। ফলে স্ট্রিট ফুডের আমিষ আইটেমের দোকানগুলো স্তম্ভিত। হালখাতা করা তো দূরে থাক, বৈশাখ বরণও অনেকখানে স্থগিত।
বাংলাদেশ-ভারত সম্পর্ক নিয়েও টানাপোড়েন। এপ্রিলের প্রথম সপ্তাহেই ‘বিমসটেক’-এ সাইডলাইন বৈঠক হলো। থাইল্যান্ডে ‘বিমসটেক চেয়ারম্যান’ হলেন ড. ইউনূস। গত ৭-৯ এপ্রিল ঢাকায় বসলো বিশ্ববিনিয়োগ সম্মেলন। ৫০টি দেশের বিনিয়োগ প্রতিনিধিরা অংশ নিলেন। ৩ হাজার ১০০ কোটি টাকার বিদেশি বিনিয়োগ নিশ্চিৎ হলো। একই সময়ে বিস্ফোরণ ঘটালো প্রতিবেশী দেশ ভারতে। আকস্মিক সিদ্ধান্তে জানালো- বাংলাদেশের ট্রান্সশিপমেন্ট সুবিধা বাতিল। ভারতের ভূমি ব্যবহার করে বিদেশে মালামাল পাঠানো বন্ধ। সড়কপথে নেপালে-ভূটানে মালামাল পাঠানো স্থগিত। উড়ালপথে কলকাতা, মুম্বাই, দিল্লি বিমানবন্দরও নিষিদ্ধ। কারণ হিসেবে বলা হচ্ছে- বাংলাদেশে চলছে অনির্বাচিত সরকার। যদিও চীন সফর ও ড. ইউনূসের নতুন রাষ্ট্রচিন্তায় ভারত তটস্থ। 

১৭ এপ্রিল ঐতিহাসিক মুজিবনগর দিবস ► মুজিব যেখানে কখনো যাননি স্বীকৃতিও দেননি
১৯৭১ সালের ১৭ এপ্রিল শপথ নেয় বাংলাদেশের প্রবাসী সরকার। মুজিব তখন পাকিস্তান কারাগারে। বৃহত্তর কুষ্টিয়ার মেহেরপুর জেলার বৈদ্যনাথতলা ছিলো মুক্ত। মহকুমা শাসক ছিলেন ড. তৌফিক-ই-ইলাহী চৌধুরী, বীরবিক্রম। তিনি ব্যক্তিগতভাবে কবি জসীমউদ্দীনের দ্বিতীয় জামাতা। হাসিনা সরকারের উপদেষ্টা হিসেবে বর্তমানে কারারুদ্ধ। পুলিশের এসপি ছিলেন মাহবুব উদ্দিন, বীরবিক্রম। ১৯৭৩-এ সিরাজ সিকদার হত্যাকালে ছিলেন ঢাকার এসপি। যুদ্ধবর্ষে মহকুমা প্রশাসক ও এসপি’র একাগ্রতায় ১৭ এপ্রিল ঘটনাটি ঘটে। 
কলকাতা থেকে তাজউদ্দীনের নেতৃত্বে দলনেতারা মেহেরপুরে আসেন। বৈদ্যনাথতলাকে ‘মুজিব নগর’ ঘোষণা করেন। বাংলাদেশের প্রবাসী সরকার-এর ঘোষণা দেন। শেখ মুজিবকে রাষ্ট্রপতি, সৈয়দ নজরুলকে ভারপ্রাপ্ত রাষ্ট্রপতি করা হয়। আওয়ামী লীগ সম্পাদক তাজউদ্দিন আহমদ হন প্রথম প্রধানমন্ত্রী। খন্দকার মোশতাক পররাষ্ট্র, এম মনসুর আলী স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়। প্রধান সেনানায়ক হন জে. এমএজি ওসমানী। পশ্চিমবঙ্গের মিডিয়াদল থাকায় পৃথিবীব্যপী সংবাদটি প্রচারণা পায়। 
নির্মম সত্য হলো, শেখ মুজিব কখনও মুজিবনগরে যাননি। ১৯৭২-এর ১২ জানুয়ারি থেকে ১৯৭৫-এর ১৪ আগস্ট পর্যন্ত ক্ষমতাসীন। দু’বার কুষ্টিয়ায়, তিনবার যশোর-বেনাপোল গিয়েছেন। কিন্তু ৩০-৪০ মিনিটের দূরত্বের ‘মুজিবনগরে’ যাননি। ক্ষমতাকালে ১৭ এপ্রিল মুজিবনগর দিবস পালনও করেননি। বিষয়টি ভারত, তাজউদ্দিন ও আওয়ামী মহলে রহস্য ছিলো। এ বিষয়ে ১৯৮৮ সালে সাপ্তাহিক সন্দ্বীপ প্রথম প্রতিবেদন ছাপে। শিরোনাম ছিলো : মুজিব কেনো মুজিবনগরে যাননি? 
‘মুজিবনগর দিবস’ সাড়ম্বরে পালিত হয় এরশাদ শাসনামল থেকে। ১৯৮১-এর ৩০ মে শহীদ হন রাষ্ট্রপতি জিয়া। সেনাপ্রধান জে. এরশাদ অধিকতর ক্ষমতা পান। জিয়া হত্যার ১৩তম দিনে স্বদেশে ফেরেন শেখ হাসিনা। বঙ্গবন্ধু হত্যার পর ৬ বছর দিল্লিতে ছিলেন তিনি। ১৯৮৪-তে প্রথম রাষ্ট্রপতি হিসেবে মুজিবনগরে যান জে. এরশাদ। তিনিই সেখানে প্রথম স্মৃতিসৌধ প্রতিষ্ঠা করেন। তথ্য মতে এরশাদের ওপর ভারতীয় চাপ ছিলো। বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধে ভারতের সর্বাত্মক সহযোগিতা ছিলো। বিষয়টি প্রমাণের জন্যে ‘মুজিবনগর’ স্মৃতিসৌধ এক ঐতিহাসিক স্মৃতিস্থাপনা। 
১৯৯৬-এ ক্ষমতাসীন হয়ে শেখ হাসিনা স্মৃতিসৌধের সম্প্রসারণ করেন। আ.লীগের সভাপতি হয়ে ‘মুজিবনগর দিবস’ পালনেও উদ্যোগী ছিলেন। ৫ আগস্ট ২০২৪ ক্ষমতাচ্যুত হলে স্মৃতিসৌধ গুড়িয়ে দেয় জনতা। তা আবার পুনর্গঠনে নীরবে দলীয় প্রচেষ্টা চালানো হচ্ছে। 

১৭ মে প্রত্যাবর্তন বিদসে শেখ
হাসিনাকে ফেরানোর দাবি
১৯৮১ থেকে ২০২৪ পর্যন্ত কখনও বাদ যায়নি। শেখ হাসিনা প্রত্যাবর্তন দিবস সাড়ম্বরে পালিত হয়েছে। ২০২৫-এর প্রেক্ষাপট ভিন্ন, তবে প্রবাসে প্রস্তুতি চলমান। ভারতে প্রায় অর্ধশতাধিক গুজবপ্রধান পোর্টাল চালু। তাদের পর্যালোচনা মতে, ১৭ মে তিনি বাংলাদেশে ফিরছেন। শেখ হাসিনাও গায়েবী বক্তব্যে উচ্চকণ্ঠে কথা বলছেন। সমমনাদের বলছেন, সংবিধানমতে আমি এখনও প্রধানমন্ত্রী। যে কোন সময় আমার প্রত্যাবর্তন ঘটবে। প্রত্যেক উপজেলা থেকে ৫০০ কর্মীকে প্রস্তুত থাকতে হবে। ‘ঢাকা মার্চ’ কর্মসূচি সফল করে সরকারকে ফেলে দিতে হবে। 
আবেগপ্রবণ কর্মীরাও ‘প্রিয় নেত্রীকে’ ফেরাতে তৎপর। তাদের দাবি- আসন্ন ১৭ মে প্রত্যাবর্তন দিবস। সেই দিবসেই নেত্রী হাসিনার প্রত্যাবর্তন চাই। উল্লেখ্য, এই দাবিতে গত ১৫ এপ্রিল ঝটিকা মিছিল হয় ঢাকায়। গোয়েন্দা তথ্য মতে, জেলায় জেলায় গোপন বৈঠক হচ্ছে। পুলিশ কর্তৃপক্ষ গোপন চিঠিতে থানায় থানায় সতর্কবার্তা পাঠিয়েছে। 

আকাস্মিতভাবে ভারতের বাংলাদেশের ট্রান্সশিপমেন্ট বন্ধ ►বাংলাদেশও স্বনির্ভরতার পথে
ভারত বাংলাদেশর ট্রান্সশিপমেন্ট বাতিল করে গত ৮ এপ্রিল। বাণিজ্য উপদেষ্টা এদিন রাতেই সচিব ও ব্যবসায়ীদের নিয়ে বৈঠক ডাকেন। পরিস্থিতি পর্যালোচনা করে নতুন সিদ্ধান্ত নেন। ব্যবসায়ীরা মতামতে নানা চিত্র তুলে ধরেন। বলেন, ভারতের ভিসা বন্ধের সিদ্ধান্তটি আত্মঘাতী। হাসপাতাল, হোটেল, মোটেল, পরিবহন খাতে লালবাতি জ্বলেছে। পশ্চিমবঙ্গ, ত্রিপুরা, আসামের অর্থনীতিতে ভগ্নদশা। বাংলাদেশি পর্যটক ও রোগী না  পেয়ে মুনাফা নিম্নমুখী। সাত মাসে চার বিলিয়ন ডলার ক্ষতি গুণলো। ট্রান্সশিপমেন্ট বন্ধ করেও বিশাল আয় থেকে বঞ্চিত হবে। পণ্য সরবরাহে রাজনীতি করে  কি লাভ হলো। বিকল্প ব্যবস্থায় আমদানির মাধ্যমে বাংলাদেশের বাজার স্থিতিশীল। 
মধ্যরাতের বৈঠকে নিজেদের স্বাবলম্বী হওয়ার সিদ্ধান্ত নেয়া হয়। সেক্ষেত্রে ঢাকা, চট্টগ্রাম, সিলেট বিমানবন্দরকে সম্প্রসারণ করা হচ্ছে। যাতে বিমানপথেই মালামাল পরিবহন বৃদ্ধি করা যায়। অচল সাতটি বিমানবন্দরকে সংস্কারের সিদ্ধান্ত হয়েছে। চট্টগ্রাম-মোংলা বন্দরকে সর্বোচ্চ ব্যবহারের উপযোগীও করা হচ্ছে। ভারত নিয়ন্ত্রিত মোংলা বন্দর চীনা কোম্পানির কাছে হস্তান্তরিত হচ্ছে। 

বিজেপি নেতাদের ভাষ্য ► আগে ভোট তারপর ট্রান্সশিপমেন্ট
ট্রান্সশিপমেন্ট বন্ধকালে পররাষ্ট্রমন্ত্রী জয়শংকর একটি বিবৃতি দেন। বলেন, বাংলাদেশের উচিৎ অচিরেই নির্বাচনের দিকে যাওয়া। হাসিনা পতনের পর ভারতের সেনাপ্রধানও নির্বাচিত সরকারের প্রসঙ্গটি তোলেন। বিজেপি নেতারাও বলছেন ইউনূস সরকারের কোন বৈধতা নেই। খুনের আসামী শেখ হাসিনাকে হস্তান্তরের বিষয়েও বক্তব্য দিচ্ছেন। বলছেন, আসামী প্রত্যার্পণে দুই দেশের চুক্তি আছে জানি। কিন্তু সেটাতো উভয়পক্ষে নির্বাচিত সরকার হতে হবে। 
বিজেপি নেতা শুভেন্দু চক্রবর্তী বলেন, প্রত্যার্পণ হবে না। তিব্বতের নেতা দালাইলামা চীনের অত্যাচারে ভারতে আশ্রয় নেন। ওনাকে চেয়েও ফেরৎ পায়নি তিব্বত। আর বাংলাদেশের অবৈধ সরকারের পক্ষে তা সম্ভব না। পশ্চিমবঙ্গের বিরোধী দলীয় নেতা শুভেন্দু চক্রবর্তী শুধু নন। বিজেপি’র অন্য নেতারাও গলা খুলে কথা বলছেন। জানাচ্ছেন যে, ট্রান্সশিপমেন্ট বিষয়ে আন্তর্জাতিক ফোরামে গিয়ে লাভ হবে না। আমরা সাফ সাফ জানিয়ে দেবো- বাংলাদেশে গণতন্ত্র নেই। আগে ভোট হোক, নতুন সরকার আসুক। নির্বাচিত সরকার এলে ট্রান্সশিপমেন্ট ফেরৎ দেয়া যেতে পারে। 

দ্রুত নির্বাচন বিষয়ে ভারত বিএনপি, আ.লীগ একই সুর
সচেতন মহলের মতে নির্বাচনের সুরটি যেন একই সূত্রে গাঁথা। নির্বাচিত সরকারের প্রতিনিধিত্বের নামে ভারত দ্রুত নির্বাচন চায়। বিএনপির কেন্দ্রীয় নেতারা প্রতিদিনই আওয়াজ তুলছেন। ১৬ এপ্রিলের একক বৈঠক নির্বাচনী ‘রোডম্যাপ’ বিষয়ে। সংস্কারের নামে সময়ক্ষেপণকে সমালোচনা করছেন নেতারা। ভূতলবাসী আওয়ামী লীগ প্রকাশ্যে আসার জন্যে মরিয়া। এ কারণে দ্রুত নির্বাচনের পরিবেশ কামনা করছে। অন্যদিকে বৈষম্যবিরোধী ছাত্রশক্তি দ্রুত নির্বাচনের বিপক্ষে। তদের একাংশ ড. ইউনূসকে নির্বাচনে নিতে চায়। প্রয়োজনে জামায়াত ও ছোট দলগুলো নিয়ে জোট গঠনে আগ্রহী। যে কোন প্রকারে ক্ষমতার রশি ধরে রাখতে বদ্ধপরিকর। 
গত ১২ এপ্রিল ঢাকায় ‘মার্চ ফর গাজা’ সমাবেশ ব্যাপকভাবে সফল। ইসলামি শক্তির উত্থান ভারতসহ পশ্চিমা বিশ্বকে ভাবনায় ফেলেছে। ভারতের ধারণা, সমাবেশের অধিকাংশজন ইউনূস ও জামায়াতপন্থী। এই ত্রয়ীশক্তি ঐক্যবদ্ধ হলে ক্ষমতা গ্রহণ করবে। সেক্ষেত্রে ভারত ও হাসিনাশক্তির সমূহ ক্ষতি হবে। তাই, রাজনৈতিক বিশ্লেষকেরা তড়িঘড়ি নির্বাচন চান। যাতে, নাগরিক পার্টি, জামায়াত জোট শক্ত ভিত্তি না পায়। এজন্যে মন্দের ভালো হিসেবে ‘বিএনপি’-কেই প্রথম পছন্দ। 
মহাচীন সফর, বিএমসটেক ও বিনিয়োগ সম্মেলন। অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ড. ইউনূসকে শক্ত ভিত্তি দিয়েছে। কিন্তু ‘অনির্বাচিত সরকারের প্রধান’ অভিধায় বিতর্কিত করা হচ্ছে। যাতে তিনি অতিদ্রুত নির্বাচন দিয়ে কেটে পড়েন। চীন, জাপান, আমেরিকার বিনিয়োগ-বিপ্লব ঘটাতে চাচ্ছেন। রাশিয়া ও পাকিস্তানের আশীর্বাদে পারমাণবিক শক্তি অর্জনের ছক কাটছেন। রোহিঙ্গা সমস্যার সমাধানে আন্তর্জাতিক হিরো হচ্ছেন। বাংলাদেশের রিজার্ভ সম্মানজনক  পর্যায়ে নিয়েছেন। ফলে শত্রুপক্ষ ইউনূস হটানোর প্রকল্প হাতে নিয়েছে। পায়ের তলার মাটি সরানোর সর্বাত্মক প্রচেষ্টা চলমান।

কমেন্ট বক্স