বছর ঘুরে আবারও এল বৈশাখ মাস। শুরু হলো আরেকটি নতুন বছর। সোমবার (১৪ এপ্রিল) সূর্যোদয়ের মধ্য দিয়ে শুরু হচ্ছে ১৪৩২ বঙ্গাব্দের প্রথম দিন। বর্ণাঢ্য সব আয়োজনে নতুন বছরকে স্বাগত জানাতে প্রস্তুত দেশবাসী। নববর্ষের আনন্দ শোভাযাত্রা, সুর-সংগীত আর লোকজ মেলায় উৎসবমুখর হবে চারপাশ।
বাংলা নববর্ষ ১৪৩২ উপলক্ষে প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূস বাণী দিয়েছেন। বাণীতে প্রধান উপদেষ্টা বলেছেন, ‘আসুন, আমরা বিগত বছরের গ্লানি, দুঃখ-বেদনা, অসুন্দর ও অশুভকে ভুলে গিয়ে নতুন প্রত্যয়ে, নতুন উদ্যমে সামনের দিকে এগিয়ে চলি। চব্বিশের গণ-অভ্যুত্থান আমাদের সামনে বৈষম্যহীন বাংলাদেশ গড়ে তোলার সুযোগ এনে দিয়েছে।’
পাহাড় ও সমতলের সব জনগোষ্ঠী এবার একসঙ্গে বৈশাখী উৎসবে অংশ নিচ্ছে। বর্ষবিদায়ে পাহাড়ে উৎসবের আমেজ লেগেছে আগেই। রোববার রাজধানীতে ছিল চৈত্রসংক্রান্তির নানা আয়োজন। সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে সরকারি উদ্যোগে আয়োজিত বর্ষবিদায়ের কনসার্টে গান গেয়েছে পাহাড় ও সমতলের বেশ কয়েকটি ব্যান্ডদল।
সোমবার ভোর থেকে সারা দেশে ব্যাপক আনন্দ-উদ্দীপনায় উদযাপিত হবে নববর্ষের প্রথম দিন। যে যার মতো করে যোগ দেবেন নানা অনুষ্ঠানে।
পহেলা বৈশাখে পান্তা-ইলিশ খাওয়ার প্রচলন রয়েছে। অন্তর্বর্তী সরকার ৮ থেকে ১৪ এপ্রিল জাটকা সংরক্ষণ সপ্তাহ ঘোষণা করেছে। এ কারণে এবার বৈশাখ উদ্যাপনে পান্তা-ইলিশ না খাওয়ার আহ্বান জানিয়েছেন মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ উপদেষ্টা ফরিদা আখতার।
রমনা বটমূলে ছায়ানট গাইবে মুক্তির গান
বরাবরের মতো রমনা উদ্যানে বর্ষবরণের অনুষ্ঠান করবে ছায়ানট। এবার তারা দুই ঘণ্টাব্যাপী গাইবে মুক্তির গান। সোয়া ছয়টায় ভোরের আলো ফুটতে ফুটতে ভৈরবীতে রাগালাপ দিয়ে হবে ছায়ানটের ১৪৩২ বঙ্গাব্দবরণের সূচনা। এবারের অনুষ্ঠান সাজানো হয়েছে নতুন আলো, প্রকৃতি এবং মানুষকে ভালোবাসার গান, দেশপ্রেম-মানবপ্রেম আর আত্মবোধন-জাগরণের সুরবাণী দিয়ে। সব মিলিয়ে বাঙালি সমাজকে নিয়ে আলোর পথে মুক্তির পথযাত্রী হওয়ার আহ্বান থাকবে অনুষ্ঠানজুড়ে। প্রথমবারের মতো নিজেদের অন্যতম প্রতিষ্ঠাতা সন্জীদা খাতুনকে ছাড়া বর্ষবরণের অনুষ্ঠান আয়োজন করতে যাচ্ছে ছায়ানট। সব মিলিয়ে দেড় শতাধিক শিল্পী এ আয়োজনে অংশ নিচ্ছেন।
চারুকলায় নববর্ষের আনন্দ শোভাযাত্রা
বাংলা বর্ষবরণের অন্যতম প্রধান অনুষঙ্গ নববর্ষের শোভাযাত্রা। জাতীয়ভাবে নববর্ষের সবচেয়ে বড় শোভাযাত্রার আয়োজন করে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের চারুকলা অনুষদ। অনেক বছর ধরে এটি মঙ্গল শোভাযাত্রা নামে আয়োজিত হয়ে আসছিল। এবার থেকে এটি ‘নববর্ষের আনন্দ শোভাযাত্রা’ নাম নিচ্ছে। শোভাযাত্রায় বাঙালিসহ পাহাড় ও সমতলের ২৮টি জাতিগোষ্ঠী অংশগ্রহণ করবে। শোভাযাত্রার সম্মুখভাগে নিজ নিজ ঐতিহ্যবাহী পোশাক ও সাজসজ্জায় বিভিন্ন জাতিগোষ্ঠীর মোট ৪৬৪ জন মানুষ থাকবেন। থাকবে সুসজ্জিত রিকশা ও ঘোড়ার গাড়ি।
শোভাযাত্রাটি সকাল নয়টায় বের হবে চারুকলা অনুষদ থেকে। শাহবাগ হয়ে সেটি চলে যাবে টিএসসিতে। রাজু ভাস্কর্যকে ডানে রেখে শোভাযাত্রা এগিয়ে যাবে শহীদ মিনারের দিকে। সেখান থেকে দোয়েল চত্বর হয়ে বাংলা একাডেমির সামনে দিয়ে আবার চারুকলায় এসে শেষ হবে বর্ষবরণ আনন্দ শোভাযাত্রা। এবারের শোভাযাত্রার প্রতিপাদ্য ‘নববর্ষে ঐকতান, ফ্যাসিবাদের অবসান’।
বাংলা একাডেমির বৈশাখী মেলা
বাংলা নববর্ষ বরণ উপলক্ষে সোমবার সকাল ১১টায় বাংলা একাডেমি প্রাঙ্গণে বৈশাখী মেলার উদ্বোধন করা হবে। বাংলাদেশ ক্ষুদ্র ও কুটির শিল্প করপোরেশন (বিসিক) এবং বাংলা একাডেমির যৌথ উদ্যোগে আয়োজিত এই মেলা চলবে ৭ বৈশাখ পর্যন্ত। এর আগে সকাল আটটা থেকে একাডেমির নজরুল মঞ্চে বর্ষবরণ সংগীত, নববর্ষ বক্তৃতা ও সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের আয়োজন করেছে একাডেমি। এ ছাড়া একাডেমি প্রাঙ্গণে বিভিন্ন ছাড়ে প্রতিষ্ঠানটির বইয়ের আড়ং চলবে।
শিল্পকলা একাডেমি
বিকেলে মানিক মিয়া অ্যাভিনিউতে রয়েছে ‘ব্যান্ড শো’। সংস্কৃতিবিষয়ক মন্ত্রণালয়ের আয়োজনে ও বাংলাদেশ শিল্পকলা একাডেমির ব্যবস্থাপনায় চীনা শিল্পীদের কারিগরি সহায়তায় প্রদর্শিত হবে ‘ড্রোন শো’। সকাল ছয়টা থেকে নয়টা পর্যন্ত বাংলা নববর্ষের অনুষ্ঠান করবে সংগীতশিক্ষার প্রতিষ্ঠান ‘সুরের ধারা’। এবার তাদের অনুষ্ঠানটি হবে ধানমন্ডির রবীন্দ্রসরোবরে। আগের মতো সরাসরি সম্প্রচারের কথা রয়েছে চ্যানেল আইয়ে। অন্যদিকে গুলশানের বিচারপতি সাহাবুদ্দীন আহমদ পার্কেও রয়েছে নববর্ষের আয়োজন। গুলশান সোসাইটির উদ্যোগে ‘অলিগলি বর্ষবরণ বন্ধুগণ’-এর আয়োজনে থাকবে দিনব্যাপী অনুষ্ঠান।
এ ছাড়া সারা দেশের সব শহর ও গ্রাম-গঞ্জে বিপুল উৎসাহ-উদ্দীপনায় উদ্যাপিত হবে বাংলা নববর্ষের প্রথম দিন পহেলা বৈশাখ।
ঠিকানা/এনআই