Thikana News
২৪ এপ্রিল ২০২৫
  1. ই-পেপার
  2. চলতি সংখ্যা
  3. বিশেষ সংখ্যা
  4. প্রধান সংবাদ
  5. আমেরিকার অন্দরে
  6. বিশ্বচরাচর
আমেরিকা বৃহস্পতিবার, ২৪ এপ্রিল ২০২৫

গণঅভ্যুত্থান-উত্তর বাংলাদেশে সংক্ষুব্ধ ‘আমরা’ কারা?

গণঅভ্যুত্থান-উত্তর বাংলাদেশে সংক্ষুব্ধ ‘আমরা’ কারা?
বাংলাদেশের সাম্প্রতিক রাজনৈতিক ও সামাজিক পরিস্থিতিতে ‘আমরা’ শব্দটি একধরনের প্রতিবাদী সত্তার রূপ ধারণ করেছে। কিন্তু এই ‘আমরা’ আসলে কারা? ‘আমরা’ বলতে কি নিপীড়িত, বঞ্চিত জনগোষ্ঠী, যারা রাষ্ট্রীয় পরিমণ্ডলে সাধারণ জনগণ হিসেবে নিজেদের ন্যায়সংগত অধিকার আদায়ের জন্য লড়াই করছে? নাকি এ এক সযত্নে রচিত বিশেষ বিশেষ সুবিধা আদায়ে সংঘবদ্ধ বিশৃঙ্খল সত্তা, যা আন্দোলনের নামে রাষ্ট্রকে অকার্যকর করে দিতে চায়? রাজপথে, ক্যাম্পাসে, সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে প্রতিনিয়ত দেখা যায়, বিশেষ শ্রেণির কেউ কেউ ‘আমরা’ বলে তর্জন-গর্জন করছে। কিন্তু সেই ‘আমরা’র প্রকৃত পরিচয় কী? আপনার ‘আমরা’ এবং আমার ‘আমরা’র মধ্যে পার্থক্য কোথায়? যদি সেই ‘আমরা’র মধ্যে আমি না থাকি, তবে সেটি কি আদৌ আমার ‘আমরা’? এই ‘আমরা’র নামে রাষ্ট্রীয় পরিমণ্ডলে বিভ্রান্তি সৃষ্টি করাই কি কোনো সুদূরপ্রসারী অপকৌশলের অংশ? ইতিহাস সাক্ষ্য দেয়, ‘আমরা’র দাবিতে তথাকথিত একতার নামে বিভাজন তৈরি করাই কোনো কোনো গোষ্ঠীর প্রধান রাজনৈতিক হাতিয়ার। এখন প্রশ্ন হলো, এই ‘আমরা’ কি সত্যিই দেশের জনগণের অধিকাংশের প্রতিনিধিত্ব করে, নাকি বিশেষ স্বার্থান্বেষী একটি শক্তির রাষ্ট্রীয় ক্ষমতা কুক্ষিগত করার হাতিয়ার মাত্র?
এখানে আমাদের ভাবতে হবেÑগণতন্ত্র কি আসলেই এ ধরনের সুবিধাবাদী ‘আমরা’র প্রকাশ চায়, নাকি গণতন্ত্রের মূল উদ্দেশ্য সর্বসম্মত সংলাপ ও সমঝোতার মাধ্যমে জাতীয় স্বার্থে বিদ্যমান ও উদ্ভূত সমস্যার সমাধান খুঁজে বের করা? কারণ গণতন্ত্রের ভিত্তি দাঁড়িয়ে থাকে যুক্তি, সহনশীলতা, পরমতসহিষ্ণুতা এবং পারস্পরিক বোঝাপড়ার ওপর, হঠকারিতা ও বিশৃঙ্খলার ওপর নয়। অতীত ইতিহাস সাক্ষ্য দেয়, একটি রাষ্ট্রে যেকোনো সময়ই গণঅভ্যুত্থানের মাধ্যমে বড় পরিবর্তন আসতে পারে। তবে এর সফলতা নির্ভর করে নেতৃত্বের সদিচ্ছা, ঐকান্তিকতা ও সঠিক দিকনির্দেশনার ওপর। সঠিক দিকনির্দেশনা ও সুসংগঠিত নেতৃত্ব ছাড়া গণ-আন্দোলন কেবল একপ্রকার বিশৃঙ্খল উত্তেজনায় পরিণত হয়, যা রাষ্ট্র ও সমাজের কাক্সিক্ষত পরিবর্তনের বদলে নাগরিক জীবনে অনিশ্চয়তা ও নৈরাজ্য ডেকে আনে। ফরাসি বিপ্লব, রুশ বিপ্লব কিংবা সাম্প্রতিক আরব বসন্তের অভিজ্ঞতা আমাদের দেখিয়েছে, দিশাহীন গণঅভ্যুত্থান প্রাথমিকভাবে আশা জাগালেও শেষ পর্যন্ত সমাজ ও রাষ্ট্রকে বিভ্রান্তির দিকে ঠেলে দিতে পারে। শাসক পরিবর্তিত হয়; কিন্তু শোষণ, নির্যাতন, নিপীড়ন, অন্যায়, অবিচার, জুলুমের জাঁতাকল থেকে জনসাধারণের মুক্তি মেলে না।
আজকের বাংলাদেশে ছাত্র-জনতার নামে পরিচালিত আন্দোলন কি সেই একই ভুল পথ অনুসরণ করছে? তারা কি সঠিক দিকনির্দেশনা পাচ্ছে, নাকি আবেগের বশে বিশৃঙ্খলার দিকে ধাবিত হচ্ছে? ছাত্রসমাজ ঐতিহাসিকভাবে সমাজ পরিবর্তনের গুরুত্বপূর্ণ চালিকাশক্তি। কিন্তু যদি তাদের সংগ্রাম কেবল প্রতিবাদেই সীমাবদ্ধ থাকে এবং কোনো ইতিবাচক কর্মধারায় পরিণত না হয়, তাহলে সেটি একসময় ধ্বংসাত্মক হয়ে উঠবে। প্রশ্ন হলো, তারা কি শুধুই আন্দোলন করে যাবে, নাকি দেশ গঠনে কোনো ইতিবাচক ভূমিকা রাখবে? প্রকৃত গণতান্ত্রিক আন্দোলন কেবল প্রতিক্রিয়াশীল হয় না; বরং বিদ্যমান ও উদ্ভূত সমস্যার আশু সমাধানও উপস্থাপন করে। যদি তারা সত্যিই দেশকে এগিয়ে নিতে চায়, তবে তাদের প্রয়োজন দায়িত্বশীলতা, সুস্পষ্ট লক্ষ্য এবং কল্যাণমুখী দৃষ্টিভঙ্গি। কারণ কোনো জাতির অগ্রগতি কেবল আন্দোলনের মাধ্যমে স্বৈরাচার হটানোই নয়, বরং পুনরায় স্বৈরাচার যাতে মাথাচাড়া দিয়ে উঠতে না পারে, সে জন্য সুশৃঙ্খল ও সুপরিকল্পিত সংস্কার-প্রক্রিয়ার মাধ্যমেই রাষ্ট্রযন্ত্রের পর্যায়ক্রমিক পরিবর্তন ও পরিবর্ধন নিশ্চিত করতে হয়।
বর্তমান পরিস্থিতিতে রাষ্ট্রীয় প্রেক্ষাপটে ‘আমরা’র বিভক্তি বোঝা অত্যন্ত জরুরি হয়ে পড়েছে। এই ‘আমরা’ কি সত্যিই সর্বজনীন, নাকি এটি একটি সংকীর্ণ গোষ্ঠীর স্বার্থরক্ষার হাতিয়ার মাত্র? সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্ন হলো, এই ‘আমরা’র মধ্যে কারা অন্তর্ভুক্ত? যে একজন সাধারণ নাগরিক, যিনি কেবল শান্তিপূর্ণ জীবনের প্রত্যাশী, তিনি কি এই ‘আমরা’র অংশ? যে শ্রমিক প্রতিদিন ঘামে ভেজা শরীরে রাস্তায় নামেন, যে কৃষক মাঠে ফসল ফলিয়ে দেশকে খাদ্যে স্বয়ংসম্পূর্ণ করেন কিংবা যে মধ্যবিত্ত চাকরিজীবী প্রতিনিয়ত কঠোর পরিশ্রম করে পরিবারের ভবিষ্যৎ গড়ার স্বপ্ন দেখেন, তারা সবাই কি এই ‘আমরা’তে অন্তর্ভুক্ত? যদি এই ‘আমরা’ কেবল ছাত্রসমাজ বা কিছু নির্দিষ্ট রাজনৈতিক শ্রেণি দ্বারা গঠিত হয়, তবে এটি একপেশে হয়ে যায় এবং জনগণের সার্বিক প্রতিনিধিত্বের দাবিদার হতে পারে না। প্রকৃতপক্ষে রাষ্ট্রীয় পরিমণ্ডলে ‘আমরা’ হলো সেই জনগোষ্ঠী, যারা সমাজের প্রতিটি স্তর থেকে উঠে এসে যৌক্তিক পরিবর্তনের দাবিতে ঐক্যবদ্ধ হয়। কিন্তু যদি ‘আমরা’ বলতে শুধুই একটি নির্দিষ্ট মতাদর্শ, রাজনৈতিক গোষ্ঠী কিংবা শ্রেণির প্রতিনিধিত্ব বোঝানো হয়, তবে সেটি গণতান্ত্রিক নয়, বরং একপ্রকার মতাদর্শিক আধিপত্য প্রতিষ্ঠার প্রয়াস মাত্র।
জাতীয় স্বার্থে ঐক্য ও সমৃদ্ধির জন্য এখানে সতর্কতার প্রয়োজন, গণতন্ত্র তখনই সফল হয়, যখন তাতে সর্বস্তরের মানুষের অভিমত প্রতিফলিত হয়। যদি আন্দোলন বা প্রতিবাদের ভাষা শুধু একদল মানুষের স্বার্থরক্ষার জন্য ব্যবহৃত হয় এবং অন্যদের কণ্ঠরোধ করা হয়, তবে তা প্রকৃত গণতন্ত্রের সঙ্গে সাংঘর্ষিক হয়ে পড়ে। তাই ‘আমরা’র প্রকৃত সংজ্ঞা নির্ধারণ করাই এখন সময়ের দাবি। বোঝা দরকার, ঔপনিবেশিক শাসন ও শোষণের বিরুদ্ধে গান্ধীর আন্দোলনের জনপ্রিয়তার আসল কারণ কী ছিল? তিনি কেবল একজন রাজনৈতিক নেতা ছিলেন না; তিনি সমাজের নিষ্পেষিত, বঞ্চিত এবং প্রান্তিক মানুষের কাতারে এসে দাঁড়িয়েছিলেন। ব্রিটিশ শাসনের বিরুদ্ধে তার অহিংস আন্দোলন ছিল জনগণের প্রকৃত দাবির প্রতিফলন। কারণ তিনি জনগণের কণ্ঠস্বর হয়ে উঠেছিলেন, তাদের স্বপ্ন ও আকাক্সক্ষাকে ধারণ করেছিলেন। তার আন্দোলন ছিল সর্বজনীন, যা কেবল একটি নির্দিষ্ট শ্রেণির স্বার্থ রক্ষা করত না, বরং সমাজের সর্বস্তরের মানুষের মুক্তির জন্য লড়াই করত। আমাদের ভাবতে হবে, আজকের বাংলাদেশের রাজনীতিবিদেরা কি সত্যিকার অর্থে সাধারণ মানুষের স্বার্থরক্ষা করতে চাইছেন? নাকি তাদের রাজনৈতিক আন্দোলন কেবল একটি রাজনৈতিক ও ব্যক্তিগত অ্যাজেন্ডা বাস্তবায়নের হাতিয়ার মাত্র? যদি কোনো আন্দোলন নিপীড়িত মানুষের অধিকার প্রতিষ্ঠার পরিবর্তে ক্ষমতার খেলায় পরিণত হয়, তবে সেটি আর জনস্বার্থের প্রতিনিধিত্ব করে না। বরং তা হয়ে ওঠে রাজনীতির ছত্রচ্ছায়ায় এক বিশেষ শ্রেণি বা গোষ্ঠীর আধিপত্য বিস্তারের অস্ত্র। গণতান্ত্রিক আন্দোলনের মূল উদ্দেশ্য হওয়া উচিত ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠা, সমাজের সকল শ্রেণির মানুষের কল্যাণ নিশ্চিত করা। কিন্তু যদি কোনো রাজনৈতিক আন্দোলন কেবল বিভাজন, বিশৃঙ্খলা ও প্রতিহিংসার জন্ম দেয়, তবে সেটি গণআন্দোলন নয়, বরং পরিকল্পিত রাজনৈতিক চক্রান্ত। তাই প্রশ্ন থেকে যায়, দেশের বর্তমান পরিবর্তিত পরিস্থিতিতে রাজনীতিবিদেরা কি সত্যিই জনগণের স্বার্থ রক্ষা করছেন, নাকি তাদের নিজস্ব অভীষ্ট লক্ষ্য পূরণেই নানা আয়োজনে ব্যস্ত?
রাজনৈতিক অধিকার আদায়ের আন্দোলনের নামে রাষ্ট্রীয় স্বার্থকে অগ্রাধিকার না দিয়ে ও সাধারণ জনগণের ইচ্ছা-আকাক্সক্ষার প্রতি লক্ষ না রেখে দেশে বিশৃঙ্খলা সৃষ্টির সম্ভাব্য পরিণতি কখনোই শুভ হতে পারে না। গণতান্ত্রিক রাষ্ট্রে বিরোধিতা এবং প্রতিবাদ অবশ্যই নাগরিকের অধিকার, কিন্তু যখন তা ধ্বংসাত্মক রূপ নেয়, তখন তা কেবল রাষ্ট্র নয়, গোটা সমাজের স্থিতিশীলতার জন্য হুমকিস্বরূপ হয়ে দাঁড়ায়। একটি সরকার যদি সঠিকভাবে কাজ করতে না পারে, তবে দেশের উন্নয়ন বাধাগ্রস্ত হয়, যা দীর্ঘমেয়াদে অর্থনৈতিক অস্থিতিশীলতা, নিরাপত্তাহীনতা এবং সামাজিক অরাজকতার জন্ম দেয়। প্রতিটি গণতান্ত্রিক দেশে ন্যায়সংগত বিরোধিতা ও প্রতিবাদের একটি কাঠামো থাকে, যেখানে নীতিনির্ধারণী বিতর্ক, শান্তিপূর্ণ সমাবেশ এবং আইনি লড়াইয়ের মাধ্যমে মতপার্থক্য প্রকাশ করা যায়। কিন্তু যদি বিরোধিতার নামে পরস্পরকে দোষারোপ, লাগাতার সহিংসতা, ভাঙচুর, অরাজকতা তৈরি করা হয়, তাহলে তা গণতন্ত্রের চেতনাকেই বিপন্ন করে তোলে। একের পর এক আন্দোলন যদি কেবল সরকারের অকার্যকারিতার সুযোগ নিয়ে সংঘাত সৃষ্টি করার জন্য হয়, তবে তা জনস্বার্থ রক্ষার বদলে জনজীবন দুর্বিষহ করে তোলে। ইতিহাস সাক্ষী, যখন রাষ্ট্রীয় কাঠামো ভেঙে পড়ে, তখন সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয় সাধারণ জনগণ। মধ্যপ্রাচ্য, আফ্রিকা কিংবা লাতিন আমেরিকার অনেক দেশ আজও রাজনৈতিক অস্থিরতার কারণে অর্থনৈতিক ও সামাজিকভাবে দুর্বল। যেখানে গণতন্ত্রের নামে অগণতান্ত্রিক পন্থায় রাষ্ট্রকে অকার্যকর করার প্রচেষ্টা চলে, সেখানে উন্নয়ন থেমে যায়, নিরাপত্তাহীনতা বাড়ে এবং জনগণ দীর্ঘমেয়াদে ভয়াবহ সংকটের মুখোমুখি হয়। তাই আমাদেরকে মনে রাখতে হবে, প্রতিবাদ হতে হবে গঠনমূলক আর বিরোধিতা হতে হবে ন্যায়সংগত। নয়তো তার পরিণতি গোটা জাতির জন্য বিপজ্জনক হয়ে উঠতে পারে। আমাদের এখন গভীরভাবে ভাবতে হবেÑএই সংক্ষুব্ধ ‘আমরা’ আসলে কী চাই? আমরা কি শুধুই বঞ্চনার কথা বলে যাব, নাকি বাস্তবসম্মত ও গঠনমূলক পরিবর্তনের পথে হাঁটব? ইতিহাস বলছে, কেবল অভিযোগ আর অরাজকতা কখনোই একটি জাতির ভবিষ্যৎ গড়ে তুলতে পারেনি। সত্যিকারের পরিবর্তন তখনই আসে, যখন প্রতিবাদের পাশাপাশি বিদ্যমান সমস্যাগুলোর সমাধানের পথ খুঁজে বের করার দিকেও সমান গুরুত্ব দেওয়া হয়। কারণ একটি জাতির অগ্রগতি নির্ভর করে তার জনগণের দায়বদ্ধতা, দূরদর্শিতা এবং দায়িত্বশীলতার ওপর।
সরকারকে বাধা দেওয়া, রাষ্ট্রীয় কার্যক্রম স্তব্ধ করে দেওয়া কিংবা কেবল প্রতিক্রিয়াশীল মনোভাব নিয়ে চলা কোনো গণমুখী কল্যাণপ্রত্যাশী ‘আমরা’র প্রকৃত কাজ হতে পারে না। যদি এই ‘আমরা’ সত্যিকার অর্থে জনগণের প্রতিনিধি হতে চায়, তবে তাদের উচিত হবে সমস্যার সমাধানের পথ খোঁজা, ইতিবাচক পরিবর্তনের জন্য কাজ করা। গণতন্ত্র কেবল প্রতিবাদের নাম নয়; এটি আলোচনার, যুক্তির এবং যৌক্তিক সিদ্ধান্ত গ্রহণের প্রক্রিয়া। তা না হলে এই সংক্ষুব্ধ ‘আমরা’ একসময় বিশৃঙ্খলার প্রতীক হয়ে উঠবে, যা শেষ পর্যন্ত কারও জন্যই কল্যাণ বয়ে আনবে না। একটি জাতি যখন কেবল প্রতিরোধের মনোভাব নিয়ে এগোয়, কিন্তু বিকল্প কোনো গঠনমূলক পথ খোঁজে বের করার চেষ্টা করে না, তখন সে জাতির ভবিষ্যৎ অনিশ্চয়তার অন্ধকারে ডুবে যায়। তাই আমাদের উচিত আবেগের পরিবর্তে বুদ্ধিবৃত্তিক চিন্তা, ধ্বংসাত্মক পথের পরিবর্তে সৃজনশীল ও কল্যাণমুখী সংস্কৃতির জন্ম দেওয়া, যেখানে ‘আমরা’ হবে সামষ্টিক কল্যাণের প্রতিভূ তথা ঐক্য, সমাধান, উন্নয়ন ও অগ্রগতির প্রতীক।
বাংলাদেশের ভবিষ্যৎ কেমন হবে, তা নির্ভর করছে আমাদের বর্তমান সিদ্ধান্তগুলোর ওপর। আমরা কি শুধুই প্রতিবাদ আর অসন্তোষের স্রোতে ভেসে যাব, নাকি যৌক্তিক বা সংগত একটি কার্যকর ও ইতিবাচক পরিবর্তনের পথে এগোব? ইতিহাস প্রমাণ করে, টেকসই উন্নয়ন ও সামাজিক স্থিতিশীলতা কখনোই ধ্বংসাত্মক উপায়ে অর্জিত হয়নি। পরিবর্তন যদি সত্যিই আমাদের লক্ষ্য হয়, তবে সেটি আসতে হবে দায়িত্বশীল ও গঠনমূলক পথে; যেখানে যুক্তি, সহনশীলতা ও অংশগ্রহণমূলক চিন্তাধারা থাকবে। একটি দেশ গড়ে ওঠে তার নাগরিকদের মনোভাব ও কর্মকাণ্ডের ওপর ভিত্তি করে। যদি আমরা সত্যিই আমাদের দেশকে এগিয়ে নিতে চাই, তবে শুধু ক্ষোভ প্রকাশ করাই যথেষ্ট নয়; আমাদের প্রয়োজন সাধ্যানুযায়ী সমাধানমুখী উদ্যোগ গ্রহণ করা। উন্নত বিশ্বে জাতীয় অগ্রগতি ও সমৃদ্ধির জন্য পরিবর্তনের মূল চাবিকাঠি ছিল গবেষণা, নীতিনির্ধারণ এবং জনশিক্ষার প্রসার। সুতরাং আমাদের আন্দোলন হওয়া উচিত জ্ঞাননির্ভর, সৃজনশীল এবং কল্যাণমুখী সংস্কৃতির বিকাশে সহায়ক। আগেই উল্লেখ করা হয়েছে, একটি জাতির ভাগ্য নির্ধারিত হয় তার জনগণের ইতিবাচক দৃষ্টিভঙ্গি ও কর্মকাণ্ডের মাধ্যমে। এখন সময় এসেছে আবেগের চেয়ে যুক্তি ও প্রজ্ঞাকে অগ্রাধিকার দেওয়ার, ধ্বংসের পরিবর্তে সৃষ্টির পথ বেছে নেওয়ার। আমাদের সংঘশক্তি ‘আমরা’ যদি সত্যিকারের উন্নয়ন ও কল্যাণের পক্ষের হয়, তবে তা কেবল প্রতিবাদ নয়, বরং সেই ‘আমরা’ই হয়ে উঠবে ইতিবাচক পরিবর্তনের শক্তি ও প্রতীক।
লেখক : ভিজিটিং ফ্যাকাল্টি, ইউনিভার্সিটি অব রোহ্যাম্পটন, যুক্তরাজ্য।

 

কমেন্ট বক্স