Thikana News
২২ এপ্রিল ২০২৫
  1. ই-পেপার
  2. চলতি সংখ্যা
  3. বিশেষ সংখ্যা
  4. প্রধান সংবাদ
  5. আমেরিকার অন্দরে
  6. বিশ্বচরাচর
আমেরিকা মঙ্গলবার, ২২ এপ্রিল ২০২৫

টাইমস স্কয়ারে পহেলা বৈশাখে বাঙালির ঐক্যের সুর

১৯৮৯ সালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের চারুকলা ইনস্টিটিউটের উদ্যোগে বের হয় প্রথম মঙ্গল শোভাযাত্রা, যা ২০১৬ সালের ৩০ নভেম্বর ইউনেসকো এ শোভাযাত্রাকে বিশ্ব সাংস্কৃতিক ঐতিহ্যের মর্যাদা দেয়। এ মর্যাদা দেওয়ায় আমরা গৌরববোধ করি।
টাইমস স্কয়ারে পহেলা বৈশাখে বাঙালির ঐক্যের সুর
মুক্তির বারতার জাগ্রত চেতনার উদ্ভাসিত সুর বাজে বাংলা নববর্ষে তথা পহেলা বৈশাখে। বাংলাদেশ এ আয়োজনের প্রধান সারথি। এর সঙ্গে যুক্ত হয় বিশ্বের বিভিন্ন প্রান্তে ছিটিয়ে থাকা অগণিত বাঙালি সত্তা। সমেত ৩০ কোটি বাঙালির চেতনায় বৈশাখের ঐকতানের সুর ধ্বনিত হয়। প্রাণের মিলনমেলার তিমিরবিনাশী প্রত্যয় আকাশে-বাতাসে সুরের ঝংকার সৃষ্টি করে।
পহেলা বৈশাখ, বাংলা সনের প্রথম দিন। এ দিনটি বাংলাদেশ ও ভারতের পশ্চিমবঙ্গ, বিহার, আসাম, ত্রিপুরাসহ দেশ-বিদেশে বসবাসরত প্রত্যেক বাঙালি নববর্ষ হিসেবে পালন করে। সে হিসেবে এটি বাঙালিদের একটি সর্বজনীন প্রাণের উৎসব। বাঙালির এই প্রাণের উৎসবের সঙ্গে ওতপ্রোতভাবে জড়িত আছে আবহমান বাংলার কৃষি। গ্রামীণ মেলাগুলো পরিণত হয় উৎসবে। এই উৎসবের রং একটি অসাম্প্রদায়িক রাষ্ট্র গড়তে বাঙালি জাতিকে এগিয়ে নিয়েছে বারবার। দেশ স্বাধীনের পর বাঙালির অসাম্প্রদায়িক চেতনার প্রতীকে পরিণত হয় বাংলা বর্ষবরণ অনুষ্ঠান। উৎসবের পাশাপাশি স্বৈরাচার অপশক্তির বিরুদ্ধে প্রতিবাদও এসেছে পহেলা বৈশাখের আয়োজনে। ১৯৮৯ সালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের চারুকলা ইনস্টিটিউটের উদ্যোগে বের হয় প্রথম মঙ্গল শোভাযাত্রা, যা ২০১৬ সালের ৩০ নভেম্বর ইউনেসকো এ শোভাযাত্রাকে বিশ্ব সাংস্কৃতিক ঐতিহ্যের মর্যাদা দেয়। এ মর্যাদা দেওয়ায় আমরা গৌরববোধ করি। পহেলা বৈশাখ তাই কেবল একটি তারিখ মাত্র নয়, বাঙালির উৎসবের দিন। এই দিন উপলক্ষে সরকার বাংলাদেশের চাকরিজীবীদের জন্য ঈদ-পূজার বোনাসের মতো ‘বৈশাখী ভাতা’ চালু করেছে। এটিও বড় আনন্দের কথা।
মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের নিউইয়র্ক শহর বাঙালি অধ্যুষিত এলাকা। বাঙালিরা নিউইয়র্ক সিটিকে ‘সাংস্কৃতিক বৈচিত্র্যের নগরী’ রূপে গড়ে তুলেছেন। ইতিমধ্যেই বাংলাদেশি কমিউনিটির অবদানের স্বীকৃতি হিসেবে নিউইয়র্কের একটি অঞ্চলকে নামকরণ করা হয়েছে ‘লিটল বাংলাদেশ’। এখানে বাঙালিরা উদ্্যাপন করেন বিভিন্ন উৎসব।
বাঙালিদের সর্বজনীন উৎসব পহেলা বৈশাখ। ২০২২ সাল থেকে নিউইয়র্কে উৎসবটি উদযাপিত হচ্ছে। তবে এ বছর বাঙালিদের জন্য আরও আনন্দ ও উদ্দীপনার। যুক্তরাষ্ট্রের নিউইয়র্ক অঙ্গরাজ্য ১৪ এপ্রিলকে বাংলা নববর্ষ হিসেবে স্বীকৃতি দিয়েছে। নিউইয়র্কের রাজধানী আলবেনিতে গভর্নর অফিসে বাঙালিরা প্রথমবারের মতো রাষ্ট্রীয় পৃষ্ঠপোষকতায় আনুষ্ঠানিকভাবে ‘বাংলা নববর্ষ’ উদযাপন করবেন।
নিউইয়র্কের মুক্তধারা ফাউন্ডেশনের প্রতিষ্ঠাতা ও সিইও বিশ্বজিত সাহা (এনআরবি ওয়ার্ল্ড ওয়াইডের প্রতিষ্ঠাতা সভাপতি) একটি রেজ্যুলেশনের মাধ্যমে স্টেট সিনেটর লুইস সেপুলভেদাসহ একাধিক সিনেটরের সঙ্গে যোগাযোগ করে এই ঐতিহাসিক স্বীকৃতি অর্জনে সমর্থ হন। ‘বাংলা নববর্ষ’-এর আন্তর্জাতিক স্বীকৃতি উপলক্ষে নিউইয়র্কের টাইমস স্কয়ারে ১৪৩২ বঙ্গাব্দকে স্মরণীয় করে রাখতে এবার একটি গ্রন্থও প্রকাশ করা হবে। আমেরিকার বিভিন্ন রাজ্যে বাসকারী বাঙালি ও আমেরিকানদের মধ্যে অনুষ্ঠানটি সংযোগ তৈরিতে ভূমিকা রাখবে। সংস্কৃতির মিলনমেলায় এক অনবদ্য ইতিহাস তৈরি হবে-এক লাখের অধিক অংশগ্রহণকারীর সমবায়ে। অনুষ্ঠানটি নিঃসন্দেহে অঙ্গরাজ্যের সাংস্কৃতিক বৈচিত্র্য ও বিভিন্ন সম্প্রদায়ের মধ্যে সম্প্রীতির বন্ধন আরও সুদৃঢ় করবে।
পহেলা বৈশাখ নিউইয়র্কের বাঙালি জাতির সাংস্কৃতিক উপাদানের অপরিহার্য অংশ। হাজার বছরের বাঙালি সংস্কৃতিকে শাশ্বত করার দৃঢ় প্রত্যয়ে উচ্চারিত হবে : ‘মুছে যাক গ্লানি, ঘুচে যাক জরা, অগ্নিস্নানে শুচি হোক ধরা। এসো হে বৈশাখ এসো, এসো...’। পুরোনো গ্লানি মুছে নতুন উদ্যমে বাঁচার প্রেরণা নিয়ে বাঙালিরা উদযাপন করবে এই উৎসব। বৈষম্যহীন সমাজগঠনের লক্ষ্যে বাঙালিরা যে প্রত্যয় নিয়েছে, তার প্রতিফলন দেখা যাবে এই বৈশাখী মিলনমেলায়। সবার কণ্ঠে উচ্চারিত হবে-মুক্তির মন্দির সোপানতলে/ কত প্রাণ হলো বলিদান/ লেখা আছে অশ্রুজলে।
এ যেন এক টুকরো বাংলাদেশ। সুদূর আমেরিকা থেকে ধ্বনিত অসাম্প্রদায়িক চেতনার স্ফূরণ মুগ্ধ করবে পুরো বিশ্বকে। মুক্তধারার মুক্তধ্বনিতে দেশের মানুষের কল্যাণের সুর বেজে উঠবে। মাতা, মাতৃভাষা ও মাতৃভূমির প্রতি অকৃত্রিম ভালোবাসা প্রকাশ পাবে সহস্র কণ্ঠে।
বাঙালিরা আজ বিশ্বদরবারে আসীন। তাদের পদচারণে উর্বর হয়েছে পৃথিবীর নানা প্রান্তর। আমেরিকা প্রবাসী বাঙালিরা বাংলাদেশি সংস্কৃতি প্রকাশে ও বিকাশে বদ্ধপরিকর। মাতা, মাতৃভাষা ও মাতৃভূমি তাদের নিকট আরাধ্য। হাজার মাইলের দূরত্বে বাস করেও দেশের মাটি ও মানুষের প্রতি তাদের দরদ অবিচল। তার প্রতিফলন দেখা যায় বিভিন্ন সাংস্কৃতিক আয়োজনে। বাংলা নববর্ষ অসাম্প্রদায়িক চেতনা বিকাশে বিশেষ সহায়ক। নিউইয়র্কের বাংলা নববর্ষের সরকারি স্বীকৃতি বিভিন্ন ভাষা ও জনগোষ্ঠীর মেলবন্ধন আরও সুদৃঢ় করবে।
লেখক : অধ্যাপক, ভাষাবিজ্ঞান বিভাগ, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ও মহাপরিচালক, আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা ইনস্টিটিউট।
 

কমেন্ট বক্স