তীব্র গরমে অতীষ্ট হয়ে উঠেছে জনজীবন। আর এই গরমে সবাই ঘেমে অনেকের শরীরে দেখা দিচ্ছে পানিশূন্যতা। আসলে ঘামের সঙ্গে শরীরের প্রয়োজনীয় পানি অনেকটাই বের হয়ে যায়, ফলে দেখা যায়, ডিহাইড্রেশন বা পানিশূন্যতা।
বিশেষজ্ঞদের মতে, শরীরে পানির ঘাটতি দেখা দিলে পানির পাশাপাশি খনিজ পদার্থেরও ঘাটতি হয়। এ সময় ডাব, আঁখের রস ইত্যাদি পানীয় পানে এ ঘাটতি অনেকখানি পূরণ হতে পারে। এছাড়াও দেহে পটাশিয়ামের অভাব পূরণের জন্য নিয়মিত পাকা কলাও খেতে পারেন।
এছাড়া পানিশূন্যতার ঘাটতি পূরণ করতে খেতে পারেন যেসব ফল-
লেবু : গরমে প্রশান্তি পেতে কমবেশি সবাই লেবুর শরবত পান করে থাকে। ভিটামিন সি যুক্ত এই ফলের রস আপনাকে সারাদিন সতেজ অনুভূতি দেবে। তবে লেবুর শরবতে খুব বেশি চিনি মেশাবেন না। লেবুতে থাকা পটাশিয়াম শরীর সুস্থ রাখতে সাহায্য করে। ঘামের কারণে শরীরে খনিজের যে ঘাটতি তৈরি হয় তার অনেকটাই পূরণ করে লেবু। লেবুর প্রায় ৮৮ শতাংশই পানি।
শসা : গ্রীষ্মে শরীরকে হাইড্রেটেড রাখার সবচেয়ে সহজ উপায় শসা খাওয়া। এতে পানির পরিমাণ থাকে ৯৫ শতাংশ। শসায় থাকা ফাইবার এবং খনিজ পদার্থ পাচনতন্ত্রের উন্নতি করে এবং শরীরকে ঠান্ডা রাখে। এটি সালাদ হিসেবে বা কাঁচা হিসেবে খাওয়া স্বাস্থ্যের জন্য উপকারী।
তরমুজ : গ্রীষ্মকালীন ফল তরমুজ। বাজারে বেশ সহজলভ্য ফলটি। গরমে একটু স্বস্তি পেতে খেতে পারেন এই ফল। এটি শরীরে জলের অভাব পূরণ করে। তরমুজে শতকরা ৯০ ভাগের বেশি পানি থাকে। ফলে পানিশূন্যতা রোধে এটি হতে পারে একটি উপকারী খাবার। সঙ্গে আছে ফাইবার, ভিটামিন এ, ভিটামিন সি, পটাশিয়াম, অ্যান্টি অক্সিডেন্ট লাইকোপিন ও ম্যাগনেসিয়াম। যা তীব্র গরমেও আপনাকে সুস্থ রাখতে সাহায্য করবে।
বাঙ্গি : গরমে শরীরকে ঠান্ডা রাখে বাঙ্গি। এতে কমপক্ষে ৯০ শতাংশ পানি থাকায় এটি শরীরকে হাইড্রেটেড রাখতে সাহায্য করে। বাঙ্গিতে থাকা নানা পুষ্টিগুণ রক্তে শর্করার মাত্রা নিয়ন্ত্রণ করে। এই ফল খেলে শুধু পেট ঠান্ডা থাকে না, বরং হজমশক্তিও উন্নত হয়। এতে উপস্থিত ভিটামিন এ এবং সি ত্বককে উজ্জ্বল করে এবং শরীরকে টক্সিনমুক্ত করে।
কমলালেবু : শীতকালীন ফল হলেও আজকাল সারা বছরই পাওয়া যায় এই ফল। এই ফলেও কমপক্ষে ৮৬ শতাংশ পানি থাকে। ভিটামিন সি-তে ভরপুর এই ফল শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়াতে সাহায্য করে। ফাইবারেরও ভাল উৎস এই ফল। ওজন ঝরাতে ডায়েটে এই ফল রাখা যেতে পারে।
আনারস : এই ফলে পানির মাত্রা কমক্ষে ৮৬ শতাংশ। টক-মিষ্টি স্বাদের এই ফলে যথেষ্ট পরিমাণে ভিটামিন সি রয়েছে। বসন্তে ভাইরাল সংক্রমণ ঠেকাতে চিকিৎসকরা ভিটামিন সি খাওয়ার পরামর্শ দেন। এ কারণে গরমের সময় শরীর সতেজ রাখতে নিয়ম করে এই ফল খাওয়াই যায়।
আপেল : সুস্থ থাকার জন্য প্রতিদিন একটি আপেল খাওয়ার পরামর্শ দেন পুষ্টিবিদরা। এই ফলে থাকে প্রয়োজনীয় অনেক ভিটামিন এবং খনিজ। সেইসঙ্গে আপেলের প্রায় ৮৬ শতাংশই পানি। তাই গরমে আপেল খেলে তা শরীরে পানির ঘাটতি অনেকটাই মেটায়। সেইসঙ্গে নিয়মিত আপেল খাওয়ার কারণে কমে হৃদরোগের ভয়, বাড়ে হজমশক্তি।
জামরুল : রক্ত পরিষ্কার রাখতে জামরুলের জুড়ি মেলা ভার। শুধু তাই নয়, এই ফল রক্তে শর্করার মাত্রাও নিয়ন্ত্রণে রাখে। এ কারণে গরমে প্রতিদিন জামরুল খেলে শরীরে পানির ভারসাম্য বজায় থাকে৷
টমেটো : টমেটো এখন প্রায় সারা বছরই পাওয়া যায়। টমেটো রান্না কিংবা কাঁচা, যেভাবেই খাবেন তা আপনার স্বাস্থ্যের জন্য ভালো। তবে সবচেয়ে বেশি উপকার পাবেন কাঁচা খেলে। এতে আছে ভিটামিন এ, ভিটামিন বি-২, ভিটামিন সি, ক্রোমিয়াম, ফোলেট, ফাইবার, পটাশিয়াম ও ফাইটোকেমিক্যালের উপকারী পুষ্টি। বিশেষজ্ঞদের মতে, নিয়মিত টমেটো খেলে ক্যানসার, হৃদরোগ ও অটোইমিউন ডিসঅর্ডারের ঝুঁকিও কমতে পারে।
ঠিকানা/এএস