যুক্তরাষ্ট্রে আসার পর অনেকেই রাজনৈতিক আশ্রয় প্রার্থনা করেন। রাজনৈতিক আশ্রয়ের আবেদন করার সময় কোনো ব্যক্তি যদি মিথ্যা তথ্য দেন, অর্থাৎ তিনি নিজ দেশে কোনো রাজনৈতিক দলের দ্বারা নির্যাতিত না হয়েও মিথ্যা নির্যাতনের বর্ণনা দিয়ে আবেদন করে ধরা পড়লে তাকে আইনের আওতায় আনা হবে। অপরাধ প্রমাণিত হলে তার ১০ বছরের কারাদণ্ড হতে পারে।
সূত্র জানায়, যুক্তরাষ্ট্রে আসার পর অনেকেই রাজনৈতিক আশ্রয় প্রার্থনা চেয়ে নিজেও আবেদন করনে। আবার কেউ কেউ আইনজীবীর অফিসের মাধ্যমে আবেদন করেন। কেউবা অন্য কোন আবেদন প্রস্তুতকারীদের দিয়ে আবেদন করাতে সাহায্য নেন। রাজনৈতিক আশ্রয় প্রার্থনা করার সময়ে কোন বক্তি আবেদন করার সময়ে যদি তিনি রাজনৈতিক দলের দ্বারা নির্যাতিত না হওয়ার পরও নির্যাতিত হয়েছেন বলেন অথবা তিনি মিথ্যে নির্যাতনের বর্ণনা দিয়ে আবেদন করে সেটি ধরা পড়লে তদন্তের প্রমাণ সাপেক্ষে তাকে আইনের আওতায় আনা হবে। অপরাধ প্রমাণ হলে তার শাস্তি হবে। একই সাথে কোন ব্যক্তি যদি রাজনৈতিক দলের দ্বারা নির্যাতত না হয়ে থাকেন, কিন্তু তার কেইস অনুমোদন লাভ সহজ করার জন্য এবং আবেদনকারী রাজনৈতিক দল দ্বারা নির্যাতিত হননি এমনটি বলার পরও কোন ব্যক্তি, এটর্নী অথবা ইমিগ্রেশন আবেদন তৈরি করতে সহায়তা করা ব্যক্তি যদি লিখেন যে আশ্রয়প্রার্থী রাজনৈতিক নির্যাতনের শিকার হয়েছেন তাহলে অপরাধ প্রমাণিত হয়ে থাকলে ওই ব্যক্তির সর্বোচ্চ দশ বছর পর্যন্ত শাস্তি হতে পারে। আর্থিক দন্ড সর্বোচ্চ দুই লাখ পঞ্চাশ হাজার ডলার পর্যন্ত জরিমানাও হতে পারে।
গত ১২ মার্চ এ ধরনের একটি ঘটনার কথা উল্লেখ করেছে ইউএসসিআইএস। সেখানে উল্লেখ করা হয়েছে, জালিয়াতিপূর্ণ আশ্রয় আবেদন জমা দেওয়ার পরিকল্পনায় অভিযুক্ত একজন ব্রাউয়ার্ড মহিলার তদন্তে ইউএসসিআইএস সহায়তা করেছে। বলা হয়, মিয়ামি মার্কিন নাগরিকত্ব ও অভিবাসন পরিষেবা সম্প্রতি বিচার বিভাগের ঘোষণার তদন্তে সহায়তা করেছে যে ব্রাউয়ার্ড কাউন্টির একজন বাসিন্দাকে ইউএসসিআইএসে জালিয়াতিপূর্ণ আশ্রয় আবেদন জমা দেওয়ার অভিযোগে ফেডারেল অভিযোগে অভিযুক্ত করা হয়েছে।
ফ্লোরিডার সানরাইজের বাসিন্দা ৩৭ বছর বয়সী আন্দ্রেয়া সি কোরিয়ার বিরুদ্ধে আইন লঙ্ঘন করে জালিয়াতিপূর্ণ আশ্রয় আবেদন জমা দেওয়ার অভিযোগ আনা হয়েছে, যা শাস্তিযোগ্য অপরাধ। শুনানিতে পেশ করা অভিযোগ অনুসারে, আন্দ্রেয়া ইউএসসিআইএসে একটি আশ্রয় আবেদন প্রস্তুত এবং ডাকযোগে পাঠিয়েছিলেন, যাতে ব্যক্তিগত রাজনৈতিক নির্যাতনের একাধিক বিবৃতি ছিল, যদিও আবেদনকারী আন্দ্রেয়াকে জানিয়েছিলেন যে তিনি আসলে তার নিজ দেশে ব্যক্তিগত রাজনৈতিক নির্যাতনের সম্মুখীন হননি। ২০১৩ সাল থেকে আন্দ্রেয়া এক হাজারটিরও বেশি আশ্রয় আবেদন প্রস্তুত করেছেন।
অভিযুক্ত অপরাধের জন্য দোষী সাব্যস্ত হলে আন্দ্রেয়ার ১০ বছরের কারাদণ্ড এবং ২ লাখ ৫০ হাজার ডলার জরিমানা হতে পারে। তবে মার্কিন সাজা নির্দেশিকা বিবেচনা করার পর আদালত দোষী সাব্যস্ত হওয়ার পর যেকোনো শাস্তি আরোপ করবে।
ফ্লোরিডার দক্ষিণাঞ্চলীয় জেলার জন্য মার্কিন অ্যাটর্নি হেইডেন পি ও’বাইর্ন, হোমল্যান্ড সিকিউরিটি ইনভেস্টিগেশন মিয়ামির ভারপ্রাপ্ত বিশেষ এজেন্ট ইনচার্জ জোসে আর ফিগুয়েরো এবং ইউএসসিআইএসের জন্য মিয়ামি আশ্রয় অফিসের পরিচালক ভারসেনিক পাপাজিয়ান এই ঘোষণা দিয়েছেন। এইচএসআই ওয়েস্ট পাম বিচ এবং ইউএসসিআইএস জালিয়াতি শনাক্তকরণ এবং জাতীয় সুরক্ষা অধিদপ্তরের মিয়ামি আশ্রয় অফিস মামলাটি তদন্ত করেছে। সহকারী মার্কিন অ্যাটর্নি কেটি স্যাডলো বিষয়টির প্রসিকিউশন করছেন।
বিশেষজ্ঞদের মতে, কোনো রাজনৈতিক আশ্রয় প্রার্থনার আবেদনে কোনো ধরনের মিথ্যা তথ্য দেওয়া কঠিন অপরাধ। তাই কেউ যদি সত্যিকার অর্থে রাজনৈতিক দল দ্বারা বা দলের নেতাকর্মীদের দ্বারা নির্যাতিত না হন এবং ঘটনার প্রমাণ না থাকে, তাহলে তারা কোনোভাবেই সেই তথ্য দিয়ে আশ্রয় চাইবেন না। কারণ যখনই এই বিষয়টি ধরা পড়বে, তখনই ঝামেলা হবে। ফলে কারোরই উচিত নয় কোনো ধরনের মিথ্যা তথ্য দেওয়া। যদি কেউ নিজে নিজে ফাইল করেন তাহলে ভিন্ন কথা। তবে এটর্নীর অফিসের মাধ্যমে ফাইল করলে ভাল হয়। বিশেষজ্ঞ নন এবং যারা ফাইল করার জন্য অনুমোদিত নন এমন কাউকে দিয়ে ফাইল করানো উচিত না।
সূত্র জানায়, রাজনৈতিক আশ্রয় প্রার্থনা চেয়েছেন এমন কিছু কিছু আবেদন সম্প্রতি প্রত্যাখ্যাত হচ্ছে। কারণ কেইস বাই কেইস বিবেচনা করা হচ্ছে। তবে কেইসগুলো বিশ্বাসযোগ্যতার বিষয়টি একটি বড় বিষয়। যদি কারো কেইসের বিষয়ে সন্দেহ হয় এবং তার রাজনৈতিক আশ্রয় প্রার্থনার বিষয়টি গুরুত্ব বোঝাতে ব্যর্থ হন তাহলে সমস্যায় পড়তে পারেন এবং কেইস অ্যাপ্রুভড নাও হতে পারে। তাছাড়া যখন ফাইল করা হয় তখন যদি একরকম কথা বলেন, ফাইনাল হেয়ারিংয়ের সময় যদি কথা ঠিক মত বলতে না পারেন , তারিখ ও সময় দুইরকম বলেন, ঘটনাও ভিন্ন বলেন, তাহলেও ঝামেলা হতে পারে। দুই জায়গায় দুই রকম তথ্য হলে কেইস ডিনাই হতে পারে। এখন এবং আগামী দিনে রাজনৈতিক আশ্রয় পাওয়া আরো কঠিন হবে।
এটর্নী জান্নাতুল রুমার অফিসের একটি সূত্র জানায়, এখন আমরা দেখতে পাচ্ছি রাজনৈতিক আশ্রয় প্রার্থনার কিছু কিছু কেইস ডিনাই হচ্ছে। ডিনাই হওয়ার নানা কারণও আছে। যারা আসছেন তাদের কেইসগুলো কেন ডিনাই হচ্ছে সেটাও যেমন দেখার চেষ্টা করা হচ্ছে, এর পাশাপাশি নতুন যারা আবেদন করছেন সেগুলোও ডিনাইয়ের কারণ দেখা হচ্ছে। একজনের আবেদন করার সময়ের তথ্য ও তার দেয়া পরের তথ্যের সাথে, সাক্ষ্য দেওয়ার সময়ে কথার ও নির্যাতনের ঘটনার মিল না থাকলে তার কেইসে সমস্যা হতে পারে।
আমেরিকান ইন্টারন্যাশনাল বার এসোসিয়েশন ডাইরেক্টের, বাংলাদেশী বংশোদ্ভুত আমেরিকান এটর্নী মঈন চৌধুরী বলেন, রাজনৈতিক আশ্রয় প্রার্থনা সহ যে কোন ইমিগ্রেশন সুবিধা পাওয়ার জন্য যারা আবেদন করেন তাদেরকে অবশ্যই সত্য তথ্য দিয়ে আবেদন করতে হবে। মনে রাখতে হবে কোন মিথ্যে তথ্য দিয়ে কোন ধরণের কেইস ফাইল করলে তা অনুমোদন নাও হতে পারে। খালি তাই নয় কেউ যদি মিথ্যে তথ্য দিয়ে কেইস ফাইল করেন তাহলে ভবিষ্যতে যে কোন সময়ে ধরা পড়লে সমস্যায় পড়তে পারেন। তাই আমি সব সময় সবাইকে বলি সত্য তথ্য দিয়ে আবেদন করুন। কোন মিথ্যে তথ্য দিবেন না। মিথ্যে তথ্য আপনার জীবনে বিপদ ডেকে আনতে পারে। এটি যারা আবেদন করেন ও যার জন্য যে আবেদন করেন তাদেও সবাইকে মনে রাখতে হবে। বিশেষজ্ঞ এটর্নীর মাধ্যমে ফাইল করলে সঠিকভাবে ফাইল করা হয়।
এটনী খায়রুল বাশার বলেন, রাজনৈতিক আশ্রয় প্রার্থনার কেইস অনেকগুলোই ডিনাই হচ্ছে। কারো কারোটা জানা যাচ্ছে। কারো কারেটা জানা যাচ্ছে না। কারণ রাজনৈতিক আশ্রয় প্রার্থনা যারা করছেন তাদেরকে সব সময় মনে রাখতে হবে কোন দিনই এবং কখনোই একজনের কেইসের সাথে আরেক জনের কেইস একই হবে না। যার যার ঘটনা ভিন্ন হবে। দিন, তারিখ , সময় স্থান ভিন্ন হবে। কারো সাথে কারো কেইস হুবহু মিলবে না। যদি কারোটা একবারেই মিলে যায়, সেই ক্ষেত্রে সমস্যা হতে পারে। এখানে মনে রাখতে হবে যে, যারা রাজনৈতিক আশ্রয় প্রার্থনা করেন অবশ্যই তাদের সাথে প্রকৃত ও সত্যি ঘটনা যা হয়েছে কেবল সেই তথ্য দিয়েই ফাইল করবেন। যা ঘটেনি এমন কোন তথ্য দিবেন না। কোন মিথ্যে তথ্য দিয়ে কোন ফাইল করবেন না। কেউ রাজনৈতিক নির্যাতনের স্বিকার না হলে ওই ক্যাটাগরীতে ফাইল করতে যাবেন না। ইমিগ্রেশনে বিভিন্ন ক্যাটাগরী রয়েছে যার জন্য যে কেইস আবেদন করার সুযোগ আছে তিনি প্রকৃত ও সত্য তথ্য দিয়ে সেটিই করবেন। যারাই আবেদন করুন না এটর্নীর সাথে পরামর্শ করে ফাইল করলে ভাল হয়।
এছাড়াও যেই কেইস অনুমোদন হচ্ছে না সেই সব কেইসগুলো কেন হচ্ছে না এটির কারণ নিজে আবেদনকারী নিজেও খতিয়ে দেখলে তারা নিজেরাও বুঝতে পারবেন। তিনি বলেন, আমরা সব সময় একটি জিনিস বলি তাহলো আপনারা যে যে ক্যাটাগরিতে কেইস ফাইল করেন না কেন আপনারা সত্য তথ্য দিয়েই ফাইল করবেন। এটাও ফাইল প্রস্তুতকারীদেরকে মনে রাখতে হবে যে, নিরেট সত্য তথ্য দিয়েই ফাইল প্রস্তুত করবেন। কারণ যিনি ফাইল প্রস্তত করেন তিনি কোন মিথ্যে তথ্য দিলে এর দায় তারও রয়েছে। আর আবেদনকারী মিথ্যে তথ্য দিলে এর পুরো দায় তার।