আগস্টে সরকার পতনের পর বাংলাদেশ ও ভারতের মধ্যে যাত্রীবাহী ট্রেন চলাচল বন্ধ হয়ে যায়। পণ্যবাহী ট্রেন চলাচলও কমিয়ে দেওয়া হয়। এখনো পণ্যবাহী ও যাত্রীবাহী ট্রেন চলাচল শুরু হয়নি। বাংলাদেশিদের ভিসা দেওয়াও এখনো বন্ধ। কেবল সীমিত আকারে রোগীদের ভিসা দেওয়া হচ্ছে। বাংলাদেশ রেলপথ মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা যায়, লোকোমোটিভ ও যাত্রীদের নিরাপত্তাহীনতার আশঙ্কা থেকে ভারতীয় কর্তৃপক্ষ আন্তদেশীয় ট্রেন চলাচল বন্ধ করে দেয়। বাংলাদেশস্থ ভারতীয় হাইকমিশন ও উপ-হাইকমিশন থেকে ভিসা প্রদানও আগস্টের পটপরিবর্তন ও অস্থিতিশীল পরিস্থিতির কারণে বন্ধ রাখা হয়। এতে যাত্রীসংখ্যা উল্লেখযোগ্যভাবে কমে যায়। ট্রেন ও যাত্রীদের ওপর হামলা ও ক্ষয়ক্ষতির আশঙ্কার পরিপ্রেক্ষিতে দুই দেশের মধ্যে যাত্রী ও পণ্যবাহী ট্রেন চলাচল ঝুঁকিপূর্ণ হয়ে পড়ে। ট্রেন চলাচল বন্ধ হওয়ায় সবচেয়ে বেশি দুর্ভোগে পড়তে হয় রোগীদের। সন্নিকটবর্তী হওয়ায় এবং অপেক্ষাকৃত কম খরচে উন্নত চিকিৎসা লাভের সুযোগ থাকায় বাংলাদেশি রোগীরা চিকিৎসার জন্য ভারতকে বেছে নেন। বছরে ১৪ থেকে ১৫ লাখ বাংলাদেশি চিকিৎসার জন্য ভারতে গিয়ে থাকেন। ট্রাভেল ভিসা, শিক্ষা ভিসায়ও লোকজন ভারতে যান।
বাংলাদেশিদের এক থেকে দুই বছরের ভিসা দেওয়ার প্রস্তাব ছিল। ভোগান্তি কমতে যেকোনো চেকপোস্ট দিয়ে বাংলাদেশিদের ভারতে প্রবেশের সুযোগ দেওয়ার কথা ছিল। বর্তমানে নির্দিষ্ট চেকপোস্ট দিয়েই আগমন ও গমন করতে হয়। ভারতীয় কর্তৃপক্ষ বিষয়টি বিবেচনায় রেখেছিল বলে ঢাকায় কূটনৈতিক সূত্রে জানা যায়। কিন্তু রাজনৈতিক পটপরিবর্তনের পর সে অবস্থায়ও পরিবর্তন আনা হয়েছে।
সরকার পরিবর্তনের পর দুই দেশের সম্পর্কে অগ্রগতির ধারা থমকে দাঁড়ায়। অনেক ক্ষেত্রে সম্পর্কে উল্লেখযোগ্য অবনতি হয়। সম্প্রতি সম্পর্কে উন্নতির ধারা সূচনার চেষ্টা করা হচ্ছে। ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির সঙ্গে বাংলাদেশের প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূসের বৈঠক কিছুটা হলেও দুই দেশের সম্পর্কে ইতিবাচক ভূমিকা রাখবে বলে কূটনীতিকদের বিশ্বাস। এর আগে ভারতের পররাষ্ট্রমন্ত্রী ও বাংলাদেশের পররাষ্ট্র উপদেষ্টার বৈঠকে যাত্রীবাহী ট্রেন চলাচল, ভিসা প্রদান স্বাভাবিক করার সিদ্ধান্ত হয়েছে বলে জানা যায়।
ভারত-বাংলাদেশের মধ্যে মৈত্রী এক্সপ্রেস, মিতালি এক্সপ্রেস, বন্ধন এক্সপ্রেস চালু হয়। মিতালি এক্সপ্রেস ঢাকা হতে নিউ জলপাইগুড়ি, মৈত্রী এক্সপ্রেস ঢাকা-কলকাতা এবং বন্ধন এক্সপ্রেস খুলনা-কলকাতা রুটে চালু করা হয়। প্রতিটি রুটে যাত্রীদের প্রচণ্ড চাপ পড়ে। অপেক্ষাকৃত কম খরচ, সেবার মান ও সময়স্বল্পতার কারণে দুই দেশের যাত্রীরাই ট্রেনে ভ্রমণে অধিকতর আগ্রহী। বৈষম্যবিরোধী শিক্ষার্থীদের আন্দোলনের পর ট্রেন সার্ভিস পুরোপুরি বন্ধ হয়ে যায়। পরে দুই দেশের মধ্যে যাত্রীবাহী ট্রেন চলাচলের সিদ্ধান্ত নেওয়া হলেও এখনো তা কার্যকর করা হয়নি।