Thikana News
২৫ এপ্রিল ২০২৫
  1. ই-পেপার
  2. চলতি সংখ্যা
  3. বিশেষ সংখ্যা
  4. প্রধান সংবাদ
  5. আমেরিকার অন্দরে
  6. বিশ্বচরাচর
আমেরিকা শুক্রবার, ২৫ এপ্রিল ২০২৫

কার স্বার্থে কাজ করছে চীন!

কার স্বার্থে কাজ করছে চীন! সংগৃহীত
ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে ক্ষমতাচ্যুত হওয়ার কয়েক মাস আগে সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা চীন সফরে গিয়েছিলেন। শেখ হাসিনা চীনের অত্যন্ত বিশ্বস্ত ছিলেন। কিন্তু বিস্ময়করভাবে চীন সফরকালে দুই দেশের মধ্যে অর্থনৈতিক, কারিগরি, সহযোগিতার কোনো চুক্তি হয়নি। প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস চীন সফরকালে যেসব চুক্তি, সমঝোতা স্মারক স্বাক্ষর হয়েছে, তার সবগুলোই শেখ হাসিনার সময়ের। সে সময়ই এসব চুক্তি হওয়ার কথা ছিল। কিন্তু চীনের সে সময় বিষয়গুলো এড়িয়ে যাওয়া ছিল তাৎপর্যপূর্ণ। এমনকি চীনের প্রেসিডেন্ট শি জিনপিংয়ের সঙ্গেও দেখা করতে পারেননি শেখ হাসিনা। চীনা প্রেসিডেন্টের অনাগ্রহের কারণেই তা সম্ভব হয়নি।
চীনের সঙ্গে শেখ হাসিনার অত্যন্ত মধুর, উন্নত সম্পর্ক থাকার পরও দেশটির এই রহস্যঘন আচরণের কারণ কী ছিল। চীন কি জানত, শেখ হাসিনা আর রাষ্ট্রক্ষমতায় থাকতে পারছেন না। প্রতিবেশী বা বিশ্বের কোনো রাষ্ট্রের অভ্যন্তরীণ রাজনীতিতে চীনের হস্তক্ষেপের নজির নেই। শিক্ষার্থীদের অভ্যুত্থান ঘটানোর পেছনে চীন বা বাইরের কোনো মহাশক্তি বা শক্তির কোনো ভূমিকার প্রমাণও পাওয়া যায়নি। প্রধান উপদেষ্টা ড. ইউনূসের সর্বপ্রথম বিদেশ সফর হিসেবে চীনকে বেছে নেওয়া এবং ২১ হাজার কোটি টাকার সহযোগিতা দেওয়ার ঘটনা উল্লিখিত বিষয়াদিসহ কিছু প্রশ্নের উদ্রেক ঘটিয়েছে।
সংগত কারণেই প্রধান উপদেষ্টার অভ্যন্তরীণ এবং আঞ্চলিক ও আন্তর্জাতিক যোগাযোগ, সম্পর্ক, নবতর বিন্যাস, নতুন সমীকরণ নিয়ে আঞ্চলিক, আন্তর্জাতিক শক্তি, বিশেষ করে ভারত, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র গভীর পর্যবেক্ষণে রেখেছে। ড. ইউনূস চীন সফরে থাকাকালেই পাকিস্তানের উপপ্রধানমন্ত্রী ও পররাষ্ট্রমন্ত্রী কর্তৃক বাংলাদেশ সরকারকে শুভেচ্ছা জানানোর ঘটনাও তাৎপর্যপূর্ণ। ভারত-যুক্তরাষ্ট্রের সম্পর্ক নতুন মাত্রায় উন্নীত হয়েছে। পারস্পরিক গভীর সমঝোতায় তারা দ্বিপক্ষীয় এবং দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়াসহ গোটা এশিয়ার রাজনৈতিক, ভূ-রাজনৈতিক ঘটনাপ্রবাহ পর্যবেক্ষণ ও অধিকাংশ ক্ষেত্রেই সম্মত সিদ্ধান্ত নিয়ে থাকে। চীন-পাকিস্তানের সঙ্গে বাংলাদেশের ক্ষমতাসীনদের সম্পর্কের গভীরতা ভারত-বাংলাদেশ সম্পর্কে নতুন সমীকরণ ঘটাচ্ছে। এ ক্ষেত্রে যুক্তরাষ্ট্র ও ভারতের অবস্থান অভিন্ন না হলেও খুবই নিকটতর হচ্ছে বলেই প্রতীয়মান হয়।
চীন থেকে তিনটি সাবমেরিন, উল্লেখযোগ্য পরিমাণ সামরিক সরঞ্জামাদি, অস্ত্রশস্ত্র ক্রয়ের ঘটনা নিকট প্রতিবেশী ভারত সানন্দচিত্তে নিয়েছে বলে মনে করার কারণ নেই। তবে শেখ হাসিনা ভারতকে সন্তুষ্ট রেখেই সমরাস্ত্র ক্রয়ের নামে বাণিজ্য করেছিলেন বলে অভিযোগ রয়েছে। চীন থেকে অস্ত্রশস্ত্র, সরঞ্জামাদি কেনায় অভ্যন্তরীণভাবে সংশ্লিষ্টরাও সন্তুষ্ট ছিল। অনুকূল পরিবেশ-পরিস্থিতি পেয়েও তারা শেখ হাসিনা সরকারবিরোধী অবস্থান নেয়নি। শিক্ষার্থীদের অভ্যুত্থান তাদেরকে অনেকটা অসহায়, কিংকর্তব্যবিমূঢ় করে তোলে।
ড. মুহাম্মদ ইউনূসের সরকার স্পষ্টতই ভারতবিরোধী অবস্থান নিয়ে দেশ পরিচালনা করছে। ভারত-বাংলাদেশ সম্পর্ক সর্বকালীন সর্বাধিক খারাপ অবস্থায় রয়েছে। এই সরকারকে যারা ক্ষমতায় এনেছে, সেই শিক্ষার্থীরা, তাদের নেতৃবৃন্দ, সমন্বয়করা যে ভাষায় ভারতবিরোধী কথাবার্তা বলে যাচ্ছেন এবং সরকারও যে ভূমিকা ও অবস্থান নিয়েছে, তাতে স্পষ্টতই সম্পর্ক অবনতিশীল। যদিও ইউনূস-মোদি বৈঠক বরফ কিছুটা গলাতে পারে। ভারত-বাংলাদেশ সীমান্ত এখনো বন্ধ। মুমূর্ষু রোগীদের ছাড়া সাধারণ রোগীদের ভিসা দেওয়া এখনো বন্ধ রাখা হয়েছে। বিএসএফের অবস্থানও আক্রমণাত্মক। পূর্ববর্তী সরকারের সময় যেসব বাণিজ্য চুক্তি হয়েছিল, কেবল তার ভিত্তিতেই চাল, সবজিসহ বিভিন্ন পণ্য আসছে। সামনে তাও বন্ধ হয়ে যাবে, যদি নতুন চুক্তি, সমঝোতা না হয়। সে সম্ভাবনাও কম। এতে অবশ্য বাংলাদেশই ব্যাপকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হবে। কারণ ভারত থেকে বছরে ৫০ থেকে ৬০ লাখ মে. টন চাল আমদানি করতে হয়। শাক-সবজিও আসে ভারত থেকে।
ভারত-বাংলাদেশ সম্পর্ক উন্নয়নের কার্যকর উদ্যোগও লক্ষ করা যাচ্ছে না। স্বল্প সময়ে নির্বাচন দিয়ে ক্ষমতা হস্তান্তরের সদিচ্ছাও আছে বলে প্রতীয়মান হচ্ছে না। এদিকে প্রধান উপদেষ্টার চীন সফরকে সরকারিভাবে যুগান্তকারী বলে বর্ণনা করা হয়েছে। রেল খাতে বিপুল বিনিয়োগের মাধ্যমে চীন উল্লেখযোগ্য পরিমাণে বাণিজ্য করছে। ড. ইউনূসের অনির্বাচিত সরকারকে আগামী দেড় বছর নিরাপদে, নির্বিঘ্নে রাষ্ট্রক্ষমতায় থাকার সুযোগ করে দিতে চীন পরোক্ষ ভূমিকা রাখতে পারছে।

 

কমেন্ট বক্স