যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের ব্যাপক শুল্ক ঘোষণার পর বিশ্বব্যাপী অর্থনৈতিক অস্থিরতা দেখা দিয়েছে। গত বুধবার রোজ গার্ডেনে আমদানির ওপর ‘রিসিপ্রোক্যাল ট্যারিফ’ বা পারস্পরিক শুল্ক ঘোষণা করেন ট্রাম্প। এর পরই বিশ্ব অর্থনীতিতে বড় ধরনের ধাক্কা লাগে। অনেক দেশ ট্রাম্পের এই ঘোষণার পর পাল্টা শুল্ক আরোপের ঘোষণা দিয়েছে। যেমন চীন ৩৪ শতাংশ পাল্টা শুল্ক আরোপ করেছে। এ ছাড়া বিশ্বব্যাপী বাণিজ্যযুদ্ধ ও মন্দার আশঙ্কা দেখা দিয়েছে।
তবে এই যুদ্ধের দামামার মধ্যে আশার আলো দেখা যাচ্ছে বলে জানিয়েছেন মার্কিন জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের পরিচালক কেভিন হ্যাসেট। তিনি জানিয়েছেন, ৫০টিরও বেশি দেশ ইতিমধ্যে হোয়াইট হাউসের সঙ্গে বাণিজ্য আলোচনায় বসতে যোগাযোগ করেছে।
রোববার (৬ এপ্রিল) স্থানীয় সময় এবিসি নিউজের ‘দিস উইক’ নামের একটি অনুষ্ঠানে কেভিন হ্যাসেট বলেন, ট্রাম্পের শুল্ক নীতি আর্থিক বাজারে ধস নামানোর জন্য বা যুক্তরাষ্ট্রের ফেডারেল রিজার্ভের ওপর সুদের হার কমানোর চাপ সৃষ্টির কৌশল নয়। তিনি জোর দিয়ে বলেন, কেন্দ্রীয় ব্যাংকের ওপর কোনো ‘রাজনৈতিক চাপ’ থাকবে না। তবে গত শুক্রবার ট্রাম্প তার ট্রুথ সোশ্যাল প্ল্যাটফর্মে একটি ভিডিও শেয়ার করেন। সেখানে তিনি ইঙ্গিত দেন, শুল্কের মাধ্যমে শেয়ারবাজারে ধাক্কা দিয়ে সুদের হার কমানোর চেষ্টা করা হচ্ছে।
এদিকে এনবিসি নিউজের ‘মিট দ্য প্রেস’ নামে আরেকটি অনুষ্ঠানে মার্কিন ট্রেজারি সেক্রেটারি স্কট বেসেন্ট শেয়ারবাজারের পতনকে তেমন গুরুত্ব না দিয়ে বলেন, ‘শুল্কের কারণে মন্দার আশঙ্কা করার কোনো কারণ নেই।’ তিনি গত শুক্রবার প্রকাশিত চাকরির তথ্যের উল্লেখ করে বলেন, ‘চাকরির সংখ্যা প্রত্যাশার চেয়ে বেশি বেড়েছে। এর থেকে বোঝা যায়, আমরা এগিয়ে যাচ্ছি।’
এবিসি নিউজের টক শোতে ট্রাম্পের আরও কিছু শীর্ষ কর্মকর্তা উপস্থিত ছিলেন। তারাও এই শুল্ককে বিশ্ববাণিজ্য ব্যবস্থায় যুক্তরাষ্ট্রের সুবিধাজনক অবস্থান পুনঃপ্রতিষ্ঠার কৌশল হিসেবে তুলে ধরার চেষ্টা করেন। তারা অর্থনৈতিক অস্থিরতাকেও স্বল্পমেয়াদি প্রভাব হিসেবে বর্ণনা করেন।
এদিকে শুল্ক ঘোষণার পর গত দুই দিনে মার্কিন শেয়ারবাজার প্রায় ১০ শতাংশ পড়ে গেছে, যা গত পাঁচ বছরে কোভিড-১৯ সংকটের পর সবচেয়ে খারাপ সপ্তাহ হিসেবে বিবেচিত হচ্ছে। বাজার বিশ্লেষকেরা এই পতনের জন্য ট্রাম্পের আক্রমণাত্মক শুল্ক নীতিকে দায়ী করছেন। অধিকাংশ অর্থনীতিবিদ এবং সাবেক ফেডারেল রিজার্ভের প্রধান মনে করেন, এটি মূল্যস্ফীতি বাড়াতে এবং অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধির ক্ষতি করতে পারে।
তবে অর্থনীতিবিদদের ধারণার বিপরীতে কেভিন হ্যাসেট দাবি করেছেন, শুল্কের ফলে গ্রাহকদের ওপর বড় ধরনের প্রভাব পড়বে না। কারণ, রপ্তানিকারকেরা দাম কমিয়ে দেবেন। ট্রেজারি সেক্রেটারি বেসেন্টও বলেন, শক্তিশালী চাকরির প্রবৃদ্ধির কারণে মন্দার আশঙ্কা নেই। তবে বিনিয়োগকারীরা আগামী সপ্তাহে শুল্কের প্রভাব কেমন হবে তা নিয়ে উদ্বিগ্ন রয়েছেন।
এদিকে ৫০টি দেশের মধ্যে সর্বপ্রথম প্রকাশ্যে যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে আলোচনার জন্য প্রস্তাব দিয়েছেন তাইওয়ানের প্রেসিডেন্ট লাই চিংতে। রোববার তিনি শূন্য শুল্কে বাণিজ্যের জন্য আলোচনার প্রস্তাব দেন। ট্রাম্পের শুল্ক ঘোষণার পর তিনিই প্রথম কোনো দেশের সরকার, যিনি পাল্টা শুল্ক না দিয়ে বাণিজ্য বাধা দূর করার প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন।
ঠিকানা/এনআই