Thikana News
০৯ মে ২০২৫
  1. ই-পেপার
  2. চলতি সংখ্যা
  3. বিশেষ সংখ্যা
  4. প্রধান সংবাদ
  5. আমেরিকার অন্দরে
  6. বিশ্বচরাচর
আমেরিকা শুক্রবার, ০৯ মে ২০২৫

মহাকাশচারী সুনীতা লিন

মহাকাশচারী সুনীতা লিন

আকাশটাকে আনব আমি হাতের মুঠোয়, এমন স্বপ্ন কৈশোরে আমরা অনেকেই দেখি, আবার কীভাবে দিন রাত হয়, আকাশের রং নীল কেন, মেঘের বাড়ি কই, সীমাহীন আকাশের কি সত্যি কোনো সীমানা নেইÑএমন কত শত প্রশ্ন প্রশ্রয় পায় কৌতূহলী মনে। আর এই কৌতূহল থেকে ইচ্ছে করে পাড়ি দিই আকাশপানে। কিন্তু চাইলেই মেয়েদের জন্য অনেক কিছু করা সম্ভব নয়। তবে যদি আকাক্সক্ষা থাকে আর সুযোগ পাওয়া যায়, তবে অনেক কিছু করা সম্ভব। উন্নত বিশ্বে জন্ম নেওয়া সুনীতা লিন তার জ্বলন্ত প্রমাণ, যিনি মহাকাশ ভ্রমণে রেকর্ড করে গেছেন।

সুনীতা লিন পান্ডিয়া ১৯৬৫ ইংরেজির ১৯ সেপ্টেম্বর যুক্তরাষ্ট্রের ইউক্লিড ওহিওতে জন্মগ্রহণ করেন। তার পিতা দিপক পান্ডে এবং মাতা উরসুলিন বনি পান্ডে সুনীতা ১৯৮৩ সালে নিডহাম হাইস্কুল থেকে স্নাতক হন। তিনি ১৯৮৭ সালে ইউনাইটেড স্টেটস নেভাল একাডেমি থেকে ভৌত বিজ্ঞানে ব্যাচেলর অব সায়েন্স ডিগ্রি এবং ১৯৯৫ সালে ফ্লোরিডা ইনস্টিটিউট অব টেকনোলজি থেকে ইঞ্জিনিয়ারিং ম্যানেজমেন্টে স্নাতকোত্তর ডিগ্রি লাভ করেন। জুন ১৯৯৮-এ নাসা কর্তৃক নির্বাচিত হয়ে উইলিয়ামস অগাস্ট ১৯৯৮-এ তার প্রশিক্ষণ শুরু করেন। তার মহাকাশচারী প্রার্থীর প্রশিক্ষণের অন্তর্গত ছিল পারিপার্শ্বিকের ওপর উপদেশাবলি ও ভ্রমণ এবং অসংখ্য বৈজ্ঞানিক ও প্রযুক্তিগত উপদেশাবলি, শাটেল (অল্প সময়ের ব্যবধানে চলাচলকারী যান) ও আন্তর্জাতিক মহাকাশকেন্দ্রের নিয়মাবলির ওপর গভীর নির্দেশিকা, শারীরবৃত্তীয় প্রশিক্ষণ ও গ্রাউন্ড স্কুলে টি-৩৮ ওড়ানোর প্রশিক্ষণ এবং জল ও নিঃসঙ্গ স্থানে জীবনরক্ষার উপায়ের প্রশিক্ষণ প্রভৃতি। তিনি ক্যাথরিন থর্নটনকে (যিনি পূর্বে তিনবার মহাকাশে পদচারণ করেছেন এবং সর্বাপেক্ষা অধিক মহাকাশ পদচারণকারী মহিলা) টপকে যান। পরে পেগি হুইটসন তাকে অধিক মহাকাশ পদচারণে পেছনে ফেলে দেন। প্রশিক্ষণ ও মান নির্ধারণকালে উইলিয়ামস আইএসএসে রাশিয়ার সহযোগস্বরূপ মস্কোর রাশিয়ান স্পেস এজেন্সিতে আইএসএসে প্রেরিত প্রথম এক্সপিডিশনের কুশলীদের সঙ্গে কাজ করেন। এক্সপিডিশন-১ প্রত্যাবর্তনের পর উইলিয়ামস রোবোটিক্স শাখায় আইএসএস রোবোটিক্স আর্ম এবং তার সঙ্গে সম্পর্কযুক্ত স্পেশাল পার্পাস ডেক্সটারাস ম্যানিপুলেটরের ওপর কাজ করেন। তিনি এনইইমো ২ অভিযানের একজন কুশলী সদস্য ছিলেন এবং জলতলে জলজ প্রাণীর বাসস্থানে ২০০২ সালের মে মাসে নয় দিন কাটান। গত জুনে মাত্র ৮ দিনের জন্য মহাকাশে গিয়েছিলেন ভারতীয়-স্লোভেনিয়ান বংশোদ্ভূত নভোচারী সুনীতা উইলিয়ামস। সঙ্গে ছিল তার সহকর্মী বুচ উইলমোর, স্লোভেনিয়ান পতাকা, সিঙ্গারা আর সস। সেই ৮ দিনের সফর আড়াই’শ দিনে গিয়ে ঠেকল। ফেরার যানে ত্রুটি দেখা দিলে মহাকাশে আটকা পড়েন তারা।

এরপর বেশ কয়েকবার সুনীতাদের ফেরানোর চেষ্টা করা হলেও সফল হয়নি নাসা। শেষমেশ ইলন মাস্কের প্রতিষ্ঠান স্পেসএক্সের পাঠানো ড্রাগন আটলান্টিক মহাসাগরের ফ্লোরিডা উপকূলে এসে নামল। নোঙর করে রাখা এক ফেরির সঙ্গে গিয়ে জোড়া লাগল। বিজ্ঞানের কী অবিশ্বাস্য জয়যাত্রা!
পৃথিবীর এক প্রান্তে মানুষ যখন মানুষকে টেনেহিঁচড়ে ঘরে বন্দী করার খেলায় মেতেছে, তখন আরেক প্রান্তের এক নারী মহাকাশে কাটিয়ে এলেন টানা ৯ মাস! তা-ও কোনো প্রস্তুতি ছাড়া! এই ৯ মাস সুনীতারা কী করলেন ওখানে?

তারা গবেষণা করে দেখেছেন, মাইক্রো গ্রাভিটিতে কী কী ফসল উৎপাদন করা যায়! কোন ফুল ফুটতে পারে? কোন জীবাণু এই ধরনের প্রতিকূল পরিবেশে কাবু হয়? তার উদ্ভিদবিদ্যা-সংক্রান্ত গবেষণার নাম ভেজি। ওহ্ সেখানে কিন্তু সুনীতা তার প্রিয় জিনিয়া ফুল ফুটিয়েছেন। জানিয়েছেন, ওখানে লেটুস, গাজর উৎপাদন করাও সম্ভব। একজন মহাকাশচারীকে শারীরবৃত্তীয় নানা পরিবর্তনের মধ্য দিয়ে যেতে হয়। হার্ট, কিডনি কীভাবে কতটা সক্রিয় থাকে, তার পরীক্ষা খুব জরুরি। সেওে নিয়েছেন সেসব গবেষণাও। সুনীতা স্বপ্ন দেখেন, একদিন মানুষ মঙ্গলে যাবে। লোটা-কম্বল নিয়ে চাঁদে যাবে ঘর বাঁধতে।
এর আগেও সুনীতা মহাকাশে গিয়েছেন। এ পর্যন্ত মোট তিনবার। তিনটি অভিযান ধরলে এখন পর্যন্ত ৫১৭ দিন মহাকাশে ছিলেন তিনি। এটাই বিশ্ব রেকর্ড। স্টেশন থেকে বেরিয়ে মহাকাশে হাঁটাহাঁটি করেছেন মোট ৫১ ঘণ্টা! ঠিকই পড়েছেন! তাও বিশ্ব রেকর্ড!
আমরা যখন ধর্মের দোহাই দিয়ে নারীদের ঘরে আটকে রাখার যাবতীয় কূটকৌশল চালিয়ে যাচ্ছি, তখন এই উপমহাদেশেরই এক নারী মহাকাশে থেকে এলেন পাক্কা ৯ মাস! তাও মানুষের উদ্ভাবিত যানে চড়ে, মানুষেরই বানানো জামা কাপড়, অক্সিজেন আর খাবার খেয়ে। সুনীতা সেসব মানুষদেরই মিথ্যা প্রমাণ করে দিলেন, যারা যাবতীয় কূটবুদ্ধি দিয়ে নারীদেরকে বস্তায় বন্দী করে রাখে, আবার সেসব সংকীর্ণ মানুষ যারা স্বেচ্ছায় বন্দী হয়। কিছু মানুষ, যারা এই বলে ফতোয়া দেয়, বাড়ির বাইরে যেতে হলে সাথে এক পুরুষকে বাধ্যতামূলক নিতে হয়।
জ্ঞান-বিজ্ঞানে মানুষ কোথায় এগিয়ে গেল, আর আমরা কোন পথে হাঁটছি।
ওয়েলকাম ব্যাক, সুনীতা উইলিয়ামস। আপনাকে দেখে মানুষের অনেক কিছু শেখার আছে। শেখার আছে, শুধু জ্ঞানের সঠিক প্রয়োগ দ্বারাই এই পৃথিবীর মানুষ এটা প্রমাণ করতে পারে, ‘মানুষেরই মাঝে স্বর্গ নরক, মানুষেতে সুরাসুর...’
কয়েক মিনিটের জন্য লিফটে আটকা পড়লে আমাদের দম বন্ধ হয়ে আসে। আর সুনীতা আটকে ছিলেন মহাকাশে, বহুদিন। মহাকাশে বসে এক সাক্ষাৎকারে সুনীতা জানিয়েছিলেন, ‘যদি পৃথিবীতে ফিরে যাই, তবে এই মহাকাশের সবকিছু মিস করব।’
রহস্যে ভরপুর বিস্তীর্ণ মহাকাশও কি সুনীতাকে মিস করবে না? এই উদাহরণ অনেক নারীকে উৎসাহিত করবে। সুনীতা লিন হবেন আমাদের আইডল। নারী তুমি মানুষ, তোমার স্বপ্নপূরণে তোমার ইচ্ছাশক্তি যথেষ্ট।

কমেন্ট বক্স