২৮ জুন ২০২৬-এ ৮৬তম জন্মতিথি। অন্তর্বর্তী সরকার থেকে বিদায় চেয়েছিলেন ড. ইউনূস। কিন্তু নাগরিক পার্টির তরুণ নেতারা নাছোড়বান্দা। ‘মেটেকুলাস ডিভাইন পলিসি’তে নতুন নীলনকশা। আসন্ন নির্বাচনে তারা ড. ইউনূসকে প্রার্থী করবেন। এমপি থেকে সংসদনেতা পর্যন্ত বানাতে চান। সদ্য চীন-ফেরত প্রধান উপদেষ্টা ঘটনার আকস্মিকতায় কিংকর্তব্যবিমূঢ়। সতীর্থ ছাত্রশক্তি মেলে দিয়েছে ঈদের নতুন চমক। ইতিমধ্যে মিডিয়ায় ঘোষণা করেছে ‘প্রধানমন্ত্রিত্ব’। সংগঠক সারজিস আলম বলেছেন, ড. ইউনূস ৫ বছরের প্রধানমন্ত্রী! রাজনৈতিক অঙ্গনে চলছে নতুন অঙ্কের হিসাব-নিকাশ। প্রধান দল বিএনপির ঈদের আনন্দ যেন মাটি। ব্রিটেন থেকে তারেক রহমান শুভেচ্ছাবার্তা পাঠিয়েছিলেন। মহাসচিব ফখরুল ইসলাম আলমগীর সরাসরি সাক্ষাৎ করলেন। ঈদের শুভেচ্ছা বিনিময় হলেও রাজনৈতিক সমঝোতা হলো না। পয়লা এপ্রিল পর্যন্ত সর্বশেষ তথ্য হতাশাজনক। অনেকের বিশ্লেষণে ফলাফল ‘এপ্রিল ফুল’।
নাগরিক পার্টির যুক্তি ও লক্ষ্যমাত্রা 🔹 ইউনূসের ঘাড়ে বন্দুক রেখে নির্বাচন জয়ের চেষ্টা
২৮ ফেব্রুয়ারি গঠিত জাতীয় নাগরিক পার্টি (এনসিপি) এখনো অধরা। দেশে-বিদেশে সংগঠন হিসেবে চমক আনতে পারেনি। বিএনপি নেতা মুক্তিযোদ্ধা ফজলুর রহমান ফোড়ন কেটেছেন। বলেছেন, নাগরিক পার্টির একজনেরও জামানত টিকবে না। সংগঠন করা আর নির্বাচনে জেতা এক কথা নয়। বিষয়টি আমলে নিয়েছেন সংগঠনের গবেষকেরা। তাদের কথা, হাসিনা সরকারের পতন হয়েছে তাদেরই নেতৃত্বে। অতএব, হাসিনা-পরবর্তী ক্ষমতার ‘স্টেকহোল্ডার’ এই ছাত্রশক্তি। কিন্তু নাগরিক পার্টি কি নির্বাচনী বৈতরণি পেরোতে পারবে। এ জন্য নির্বাচনে শক্ত-সামর্থ্য নেতৃত্ব প্রয়োজন। যার নাম ও ছবি দিয়ে বিজয় ছিনিয়ে আনা সম্ভব। সে ক্ষেত্রে নোবেলজয়ী ড. ইউনূসের কোনো বিকল্প নেই। যেমন ভাবা, তেমন কাজ, পরিকল্পনা প্রণয়ন। ৫ আগস্টের গণ-অভুত্থানকালেও ড. ইউনূস সম্মতি দেন। ফ্রান্স থেকে ৮ আগস্ট ফিরে সরকারপ্রধান হন। পরে বলেছিলেন, বিপ্লবী ছাত্ররাই আমার চাকরিদাতা। তারা অত্যন্ত মেধাবী, কর্মঠ ও দেশের সম্পদ। ছাত্রনেতাদের একাংশকে নিয়ে তিনি জাতিসংঘেও যান। সেই ছাত্রদের হাতে এখন তিনি রাজনৈতিকভাবে জিম্মিও। ঘনিষ্ঠজনেরা বলছেন, তাদের দাবি উপেক্ষা করা অসম্ভব।
ড. ইউনূসের ‘নাগরিক শক্তি’ই ছাত্রশক্তির ‘নাগরিক পার্টি’ 🔹 খুনি হাসিনার বিচার নিশ্চিত করতে ফ্যাসিস্টমুক্ত নির্বাচন চাই...
ছাত্ররা ড. ইউনূসকে সরাসরি রাজনীতিতে নিতে চায়। তাদের যুক্তি, ২০০৭-এ ড. ইউনূস দলের ঘোষণা দেন। প্রস্তাবিত নাম ছিল ‘নাগরিক শক্তি’। সাংগঠনিক আনুকূল্য না থাকায় পশ্চাৎপদ হন। কিন্তু ২০২৫-এ অনুকূল পরিবেশে দলটি হয়েছে। ওনার দেওয়া নামটিই আমরা নিয়েছি। নাগরিক শক্তি, যা ‘নাগরিক পার্টি’ হয়েছে। উনি আমাদের দল গঠনকে প্রকাশ্যে সমর্থনও দিয়েছেন। উনি জুন ’২৬-এ নির্বাচন দিয়ে বিদায় নিতে চান। কিন্তু সেটি কেন হবে, আমরা মানব না। উনি বলেছেন, ‘মানুষের কোনো অবসর নেই। অভিধান থেকে রিটায়ারমেন্ট শব্দটিকে বিদায় দিতে হবে।” ওনাকে জনগণ প্রধানমন্ত্রীরূপে দেখতে চায়। ছাত্রদের অভিমত, শেখ হাসিনা ওনার জেল চেয়েছিলেন। সেই ফ্যাসিস্ট ও খুনি হাসিনার বিচার হতে হবে। ড. ইউনূসের নেতৃত্বে আমরা বিচার নিশ্চিত করবই। নির্বাচনের ফাঁক গলে অন্যরা ক্ষমতা নিতে পারে। তারা গোপন সমঝোতার মাধ্যমে খুনিদের ক্ষমা করবে। এখনই কিছু দল ফ্যাসিস্টদের পক্ষ নিয়েছে। ১৫০০ লাশের রক্ত এখনো শুকায়নি। অথচ রাজনীতিতে ক্ষমার বার্তা ঘোষিত হয়েছে। তাই নির্বাচনকে ফ্যাসিস্টমুক্ত রাখতে হবে। কোনো প্রকার ছাড় দেওয়া চলবে না।
আমেরিকা-চীন-রাশিয়া-মধ্যপ্রাচ্য-সার্ক-সবাই ইউনূসকে চায়! 🔹 প্রায় ৫ লাখ উদ্যোক্তা তৈরিতে ‘নাগরিক পার্টি’
ছাত্রদের জোর অভিমত, শুধু বাংলাদেশ নয়; আমেরিকা, চীন, রাশিয়া, মধ্যপ্রাচ্য ড. ইউনূসকে চায়। ভারতের একচ্ছত্র আধিপত্য তিনি রুখে দিয়েছেন। বাজার রাজনীতিতে ভারতের অবস্থান তলানিতে। পণ্য আমদানিতে উদারনীতিতে দেশের বাজার স্থিতিশীল। সমুদ্রের ব্যবহার নিয়ে চমকপ্রদ বিশ্লেষণ দিয়েছেন। নেপাল, ভুটান ও ভারতের ‘সেভেন সিস্টার’কে জড়িয়েছেন। বলেছেন, বাংলাদেশের বন্ধুত্ব নিয়ে সাগরকে উপভোগ করুন। দক্ষিণ এশিয়ার আট দেশের ‘সার্ক’ নিয়েও তিনি আশাবাদী। উল্লেখ্য, দেশের রিজার্ভ ২২ বিলিয়ন ছাড়িয়েছে। রেমিট্যান্স আয়ও অতীতের সকল রেকর্ড ভেঙেছে। বিশ্বসেরা ধনকুবের ইলন মাস্ক বাংলাদেশে ব্যবসা খুলছেন। স্যাটেলাইট-ভিত্তিক ইন্টারনেট স্টারলিঙ্ক কার্যক্রম চালাচ্ছে। দেশের প্রায় ৫ লাখ নতুন উদ্যোক্তা সম্পৃক্ত হচ্ছে। নাগরিক পার্টির ঘনিষ্ঠরা প্রথম সুযোগ পাবে বলে জানা যাচ্ছে। এ ছাড়া এপ্রিলে বিশ্ববিনিয়োগ সম্মেলন ঢাকায়। তাতেও তরুণদের লাভবান করার প্রক্রিয়া চলছে।
অভিভাবকহীন মাঠ প্রশাসন 🔹 স্থানীয় সরকার নির্বাচনের সুযোগ হারাল বিএনপি 🔹 গ্রামীণ ব্যাংক সূত্রে ড. ইউনূসকে ভাঙানোর চেষ্টা
জেলা, উপজেলা, পৌর-করপোরেশন বা পৌরসভায় জনপ্রতিনিধি নেই। ডিসি, ইউএনও বা সরকারি কর্মকর্তারাই প্রশাসক। দেশের কল্যাণে স্থানীয় সরকারে নির্বাচন ছিল জরুরি। কিন্তু বিএনপি সেই ভোটের বিরোধিতা করে আসছে। অথচ মাঠ জরিপে দেখা যায় ভিন্ন চিত্র। নির্বাচনে বিএনপির প্রার্থীরা ব্যাপকভাবে বিজয়ী হতেন। ইউনিয়ন পরিষদ বহাল থাকলেও ক্ষমতাসীনরা পলাতক। আ.লীগহীন নতুন নেতৃত্ব বিএনপি উপহার পেত। কিন্তু দিন যতই গড়াচ্ছে, প্রতিকূলতা ততই বাড়ছে। নাগরিক পার্টি এবার তৃণমূলের রাজনীতিতেও চোখ দিয়েছে। বাংলাদেশের প্রায় প্রতিটি ইউনিয়নে গ্রামীণ ব্যাংক কার্যরত। ফলে প্রতিষ্ঠাতা হিসেবে ড. ইউনূসের পরিচিতি সর্বত্র। ওনার ছবি ও নাম ব্যবহারে সফলতা আসা সম্ভব। তাই যেকোনো প্রকারে রাজনীতিতে নিতে বদ্ধপরিকর। যদিও ড. ইউনূস নীতিগতভাবে না করছেন। অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা পর্যন্তই থাকতে চান। তবে ছাত্রশক্তির ভাষ্য ভিন্ন। নির্বাচনী তফসিল ঘোষণার আগে তিনি পদত্যাগ করবেন। তিন মাস নির্বাচনী প্রচারণা, অতঃপর এমপি, প্রধানমন্ত্রী।
ড. ইউনূসের ঘনিষ্ঠরা অবশ্য অন্য কথা বলছেন। তাদের মতে, পরবর্তী সরকারে প্রেসিডেন্ট হতে পারেন ড. ইউনূস। ৮৬ বছর বয়সে বঙ্গভবনেই ভালো। বিশ্বসংযোগ ও পরিচিতিটা নতুন সরকার কাজে লাগাতে পারবে। কিন্তু প্রধানমন্ত্রী পদে অপেক্ষাকৃত তরুণেরা ভালো করবে।