Thikana News
২৫ এপ্রিল ২০২৫
  1. ই-পেপার
  2. চলতি সংখ্যা
  3. বিশেষ সংখ্যা
  4. প্রধান সংবাদ
  5. আমেরিকার অন্দরে
  6. বিশ্বচরাচর
আমেরিকা শুক্রবার, ২৫ এপ্রিল ২০২৫

চীনের সঙ্গে বাংলাদেশের সম্পর্কের গভীরতা ভারতের শত্রুতা বাড়িয়েছে

চীনের সঙ্গে বাংলাদেশের সম্পর্কের গভীরতা ভারতের শত্রুতা বাড়িয়েছে
চীনের সঙ্গে বাংলাদেশের সম্পর্ক নতুন মাত্রা পেয়েছে। বাংলাদেশ থেকে এই সম্পর্ক উচ্চমাত্রায় উন্নীত করতে নানাভাবে জোর চেষ্টা চলছে। অর্থনৈতিক-বাণিজ্যিক, সামরিক-কূটনৈতিক সকল পর্যায়ে সম্পর্কে গভীরতা এসেছে। এতে করে বাংলাদেশ যেমনি ব্যাপকভাবে লাভবান হবে, ঝুঁকির মাত্রাও বেড়েছে। প্রধানত চীন অর্থনৈতিক-বাণিজ্যিক ক্ষেত্রে বন্ধুরাষ্ট্রের স্বার্থ এড়িয়ে নিজের স্বার্থ অগ্রাধিকার দিয়ে থাকে। তাদের অতিমাত্রায় বাণিজ্যিক স্বার্থপরায়ণতা দ্বিপক্ষীয় স্বার্থকেও ব্যাহত করে, অনেক ক্ষেত্রে হুমকিতে ফেলে। বিশেষ করে নিকট প্রতিবেশী ভারতের সঙ্গে বাংলাদেশের বিদ্যমান পূর্ববর্তী মধুর সম্পর্ককে ঝুঁকিতে ফেলেছে। ড. ইউনূসের অন্তর্বর্তী সরকার সরাসরি ভারতবিদ্বেষী না হলেও ভারতের প্রতি বন্ধুভাবাপন্ন নয়। তারা ভারতের সঙ্গে বিদ্যমান সম্পর্ক এগিয়ে নিতে উৎসাহী নয়। এই সরকার পাকিস্তান-চীন বলয়ে তাদের অবস্থান নিশ্চিত ও দৃঢ় করতে কূটনৈতিকসহ নানাবিধ তৎপরতা চালাচ্ছে। এই সরকারের সময়ে পাকিস্তান সেনাবাহিনীর প্রধানের বাংলাদেশ সফর খুবই তাৎপর্যপূর্ণ। এই সফর ও পরবর্তী সামরিক কার্যক্রম ভারতকে ভাবিয়ে তুলেছে। ভারতের ভৌগোলিক অখণ্ডতা ও নিরাপত্তা ঝুঁকিপূর্ণ করে তুলতে তদানীন্তন পাকিস্তান সরকার ও শক্তিশালী গোয়েন্দা সংস্থা আইএসআই কর্তৃক বহুবিধ তৎপরতা চালানোর অভিযোগ ভারত থেকে করা হয়। পরবর্তী সময়েও তারা তাদের ভারতবিরোধী কার্যক্রম গুটিয়ে নেয়নি। উত্তর-পূর্বাঞ্চলীয় রাজ্যসমূহে সক্রিয় বিচ্ছিন্নতাবাদী জঙ্গিগোষ্ঠীগুলোর ব্যাপারে ভারত বরাবরই উদ্বিগ্ন। বিগত শেখ হাসিনা সরকার ক্ষমতায় থাকাকালে নয়াদিল্লি এ ব্যাপারে নিরুদ্বিগ্ন ছিল। শেখ হাসিনা সরকারের পতন ভারত সরকারকে বিচলিত করে রাখছে। বর্তমান সরকার প্রতিবেশীসহ কোনো দেশেরই অভ্যন্তরীণ বিষয়ে হস্তক্ষেপ করা বা কোনোভাবে ভূমিকা রাখার পক্ষে না হলে এ ব্যাপারে ভারত সরকার চিন্তামুক্ত থাকতে পারছে না বলে কূটনৈতিক মহল মনে করে। ভারতের সঙ্গে বাংলাদেশের সম্পর্ক এখন তলানিতে। শেখ হাসিনা সরকারের সময় ভারতের সন্তুষ্টির জন্য তাদের দাবি অনুযায়ী বাংলাদেশ সামরিক বাহিনীর কিছুসংখ্যক অফিসারকে উচ্চতর প্রশিক্ষণের জন্য ভারতে পাঠানো হয়। ভারত থেকে সামরিক সরঞ্জাম ও যন্ত্রপাতি সংগ্রহ করা হয়, যা কোনো বাহিনীর প্রত্যাশিত ছিল না।
বিগত সরকারের সময় ভারতের সঙ্গে গভীর সম্পর্ক রক্ষা করে চলার পাশাপাশি চীনের সঙ্গেও সম্পর্কের উচ্চতা নতুন মাত্রায় নেওয়া হয়। চীন থেকে পুরোনো সাবমেরিন কেনা হয় অপেক্ষাকৃত অনেক উচ্চমূল্যে। সামরিক সরঞ্জাম, অস্ত্রশস্ত্র কেনা হয় ব্যাপক হারে। বেশ কয়েকটি ক্ষেত্রে চীনের সঙ্গে উন্নত সম্পর্ক গড়ে তোলার বিষয়টি ভারত সহজভাবে নেয়নি। বর্তমান অন্তর্বর্তী সরকারের সময়ে চীনের ওপর নির্ভরতা বহুগুণে বাড়ানো হয়েছে। অন্যদিকে ভারতের সঙ্গে সম্পর্ক প্রায় তলানিতে। প্রধান উপদেষ্টা চীন সফরে গিয়ে চীনা প্রেসিডেন্টের সঙ্গে বৈঠকে মিলিত হন। অর্থনৈতিক-বাণিজ্যিক-সামরিক, কৃষি ও পানিসম্পদ, জ্বালানি সম্পদসহ আরও কয়েকটি খাতে ফলপ্রসূ আলোচনা এবং চুক্তি ও সমঝোতাও হয়েছে। চীন তিস্তা মহাপরিকল্পনা বাস্তবায়ন করবে। এই মহাপরিকল্পনা নিয়ে তারা এরই মধ্যে জরিপ চালিয়েছে। তিস্তা মহাপরিকল্পনার আওতায় বিশাল কর্মযজ্ঞ পরিচালিত হবে। তিস্তামুখ থেকে তিন শতাধিক কিলোমিটারজুড়ে বিশাল জলাধার নির্মাণ করা হবে।
বর্ষায় জমিয়ে রাখা বিশাল জলরাশি দিয়ে শুকনো মৌসুমে নীলফামারী, লালমনিরহাট, রংপুর, কুড়িগ্রাম, বগুড়াসহ উত্তরাঞ্চলে কৃষির জন্য সেচের ব্যবস্থা করা হবে। এতে চীন আর্থিক ও কারিগরি সহায়তা দেবে। চীনা বিশেষজ্ঞ প্রকৌশলীরাসহ কর্মীরা প্রকল্প বাস্তবায়ন করবেন। অবশ্য পানি উন্নয়ন বোর্ডের প্রকৌশলীরা, কর্মীরা সম্পৃক্ত থাকবেন। এ ধরনের, এর চেয়ে অনেক বড় সেচ প্রকল্প বাস্তবায়নের অভিজ্ঞতা রয়েছে চীনের। চীন এই মহাপরিকল্পনায় অর্ধলক্ষ কোটি টাকার জোগান দেবে। জাইকা, বিশ্বব্যাংক, এশীয় উন্নয়ন ব্যাংক, কুয়েত ফান্ড এতে অর্থায়ন করবে। বাংলাদেশও অর্থায়ন করবে। বাংলাদেশে চীন তার দুই শতাধিক গার্মেন্টস ফ্যাক্টরি স্থানান্তর করবে। বাংলাদেশের জনশক্তির এতে কাজের সুযোগ হবে। চীনের সঙ্গে বহুমুখী সম্পর্ক গড়ে তোলার পরিকল্পনা ভারত ভালোভাবে নিচ্ছে না বলেই আভাস পাওয়া যায়। জাতীয় স্বার্থে সরকারের পরিবর্তিত নীতির বিপক্ষে কোনো পদক্ষেপ নেওয়ার সুযোগও তাদের নেই। 

কমেন্ট বক্স