Thikana News
২৫ এপ্রিল ২০২৫
  1. ই-পেপার
  2. চলতি সংখ্যা
  3. বিশেষ সংখ্যা
  4. প্রধান সংবাদ
  5. আমেরিকার অন্দরে
  6. বিশ্বচরাচর
আমেরিকা শুক্রবার, ২৫ এপ্রিল ২০২৫
বেতন হয়নি ৭ হাজার কারখানায়

সরকারের হুঙ্কারেও টনক নড়েনি পোশাক মালিকদের

বেতন-বোনাস ছাড়াই ঈদ কাটবে অনেক শ্রমিকের
সরকারের হুঙ্কারেও টনক নড়েনি পোশাক মালিকদের সংগৃহীত
সরকারের বারবার হুঙ্কারের পরেও টনক নড়েনি পোশাক কারখানার মালিকদের। এখনও অনেক কারখানার শ্রমিকরা বেতন-বোনাস পাননি। সরকার নির্ধারিত সময়ের মধ্যে তৈরি পোশাক শিল্পের সব কারখানা শ্রমিকদের ঈদ বোনাস দেয়নি। চলতি মাসের অর্ধেক বেতন পরিশোধেও পিছিয়ে আছে অনেক কারখানা। এর বাইরে বন্ধ থাকা কয়েকটি কারখানার বেতন-ভাতা ও ক্ষতিপূরণ পরিশোধ নিয়ে আগে থেকেই সমস্যা চলছে। এতে এবারও কষ্টেই ঈদ কাটবে অনেক পোষাক শ্রমিকের। এদিকে পোশাক কারখানাসহ দেশের প্রায় ৭ হাজার কারখানায় এখনও বেতন বোনাস হয়নি বলে জানা গেছে। এদিকে, শ্রম উপদেষ্টার বক্তব্য প্রত্যাখ্যান করে তিন মাসের বকেয়া বেতন, ঈদ বোনাস পরিশোধের দাবিতে বাসন হাতে ভূখা মিছিল করেছে গার্মেন্টস শ্রমিকরা। আসন্ন ঈদুল ফিতরকে সামনে রেখে দেশের পোশাক খাতের শ্রমিকদের বেতন ও উৎসব ভাতা পরিশোধ সম্পন্ন হয়েছে বলে দাবি করেছে বাংলাদেশ গার্মেন্টস ম্যানুফ্যাকচারার্স অ্যান্ড এক্সপোর্টার্স অ্যাসোসিয়েশন (বিজিএমইএ)। অন্যদিকে বাংলাদেশ ট্রেড ইউনিয়ন ফেডারেশন (টাফ) নেতারা বলেছেন শ্রমিকদের ন্যায্য পাওনা বকেয়া রাখার ছলচাতুরি বন্ধ করতে হবে। অবিলম্বে অ্যাপারেলস প্লাস ইকো লিমিটেড এবং টিএনজেড অ্যাপারেলস লিমিটেডের শ্রমিকদের ন্যায্য দাবিগুলো পূরণের দাবি জানিয়েছেন তারা।
জানা গেছে, দেশের অসংখ্য শিল্প-কারখানায় ঈদের আগে এখনো বেতন-বোনাস হয়নি। পোশাক ও বস্ত্র খাতের শিল্প-কারখানা, বেপজার অধীন কারখানা, পাটকলসহ অন্য আরো কিছু খাত মিলে মোট ৯ হাজার ৬৯৫টি শিল্প-কারখানার মধ্যে মার্চ মাসের বেতন দেয়নি সাত হাজার ২২৪টি কারখানা। তৈরি পোশাক শিল্পের মালিকদের সংগঠন বিজিএমইএ ও বিকেএমইএ এবং শিল্প পুলিশের সঙ্গে কথা বলে এসব তথ্য জানা গেছে। আর এখনো ১২২টি পোশাক কারখানায় ফেব্রুয়ারি মাসের বেতন এবং ৩০টিতে জানুয়ারি মাসের বেতন দেওয়া হয়নি। এ ছাড়া এখনো ঈদ বোনাস দিতে পারেনি ৭২৩টি পোশাক কারখানা। জানুয়ারি বা এরও আগের বেতন বকেয়া রয়েছে ৩০টি কারখানায়। এদিকে সরকারের বেঁধে দেওয়া সময়ের মধ্যে শ্রমিকদের বেতন-বোনাস পরিশোধ না করায় ১২টি কারখানার মালিকদের বিদেশযাত্রায় নিষেধাজ্ঞা দিয়েছে সরকার। এসব কারখানার মালিকরা শ্রমিকদের বেতন-বোনাস পরিশোধ না করা পর্যন্ত বিদেশ যেতে পারবেন না। 
এদিকে, শ্রম উপদেষ্টার বক্তব্য প্রত্যাখ্যান করে তিন মাসের বেতন, ঈদ বোনাস পরিশোধের দাবিতে বাসন হাতে ভূখা মিছিল করেছে গার্মেন্টস শ্রমিকরা। গতকাল শুক্রবার এই মিছিলটি করেন শ্রম ভবনের সামনে অবস্থানরত পোশাক শ্রমিকরা। মিছিলের সময় তাদের হাতে ‘বেতন দাও’ লিখা বাসন দেখা যায়।  মিছিলটি শ্রম ভবনের সামনে থেকে শুরু হয়ে পল্টন হয়ে নাইটিঙ্গেল মোড় ঘুরে পুনরায় শ্রম ভবনের সামনে এসে শেষ হয়। এর আগে, শ্রমিকদের পাওনা মজুরি ও বোনাস নিয়ে শ্রম উপদেষ্টার বক্তব্যের প্রতিবাদে শুক্রবার বেলা সাড়ে ১১টায় শ্রম ভবনের সামনে টিএনজেড গ্রুপের শ্রমিক-কর্মচারীরা সংবাদ সম্মেলন করেন। সেখানে আন্দোলনরত শ্রমিকরা বলেন, শ্রমিকদের পাওনা পরিশোধ নিয়ে শ্রম উপদেষ্টা চরম মিথ্যাচার করেছেন। শ্রমিক সমাজ তা মেনে নেয়নি। তাই আমরা আবারও রাজপথে নেমেছি। দাবি আদায় না হওয়া পর্যন্ত ঘরে ফিরে যাবো না।
এনজেড গ্রুপের শ্রমিক-কর্মচারীদের সংবাদ সম্মেলনে অ্যাপারেলস প্লাস ইকো লিমিটেডের শ্রমিক সফিকুল ইসলাম শ্রমিকদের পাওনা পরিশোধ নিয়ে শ্রম উপদেষ্টা চরম মিথ্যাচার করেছেন। শ্রমিক সমাজ তা মেনে নেয়নি। তাই আমরা আবারও রাজপথে নেমেছি। দাবি আদায় না হওয়া পর্যন্ত ঘরে ফিরে যাবো না।’ এছাড়াও তিনটি কারখানার কাছে পাওনা টাকার পরিমাণও তুলে ধরেন তিনি। এতে উল্লেখ করা হয়, ৬ কোটি ৭৫ লাখ বকেয়ার বিপরীতে ২৭ মার্চ (বৃহস্পতিবার) পরিশোধ করা হয়েছে ১ কোটি ৫ লাখ টাকা। দাবি পূরণ না হলে প্রধান উপদেষ্টা বরাবর স্মারকলিপি দেবেন  বলেও জানান তারা।
এদিকে, আসন্ন ঈদুল ফিতরকে সামনে রেখে দেশের পোশাক খাতের শ্রমিকদের বেতন ও উৎসব ভাতা পরিশোধ সম্পন্ন হয়েছে বলে দাবি করেছে বাংলাদেশ গার্মেন্টস ম্যানুফ্যাকচারার্স অ্যান্ড এক্সপোর্টার্স অ্যাসোসিয়েশন (বিজিএমইএ)। বিজিএমইএ প্রশাসক মো. আনোয়ার হোসেন জানান, শ্রমিকদের বেতন-বোনাস নির্বিঘ্নে পরিশোধ করতে বিজিএমইএ শুরু থেকেই উদ্যোগ নিয়েছে। সরকারের সহযোগিতায় ব্যাংকগুলো প্রণোদনার অর্থছাড় করায় উদ্যোক্তারা ফেব্রুয়ারির বেতন, মার্চের আংশিক বা পূর্ণ বেতন এবং ঈদ বোনাস পরিশোধ করতে সক্ষম হয়েছেন। তিনি জানান, ফেব্রুয়ারি মাসের বেতন পরিশোধ করেছে ৯৯.৫৩% কারখানা। মার্চের ১৫/৩০ দিনের বেতন দিয়েছে ৮৩.২০% কারখানা। ঈদ বোনাস পরিশোধ করেছে ৯৪.৭৮% কারখানা। কিছু কারখানা ২৮ ও ২৯ মার্চ বেতন পরিশোধ করবে, ফলে ২৯ মার্চের মধ্যে প্রায় ১০০% কারখানায় বেতন-বোনাস পরিশোধ সম্পন্ন হবে। ৪৪৫টি কারখানাকে ক্লোজ মনিটরিংয়ের আওতায় আনা হয় এবং শতাধিক কারখানার শ্রমিকদের বেতন-বোনাস নিশ্চিত করতে সরাসরি হস্তক্ষেপ করা হয়েছে।
এদিকে, বাংলাদেশ ট্রেড ইউনিয়ন ফেডারেশন (টাফ) নেতারা বলেছেন, শ্রমিকদের ন্যায্য পাওনা বকেয়া রাখার ছলচাতুরি বন্ধ করতে হবে। অবিলম্বে অ্যাপারেলস প্লাস ইকো লিমিটেড এবং টিএনজেড অ্যাপারেলস লিমিটেডের শ্রমিকদের ন্যায্য দাবিগুলো পূরণের দাবি জানান তারা।

ঠিকানা/এসআর

কমেন্ট বক্স