Thikana News
৩১ অক্টোবর ২০২৫
  1. ই-পেপার
  2. চলতি সংখ্যা
  3. বিশেষ সংখ্যা
  4. প্রধান সংবাদ
  5. আমেরিকার অন্দরে
  6. বিশ্বচরাচর
আমেরিকা শুক্রবার, ৩১ অক্টোবর ২০২৫


বিকল্প ছাড়াই এনআইডি  বাতিল, ক্ষুব্ধ প্রবাসীরা

দেশের সম্পদ-সম্পত্তি বেহাত হওয়ার আশঙ্কা 
বিকল্প ছাড়াই এনআইডি  বাতিল, ক্ষুব্ধ প্রবাসীরা সংগৃহীত



 
প্রবাসীরা ভোটার হওয়ার দাবিতে দীর্ঘদিন ধরে সোচ্চার রয়েছেন। কোনো সরকারই তাদের দাবি পূরণ করছে না। বরং অন্তবর্তী সরকারের সময় প্রবাসীদের, বিশেষ করে যারা বিদেশি নাগরিকত্ব গ্রহণ করেছে তাদের জাতীয় পরিচয়পত্র (এনআইডি) বাতিলের নির্দেশ দিয়েছে। এ খবরে বিচলিত হয়ে পড়েছেন তারা। এনআইডি না থাকলে তাদের দেশের সম্পদ ও সম্পত্তি বেহাত হতে পারে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে। 
বিশ্বের বিভিন্ন দেশে দুই কোটির বেশি প্রবাসী রয়েছেন। তাদের মধ্যে মধ্যপ্রাচ্য ছাড়া যুক্তরাষ্ট্র, কানাডা, যুক্তরাজ্য, অস্ট্রেলিয়া ও ইউরোপের বিভিন্ন দেশের নাগরিকত্ব গ্রহণ করেছেন। কমনওয়েলথভুক্ত দেশ ছাড়া অন্য দেশের নাগরিকত্ব গ্রহণ করলে বাংলাদেশের নাগরিকত্ব চলে যায়। এসব প্রবাসী বিদেশে নাগরিকত্ব নিলেও মাতৃভূমি বাংলাদেশে রয়েছে সম্পদ ও সম্পত্তি। কেউ পৈত্রিক সূত্রে, কেউ ক্রয়সূত্রে সম্পদ গড়েছেন। এসব সম্পদ ও সম্পত্তি রক্ষণাবেক্ষণের জন্য, বিশেষ করে ক্রয়-বিক্রয় এবং ব্যাংক হিসাব পরিচালনার জন্য জাতীয় পরিচয়পত্র (এনআইডি) থাকা বাধতামূলক। কিন্তু সম্প্রতি সরকার সিদ্ধান্ত নিয়েছে যারা বিদেশি নাগরিকত্ব গ্রহণ করবে তাদের এনআইডি বাতিল করা হবে। ৮ আগস্ট অন্তর্বর্তী সরকার দায়িত্ব গ্রহণের পর অক্টোবর মাসে জানিয়েছিল যে প্রবাসী নাগরিকদের এনআইডি বাতিল করা হবে না। কিন্তু ছয় মাসের মাথায় সরকার সিদ্ধান্ত পরিবর্তন করেছে। বাংলাদেশের যেসব ভোটার অন্য দেশের রেসিডেন্সি গ্রহণের জন্য নাগরিকত্ব ত্যাগ করবেন, তাদের জাতীয় পরিচয়পত্র (এনআইডি) বাতিলের সিদ্ধান্ত নিয়েছে নির্বাচন কমিশন (ইসি)। সম্প্রতি সাংবিধানিক এ প্রতিষ্ঠানটির এক সমন্বয় সভায় ইসি আখতার আহমেদ এ সিদ্ধান্ত বাস্তবায়নের নির্দেশ দিয়েছেন। সমন্বয় সভায় এনআইডি অনুবিভাগের পরিচালক (অপারেশনস) ও নির্বাচন সহায়তা শাখার উপসচিবকে নির্দেশনা দেন ইসি সচিব।
নির্দেশনায় ইসি সচিব বলেছেন, যারা বাংলাদেশের নাগরিকত্ব ত্যাগ করে অন্য দেশের রেসিডেন্সি গ্রহণ করছেন, তাদের ভোটার তালিকা ও এনআইডি থেকে তাৎক্ষণিক নাম বাদ দিতে হবে। এ ক্ষেত্রে তথ্যগত কোনো ঘাটতি থাকলে সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়ের সঙ্গে যোগাযোগ করে পদক্ষেপ নিতে হবে।
সভা সূত্র জানায়, প্রবাসে বসবাসরত কোনো বাংলাদেশি নাগরিক অন্য কোনো দেশের রেসিডেন্সি গ্রহণ করার জন্য বাংলাদেশের নাগরিকত্ব ত্যাগ করেছেন কি না তা স্বরাষ্ট্র ও পররাষ্ট্র মন্ত্রাণালয়ে যোগাযোগের মাধ্যমে তথ্য সংগ্রহ করে সংশ্লিষ্ট ব্যক্তির নাম ভোটার তালিকা থেকে কর্তন ও বাতিল করতে নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। এসব বিষয় খেয়াল রেখে প্রবাসীদের ভোটার করার জন্য মাঠ পর্যায়ে সম্প্রতি চিঠি দিয়েছে সংস্থাটি।
চিঠিতে সংস্থাটি বলেছে, দ্য বাংলাদেশ সিটিজেনশিপ রুলস-১৯৭৮ এর ৪ নম্বর রুল অনুযায়ী, বৈবাহিক সূত্রে বাংলাদেশের নাগরিকত্ব অর্জনকারী বিদেশি নাগরিকের ক্ষেত্রে জাতীয় পরিচয় নিবন্ধন ও ভোটার তালিকায় নাম অন্তর্ভুক্তির জন্য সুরক্ষা সেবা বিভাগ হতে ইস্যুকৃত নাগরিক সনদ, বিবাহের প্রমাণপত্র ও স্বামী/স্ত্রীর জাতীয় পরিচয়পত্র দাখিল করতে হবে। এ ছাড়া বাংলাদেশের কোনো নাগরিক যদি অন্য কোনো দেশের নাগরিকত্ব গ্রহণ করার জন্য বাংলাদেশের নাগরিকত্ব পরিত্যাগ করেন, তবে উপযুক্ত সাক্ষ্য-প্রমাণ সাপেক্ষে নির্বাচন কমিশন সংশ্লিষ্ট ব্যক্তির জাতীয় পরিচয়পত্র বাতিল করে ভোটার তালিকা হতে তার নাম কর্তন করবে।
জানা গেছে, বর্তমানে সংযুক্ত আরব আমিরাত, ইতালি, যুক্তরাজ্য, সৌদি আরব, কাতার, কুয়েত ও মালয়েশিয়া -এই সাতটি দেশে দূতাবাসের মাধ্যমে ভোটার নিবন্ধন কার্যক্রম পরিচালনা করছে ইসি। এ ক্ষেত্রে অনলাইনে আবেদন করে দূতাবাসে এসে ছবি তুলে নিবন্ধন সম্পন্ন করতে হচ্ছে। এর আগে সংশ্লিষ্ট আবেদনকারীর আবেদন তার নিজ উপজেলা নির্বাচন কর্মকর্তার দ্বারা তদন্ত করে সত্যতা যাচাই করে নিচ্ছে ইসি।
সূত্র জানিয়েছে, ইতিমধ্যে সাতটি দেশ থেকে মোট আবেদন পড়েছে ৪২ হাজার ২৬৯টি। এর মধ্যে যাচাই-বাছাইয়ে বাদ পড়েছে ৩ হাজার ৪০১টি আবেদন। আবেদনকারীর উপজেলা নির্বাচন অফিসে তদন্ত প্রক্রিয়াধীন আছে ২০ হাজার ১৮৪টি আবেদনের। তদন্ত শেষে আবেদন অনুমোদন হয়েছে ১৭ হাজার ৬০৭ জনের। অনুমোদনের অপেক্ষায় আছে ৪৫৭ জনের আবেদন। আর সংশ্লিষ্ট দেশগুলোর বাংলাদেশ দূতাবাস থেকে আঙুলের ছাপ ও ছবি নেওয়া হয়েছে ২২ হাজার ১২৮ জনের। সবচেয়ে বেশি আবেদন পড়েছে সংযুক্ত আরব আমিরাত থেকে ১৮ হাজার ৫৮৯টি। আর সবচেয়ে কম আবেদন পড়েছে মালয়েশিয়ায় ৭৮৪ জন। গত বছরের মে থেকে এই আবেদনগুলো এসেছে।
নির্বাচন কমিশন প্রবাসী কল্যাণ মন্ত্রণালয়, জনশক্তি ব্যুরো, পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়, বাংলাদেশ অ্যাসোসিয়েশন অব ইন্টারন্যাশনাল রিক্রুটিং এজেন্সি-বায়রাসহ বিভিন্ন সংস্থার কাছ থেকে তথ্য সংগ্রহ করে দেখেছে ৪০টি দেশে বাংলাদেশি প্রবাসীদের আধিক্য রয়েছে। এসব দেশকেই মাথায় রেখে কার্যক্রম এগিয়ে নেওয়া হচ্ছে। দেশগুলো হলো—সৌদি আরব, সংযুক্ত আরব আমিরাত, কুয়েত, ওমান, কাতার, বাহরাইন, লেবানন, জর্ডান, লিবিয়া, সুদান, মালয়েশিয়া, সিঙ্গাপুর, দক্ষিণ কোরিয়া, যুক্তরাজ্য, ইতালি, হংকং, মিসর, ব্রুনাই, মৌরিশাস, ইরাক, যুক্তরাষ্ট্র, কানাডা, জাপান, অস্ট্রেলিয়া, গ্রিস, স্পেন, জার্মানি, দক্ষিণ আফ্রিকা, ফ্রান্স, নেদারল্যান্ডস, বেলজিয়াম, সুইজারল্যান্ড, ব্রাজিল, চীন, ইন্দোনেশিয়া, মালদ্বীপ, নিউজিল্যান্ড, রাশিয়া, তুরস্ক ও সাইপ্রাস। এসব দেশে প্রায় ১ কোটি ৪০ লাখ ৪৬ হাজার ৫৩৪ জন প্রবাসী রয়েছেন। এদের মধ্যে সবচেয়ে রয়েছে বেশি প্রবাসী রয়েছেন সৌদি আরবে—৪০ লাখ ৪৯ হাজার ৫৮৮ জন। আর সবচেয়ে কম রয়েছে নিউজিল্যান্ডে ২ হাজার ৫০০ জন।
সর্বশেষ হালনাগাদ অনুযায়ী, বর্তমানে দেশে মোট ভোটার সংখ্যা দাঁড়াল ১২ কোটি ৩৭ লাখ ৩২ হাজার ২৭৪ জন। বাড়ি বাড়ি গিয়ে ভোটার তালিকা হালনাগাদ চলমান রয়েছে। এতে আরও প্রায় ৫৭ লাখ ভোটার আগামী জুনে তালিকায় যুক্ত করার পরিকল্পনা নিয়ে এগোচ্ছে ইসি।
বিদেশের নাগরিকত্ব গ্রহণ করায় এনআইডি বাতিল হলে বিপাকে পড়বেন লাখ লাখ প্রবাসী। তাদের মতে- বিশ্বে উন্নয়নশীল দেশগুলোর নাগরিকরা বিদেশের নাগরিকত্ব গ্রহণ করছেন। তাদের ভোটাধিকার থাকে না। তবে এনআইডির বিকল্প হিসাবে একটি পরিচয়পত্র প্রদান করা হয়ে থাকে। বাংলাদেশের পাশের দেশ ভারতে এনআরআই কার্ড চালু রয়েছে। অর্থাৎ যারা অন্য দেশের নাগরিকত্ব গ্রহণ করেছেন তাদের এনআইডির সমপর্যায়ের এনআরআই কার্ড দেওয়া হয়। এই কার্ড দিয়ে তারা দেশটিতে সম্পদ-সম্পত্তি এবং ব্যাংক হিসাব খোলাসহ যে কোনো লেনদেন করতে পারেন। বাংলাদেশ সরকারের উচিত বিকল্প ব্যবস্থা রাখা। 
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক বাংলাদেশ সোসাইটির একজন কর্মকর্তা এ প্রতিবেদককে বলেন, শুনেছি সরকার একটা সিদ্ধান্ত নিতে যাচ্ছে। বিকল্প ব্যবস্থা না রেখে এটি করা হলে তা হবে আত্মঘাতি সিদ্ধান্ত। তিনি বলেন, প্রবাসীরা দেশে রেমিট্যান্স পাঠিয়ে বাংলাদেশের অর্থনীতি সচল রাখছেন। অথচ সেই প্রবাসীদের ওপর যত খড়গ নেমে আসছে। সরকারের উচিত এ ব্যাপারে গণশুনানি করা। হঠাৎ করে এ ধরনের সিদ্ধান্ত নেওয়া হলে তা বিপরীত প্রতিক্রিয়া হতে পারে। 
বাংলাদেশ সোসাইটির ওই কর্মকর্তার আশঙ্কা- এনআইডি বাতিল হলে অনেক প্রবাসীর সম্পদ বেদখল হতে পারে। দূরের লোকজন নয়, অনেক আত্মীয়-স্বজনই প্রবাসীদের সম্পদ দখল করে নেবেন। এটা নিয়ে বিভেদ-হানাহানি সৃষ্টি হতে পারে। এ ধরনের সিদ্ধান্ত থেকে সরকারের সরে আসা উচিত। 

কমেন্ট বক্স