বিশ্বব্যাপী মুসলমানদের জন্য বিশেষ তাৎপর্যপূর্ণ মাস পবিত্র রমজান। আর ইফতার রোজার একটি গুরুত্বপূর্ণ অংশ। দিনভর রোজা রেখে শরীরের ক্লান্তি দূর করতে অন্যতম খাবার হচ্ছে শরবত। আমরা এই শরবত তৈরিতে সাধারণত ব্যবহার করে থাকি চিনি বা গুড়। তবে আমাদের স্বাস্থ্যের জন্য চিনি নাকি গুড় কোনটি উপকারী সেটা অনেকেই জানি না। মেডিকেল নিউজ টুডের এক প্রতিবেদনে চিকিৎসকরা এই প্রশ্নের উত্তর দিয়েছেন।
তারা জানান, খাবারে মিষ্টির স্বাদ যোগ করতে চিনি এবং গুড় দুই উপাদানই ব্যবহার করা হয়। চিনি মূলত সাদা ক্রিস্টালের মত ছোট দানার হয়, অন্যদিকে গুড় বাদামী বর্ণের হয়। উভয়ই তৈরি হয় আখের রস থেকে। কিন্তু দুটোর প্রক্রিয়া পদ্ধতি দুটোর থেকে আলাদা। দুটোর স্বাদ মিষ্টি হলেও একে অপরের থেকে ভিন্ন। এমনকি চিনি অনেক বেশি মিষ্টি এবং নিজস্ব কোনো স্বাদ নেই। বর্তমানে একাধিক পুষ্টিবিদরা চিনির বদলে গুড়কে বেশি প্রাধান্য দিচ্ছেন।
ভালো মানের গুড় প্রায় ৭০% সুক্রোজ ধারণ করে, যেখানে সাদা চিনিতে ৯৯.৭% সুক্রোজ থাকে। অনেকে গুড়কে ‘ঔষধি চিনি’ বলে অভিহিত করেন। গুড় আয়ুর্বেদিক চিকিৎসায় হাজার বছর ধরে ব্যবহৃত হয়ে আসছে এবং অনেকেই বিশ্বাস করেন এটি বিভিন্ন রোগ নিরাময়ে সহায়ক।
গুড় কি চিনির চেয়ে স্বাস্থ্যকর: একটি গবেষণায় বলা হয়েছে, গুড় সাদা চিনির চেয়ে তুলনামূলক বেশি পুষ্টিগুণসম্পন্ন। সাধারণ পরিশোধিত চিনিতে কোনো প্রোটিন, ফ্যাট, খনিজ বা ভিটামিন থাকে না। অন্যদিকে, ১০০ গ্রাম গুড়ে থাকে—
সুক্রোজ: ৬৫–৮৫ গ্রাম
ফ্রুকটোজ ও গ্লুকোজ: ১০–১৫ গ্রাম
প্রোটিন: ২৮০ মিলিগ্রাম (৫.৬% দৈনিক চাহিদা)
পটাসিয়াম: ১০৫৬ মিলিগ্রাম (২২.৫% দৈনিক চাহিদা)
ম্যাগনেসিয়াম: ৭০–৯০ মিলিগ্রাম (১৯% দৈনিক চাহিদা)
ক্যালসিয়াম: ৪০–১০০ মিলিগ্রাম (৫% দৈনিক চাহিদা)
আয়রন: ১১ মিলিগ্রাম (৬১% দৈনিক চাহিদা)
ভিটামিন এ: ৩.৮ মিলিগ্রাম (৪২২% দৈনিক চাহিদা)
ভিটামিন সি: ৭ মিলিগ্রাম (৭.৮% দৈনিক চাহিদা)
ভিটামিন ই: ১১১.৩০ মিলিগ্রাম (৭৪০% দৈনিক চাহিদা)
তবে, উল্লেখ্য যে, একজন সাধারণ ব্যক্তি একবারে ১০০ গ্রাম গুড় খাওয়া এড়িয়ে চলেন এবং সাধারণত ১ চা চামচ (৭ গ্রাম) এর বেশি গ্রহণ করেন না।
গুড়ের উপকারিতা: গুড়ের কিছু স্বাস্থ্য উপকারিতার কথা বলেছেন পুষ্টিবিদরা। এগুলো হলো—
হজমে সহায়তা করে
লিভার ও রক্ত পরিষ্কার করে
শ্বাসযন্ত্রের সংক্রমণ দূর করে
কোষ্ঠকাঠিন্য দূর করে
শরীরে শক্তি বৃদ্ধি করে
মানসিক চাপ কমাতে সহায়ক
অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট ও ক্যানসার প্রতিরোধী গুণ রয়েছে
বিভিন্ন খাবার তৈরি করতে বিশ্বের অনেক দেশে বিশেষ করে এশিয়া ও আফ্রিকায় চিনির পরিবর্তে গুড়ের ব্যবহার করা হয়। চিনির তুলনায় গুড় শরীরের জন্য বেশি উপকারী। তবে মনে রাখতে হবে গুড়ও এক ধরনের চিনি এবং এর অতিরিক্ত গ্রহণ স্বাস্থ্যের জন্য ক্ষতিকর হতে পারে। তাই, পরিমিত পরিমাণে গুড় গ্রহণ করাই ভালো।
ঠিকানা/এএস