Thikana News
২২ নভেম্বর ২০২৪
  1. ই-পেপার
  2. চলতি সংখ্যা
  3. বিশেষ সংখ্যা
  4. প্রধান সংবাদ
  5. আমেরিকার অন্দরে
  6. বিশ্বচরাচর
আমেরিকা শুক্রবার, ২২ নভেম্বর ২০২৪

পণ্যমূল্য কমে যাচ্ছে, ঝুঁকিতে চীনের অর্থনীতি

পণ্যমূল্য কমে যাচ্ছে, ঝুঁকিতে চীনের অর্থনীতি চীনে জুলাই মাসে মূল্যস্ফীতি কমে ঋণাত্মক পর্যায়ে চলে গেছে। ছবি: রয়টার্স
চাহিদা কমার কারণে পণ্য বা সেবার দাম যখন আগের চেয়ে কমে যায়, তখন সেটাকে বলে মূল্য সংকোচন। আর সেই মূল্য সংকোচনের কবলে পড়েছে চীনের অর্থনীতি। গত জুলাই মাসে পণ্যমূল্য কমে গিয়ে দুই বছরের মধ্যে প্রথমবারের মত মূল্য সংকোচনের কবলে পড়েছে দেশটির অর্থনীতি, যা উদ্বিগ্ন চীনের অর্থনীতিবিদরা।

কারণ বিশ্বের অধিকাংশ দেশ যখন মূল্যস্ফীতি সামলাতে হিমশিম খাচ্ছে, চীনে তখন এই উল্টো দশা।

সেখানে মূল্যস্ফতির হার আগের বছরের জুলাই মাসের তুলনায় শূন্য দশমিক ৩ শতাংশ কমে ঋণাত্মক পর্যায়ে চলে গেছে। অর্থনীতির পরিভাষায় একে ‘ডিফ্লেশন’ বা ‘মূল্য সংকোচন’ বলে।

বিশ্লেষকরা বলছেন, কোভিডের ধকল সামলে বিশ্বের দ্বিতীয় বৃহত্তম অর্থনীতির দেশটি যখন চাহিদা পুনরুজ্জীবিত করার চেষ্টা করছে, তখন এই মূল্য সংকোচন সরকারকে চাপে ফেলছে।

বিবিসি লিখেছে, আমদানি ও রপ্তানি সূচকে অবনমনের পর ভোগ্যপণ্যের মূল্য সূচকের এই ধাক্কা চীনের অর্থনৈতিক পুনরুদ্ধারের গতি টেনে ধরবে।

বাড়তে থাকা স্থানীয় সরকারের ঋণ এবং আবাসন খাতের খরার কারণেও চ্যালেঞ্জের মোকাবিলা করতে হচ্ছে চীন। এর মধ্যে রেকর্ড উচ্চতায় পৌঁছানো যুব বেকারত্বের সমস্যাও উদ্বেগ বাড়াচ্ছে, যখন বিশ্ববিদ্যালয় থেকে স্নাতক শেষ করে ১ কোটি ১০ লাখের বেশি তরুণ এ বছর চাকরির বাজারে প্রবেশ করবে ধারণা করা হচ্ছে।

পণ্যমূল্য হ্রাসের কারণে ঋণের বোঝা কমানো চীনের জন্য কঠিন হয়ে উঠছে। মূল্য সংকোচনের কারণে প্রবৃদ্ধির গতিও ধীর হয়ে আসবে, সেটা নিয়েও সরকারকে ভাবতে হচ্ছে।

বিনিয়োগ ফার্ম ইএফজি অ্যাসেট ম্যানেজমেন্টের ড্যানিয়েল মুরে বলেন, মূল্যস্ফীতি বাড়িয়ে দিতে পারে এমন গোপন কোনো যাদুর কাঠি নেই। তবে এজন্য আর্থিক নীতি সহজ করার পাশাপাশি সরকারি ব্যয় বৃদ্ধি এবং কর কমানোর পরামর্শ দিচ্ছেন তিনি।

মূল্যহ্রাস কখন থেকে

কোভিড মহামারীর বিধিনিষেধ শেষ হওয়ার পর বেশিরভাগ উন্নত দেশে ভোক্তা ব্যয় বেড়ে যায়। কঠিন সময়ে যারা অর্থ সঞ্চয়ে বেশি জোর দিচ্ছিলেন, তারাও হাত খুলে খরচ করতে শুরু করেন। বাড়তে থাকা এই চাহিদার সঙ্গে তাল মেলাতে ব্যবসা প্রতিষ্ঠানগুলোকেও হিমশিম খেতে হয়।

যেসব পণ্যের সরবরাহ কম ছিল, চাহিদা হঠাৎ বেড়ে যাওয়ায় দামের লাগাম ছুটে যায়। রাশিয়া ইউক্রেইনে আক্রমণ করে বসার পর জ্বালানি খরচ দ্বিগুণ বেড়ে যায়। কিন্তু চীনে এমনটি ঘটেনি। বিশ্বের সবচেয়ে কঠিন কোভিড বিধিনিষেধ থেকে ফেরা চীনের বাজারে পণ্যমূল্য বাড়েনি। সবশেষ ২০২১ সালের ফেব্রুয়ারিতে চীনে পণ্যমূল্য পড়েছিল।

আসলে কয়েক মাস ধরেই চীনের অর্থনীতি মূল্য সংকোচনের কিনারে ছিল। মিল গেইটে যে দামে পণ্য বিক্রি হয়, তাও পড়ে গিয়েছিল।

হংকং ইউনিভার্সিটি অব সায়েন্স অ্যান্ড টেকনোলজির ধ্যাপক অ্যালিসিয়া গার্সিয়া-হেরেরো বলেন, যতদূর দেখা যায় বিশ্বের অন্যান্য অংশ, বিশেষ করে পশ্চিমে যখন চাহিদা বাড়ছে, চীনে তখন কমছে। এটা উদ্বেগজনক।

“মূল্য সংকোচন চীনের উত্তরণে সাহায্য করবে না। বরং ঋণের বোঝা আরও বাড়াবে। এসব ভালো খবর নয়।”

মূল্য সংকোচন কেন সমস্যা

বিশ্বে বিক্রি হওয়া বিভিন্ন পণ্য সম্ভারের একটি বড় অংশ উৎপাদন করে চীন। ফলে সেখানে যদি মূল্য সংকোচন পরিস্থিতি দীর্ঘায়িত হয়, তাহলে বিশ্বের অনেক দেশে তার ইতিবাচক প্রভাব পড়তে পারে, অর্থাৎ পণ্যমূল্য কমে আসতে পারে। 

কিন্তু যদি কম দামের চীনা পণ্য বিশ্ব বাজারে ছড়িয়ে পড়ে, তখন অন্যান্য দেশের পণ্য উৎপাদনকারীরা চাপের মধ্যে পড়বে। তাদের বিনিয়োগ ঝুঁকির মধ্যে পড়লে চাপ তৈরি হবে কর্মসংস্থানে।

দীর্ঘসময় ধরে চীনে মূল্য সংকোচন চলতে থাকলে উৎপাদক কোম্পানির লাভের ভাগও কমে যাবে। তাতে বেড়ে যেতে পারে বেকারত্ব। জ্বালানি, কাঁচামাল ও খাদ্যপণ্যের বৃহত্তম বাজারে চাহিদা কমে গেলে তা বিশ্বের রপ্তানি বাজারকেও ধাক্কা দেবে।

তাহলে এখন কী

চীনের অর্থনীতি মূল্য সংকোচন ছাড়াও নানা সমস্যার মধ্যে রয়েছে। মহামারীর পর থেকে দেশটি অর্থনৈতিক পুনরুদ্ধার প্রক্রিয়া প্রত্যাশার সঙ্গে তাল মিলিয়ে এগোতে পারছে না।

সরকারি পরিসংখ্যানে দেখা যাচ্ছে, জুলাই মাসে চীনের রপ্তানি এক বছরের আগের তুলনায় ১৪ দশমিক ৫ শতাংশ কমে গেছে। আমদানি কমেছে ১২ দশমিক ৪ শতাংশ। হতাশাজনক এই তথ্য বলছে, চীনের অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি এ বছর ফের শ্লথ হতে পারে।

চীনের সবচেয়ে বড় রিয়েল এস্টেট কোম্পানি এভারগ্রান্ডে ধ্বংসের দুয়ারে পৌঁছে যাওয়ার পর এ খাতের চলমান সংকট উৎরানোর চেষ্টা করে যাচ্ছে সরকার। ‘সবকিছু নিয়ন্ত্রণে রয়েছে’- সরকারের পক্ষ থেকে এমন বার্তা দেওয়া হলেও অর্থনৈতিক পুনরুদ্ধারে আদতে বড় কোনো পদক্ষেপ নেওয়া হয়নি।

কর্নেল ইউনিভার্সিটির বাণিজ্য নীতি ও অর্থনীতির অধ্যাপক এসওয়ার প্রসাদ বলেন, চীনের অর্থনৈতিক পুনরুদ্ধারের মূল নিয়ামক হতে পারে বিনিয়োগকারী ও ভোক্তাদের মধ্যে আস্থা ফিরিয়ে আনা।

“মূল বিষয় হল, সরকার বেসরকারি খাতে আস্থা ফেরাতে পারে কিনা, যাতে তারা বাজারে প্রবেশ করে, সঞ্চয়ের পরিবর্তে খরচ করে এবং ব্যবসাপ্রতিষ্ঠানগুলো বিনিয়োগ করা শুরু করে। তবে এ কাজটি সরকার এখন পর্যন্ত করতে পারেনি।”

সেজন্য কর কমানোসহ কিছু উৎসাহমূলক পদক্ষেপ নেওয়ার ওপর জোর দিচ্ছেন প্রসাদ।

ঠিকানা/এসআর

কমেন্ট বক্স