জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের ডাকে সাড়া দিতে শুরু করেছে রাজনৈতিক দলগুলো। পাঁচটি সংস্কার কমিশনের প্রতিবেদন অনুসারে রাজনৈতিক দলগুলোর কাছে মতামত চেয়েছিল প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূসের নেতৃত্বাধীন জাতীয় ঐকমত্য কমিশন। প্রথম দফায় সাতটি দল তাদের মতামত দিলেও, বাকি ছিল বিএনপিসহ বড় রাজনৈতিক দলগুলো। আজ ২৩ মার্চ (রবিবার) কমিশনে মতামত জমা দেওয়ার কথা বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল (বিএনপি) ও জাতীয় নাগরিক পার্টি (এনসিপি)। ফলে ঐকমত্যের পালে হাওয়া লেগেছে বলছেন সংশ্লিষ্টরা।
২২ মার্চ (শনিবার)ঐকমত্য কমিশনের সঙ্গে সংলাপ করেছে খেলাফতে মজলিস ও বাংলাদেশ লিবারেল পার্টি। এদিকে নির্বাচনে ভোট দিতে ভোটারের বয়স সর্বনিম্ন ১৬ বছর এবং প্রার্থী হতে বয়স ২৩ বছর হতে হবে। নির্বাচন বিষয়ে সংস্কারের সুপারিশে এমন প্রস্তাব দেবে জাতীয় নাগরিক পার্টি।
শনিবার জাতীয় নাগরিক পার্টির কার্যালয়ে অনুষ্ঠিত জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের সংস্কার সুপারিশমালার স্রেডশিট সাবমিশন এবং সংস্কার সমন্বয় কমিটির পরিচিতি উপলক্ষে সংবাদ সম্মেলনে দলটির যুগ্ম আহ্বায়ক এবং সংস্কার সমন্বয় কমিটির কো-অর্ডিনেটর সারোয়ার তুষার বলেন, সংস্কার প্রস্তাবে বলা হয়েছে প্রার্থীর ন্যূনতম বয়স ২১ বছর। আমরা মনে করছি এটা ২৩ বছর হতে পারে। সেক্ষেত্রে আমরা মনে করছি ভোট দেওয়ার বয়স ১৬ বছর হতে পারে। এর কারণ হচ্ছে এবারের অভ্যুত্থানকে সারা বিশ্বের জেন-জির অভ্যুত্থান বলা হচ্ছে। গণঅভ্যুত্থানে তাদের এত বড় একটা স্টেপ তৈরি হলো, এরপর পরবর্তিত যে বাংলাদেশ এবং আসন্ন যে নির্বাচন সেই নির্বাচনে তারা মতামত দিতে পারবে না শুধুমাত্র বয়স ১৮ বছরের নিচে হওয়ার কারণে। এটা আমরা যৌক্তিক মনে করছি না। এজন্য ১৬ বছর ভোটারের বয়স করার জন্য আগামীকাল আমরা প্রস্তাব করবো। শুরু থেকে বলে এসেছি আমরা একটি নতুন গণতান্ত্রিক সংবিধান চাই। সেটা করার জন্য আমরা সবচেয়ে ভালো পদ্ধতি মনে করি গণপরিষদ নির্বাচন। সেক্ষেত্রে আমরা বলেছি গণপরিষদ নির্বাচন যদি না হয় তাহলে গণপরিষদ এবং আইনসভা হিসেবে নির্বাচিত সংসদ হতে হবে। এমন একটা আইনসভা গণপরিষদের ভূমিকায় থাকবে।
জাতীয় ঐকমত্য কমিশন রাজনৈতিক দলগুলোর মতামত জানতে যে স্প্রেডশিট পাঠিয়েছে, তাতে শুধু ‘হ্যাঁ’ আর ‘না’ অপশন রয়েছে। সংবিধানের ‘প্রস্তাবনা’র মতো অতিগুরুত্বপূর্ণ বিষয় নিয়ে সংস্কার কমিশনের সুপারিশে থাকলেও সেটা স্প্রেডশিটে উল্লেখ করা হয়নি। স্প্রেডশিটে ৭০টির মতো প্রস্তাব উল্লেখ থাকলেও মূল প্রতিবেদনে সুপারিশ সংখ্যা ১২৩টির মতো বলে জানিয়েছে বিএনপি। একইভাবে নির্বাচনব্যবস্থা সংস্কার কমিশনের মূল প্রতিবেদনে ১৫০টির মতো সুপারিশ তুলে ধরা হলেও স্প্রেডশিটে মাত্র ২৭টি বিষয় উল্লেখ করা হয়েছে। এর মধ্যে অধিকাংশই সংবিধান সংস্কারের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট। তাই বিএনপি মনে করছে, স্প্রেডশিটের সঙ্গে মূল সুপারিশগুলোর ওপর মতামত সংযুক্ত করে দিলে তবেই বিভ্রান্তি এড়ানো যাবে। জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের স্প্রেডশিটের অবস্থা এবং কমিশন সদস্যদের বিভিন্ন সময়ের বক্তব্য ও বিশেষ কয়েকটি রাজনৈতিক দলের বক্তব্য-বিবৃতির মধ্যে মিল পাওয়া যাচ্ছে বলে জানিয়েছে দলটি।
২২ মার্চ (শনিবার) রাজধানীর গুলশানে বিএনপির চেয়ারপারসনের রাজনৈতিক কার্যালয়ে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেন, সংস্কার আগে, নির্বাচন পরে কিংবা নির্বাচন আগে, সংস্কার পরে- এ ধরনের অনাবশ্যক বিতর্কের কোনো অবকাশ নেই। যেহেতু সংস্কার একটি চলমান প্রক্রিয়া; সংস্কার আর নির্বাচন- দুটোই একসঙ্গে চলতে পারে। রাজনৈতিক দলগুলোর ঐকমত্যের ভিত্তিতে একটি চার্টার অব রিফর্ম (সংস্কার সনদ) তৈরি হতে পারে।
তিনি আরও বলেন, জনমনে প্রশ্নের জন্ম দিতে পারে যে এসব বিষয় যেন একটি পূর্বনির্ধারিত কর্মপরিকল্পনার অংশ। কাজেই তা গণতন্ত্রের স্বার্থের পক্ষে কি না বলা মুশকিল। সুপারিশগুলো পর্যালোচনা করলে দেখা যায়, ভবিষ্যতে অনির্বাচিত ব্যক্তিদের রাষ্ট্রীয় দায়িত্বে নিয়োগের অযৌক্তিক প্রচেষ্টা রয়েছে, যা অনভিপ্রেত। অন্তর্বর্তী সরকারকে সর্বোচ্চ নিরপেক্ষতার অবস্থান বজায় রাখতে হবে। কোনো মহলের রাজনৈতিক ফায়দা হাসিলের এজেন্ডা যেন সরকারের কর্মপরিকল্পনার অংশ না হয়, সেদিকেও সজাগ দৃষ্টি রাখতে হবে। সংস্কার আগে, নির্বাচন পরে কিংবা নির্বাচন আগে, সংস্কার পরে- এ ধরনের অনাবশ্যক বিতর্কের কোনো অবকাশ নেই বলেও মন্তব্য করে মির্জা ফখরুল বলেন, যেহেতু সংস্কার একটি চলমান প্রক্রিয়া; সংস্কার আর নির্বাচন- দুটোই একসঙ্গে চলতে পারে। রাজনৈতিক দলগুলোর ঐকমত্যের ভিত্তিতে একটি চার্টার অব রিফর্ম (সংস্কার সনদ) তৈরি হতে পারে। নির্বাচিত সরকার পরবর্তীতে এটা বাস্তবায়ন করবে। এখন অন্তর্বর্তী সরকারের মূল কাজ হচ্ছে ঐকমত্যের ভিত্তিতে প্রয়োজনীয় সংস্কার শেষে দ্রুত একটি অবাধ ও নিরপেক্ষ জাতীয় নির্বাচন আয়োজন করা। এরপর নির্বাচিত সরকারের কাছে দায়িত্ব হস্তান্তর করা।
এদিকে, সব রাজনৈতিক দলের সঙ্গে আলাপ-আলোচনার মাধ্যমে স্বল্প সময়ের মধ্যে জাতীয় ঐকমত্য তৈরি করা সম্ভব হবে বলে আশা করছেন জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের সহসভাপতি অধ্যাপক আলী রীয়াজ। তিনি বলেছেন, আপনারা (রাজনৈতিক দল) মতামতগুলোর অনেক ক্ষেত্রে একমত পোষণ করেছেন, অনেক ক্ষেত্রে আপনাদের কিছু ভিন্নমত আছে, বক্তব্য আছে, সেগুলো আমরা শুনব। আমরা মনে করি আলাপ-আলোচনার মধ্য দিয়ে একটা জাতীয় ঐকমত্য তৈরি করতে পারব। আলোচনা শুধু আপনাদের সঙ্গে নয়, অন্যান্য রাজনৈতিক দলের সঙ্গেও চলবে। তার মধ্য দিয়ে স্বল্প সময়ের মধ্যে এক জায়গায় আসতে পারব।
ঠিকানা/এসআর