মানুষ সামাজিক জীব। পারস্পরিক নির্ভরশীল। মানুষের জন্যই মানুষ। তা সত্ত্বেও চারপাশে অনাকাক্সিক্ষত অনেক কিছুই ঘটে। কখনো কখনো মনে হয়, কারও কারও পারিবারিক শিক্ষার অভাব রয়েছে। পাশাপাশি মৌলিক শিক্ষাও পায়নি। পারিবারিক ও মৌলিক শিক্ষা এ দুটোর প্রয়োজন সবচেয়ে বেশি। মানুষের অনেক সুন্দর গুণ থাকে। একান্তই নিজস্ব মানুষের সবথেকে সুন্দর গুণ হলো চরিত্র। সেটাই যদি সুন্দর না হয়, তবে মন কী করে সুন্দর হয়। আর মন যদি সুন্দর না হয়, চিন্তা সুন্দর হতে পারে না।
শিশু স্রষ্টার দান। বেহেশতি ফুল। অফুরন্ত আনন্দ। অসীম প্রেরণা। অশেষ ভাবনা। শিশু চিরন্তন মায়া। শিশুর নিরাপদ আবাস চাই-ই চাই। এটা শিশুর মৌলিক অধিকার।
শিশু তার বোনের বাড়িতে বেড়াতে যাবে, এটা এ সমাজের সাধারণ চিত্র। নিজের বাড়ির মতোই বোনের বাড়িতেও তার নিরাপদ থাকার কথা। শিশুরা বোনের বাড়ি, মামাবাড়িসহ বিভিন্ন আত্মীয়স্বজনের বাড়িতে বেড়াতে যায়। একে আমরা সামাজিক বা পারিবারিক সৌন্দর্য বলতে পারি।
সাম্প্রতিক মাগুরায় ঘটে যাওয়া একটি ঘটনা। মেয়েশিশুটির বয়স ৮ বছর। বোনের বাড়িতে বেড়াতে আসে। কিন্তু বোনের বাড়ি যেন নারকীয় ভূমি। পৈশাচিকতা এবং দানবীয়তা থেমে ছিল না। এই ৮ বছরের শিশুটিও রেহাই পেল না। যদিও এসব ঘটনা নতুন নয়। ৬ বছরের শিশু, ৮ বছরের শিশুরা অহরহ নিষ্ঠুরতার শিকার হচ্ছে। প্রশ্ন ওঠে, কেন এদের নিরাপত্তা নেই? পৃথিবীতে ভালো মানুষ আছে। চাইলেই নিজেকে পরিশুদ্ধ করে তোলা যায়। প্রয়োজন প্রকৃত শিক্ষা।
শিশু যেখানেই থাকুকÑযার ছায়ায় বেড়ে উঠুকÑবাড়ির প্রত্যেক সদস্যকেই শর্তহীনভাবে নিরাপত্তার প্রতিশ্রুতি দিতে হবে। শুধু রাষ্ট্রীয়ভাবেই নয়Ñপাড়ায় পাড়ায় সচেতনতা সৃষ্টি প্রয়োজন। কমিউনিটিতে মানবাধিকার সংগঠন গড়ে তোলা যেতে পারে। প্রতিটি পরিবারকেই এই মেসেজ দিতে হবে। শিশুর নিরাপত্তার বাধ্যবাধকতা আছে।
মাগুরার মেয়েশিশুটির নাম আছিয়া। বয়স ৮ বছর। এই বয়সেই নরকের চেহারা দেখে।। বাবা-মা কি জানতেন এমনটি হবে? সমাজে অসংখ্য দুর্বল পরিবার আছে। চাইলেও অনেক কিছু করতে পারে না। এসব মানুষ স্বস্তির নিঃশ্বাসের অপেক্ষায় থাকেন। আদৌ স্বস্তি পান? শান্তি পান? খুব কমই সেসবের দেখা মেলে। সবার কাছেই অনুরোধ-আসুন, এসব শিশুর পাশে আমরাও দাঁড়াই। প্রয়োজনে ওদের জন্য কথা বলি। আর তা না হলে অন্য সব শিশুও ট্রমায় চলে যেতে পারে।
আমাদের জীবনে অনেক বসন্তের উচ্ছ্বাস আসে। কিন্তু এসব শিশু। আর তাদের অভিভাবক অপেক্ষায় থাকেন-শুধু একটি নিরাপদ আশ্রয়। ‘বসন্ত’ এদের জীবনে আকাশ-কুসুম!
রক্ষক যদি ভক্ষক হয়-
আমাদের শিশু-
কোথায় থাকবে?
কার কাছে থাকবে?
কীভাবে থাকবে? আহারে অবুঝ শিশু!
শিশু সুন্দর নির্ভর। শিশু চঞ্চল। শিশু আলো ছায়ায় খেলবে। শিশু আগামী ভবিষ্যৎ। শিশুর স্বপ্ন সম্ভাবনাকে সবাই নিশ্চিত করব-আর হিংস্র হায়েনার হাত থেকে প্রতিটি শিশুকে রক্ষা করব-এই হোক আমাদের প্রতিজ্ঞা। বিদ্রোহী কবির ‘নারী’ কবিতার লাইন দিয়ে এই লেখা শেষ করছি :
যুগের ধর্ম এই-
পীড়ন করিলে সে পীড়া দেবে তোমাকেই।
শোনো মর্ত্যরে জীব।
অন্যেরে যত করিবে পীড়ন, নিজ হবে তত ক্লীব!
লেখক : ফরমার অ্যাসিস্ট্যান্ট অ্যাটর্নি জেনারেল, বাংলাদেশ। ঢাবির আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিভাগের প্রাক্তন শিক্ষার্থী, নিউইয়র্ক প্রবাসী।
                           
                           
                            
                       
     
  
 

 শামীম আরা ডোরা
 শামীম আরা ডোরা  
                                
 
                                                     
                                                 
                                                     
                                                 
                                                     
                                                 
                                                     
                                                 
                                                     
                                                 
                                                     
                                                
