ইমিগ্রেশন ক্র্যাকডাউনে অবৈধ অভিবাসীরা যখন ভীতসন্ত্রন্ত দিন অতিবাহিত করছেন, তখন কিছু আইনি প্রতিষ্ঠান সেবার নামে ‘জুজুর ভয়’ দেখিয়ে অতিরিক্ত অর্থ হাতিয়ে নিচ্ছেন বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে। তবে ভুক্তভোগীদের কাছে এসব অর্থ দাবি করা হচ্ছে ল’ অফিসের নামে। তবে এই অর্থ আদায়ের ব্যাপারে সংশ্লিষ্ট ল’ অফিসের অ্যাটর্নির সংশ্লিষ্টতা আছে কীনা তা নিয়ে ভুক্তভোগীরা সন্দেহ প্রকাশ করেছেন।
জানা গেছে, প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প গত ২০ জানুয়ারি দায়িত্ব গ্রহণের পর ইমিগ্রেশন ক্র্যাকডাউনের আদেশ দিয়েছেন। তার এই আদেশের পর ইমিগ্রেশন অ্যান্ড কাস্টমস এনফোর্সমেন্ট (আইস) এজেন্টরা যুক্তরাষ্ট্রের বিভিন্ন স্থানে অবৈধ অভিবাসীদের গ্রেপ্তার অভিযানে নেমেছেন। এ পর্যন্ত আইস ৪০ হাজারের বেশী অবৈধ অভিবাসীকে গ্রেপ্তার করেছে, যাদের বিরুদ্ধে ক্রিমিন্যাল রেকর্ড রয়েছে।
এদিকে ইমিগ্রেশনে ব্যাপক ধরপাকড়ের পর ঘুম ‘হারাম’ হয়ে গেছে অবৈধ অভিবাসীদের। অনেকে আইসের হাতে গ্রেপ্তার এড়াতে নিজেদের আত্মগোপনে রাখার চেষ্টা করছেন। কিন্তু এ সুযোগটিকে কাজে লাগাচ্ছে কতিপয় ল’ ফার্ম। ইমিগ্রেশনের ভয় দেখিয়ে ‘অধিকতর’ নিরাপদে রাখতে বিভিন্ন আবেদনের নামে এসব অফিস থেকে কতিপয় ব্যক্তি ফোন করে অতিরিক্ত অর্থ দাবি করছে বলে অভিযোগ উঠেছে। ল’ অফিস থেকে বলা হচ্ছে- আপনার সুবিধার্থে একটি আবেদন করে রাখতে হবে। এজন্য কিছু অর্থ জমা দিতে হবে। দুর্মূল্যের এই বাজারে নিজেকে নিরাপদে রাখার অভিপ্রায়ে অবৈধ অভিবাসীরা অতিরিক্ত অর্থ প্রদান করতে বাধ্য হচ্ছেন।
নিউইয়র্কের জ্যামাইকার একজন বাসিন্দা নাম প্রকাশ না করার শর্তে এ প্রতিবেদককে বলেন, নিউইয়র্কের ম্যানহাটনের একটি ল’ অফিসের মাধ্যমে তিনি গত বছরে ডিসেম্বরে অ্যাসাইলাম আবেদন করেছেন। তার আবেদন জমা হয়েছে। রিসিপ্ট নম্বর হাতে পেয়েছেন। এখনো ইন্টারভিউর ডাক পড়েনি। আবেদন বাবদ ১২ হাজার ডলার ফি দিতে হবে। তিনি প্রাথমিকভাবে ৫ হাজার ডলার জমা করেছেন। নিয়মানুযায়ী বাকী ৭ হাজার ডলার তিনি কিস্তিতে দেবেন। কিন্তু সম্প্রতি ইমিগ্রেশন ধরপাকড় শুরুর পর তার কাছে ওই হিসাবের বাইরে জরুরি ভিত্তিতে ২ হাজার ডলার দাবি করা হয়েছে। হাতে অর্থ গচ্ছিত নেই বলে তিনি ২ হাজার ডলার এখনো দিতে পারেননি।
ওই ব্যক্তি অভিযোগ করেন, ল’ অফিসের একজন বাংলাদেশি ম্যানেজার তাকে ফোন করে অবিলম্বে অতিরিক্ত দুই হাজার ডলার দিতে বলছেন। তিনি এও বলছেন যে জরুরি একটি আবেদন না করলে তার ক্ষতি হতে পারে। এমনকী আইসের হাতে গ্রেপ্তারেরও আশঙ্কা রয়েছে। ওই আবেদনকারী সংশ্লিষ্ট অ্যাটর্নির সঙ্গে সরাসরি যোগাযোগের চেষ্টা করেও ব্যর্থ হয়েছেন।
আরেকজন ভুক্তভোগী অভিযোগ করেন, সরষের মধ্যে ভুত থাকলে ভুত তাড়াবো কীভাবে? আমরা এখন বিপদে পড়েছি। অনেকটা নিরুপায়। এ অবস্থায় কী করবো বুঝতে পারছি না। অন্য অ্যাটর্নির পরামর্শও নিতে পারছি না। অন্য অ্যাটর্নির সঙ্গে যোগাযোগ করলে তারা বিনামূল্যে কথা বলতে চান না। তিনি অভিযোগ করেন, আমার মনে হয় না যুক্তরাষ্ট্রের কোনো অ্যাটর্নি অযাচিতভাবে অর্থ দাবি করতে পারেন। এই বিপদে কী করবো তা বুঝতে পারছি না। বিষয়টি অনেকটা ‘জুজুর ভয়’ দেখানোর মত, মন্তব্য করেন প্রবাসী বাংলাদেশি।
যুক্তরাষ্ট্রের গ্রিনকার্ডধারী এক বাংলাদেশি যুবক জানান, তার ৩ বছর ধরে গ্রিনকার্ড রয়েছে। অ্যাসাইলাম অনুমোদন হওয়ার তিনি গ্রিনকার্ড পেয়েছেন। গত মাসে হঠাৎ ল’ অফিস থেকে ফোন করে বলা হচ্ছে, তার ফাইল রিভিউ করার নোটিশ এসেছে। এজন্য দ্রুত দুই হাজার ডলার ফি জমা করতে হবে। ল’ অফিস থেকে প্রাপ্ত খবরে তিনি কিংকর্তব্যবিমূঢ় হয়ে পড়েছেন।
এমন পরিস্থিতি সম্পর্কে জানতে চাইলে যুক্তরাষ্ট্রে ইন্টারন্যাশনাল বার অ্যাসোসিয়েশনের পরিচালক অ্যাটর্নি মঈন চৌধুরী ঠিকানাকে জানান, একজন অ্যাটর্নি অতিরিক্ত কাজের জন্য ক্লায়েন্টের কাছে অতিরিক্ত ফি চাইতে পারেন। তবে ইমিগ্রেশনের ভয় দেখানো বা আতঙ্ক তৈরি করা কোনো কাম্য নয়। এমনটি কেউ করে বলে মনে হয় না। তবে অনেক সময় ল’ অফিসে কর্মরত কেউ অ্যাটর্নিকে না জানিয়ে ভুক্তভোগীর কাছ থেকে অতিরিক্ত অর্থ আদায় করে থাকলে তা হবে বেআইনি।
তিনি বলেন, কোনো ভুক্তভোগী সেবায় সন্তুষ্ট না হলে তিনি তার ল’ অফিস বা অ্যাটর্নি পরিবর্তন করতে পারেন। এটা তার ন্যায্য অধিকার। তবে এই খারাপ সময়ে স্ব স্ব অ্যাটর্নির সঙ্গে সার্বক্ষণিক পরামর্শ করার পরামর্শ দেন মঈন চৌধুরী।