মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প সামরিক জোট নেটোর মহাসচিব মার্ক রুটেকে বলেছেন, আন্তর্জাতিক নিরাপত্তা জোরদারে গ্রিনল্যান্ডের ওপর যুক্তরাষ্ট্রের নিয়ন্ত্রণ প্রতিষ্ঠা অপরিহার্য হয়ে উঠেছে। তার এ মন্তব্য কৌশলগতভাবে খুবই গুরুত্বপূর্ণ আর্কটিকের দ্বীপটির দখল পেতে নতুন মার্কিন প্রশাসনের সুতীব্র আগ্রহ নতুন করে সামনে এসেছে।
“আপনি জানেন, মার্ক, আমাদের এটি দরকার আন্তর্জাতিক নিরাপত্তার জন্য, কেবল নিরাপত্তা নয়, আন্তর্জাতিক নিরাপত্তা। জনপ্রিয় অনেক খেলোয়াড় উপকূলজুড়ে ঘুরে বেড়াচ্ছে, আমাদের সাবধান থাকতে হবে। এটা নিয়ে আমরা আপনার সঙ্গে কথা বলবো,” বৃহস্পতিবার হোয়াইট হাউজে পাশাপাশি বসা অবস্থায় ট্রাম্প নেটো মহাসচিবকে এসব বলেন বলে জানিয়েছে বার্তা সংস্থা রয়টার্স।
যুক্তরাষ্ট্র দ্বীপটির দখল নেবে কিনা, এ প্রশ্নের জবাবে এদিন মার্কিন প্রেসিডেন্ট বলেন, “এটাই হবে বলে আমার বিশ্বাস।”
চলতি বছরের ২০ জানুয়ারি ট্রাম্প দ্বিতীয় মেয়াদে ক্ষমতায় বসার পর থেকেই গ্রিনল্যান্ডে যুক্তরাষ্ট্রের নিয়ন্ত্রণ প্রতিষ্ঠা নিয়ে রিপাবলিকান প্রেসিডেন্টের আগ্রহের বিষয়টি বারবার আলোচনায় এসেছে।
আধা-স্বায়ত্তশাসিত ডেনিশ অঞ্চলটি দখলে পেতে ট্রাম্প যে এখন নেটোকেও কাজে লাগাতে চান, বৃহস্পতিবারের মন্তব্যে সেটিই বোঝা যাচ্ছে।
গ্রিনল্যান্ড নিয়ে ট্রাম্পের সর্বশেষ মন্তব্যও তাৎক্ষণিকভাবে প্রত্যাখ্যান করেছেন গ্রিনল্যান্ডের বিদায়ী প্রধানমন্ত্রী।
“মার্কিন প্রেসিডেন্ট আবারো আমাদের অঞ্চলটি দখলে নেওয়ার কথা বলেছেন। যথেষ্ট হয়েছে,” ফেইসবুকে দেওয়া এক পোস্টে দেওয়া প্রতিক্রিয়ায় বলেছেন মুটে এগেদে।
মঙ্গলবার গ্রিনল্যান্ডের পার্লামেন্ট নির্বাচনে জয়ী হওয়া স্বাধীনতাপন্থি ডেমোক্রাটিট পার্টির নেতা জেনস-ফ্রেডরিক নেইলসনও ট্রাম্পের চাওয়া খারিজ করে দিয়েছেন।
“যুক্তরাষ্ট্রে ট্রাম্পের দেওয়া বক্তব্য একেবারেই বেমানান, এই ধরনের পরিস্থিতিতে আমাদের অবশ্যই একসঙ্গে দাঁড়ানো উচিত,” ফেইসবুকে বলেছেন নেইলসন।
এসব নিয়ে ওয়াশিংটনে অবস্থিত নেটো ও ডেনমার্কের দূতাবাসের প্রতিক্রিয়া চাওয়া হলেও তাৎক্ষণিকভাবে তারা রয়টার্সের অনুরোধে সাড়া দেয়নি।
একাধিক জনমত জরিপ বলছে, গ্রিনল্যান্ডের সংখ্যাগরিষ্ঠ বাসিন্দা ডেনমার্ক থেকে বিচ্ছিন্ন হতে চায়, একইসঙ্গে তারা যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গেও একীভূত হতে রাজি নয়।
আর্কটিকের এই দ্বীপটির ভূ-রাজনৈতিক গুরুত্ব এবং এর বিপুল খনিজ সম্পদ যুক্তরাষ্ট্রকে আকৃষ্ট করছে। ইউরোপ থেকে উত্তর আমেরিকা যাওয়ার স্বল্পতম পথে আধা-স্বায়ত্তশাসিত এই অঞ্চলটির অবস্থান, যা যুক্তরাষ্ট্রের ব্যালিস্টিক ক্ষেপণাস্ত্র সতর্ক সঙ্কেত ব্যবস্থাপনার জন্য খুবই গুরুত্বপূর্ণ।
ট্রাম্প এরই মধ্যে কানাডাকে যুক্তরাষ্ট্রের ৫১তম রাজ্য বানানোর প্রস্তাব দিয়ে প্রতিবেশী মিত্র দেশটির বাসিন্দাদের ক্ষেপিয়ে দিয়েছেন। তিনি পানামা খালের ওপরও যুক্তরাষ্ট্রের আরও আধিপত্য চান।
গ্রিনল্যান্ডের বিষয়ে তার চাওয়াকে বৃহস্পতিবার পাশ কাটিয়েছেন নেটো মহাসচিব। বলেছেন, গ্রিনল্যান্ডের ভবিষ্যৎ নিয়ে সিদ্ধান্তের ভার তিনি অন্যদের ওপর ছেড়ে দিতে চান।
“আমি চাইনা এই বিতর্কে নেটোকে টেনে আনা হোক,” ওই অঞ্চলের জলসীমায় চীন-রাশিয়ার উপস্থিতিকে স্বীকার করে নিয়েই এ কথা বলেন মার্ক রুটে।
ট্রাম্প জানান, ডেনমার্ক এ বিষয়ে আলোচনা করতে রাজি হয়নি। যে কারণে তিনি হয়তো গ্রিনল্যান্ডে থাকা মার্কিন ঘাঁটির শক্তি বৃদ্ধি করতে সেখানে আরও সেনা পাঠাতে পারেন।
“আমরা ডেনমার্ক, গ্রিনল্যান্ডের সঙ্গে কাজ করছি। আমাদের এটা করতেই হবে। আমাদের জাতীয় নিরাপত্তার জন্য এটি সত্যিই দরকার। এ কারণেই নেটোর কোনো না কোনোভাবে এখানে জড়িত হওয়া উচিত বলে আমি মনে করি, কেননা জাতীয় নিরাপত্তার জন্য সত্যিই আমাদের গ্রিনল্যান্ড দরকার। এটা খুবই গুরুত্বপূর্ণ,” বলেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট।
দ্বীপটির ওপর ডেনমার্কের দাবি নিয়েও প্রশ্ন তোলেন তিনি।
“আপনারা জানেন, ডেনমার্ক অনেক দূরে, আর সেখানে তাদের করারও কিছু নেই। ২০০ বছর আগে বা কোনো এক সময়ে একটি নৌকা সেখানে ভিড়েছে তো কী হয়েছে? এরপর তারা বলছে তাদের অধিকার আছে ওই দ্বীপে। আমি জানি না এটা সত্যি কিনা, আমার মনে হয় না এটা সত্যি,” বলেছেন ট্রাম্প।
ঠিকানা/এসআর