Thikana News
১৪ মার্চ ২০২৫
  1. ই-পেপার
  2. চলতি সংখ্যা
  3. বিশেষ সংখ্যা
  4. প্রধান সংবাদ
  5. আমেরিকার অন্দরে
  6. বিশ্বচরাচর
আমেরিকা শুক্রবার, ১৪ মার্চ ২০২৫

উদ্যোক্তা পুরস্কার পেলেন আব্দুল কাদের শিশির

উদ্যোক্তা পুরস্কার পেলেন আব্দুল কাদের শিশির পরিবারের সদস্যদের সঙ্গে আব্দুল কাদের শিশির
যুক্তরাষ্ট্র তথা গোটাবিশ্বে অসামান্য প্রতিভাসম্পন্ন তরুণ উদ্যোক্তা-ব্যবসায়িদের সাফল্যকে আরো ব্যাপকতা এবং আগ্রহী তরুণদের উৎসাহিত করার অভিপ্রায়ে কর্মরত ‘বিজনেস এলিট’র ‘ফোর্টি আন্ডার ফোর্টি’ অ্যাওয়ার্ড’ এর জন্যে মনোনীত হয়েছেন নিউইয়র্কে বাংলাদেশি উদ্যোক্তা ও ব্যবসায়ী মো. আব্দুল কাদের শিশির। বিশ্বের অন্যতম জনপ্রিয় এবং মর্যাদাসম্পন্ন এই পুরস্কার ২৯ মে ফ্লোরিডার মায়ামির আলোকঝলমল মিলনায়তনে বর্ণাঢ্য এক অনুষ্ঠানের মাধ্যমে ৪০ সেরা তরুণ ব্যবসায়ী-উদ্যোক্তার মধ্যে বিতরণ করা হবে। 
আয়োজকরা এবারো প্রত্যাশা করছেন যে, পুরস্কারপ্রাপ্তরা নিজ নিজ ব্যবসায়িক সফলতার ধারাবিবরণী অন্যদের মধ্যেও বিকাশের সুযোগ পাবেন, অনুপ্রেরণার উৎস হবে মানবিক কল্যাণে যুবসমাজকে আত্মনিয়োগে। ‘বিজনেস এলিট’ এর ঘোষণায় মো. আব্দুল কাদের প্রসঙ্গে উল্লেখ করা হয়েছে যে, ‘অবহেলিত জনগোষ্ঠির মধ্যে নিউইয়র্কভিত্তিক অলকাউন্টি হেলথ কেয়ারের সেবামূলক কার্যক্রমের পরিধি মিশিগান, ফিলাডেলফিয়া, নিউজার্সি এবং কানেকটিকাট স্টেটেও সম্প্রসারিত হয়েছে। হাসপাতাল এবং নার্সিং হোমেও অত্যন্ত বিশ্বস্ততার সাথে চিকিৎসাসেবায় ইতিমধ্যেই অনন্য এক উদাহরণে পরিণত হয়েছে অলকাউন্টি হেলথ কেয়ার। ওয়ালস্ট্রিটের নিজ কর্মগুণে সুপরিচিত উদ্যোক্তা-ব্যবসায়ী মো. কাদের প্রতিষ্ঠানটির প্রেসিডেন্ট এবং সিইও। 
‘বিজনেস এলিট’ এর ঘোষণায় আরো উল্লেখ করা হয়েছে যে, স্বাস্থ্যসেবার পাশাপাশি আব্দুল কাদের শিশির তার মালিকানাধীন ব্যবসা প্রতিষ্ঠান ‘পপুলার ক্যাপিটল ইনক’র মাধ্যমে বিশ্বব্যাপী খাদ্য- নিত্য ব্যবহার্য সামগ্রি, বিশেষ করে সয়াবিন, ভূট্টা, চিনি, এলএনজি, কটন ইত্যাদি আমদানি-রফতানিতেও অসাধারণ অবদান রেখে চলেছেন। যুক্তরাষ্ট্রে উচ্চশিক্ষার জন্যে পাড়ি দেয়ার আগে তিনি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ডিজাস্টার ম্যানেজমেন্টে মাস্টার্স করেন। 
১৯৮৬ সালে বাংলাদেশের প্রত্যন্ত অঞ্চল কুমিল্লার বড়োরা উপজেলার লগ্নসার গ্রামে জন্মগ্রহণকারী আব্দুল কাদের শিশিরের যাত্রা হচ্ছে একটি অসাধারণ উদাহরণ, যা ধৈর্য, দৃঢ়তা এবং শিক্ষার পরিবর্তনকারী শক্তির প্রতি গভীর বিশ্বাসের প্রমাণ। তার গল্প একটি অবিরত উচ্চাকাক্সক্ষা এবং এক অদম্য সংকল্পের সাক্ষ্য যা সাদাসিধে শুরুর পরেও সাফল্যের শীর্ষে পৌঁছেছে। তার শৈশব ছিল এক গ্রাম্য সমাজে, যেখানে কঠিন জীবন-যাত্রার পাশাপাশি তিনি শিক্ষা, উদ্ভাবন এবং তার জন্মভূমির প্রতি গভীর আস্থার মাধ্যমে নিজের জীবন পাল্টে ফেলেন। আজ তিনি বিশ্বের এক গুণী দূরদৃষ্টিসম্পন্ন ব্যক্তি, সফল উদ্যোক্তা এবং দানশীল ব্যক্তি হিসেবে পরিচিত, যারা আন্তর্জাতিক সম্পর্ক তৈরির ওপর মনোনিবেশ করেছেন এবং বিশ্বমঞ্চে বাংলাদেশের পরিচিতি বৃদ্ধি করতে কাজ করছেন। তার জীবনের অনুপ্রেরণামূলক যাত্রা ও সাফল্যের গল্প এখানে তুলে ধরা হলো।
তার বাবা মুহাম্মদ রশিদ, ছিলেন একজন ছোট ব্যবসায়ী এবং মা শিরিন আক্তার, ছিলেন গৃহিণী। পরিবারটি অত্যন্ত সাধারণ একটি ঘরে বসবাস করত, যেখানে বৈদ্যুতিক সুবিধা, পরিশোধিত পানি এবং আধুনিক জীবনযাত্রার কোনো সুযোগ ছিলনা। তবে, তার মা-বাবা তাকে কঠোর পরিশ্রম, দৃঢ়তা এবং শিক্ষার মূল্য শেখান। কাদেরের মাতৃপিতামহ আকাশ আলী ছিলেন এক প্রখ্যাত ব্যবসায়ী, কাদেরের শৈশবকালীন জীবনে তার উপস্থিতি ছিল, তাঁর উদ্যোক্তা মনোভাব কাদেরের জীবনে গভীর প্রভাব ফেলেছিল।
কাদের তার সাংস্কৃতিক প্রচারণার পাশাপাশি, পপুলার গ্রুপ নামক একটি বৈশ্বিক ব্যবসা সাম্রাজ্য গড়ে তুলেছেন। পপুলার গ্রুপ একটি বৈচিত্রময় কর্পোরেট গোষ্ঠী হিসেবে প্রতিষ্ঠিত, যার ব্যবসার ক্ষেত্রগুলি স্বাস্থ্যসেবা, পরিবহন, প্রকাশনা এবং প্রযুক্তির অন্তর্ভুক্ত। গ্রুপের পোর্টফোলিওতে রয়েছে কায়লি কাদের হোল্ডিংস ইনক, পপুলার ক্যাপিটাল ইনক, ক্যাপসুলএইড (একটি স্বাস্থ্যসেবা প্রতিষ্ঠান), সিমএসবিডি (স্কুল ইনফরমেশন ম্যানেজমেন্ট সিস্টেম) এবং নর্থ আমেরিকা শিপিং অ্যান্ড লজিস্টিকস ইনক, ইত্যাদি। পপুলার গ্রুপের বিকাশ কাদেরের এই দৃষ্টিভঙ্গির একটি প্রতিফলন, যা এক বৈশ্বিক ব্যবসা গড়ে তোলার লক্ষ্য নিয়ে ছিল, যা শুধুমাত্র বাজারে সফল হবেনা, বরং তার নিজের দেশের উন্নয়নেও সহায়ক হবে। তার ব্যবসায়িক উদ্যোগগুলির মাধ্যমে কাদের কর্মসংস্থান তৈরি করেছেন, বৈশ্বিক বাণিজ্য সহজতর করেছেন এবং একাধিক সেক্টরে উদ্ভাবন চালিত করেছেন। বর্তমানে, পপুলার গ্রুপ ৩৫টিরও বেশি দেশে কাজ করছে এবং ১,২০০এরও বেশি কর্মচারী নিয়োগ করেছেন। এই কোম্পানির সফলতার মূর্ত প্রতীক হিসেবে নিউইয়র্কের ওয়ার্ল্ড ট্রেড সেন্টারের (ফ্রিডম টাওয়ার) ৮৫ তলায় তার কর্পোরেট সদর দফতর স্থাপন করা হয়েছে।
কাদেরের সাফল্য কোনোভাবেই অগ্রাহ্য হয়নি। ২০২৪ সালে তাকে ইউএস প্রেসিডেন্সিয়াল লাইফটাইম অ্যাচিভমেন্ট অ্যাওয়ার্ড প্রদান করা হয়, যা ব্যবসা এবং সমাজে তার উল্লেখযোগ্য অবদানের জন্য তাকে সম্মানিত করেছে। একই বছর, তাকে ন্যাশনাল হেলথকেয়ার চ্যাম্পিয়ন অ্যাওয়ার্ড প্রদান করা হয়, যা স্বাস্থ্যসেবা ক্ষেত্রে তার নেতৃত্বের প্রতি স্বীকৃতি। ২০২৫সালে, কাদের আবারো এক মাইলফলক অর্জন করেন যখন তাকে যুক্তরাষ্ট্রের ‘বিজনেস এলিট ফোর্টি আন্ডার ফোর্টি’তে মনোনয়ন দেয়া হয়। এটি ২৯ মে ফ্লোরিডার মায়ামিতে অনাড়ম্বর এক অনুষ্ঠানে হস্তান্তর করা হবে। তিনি প্রথম বাংলাদেশি-আমেরিকান হিসেবে এই সম্মান লাভ করেন। এই পুরস্কারটি তার অবস্থানকে যুক্তরাষ্ট্রেও শীর্ষস্থানীয় তরুণ নেতাদের মধ্যে প্রতিষ্ঠিত করেছে, এবং তার প্রভাবকে যুক্তরাষ্ট্র ও বাংলাদেশের ব্যবসায়িক পরিবেশে স্পষ্ট করেছে। এছাড়াও পেয়েছেন কংগ্রেশনাল অ্যাওয়ার্ড ফ্রম কংগ্রেসওম্যান গ্রেস মেং এবং নিউইয়র্ক স্টেট অ্যাসেম্বলিওম্যান জেনিফার রাজকুমার থেকে স্টেটের প্রক্লেমেশন।

কমেন্ট বক্স