পবিত্র রমজানের রোজার শেষে আসে খুশীর ঈদ। যদিও ঈদের বাকি এখনো ১৮-১৯ দিন। কিন্তু ঈদ উদযাপনের জন্য পরিবারগুলোতে এখনই প্রস্তুতি শুরু হয়ে গেছে। বিশেষ করে প্রবাসে নতুন প্রজন্মের ভাবনায় জায়গা করে নিয়েঝে ঈদের আনন্দ। ঈদে তাদের চাই নতুন জামাকাপড়। কিন্তু প্রবাসে মধ্যবিত্তের ঈদ মানেই টানাপোড়েন। বাড়ি ভাড়া, সন্তানের লেখাপড়া ও দ্রব্যমূল্যের উর্ধ্বগতিতে মাসের খরচ চালাতে যেখানে নাভিশ্বাস উঠছে, সেখানে ঈদে বাড়তি কেনাকাটা এখন দুঃস্বপ্নের মত অনেক মধ্যবিত্ত পরিবারের কাছে। তাদের এখন নুন (লবণ) আনতে পান্তা ফুরানোর অবস্থা।
শাওয়াল মাসের চাঁদ দেখা সাপেক্ষে যুক্তরাষ্ট্রে ১ এপ্রিল সোমবার পবিত্র ঈদুল ফিতর উদযাপনের সম্ভাবনা রয়েছে। যুক্তরাষ্ট্রে বাংলাদেশিদের ‘হাব’ নিউইয়র্কের ঈদের বাজার এখনো জমেনি। মধ্যবিত্তরা যেখানে ঈদের কেনাকাটা করেন, সেসব এলাকার স্টোরগুলোতে এখন তেমন কোনো ভিড় নেই। ব্যবসায়ীরা বলছেন, কেনাকাটা বেশী হয় ঈদের এক সপ্তাহ আগে থেকে। ব্যবসায়ীরা এখন দোকান সাজাতেই ব্যস্ত বেশী। তবে ঈদের দু-একদিন আগে ফুটপাতে যেভাবে দোকান বসে, এ অবস্থা চলতে থাকলে ব্যবসায়ীদের ব্যবসা গুটিয়ে ফেলতে হবে।
নিউইয়র্কের কুইন্সের জ্যামাইকার বাসিন্দা মশিউর রহমান স্বপন বলেন, পরিবারের পাঁচ সদস্য। ঈদে সবার পছন্দের কেনাকাটা করতে গেলে কমপক্ষে এক হাজার ডলার প্রয়োজন। কিন্তু এই মুহূর্তে এক হাজার ডলার খরচ করা সম্ভব নয়। তিনি বলেন, মাসিক আয়ে বাসা ভাড়ায় চলে যায়। প্রতি বছর ট্যাক্স ফাইল করে যে অর্থ রিটার্ন পাই তা দিয়ে সারা বছর খরচের সমন্বয় করেন। টানাপোড়েন চললেও পরিবারের সদস্যদের মুখে হাসি ফুটুক, এটাই চাই।
এস্টোরিয়ার বাসিন্দা লুৎফুর রহমান বলেন, ভেবেছিলাম সপরিবারে দেশে গিয়ে ঈদ করবো। কিন্তু দেশের আইনশৃঙ্খলার যে পরিস্থিতি, অন্যদিকে এয়ার টিকেটের যে দাম, তাতে আর সাহস করে উঠতে পারলাম না। তিনি জানান, খরচ কমাতে স্ত্রীর জন্য দেশ থেকে শাড়ি এনেছেন। কিন্তু সন্তানরা এদেশের দোকান থেকে পছন্দের জামাকাপড় কিনতে চান। এ বছর কী করবো বুঝতে পারছি না।
বিশ্বের সবচেয়ে ব্যয়বহুল শহরের তালিকায় শীর্ষে অবস্থান করছে নিউইয়র্ক শহর। নিউইয়র্ক রাজ্যে নানান সুযোগ-সুবিধার কারণে অভিবাসীদের পছন্দ নিউইয়র্ক সিটি। বাংলাদেশিদের গোড়াপত্তন সত্তরের দশকে। এখন এই শহরে বাস করেন প্রায় এক মিলিয়ন বাংলাদেশি। তাদের বেশীরভাগই মধ্যবিত্ত। কঠোর পরিশ্রম করে তারা জীবনযাত্রার ব্যয় মেটান। কিন্তু করোনা মহামারীর পর এই নিউইয়র্ক সিটি ছেড়ে গেছেন বহু বাংলাদেশি পরিবার, যাদের বেশিরভাগই মধ্যবিত্ত।
কুইন্সের উডসাইডের বাসিন্দা সেকেন্দার আলী বলেন, কুইন্সে চেষ্টা করেও একটা বাড়ির মালিক হতে পারেননি। জিনিপত্রের দাম আকাশচুম্বি। গণপরিবহন ভাড়া বেড়েছে। এমনকী ব্যক্তিগত গাড়ির ইন্সুরেন্স বেড়ে দ্বিগুণ হয়েছে। ভবিষ্যত কঠিন হয়ে যাচ্ছে।