যেদিন থেকে বিশ্ব মানচিত্রে বাংলাদেশের অবস্থান খুঁজে পেতে শিখেছি, সেদিন থেকেই মনে ভয় ঢুকেছিল, চারদিকে ভারত দ্বারা আমাদের দেশটি পরিবেষ্টিত দেখে। ভাবতাম, ভারতের বগলতলায় আমাদের স্বাধীনতার কি কোনো মূল্য আছে?
এই ভয়টি গত কয়েক সপ্তাহ থেকে কেটে গেছে। হিসাব মিলে গেছে এবং তা আমাদের পক্ষে। কথা হচ্ছে, ভারত তাদের সামরিক শক্তির সামান্যই আমাদের বিরুদ্ধে ব্যবহার করতে পারবে। কেননা তাদের অধিকাংশ শক্তি মজুদ রাখতে হবে চীন ও পাকিস্তানের বিরুদ্ধে ব্যবহারের জন্য। হিসাবে একটু হেরফের হলেই তাদের ভূমির বিরাট একটা অংশ চীন ও পাকিস্তান নিয়ে নেবে। আমাদের বিরুদ্ধে ব্যবহার্য তাদের যে শক্তি, তার তুলনায় আমরা অনেক শক্তিশালী। আমরা আমাদের শক্তির ৮০% তাদের বিরুদ্ধে ব্যবহার করতে পারব।
ভারতের শত্রুরাষ্ট্র অনেক। কেউ কাছের, কেউবা দূরের। তাই শত্রুর শত্রু = মিত্র, এই সূত্রে আমরা অনেক দেশের সমর্থন পাব। মধ্যপ্রাচ্যের অনেক দেশ ইতিমধ্যে ভাবতে শুরু করেছে ভারতের কাছ থেকে দূরে সরে যেতে। কানাডা ভারতের নামই শুনতে পারছে না। আমেরিকাও ভারতকে আগের মতো পছন্দ করছে না। রাশিয়ার বিরুদ্ধে আমেরিকার অবরোধে ভারত রাশিয়া থেকে সস্তায় তেল কিনছে, যা আমেরিকার পছন্দ হয়নি।
নেপাল, ভুটান, মালদ্বীপ ও শ্রীলঙ্কা ইতিমধ্যে ভারতবিরোধী হয়ে গেছে। তাদের অনেকে এখন চীনের বন্ধু। ভারতের অনেক রাজ্য দিল্লির ওপর খুশি নয়। তাদেরও পেট ফুলে আছে। ভারত কারও সঙ্গে যুদ্ধে জড়ালে দেশের ভেতর ও বাহির থেকে তামাশা দেখার লোকের অভাব হবে না।
আওয়ামী লীগ সরকার সদলবলে পালিয়ে যাওয়ার পর বাংলাদেশকে বিপাকে ফেলতে ভারত নানামুখী ষড়যন্ত্রে লিপ্ত হয়েছে। ড. ইউনূস সবগুলো পরিকল্পনা ভালোভাবে সামাল দিয়েছেন। ভারতের দিক থেকে বারবার বাংলাদেশকে আক্রমণের কথা বলা হচ্ছে। অবস্থাদৃষ্টে মনে হচ্ছে, ড. ইউনূস সম্ভবত তেমন কিছু মোকাবিলা করার কৌশল তৈরি করে রেখেছেন। চীন, তুরস্ক ও পাকিস্তান জানিয়ে দিয়েছে, তারা বাংলাদেশকে রক্ষায় এগিয়ে আসবে। এই সংবাদটুকুই ভারতকে খামোশ করানোর জন্য যথেষ্ট।
তুরস্ক ও পাকিস্তান বাংলাদেশে সামরিক শিল্প গড়ে তোলার আগ্রহ প্রকাশ করেছে। যার অর্থ হলো আমাদের প্রয়োজনীয় অস্ত্র শুধু মজুদ থাকবে না, আমরা অস্ত্র রপ্তানিও করব। আমাদের দেশের লাখ লাখ কর্মী অস্ত্র তৈরি করবে এবং তাতে প্রশিক্ষণও নেবে। অস্ত্র চালানো আমাদের কাছে হবে খেলনার মতো। যারা বাদ্যযন্ত্র তৈরি করে, তারা তা ব্যবহারেও দক্ষ হয়ে যায়।
তুরস্ক থাকবে আমাদের মাথার ছাতা হয়ে। অস্ত্র তৈরির কারখানা স্থাপন করলে তা নিরাপদ রাখার ব্যবস্থাও তারা করবে এবং দেশ ও দেশের কোনো শিল্পের দিকে কেউ বদনজরে তাকালে তারাই আগেভাগে সর্বপ্রকার গোয়েন্দা রিপোর্ট দিয়ে আমাদেরকে সাহায্য করতে এগিয়ে আসবে। আর তারা সামরিক শিল্প গড়ে তুলতে পারলে পুরো দেশটাকে নিরাপত্তা চাদরে আগলে রাখবে।
বাংলাদেশের প্রতিরক্ষা বাহিনী ভারতের চেয়ে ছোট হলেও আমাদের সশস্ত্র বাহিনী উন্নত প্রশিক্ষণে প্রশিক্ষিত। যার ফলে জাতিসংঘ শান্তি মিশনে সম্মানের সঙ্গে কাজ করে যাচ্ছে। ভালো অস্ত্র, প্রযুক্তি আর সাহস থাকলে রাষ্ট্র বড়, ছোট কিংবা জনসংখ্যা কোনো ফ্যাক্টর হয় না, তার অসংখ্য নজির পৃথিবীতে রয়েছে।
অর্থনৈতিকভাবে আমরা ভারতের ওপর নির্ভরশীল নই। বরং তারাই আমাদের ওপর নির্ভরশীল। আমাদের দেশের চাহিদার ওপর নির্ভর করে তারা বহু পণ্য উৎপাদন করে থাকে। দুঃখজনক হলেও সত্য, গত প্রায় দুই যুগ তারা মনোপলি ব্যবসা করেছে। তাদের উৎপাদিত পণ্য এমনভাবে আমাদের দেশে বিক্রি করেছে, যেন এটি তাদের একটি করদ রাজ্য। তাদের ইচ্ছামতো মূল্য নির্ধারণ করেছে। তারা আমাদেরকে নিত্যপ্রয়োজনীয় দ্রব্য ও চিকিৎসা না দেওয়ার ভয় দেখিয়েছিল। কিন্তু তাদেরকে হতাশ করে দিয়ে আমরা তা বিভিন্ন দেশ থেকে গ্রহণ করতে শুরু করেছি। তাদের ব্যবসায়ীরা এবং কৃষক মাঠে মারা যেতে শুরু করেছেন। চতুর্দিকে হাহাকার আর হায় হায় শুরু হয়ে গেছে। একদিন এমন সময় আসবে, যখন তাদেরই জনগণ তাদের রাজনীতিবিদ ও সাংবাদিকদের টুটি টিপে ধরবে।
আমাদেরকে সম্মানিত প্রতিবেশীর সম্মান দিতে পারলে আমরাও বন্ধুত্বের হাত বাড়াব। আর দাদাগিরি করলে আমরা তাদেরকে তোয়াক্কাই করব না। এই কমিটমেন্টের জায়গায় যেন আমরা দৃঢ় ইস্পাত অবস্থানে থাকি।