Thikana News
১৩ মার্চ ২০২৫
  1. ই-পেপার
  2. চলতি সংখ্যা
  3. বিশেষ সংখ্যা
  4. প্রধান সংবাদ
  5. আমেরিকার অন্দরে
  6. বিশ্বচরাচর
আমেরিকা বৃহস্পতিবার, ১৩ মার্চ ২০২৫
✪ রমজানে বাজার নিয়ন্ত্রণে সফল ✪ আইনশৃঙ্খলা রক্ষায় বিফল

কূটচালে হুমকিতে  দেশের অর্থনীতি

কূটচালে হুমকিতে  দেশের অর্থনীতি সংগৃহীত
এক দশক পর রমজানের বাজারে স্বস্তি ফিরেছে। ভোজ্যতেল ছাড়া সাধারণ পণ্যের মূল্য মোটামুটি নিয়ন্ত্রণে। সেহরী, ইফতারকালসহ বিদ্যুৎ সরবরাহ সহনীয় পর্যায়ে। হাসিনা শাসনামলে শিল্পমন্ত্রী বলতেন- খেজুর কেনো? বরই দিয়ে রোজা ভাঙলেও চলে।’ ২০২৫-এর পবিত্র রমজানে মানুষ খেজুর, শরবত পেয়েছে। কিন্তু আইনশৃঙ্খলা বিষয়ে স্বস্তি, প্রশান্তি পায়নি। খুন, চাঁদাবাজি, ডাকাতি, ধর্ষণ অহরহ ঘটেই চলেছে। অন্যান্যের পাশাপাশি স্বগোত্রীয় ছাত্রশক্তিও প্রতিবাদী মিছিল নামিয়েছে। 
সরকারের গোয়েন্দারা দিচ্ছে চাঞ্চল্যকর তথ্য। বিরোধী রাজনৈতিক শক্তি অচলাবস্থা সৃষ্টির নেপথ্যে। সেই সূত্র ধরে প্রধান উপদেষ্টা ড. ইউনূস বিবৃতি দিয়েছেন। বলেছেন, পলাতক হাসিনা সরকার গাজা’র মতো দেশটিকে ধ্বংস করেছে। এখন লুঠ করা অর্থ নতুন ধ্বংসচক্রে খরচ করছে। 
উল্লেখ্য, বাংলাদেশের রাজনৈতিক কূটচাল নিয়ে মহাবিব্রত তিনি। তবে হাল ধরে রাখতে রাজনীতির কূট-কৌশল শিখছেন। ঘনিষ্ঠজনেরা বলছেন, দেশীয় জটিল রাজনীতির ‘এবিসিডি’ শিখছেন। অর্থনীতিবিদ প্রফেসর ইউনূস নিশ্চয়ই রাজনীতিতেও সফল হবেন। 

হাসিনা গং-এর অর্থভান্ডারে ক্ষমতাসীনদের হাত : বিশৃঙ্খলা দমনে প্রধান টার্গেট অর্থের সূত্র খোঁজা
ড. ইউনূসের নেতৃত্বে অন্তর্বর্তী সরকার ক্ষমতা নিয়েছে গত বছরের ৮ আগস্ট। সাত মাসে ১৬৫টি দাবি-দাওয়া বিষয়ক চাপ সামলেছে। ফেব্রুয়ারি-মার্চে চরম আকার ধারণ করে আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি। বিশ্লেষকদের মতে, ছাত্রশক্তির রাজনৈতিক দল গঠনে এমন প্রতিবন্ধকতা। গত ২৮ ফেব্রুয়ারি ঘোষিত ‘জাতীয় নাগরিক পার্টি’ এখন মাঠে। তাদের প্রধান ইস্যু আওয়ামী লীগের রাজনীতি নিষিদ্ধ করা। শেখ হাসিনাসহ ঘনিষ্ঠ নেতা-মন্ত্রীদের দুর্নীতির বিচার করা। এছাড়া রাষ্ট্রে ভারতীয় প্রভাব বিদায় করা। 
প্রতিবেশী দেশ ‘ভারত’ ‘জাতীয় নাগরিক কামিটি’র উত্থানকে চ্যালেঞ্জ ভাবে। শেখ হাসিনার নেতৃত্বাধীন আওয়ামী লীগও চ্যালেঞ্জ মোকাবেলায় সোচ্চার। দেশে, ভারতে ও প্রবাসে চলছে নানামুখী কার্যক্রম। সরকারের ধারণা, পাচারকৃত অর্থে অপকর্ম চলছে। এজন্যে বিদেশ থেকে অর্থ উদ্ধারে সরকার বিপ্লবে নেমেছে। পাচারকৃত অর্থ ফিরিয়ে আনতে আইন সংশোধন করছে। 
অর্থ উপদেষ্টা সালেহউদ্দিন আহমেদ দিলেন নতুন তথ্য। বললেন, হাসিনা শাসনামলে পাচার হয়েছে ২৩৪ বিলিয়ন ডলার। শুধুমাত্র ব্যাংকিং সিস্টেমে পাচার ১৭ বিলিয়ন ডলার। তিনি বলেন. দুইশ কোটি টাকা অচিরেই ফিরবে। কয়েকটি দেশের সঙ্গে ‘অর্থ প্রত্যার্পণ’ চুক্তিও হয়েছে। 
প্রধান উপদেষ্টার অর্থবিষয়ক বিশেষ সহকারী ড. আনিসুজ্জামান চৌধুরী। বললেন, অন্যান্য দেশও অর্থ ফেরতে আগ্রহ দেখিয়েছে। বিদেশে হাসিনা পরিবারের ২৩৫ কোটি টাকার হদিস পাওয়া গেছে। 
এতোকাল পাশ্চাত্যের ২৭টি দেশের ভিসা ঢাকা হতে পাওয়া যেতো না। ভারতের দিল্লী অফিস থেকে ভিসা সংগ্রহে জটিলতা ছিলো। ড. ইউনূসের বিশেষ উদ্যোগে দেশগুলো ঢাকামুখী হয়েছে। রাজধানীতে প্রতিষ্ঠিত হয়েছে স্ব স্ব ভিসা সেন্টার। এতে প্রবাসযাত্রায় নতুন বিপ্লব সাধিত হচ্ছে। 
অন্যদিকে অর্থপাচারের তথ্য আহরণে ‘গোয়েন্দা তৎপরতা’ স্বচ্ছন্দ হচ্ছে। দিল্লী অফিস হয়ে ভিসা নিতে ‘স্বাধীনতা’ থাকতো না বলে অভিযোগ। 
সরকারের ধারণা অবৈধ অর্থের মাধ্যমে বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি হচ্ছে। ফলে পতিত সরকারের অর্থপাচারকারীরা এখন প্রধান টাগের্ট। হাসিনা রেজিমের ‘টাইকুন’ সালমান এফ রহমান এখন জেলে। কথিত ‘দরবেশ’সহ বেশ ক’জন দিয়েছে চাঞ্চল্যকর তথ্য। ফলে পাচারকৃত অর্থ উদ্ধারে সরকার পেয়েছে নবগতি। 

অর্থনীতিতে অগ্রগামিতা বনাম রাজনীতিতে পশ্চাৎপদতা : ১৫ মার্চ শাহবাগ দখল নিয়ে পাল্টাপাল্টি
জুলাই-আগস্ট অভ্যুত্থান-পরবর্তী রেমিটেন্স প্রাপ্তি আশাব্যঞ্জক। ২২০ বিলিয়ন মার্কিন ডলার যোগ হয়েছে রিজার্ভে। বিদেশী বিনিয়োগ প্রাপ্তিতে খুলছে নতুন দরোজা। বিশ্বসেরা ধনকুবের ইলন মাস্ক শুরু করেছেন বিনিয়োগ প্রক্রিয়া। স্যাটেলাইটভিত্তিক ‘স্টারলিংক’ দিচ্ছে ইন্টারনেট সার্ভিস। এটির প্রধান সুবিধে হলো- তার ও বিদ্যুৎবিহীন সংযোগ। অতীতের মতো রাজনৈতিক কারণে বন্ধ রাখার ‘মতলববাজি’ নেই। সাশ্রয়ী মূল্যে ঘনবসতির বাংলাদেশ সার্ভিসটি পেতে যাচ্ছে। স্যাটেলাইটের কারণে দুর্গম পার্বত্য এলাকাও সার্ভিসের আওতায় আসছে। 
জাতিসংঘ মহাসচিব আন্তোনিও গুতেরেস ১৩ মার্চ বাংলাদেশের অতিথি। জাতিসংঘ শান্তিরক্ষী বাহিনীতে সর্বাধিক সদস্য বাংলাদেশের। জুলাই-আগস্ট আভ্যুত্থানে জাতিসংঘ রীতিকে অনুসরণ করেছে সৈন্যরা। ফলে মিশনে সদস্যসংখ্যা বৃদ্ধির সম্ভাবনা রয়েছে। এতে বৈদেশিক মুদ্রা আহরণের পরিমাণ বৃদ্ধি পাবে। 
অর্থনীতিতে অগ্রগামিতা থাকলেও রাজনীতিতে সরকারের পশ্চাৎপদতা লক্ষণীয়। নারী নির্যাতন, চুরি-ডাকাতি-চাঁদাবাজি প্রতিরোধে ধারাবাহিক ব্যর্থতা। মাগুরায় আছিয়া নামের কিশোরী দুলাভাই ও গৃহকর্তা কতৃর্ক ধষির্ত। মৃত্যুর সঙ্গে পাঞ্জা লড়ছে সেনাচিকিৎসালয় ‘সিএমএইচে’। গত ৮ মার্চ বিশ্ব নারীদিবস এবার তুমুলভাবে প্রতিবাদমুখর। ২০১৩-এর শাহবাগ আন্দোলন নতুন চেহারায় বিস্ফোরিত হচ্ছে। বামনেত্রী লাকি আক্তার ১৫ মার্চ নারী সমাবেশ ডেকেছে। প্রতিহত করার ঘোষণা দিয়েছে বৈষম্যবিরোধী ছাত্রশক্তি। ‘জাতীয় নাগরিক পার্টি’র হাসনাত আব্দুল্লাহ প্রতিহতমূলক বিবৃতি দিয়েছে। 

মুজিব-জিয়ার ক্ষমতা-কৌশল ও ড. ইউনূসের শিক্ষা
নাগরিক পার্টির উত্থানে বিএনপি এখন ড. ইউনূস-বিরোধী। নেতারা বলছেন, নিজের মামলাগুলো দ্রুত প্রত্যাহার করিয়েছেন তিনি। ব্যরিস্টার রুমিন ফারহানা মেলে ধরেছেন গোপন তথ্য। অন্তর্বর্তী সরকারের আমলে ১৫৭ জন খুন। বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন ও অভ্যুত্থান পরবর্তী ঘটনাবলী। পুলিশসহ এই ১৫৭ খুনের দায় কে নেবে? এমন প্রশ্ন ছুঁড়ে দেন প্রধান উপদেষ্টার তথ্য সচিব বরাবর। 
অন্যদিকে রাজনৈতিক পরিস্থিতি মোকাবেলায় ঘুরে দাঁড়াচ্ছে সরকার। ডিসেম্বর-জানুয়ারিতে নিবার্চন আয়োজনে বদ্ধপরিকর। বাকি নয় মাস স্বচ্ছন্দে কাটানোর পথ খুঁজছে। ‘রাজনীতি দিয়ে’ রাজনৈতিক পরিস্থিতি মোকাবেলার প্রস্তাব উঠেছে। সেক্ষেত্রে বিশ্ববরেণ্য অর্থনীতিবিদ ড. ইউনূস নতুন চেষ্টায় বিভোর। বাংলাদেশের জটিল রাজনীতির ‘এবিসিডি’ শিখছেন। ইতোমধ্যে মুজিব ও জে. জিয়ার ক্ষমতা কৌশলও রপ্ত করছেন।
১৯৭২-এর ১০ জানুয়ারি মুজিবের প্রত্যাবর্তণ ও ক্ষমতাগ্রহণ। ১৩ জানুয়ারি প্রধানমন্ত্রী মুজিব ঐতিহাসিক ঘোষণা দেন। বলেন, আগামী তিন বছর কোন দাবি-দাওয়া চলবে না। আগে ধ্বংসপ্রাপ্ত দেশকে গড়তে হবে, তারপর পেশাজীবীদের দাবি-দাওয়া। আমরা অবস্থা-বুঝে দেশবাসীর কল্যাণে ব্যবস্থা নেবো। 
বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবের পথে হাঁটলে ড. ইউনূস সাহারা পেতেন। ১৬৫টি পক্ষ দাবি-দাওয়ায় সাতটি মাস খেয়ে ফেলেছে। স্বস্তির সঙ্গে প্রয়োজনীয় কর্মকান্ড চালাতে দেয়নি। 
সংশ্লিষ্টদের মতে, ড. ইউনূস এক্ষেত্রে রাজনীতি করতে পারতেন। বলতে পারতেন, দাবি-দাওয়ার বিষয়গুলো নির্বাচনের পর। অন্তর্বর্তী সরকার একটি অস্থায়ী সরকার মাত্র। দাবি-দাওয়া বাস্তবায়নের মতো ‘গণ-ম্যান্ডেট’ হাতে নেই। নির্বাচিত সরকার যা করবে, সেটিই স্থায়ী। অতএব, আসন্ন নির্বাচন পর্যন্ত অপেক্ষা করুন। আমরা সরকার পদ্ধতির সংস্কার ও সুষ্ঠু নির্বাচনের ব্যবস্থা করছি। 
বিলম্বিত হলেও মুজিবের রাজনৈতিক কৌশল আলোড়ন তুলেছে। প্রেসিডেন্ট জিয়ার রাজনীতি থেকেও অভিজ্ঞতা নিয়েছেন ড. ইউনূস। ১৯৭৮-এর ১ সেপ্টেম্বর জে. জিয়া ‘বিএনপি’ গড়েন। কিন্তু প্রেসিডেন্ট পদে আসীন হন ১৯৭৭-এ। জনগণের আস্থা আছে কি-না, তা গণভোটে যাচাই করেন। ১৯৭৭-এর ৩০ মে অনুষ্ঠিত হয় হ্যাঁ-না ভোট। দেশের জনগণ তাতে ভোটাধিকার প্রয়োগ করে। ৯৮.৯% ভোট জিয়ার নীতি ও কর্মকান্ডকে সমর্থন দিয়েছেলো। ফলে গণমানুষের নেতা হিসেবে জিয়া রাষ্ট্রক্ষমতা পরিচালনা করেন। 
প্রফেসর ইউনূসও রাষ্ট্রক্ষমতার সূচনায় গণসমর্থন নিতে পারতেন। তাহলে অন্তর্বর্তী সরকারের বৈধতা নিয়ে প্রশ্নবিদ্ধ হতেন না। ক্ষমতার কৌশল বিষয়ে তিনি এখন বিলম্বিত পাঠ নিচ্ছেন। ২০০৭-এ ওয়ান ইলেভেনে’র সরকারে প্রধান উপদেষ্টা হতেন। হননি- নিজে রাজনৈতিক দল করবেন বলে। দুই নেত্রীকে ‘মাইনাস’ করার ফমুর্লায় ছিলেন। কিন্তু চেষ্টা চালিয়ে রাজনীতিতে পশ্চাৎপদ হন। বলেন, এই দূরুহ কাজটি আমার নয়। তিনি গ্রামীণ ব্যাংক ও বিশ্ব অর্থনীতির ‘রোল মডেল’ হন। ওনার লিখিত বই ও বক্তব্য পৃথিবীব্যাপী সমাদৃত হয়। ‘নোবেল’সহ পৃথিবীর শ্রেষ্ঠ সম্মাননাগুলো অর্জন করেন। ‘থ্রি জিরো’ বিষয়ক সর্বশেষ বইটিও বিশ্বকে ভাবাচ্ছে। 
১৯৯২ সালে তিনি ‘আমার দল’ শিরোনামে প্রবন্ধ পড়েন। ড. কামাল হোসেনের নেতৃত্বে ‘গণফোরাম’ সংগঠনের উদ্বোধনীতে। সেই থেকে আৗয়ামী লীগ প্রধান শেখ হাসিনার চুক্ষুশূল হন। এখনও পৃথিবীতে ‘পলাতক প্রধানমন্ত্রী’ শেখ হাসিনাই প্রধান শত্রু। 
অর্থনীতিবিদ প্রফেসর ইউনূস এবার পরিপূর্ণ রাজনীতিক হয়ে উঠছেন। ক্ষমতাগ্রহণকালে ভারত ও মায়ানমারকে হুমকি দিয়েছিলেন। বলেছেন, বাংলাদেশের অভ্যন্তরীণ বিষয়ে নাক গলাবেন না। তাহলে ‘সেভেন সিস্টার’ ও আরাকান বিষয়ে নড়াচড়া শুরু হবে। এমন বক্তব্যে ভারত অতিদ্রত সরকার-বিরোধী হয়ে ওঠে। তবে অতি নিকটকালে ড. ইউনূসের কূটনৈতিক পরিবর্তন লক্ষ্যণীয়। মার্কিন প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প বিষয়ে কৌশলী মূল্যায়ন দিয়েছেন। বলেছেন, মি. ট্রাম্প একজন ডিলমেকার। আমরা ওনার সঙ্গে প্রয়োজন মাফিক ডিল করবো। তবে দেশের স্বার্থে যে পদক্ষেপ, তা বহাল থাকবে।
দেশের রাজনৈতিক দলগুলোর জন্যে বাড়িয়েছেন হোমওয়ার্ক। ‘ঐকমত্য কমিশনের মাধ্যমে পাঠানো হয়েছে সংস্কার প্রশ্নমালা। আগামী ৩১ মার্চের মধ্যে জবাব পাঠানোর নোটিশ। ফলে, দ্রুত ভোটের দাবিটি ম্রিয়মাণ হতে চলেছে। আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে দিতে যাচ্ছেন নতুন চাল।

কমেন্ট বক্স