নিউইয়র্ক পুলিশ ডিপার্টমেন্টে (এনওয়াইপিডি) নিষ্ঠার সঙ্গে দায়িত্ব পালন করার ২১ বছর পর আনুষ্ঠানিকভাবে অবসর গ্রহণ করেছেন আমেরিকায় বাংলাদেশিদের গর্ব শামসুল হক। সর্বশেষ তিনি লেফটেন্যান্ট কমান্ডার হিসাবে অভ্যন্তরীণ তদন্ত ব্যুরোসহ নিউইয়র্ক পুলিশের গুরুত্বপূর্ণ শাখায় দায়িত্ব পালন করেছেন।
শামসুল হকের গ্রামের বাড়ি বাংলাদেশের সিলেট জেলার বাঘা গৌরভারী গ্রামে। তিনি সম্ভান্ত পুলিশ পরিবারে জন্মগ্রহণ করেন। তার বাবা মরহুম আবদুল মুসাব্বির একজন আলোকিত মানুষ ছিলেন। শামসুল হকের চার ভাইয়ের মধ্যে আবদুর রহমান একজন ব্যবসায়ী, আবদুল হক একজন সিনিয়র উচ্চ বিদ্যালয়ের শিক্ষক, নজরুল হক একজন সিনিয়র শিক্ষক ও মাদ্রাসার মাওলানা এবং বাতরুল হক নিউইয়র্ক পুলিশ বিভাগের কাউন্টার-টেররিজম ইউনিটের কর্মকর্তা। বর্তমানে তারা সবাই আমেরিকায় বসবাস করেন এবং শামসুল হকের নিউইয়র্ক পুলিশে দীর্ঘ কর্মজীবন নিয়ে অত্যন্ত গর্বিত।
শামসুল হক নিউইয়র্ক পুলিশে যোগ দেওয়ার পথ ছিল ব্যতিক্রমী। উচ্চ বিদ্যালয়ের ডিগ্রি ছাড়াই নিউইয়র্কে আগত হক কঠোর পরিশ্রম এবং অধ্যবসায়ের মাধ্যমে নিজের জন্য একটি সুদৃঢ় ভবিষ্যৎ গড়ে তোলেন। আইন-শৃঙ্খলা রক্ষার দায়িত্ব পালনের পাশাপাশি, তিনি উচ্চশিক্ষায়ও বিশেষ কৃতিত্ব অর্জন করেন। তিনি বারুখ কলেজ থেকে ব্যবসায় প্রশাসনে স্নাতক ডিগ্রি অর্জন করেন এবং সেখানে সিটি ইউনিভার্সিটি অব নিউ ইয়র্ক-এর ইউনিভার্সিটি স্টুডেন্ট সিনেটের চেয়ারম্যান হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। এরপর বিশ্বখ্যাত কলম্বিয়া ইউনিভার্সিটি থেকে পাবলিক অ্যাডমিনিস্ট্রেশনে মাস্টার্স ডিগ্রি লাভ করেন।
এনওয়াইপিডিতে শামসুল হকের কর্মজীবন ছিল সততা, পেশাদারিত্ব এবং কর্তব্যপরায়ণতার এক উজ্জ্বল দৃষ্টান্ত। তিনি রাস্তায় টহল পুলিশ থেকে শুরু করে আইনশৃঙ্খলা রক্ষার স্বার্থে জবাবদিহিতার বিষয়গুলো তদারকি করেছেন। তাঁর দৃঢ় মনোবল এবং কর্তব্যনিষ্ঠার জন্য তিনি সহকর্মী ও কমিউনিটির মানুষের শ্রদ্ধা অর্জন করেছেন। অবসরের সময়, তিনি নিজের ইউনিটের সবচেয়ে সিনিয়র লেফটেন্যান্ট কমান্ডার ছিলেন।
শামসুল হক বলেন, ‘প্রতিটি দিন নতুন চ্যালেঞ্জ নিয়ে এসেছে, কিন্তু সেইসঙ্গে মূল্যবান শিক্ষা দিয়েছে, ধৈর্য, সততা, এবং টিমওয়ার্কের শক্তি সম্পর্কে। আমি অত্যন্ত কৃতজ্ঞ যে আমি আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সেরা সদস্যদের সঙ্গে কাজ করার সুযোগ পেয়েছি।’
যদিও তিনি এনওয়াইপিডি থেকে অবসর নিচ্ছেন, নিউইয়র্ক এবং এখানকার মানুষের প্রতি তাঁর ভালোবাসা অটুট থাকবে। ভবিষ্যতে তিনি কমিউনিটির উন্নয়নের জন্য কাজ করার ইঙ্গিত দিয়েছেন।
শামসুল হক বর্তমানে পরিবারের সঙ্গে আরও বেশি সময় কাটানোর এবং জীবনের নতুন অধ্যায়ের পরিকল্পনা করার আশা করছেন। তবে এটি নিশ্চিত যে, নিউইয়র্ক পুলিশ ডিপার্টমেন্ট ও শহরের জন্য তাঁর অবদান চিরস্মরণীয় হয়ে থাকবে।
লেফটেন্যান্ট কমান্ডার (অব.) শামসুল হক তাঁর বাবার নীতি ও মূল্যবোধকে সম্মান জানিয়ে আমেরিকান স্বপ্ন বাস্তবায়ন করেছেন। তিনি পুলিশ ব্যাজ খুলে রাখলেও, সেবার যে প্রতিশ্রুতি তিনি দিয়েছেন, তা এখনও অবিচল।
অবসরের পর বাকী জীবনটা মানুষের সেবা করতে চান শামসুল হক। মূলধারার রাজনীতিকে সক্রিয় হবেন জানিয়ে তিনি ঠিকানাকে বলেন, আসন্ন স্টেট অ্যাসেম্বলি নির্বাচনে তিনি ডিস্ট্রিক্ট-৩০ থেকে প্রতিনিধিত্ব করতে চান। অদূর ভবিষ্যতে নিউইয়র্ক সিটি কাউন্সিলে নির্বাচন করার ইচ্ছা আছে বলে জানান শামসুল হক। এজন্য বাংলাদেশি কমিউনিটির সমর্থন চেয়েছেন তিনি।