দ্যুতিময় : মামলার গ্যাড়াকলে পড়ে দীর্ঘদিন নির্বাচন ঝুলে ছিল আমব্রেলা সংগঠন বাংলাদেশ সোসাইটির। শত ঝুট-ঝামেলার পরও এখনো একক সংগঠন হিসাবে টিকে আছে এই আমব্রেলা সংগঠনটি। প্রবাসে ‘ঐক্যের প্রতীক’ জালালাবাদ অ্যাসোসিয়েশন ভেঙে গেছে। প্রবাসী সিলেটবাসীর ৩৭ বছরের গর্ব মাটিতে ধূলিস্যাৎ হয়ে গেছে। ভাঙতে ভাঙতে থেমে গেছে বিয়ানীবাজার সমিতি। কিন্তু প্রবাসে প্রায় শতাধিক আঞ্চলিক সংগঠন ভেঙে তিনশো টুকরো হয়েছে শুধু নেতৃত্বের কোন্দল ও বিভেদে। বছরের পর বছর ধরে চলা বিভেদের অনলে পুড়ছে নিউইয়র্কে বাংলাদেশি কমিউনিটি।
বেশী দিন আগের কথা নয়, তৃতীয় বারের মত অতিসম্প্রতি ভেঙেছে প্রবাসে অন্যতম বড় আঞ্চলিক সংগঠন চট্টগ্রাম সমিতি। তার আগে ভেঙেছে জালালাবাদ অ্যাসোসিয়েশন। আঞ্চলিক সংগঠন ছাড়াও ভাঙছে প্রবাসের সামাজিক ও সাংস্কৃতিক সংগঠনও। দীর্ঘদিন ধরে চলা নিউইয়র্ক বইমেলা ভেঙেছে। এমনকী এই বইমেলার আয়োজক মুক্তধারার কমিটিও এক প্রকার ভেঙেছে। কমিটি থেকে চলে গেছেন বইমেলার সাবেক একজন আহ্বায়ক। অমর একুশে নামে জ্যামাইকায় একটি পাল্টা বইমেলা সদ্য শেষ হয়েছে। যদিও আয়োজকদের দাবি- নিউইয়র্ক বইমেলার সঙ্গে এর কোনো সম্পর্ক নেই। এখন থেকে তারা বড় পরিসরে বইমেলা আয়োজন করবেন।
সমালোচকরা বলছেন, যে কমিউনিটিতে সাংবাদিকদের প্রেসক্লাব ভেঙেছে একের পর এক, সেই কমিউনিটিতে ভাঙন তো কঠিন ভাবনার বিষয় না।
সমালোচকদের মতে, বাংলাদেশি কমিউনিটির ভাঙনের পেছনে প্রধান দায়ী ফোবানা। প্রতি বছর সম্মেলনের নামে ফোবানা একটি থেকে দুটি, দুটি থেকে চারটি, এমনকী ৫টি ফোবানা সম্মেলন হয়েছে বাংলাদেশি কমিউনিটিতে। বর্তমানে তিনটি সক্রিয় ফোবানা রয়েছে এই কমিউনিটিতে, যারা ইতিমধ্যে আগামী ফোবানা সম্মেলনের দিন-তারিখও ঘোষণা করেছে।
একটি আঞ্চলিক ভেঙে দুটি হয়েছে। এটা নতুন কিছু নয়। বিভক্ত সংগঠন পৃথক অভিষেক করে, পৃথক পিনকিক করে। পৃথক ইফতার পার্টিও করে। তবে এবারের রমজানের শুরুতে বিভক্ত জালালাবাদ অ্যাসোসিয়েশনের পৃথক ইফতার পার্টি কমিউনিটিতে আলোচনার খোরাক জুগিয়েছে। বিব্রত করেছে সাধারণ সিলেটবাসীকে।
বদরুল খান ও রোকন হাকিমের নেতৃত্বাধীন জালালাবাদ অ্যাসোসিয়েশনের ইফতার পার্টি ছিল উডসাইডের গুলশান টেরেসে। মাত্র কয়েকশ গজ অদূরে কুইন্স প্যালেসে একই দিনে ইফতার পার্টির আয়োজন করেছিল মইনুল ইসলাম ও আতাউল গণি আসাদের নেতৃত্বাধীন জালালাবাদ অ্যাসোসিয়েশন। দুটি ইফতার পার্টিতেই উপস্থিতি ছিল সন্তোষজনক। কিন্তু দুই অনুষ্ঠানে উপস্থিতির বাইরেও বহু সাধারণ সিলেটবাসী রয়েছেন, যারা কোনোটিতেই যাননি।
সাধারণ সিলেটবাসীরা বলছেন, কোনটিতে যাব? ভাবতেও খারাপ লাগে প্রাণের জালালাবাদ অ্যাসোসিয়েশন এভাবে বিভক্ত হয়ে যাবে। দুই গ্রুপ থেকেই দাওয়াত পেয়েছি। কিন্তু যেতে পারিনি। তাদের মতে, জালালাবাদবাসীকে এক করার কী কেউ নেই? প্রবাসে আমাদের কতশত অর্জন। অথচ এই বিভক্তি আমাদের সব অর্জন শেষ করে দিচ্ছে। এমনকী এই বিভক্তি মূলধারায় আমাদের কমিউনিটির সুনাম বিলীন করে দিচ্ছে।
সর্বশেষ বিভক্তি সব রেখা টেনে দিয়েছে বাংলাদেশ ডে প্যারেড আয়োজন। ১৩ এপ্রিল রোববার দ্বিতীয় বারের মত বাংলাদেশ ডে প্যারেডের ঘোষণা দিয়েছে বাংলাদেশ সোসাইটি এবং ইন অ্যাসোসিয়েশন অব হিউম্যানিটি এম্পাওয়ারমেন্ট রাইটস। কিন্তু এই আয়োজন নিয়েও বিরোধ দেখা দিয়েছে। বিষয়টি আদালতেও গড়াতে পারে। গত বছর প্যারেডে অনেক অপ্রীতিকর ঘটনা ঘটেছে। মূলধারার জনপ্রতিনিধিরা দেখেছেন যে বাংলাদেশিরা কতটা অগোছালো এবং বিরোধপূর্ণ। এবছর আয়োজনের উদ্যোগ গ্রহণের সঙ্গে বিরোধও পেয়ে বসেছে। যদিও বাংলাদেশ সোসাইটির নেতারা বলছেন, তারা বিরোধ মিটিয়ে একটি বাংলাদেশ ডে প্যারেড করবেন।
গেল ফেব্রুয়ারিতে বাংলাদেশ সোসাইটির অমর একুশের অনুষ্ঠানে হট্টগোল হয়েছে। এটিও কারো কাম্য ছিল না।
বাংলাদেশি কমিউনিটিতে বিরোধের কারণে মূলধারায় কেউ ভালো করতে পারছে না। একজন এগিয়ে গেলে তাকে কয়েকজন মিলে পেছন থেকে টেনে ধরে নামাতে চায়। নিউইয়র্ক সিটিতে বাংলাদেশিরা অগ্রসরমান কমিউনিটি। ঐক্য বজায় রাখলে সিটিতে নেতৃত্ব দেওয়ার মত অনেক নেতা রয়েছে। কিন্তু অনৈক্যর কারণে মূলধারায় এগোতে পারছে না বাংলাদেশি কমিউনিটির কেউ। সবাই এক থাকলে বেশী দূরে নয়, কুইন্সের জ্যামাইকায় সিটি কাউন্সিলে তিনজন সদস্য পেত বাংলাদেশিরা। সারা বছর ঐক্যবদ্ধ থাকলেও নির্বাচনের আগে বাড়ে বিভক্তি। ফলে নির্বাচনের ফলাফল যায় অন্যের ঘরে।
বাংলাদেশি কমিউনিটিতে আর বিরোধ থাকবে না। বিরোধ কাটিয়ে বাংলাদেশি কমিউনিটি এগিয়ে যাবে তার আপন গতিতে, এমন প্রত্যাশা কমিউনিটির সবার। কিন্তু বিড়ালের গলায় ঘণ্টা বাঁধবে কে?