পবিত্র মাহে রমজান শুরু হয়েছে। প্রতিবছর রমজান মাসে নিউইয়র্কের বিভিন্ন মসজিদে প্রতিদিন রুটিন করে ইফতারের আয়োজন করা হয়ে থাকে। স্বল্প ও নিম্ন আয়ের অনেক মানুষই প্রতিদিন মসজিদে ইফতার করেন। দানশীল ব্যক্তিদের অনেকেই ইফতারির জন্য অর্থ দান করেন এবং বিভিন্ন মসজিদে রোজাদারদের সঙ্গে তারা ইফতার করেন। কিন্তু এবার অর্থ সংকটের কারণে বহু মসজিদ ইফতারের ব্যবস্থা করতে পারছে না। ফলে এবার ইফতারির আয়োজন অনেক কমে গেছে। একাধিক মসজিদ সূত্র জানায়, অন্যান্য বছরের তুলনায় এবার মানুষের দান করার ক্ষমতা কমেছে। মানুষের আয়ের সঙ্গে ব্যয়ের সামঞ্জন্স্য থাকছে না। আগে মানুষ বাজারে গিয়ে প্রতি সপ্তাহে ২০০-২৫০ ডলারে বাজার করতে পারত। এখন একই নিত্যপ্রয়োজনীয় জিনিস কিনতে হচ্ছে কয়েকগুণ বেশি দামে। আগে যেখানে ডিম কিনত দুই থেকে তিন ডলারে, এখন কিনতে হচ্ছে আট থেকে দশ ডলারে। দুধের দামও বেড়েছে। এ ছাড়া চাল, ডাল, তেল, মাছ, মাংসসহ সবকিছুর দামই বেড়েছে। এ অবস্থায় মানুষের পক্ষে জীবন নির্বাহ করা কঠিন হয়ে গেছে। অনেক মানুষ নিজেদের ক্ষয়ক্ষমতা না বাড়ার কারণে বেশি দামে জিনিসপত্র কিনতে গিয়ে হিমশিম খাচ্ছে। পরিবারের অন্যান্য খরচ মেটানোও কষ্টকর হয়ে গেছে। ফলে আগে যারা প্রতিবছর রমজানে ইফতারের জন্য অর্থ দিতেন, এবার তাদের অনেকেই দিচ্ছেন না। ফলে অনেক মসজিদে ইফতারের ব্যবস্থা করা যাচ্ছে না।
নিউইয়র্কে যতগুলো মসজিদ আছে, তার মধ্যে পরিচিত ও পরিসরের দিক থেকে একটি বড় মসজিদ হলো জ্যামাইকা মুসলিম সেন্টার (জেএমসি)। সাহায্য-সহযোগিতা ও ফান্ড পাওয়ার দিক থেকেও উপরের সারিতে এর অবস্থান। কিন্তু এ বছর ইফতারির জন্য তারাও অর্থ সংকটে রয়েছে। সেখানকার একটি সূত্র জানায়, জেএমসি প্রতিবছর প্রতিদিন রমজানে ইফতারির ব্যবস্থা করলেও এবার পারছে না। প্রথম দিন একজন কিছু অর্থ দিয়েছেন। তাই প্রতিদিন না করে এখানে উইকেন্ডে ইফতারির আয়োজন করা হবে। তবে সব উইকেন্ডে ইফতারির ব্যবস্থা করা সম্ভব হবে কি না বলা যাচ্ছে না। কারণ ছুটির দিনগুলোতে ইফতারির ব্যবস্থা করতে গেলে প্রয়োজন হয় সাড়ে তিন হাজার ডলার। আর সাধারণ দিনগুলোতে খরচ হয় তিন হাজার ডলার। কিন্তু সে পরিমাণে অর্থ আসছে না।
জ্যামাইকা মুসলিম সেন্টারের সাধারণ সম্পাদক আফতাব উদ্দিন মান্নান বলেন, আমরা এবার প্রতিদিন ইফতারির আয়োজন করতে পারিনি। উইকেন্ডে ইফতারির ব্যবস্থা থাকবে। অর্থের সংস্থান হলে প্রতিদিন ইফতারির ব্যবস্থা করতে পারব। তবে প্রতিদিন ইফতারির জন্য পানি ও খেজুরের ব্যবস্থা রয়েছে। তিনি বলেন, এবার জিনিসপত্রের দাম অনেক বেড়েছে। এ জন্য মানুষের খরচও বেড়েছে। আমরা পবিত্র রমজান উপলক্ষে জাকাত ফাউন্ডেশন ও আমাদের সিনিয়র সেন্টারের উদ্যোগে ২৭ ফেব্রুয়ারি গ্রোসারি সামগ্রী প্রদান করেছি। প্রায় ৮০০ মানুষকে এই সহায়তা দেওয়া হয়। যারা এসব সামগ্রী নিয়েছেন, তাদের মধ্যে ৯৯.৯ ভাগ ছিলেন বাংলাদেশি।