সাংবাদিক দম্পতি সাগর-রুনির মৃত্যু রেকর্ড গড়ার একটি মহাসুযোগ করে দিয়েছে। তদন্ত রিপোর্টের জন্য আদালতের সময় কবুলের সেঞ্চুরি যেনতেন ঘটনা নয়! নজিরবিহীন এ রেকর্ড গিনেস বুকে জায়গা করে নেয়ার মতো। তদন্তের জন্যে শতাধিকবার সময় দিয়ে তারিখ দেয়ার এমন ঘটনা বিশ্বের আর কোথায় আছে?
মামলার তদন্ত প্রতিবেদন দাখিলের সময়সীমা এবার ১১ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত বাড়িয়েছে আদালত। অর্থাৎ মামলার নতুন তারিখ ১১ সেপ্টেম্বর। এর আগে গত ২২ জুন তদন্তকারী সংস্থা র্যাবকে ৭ আগস্টের মধ্যে তদন্ত প্রতিবেদন জমা দিতে বলেছিলেন একই আদালত। র্যাবের আগে গোয়েন্দা শাখা আরো দু’বার এ মামলার তদন্ত প্রতিবেদন জমা দিতে ব্যর্থ হয়। সেটিসহ এই মামলার প্রতিবেদন জমার জন্য মোট ১০৩ বার সময় নিলো আইন-শৃঙ্খলা বাহিনী। এর আগে, দুটি পৃথক আদালত তদন্ত এবং হত্যার পেছনের উদ্দেশ্য উদ্ঘাটন এবং প্রকৃত অপরাধীদের গ্রেপ্তারে তদন্তকারীদের ব্যর্থতার জন্য অসন্তোষ প্রকাশ করে। এখন অসন্তোষের বাইরে আর কী করার আছে আদালতের? 
বেসরকারি টিভি চ্যানেল মাছরাঙার বার্তা সম্পাদক সাগর সরওয়ার ও তার স্ত্রী এটিএন বাংলার সিনিয়র রিপোর্টার মেহেরুন রুনিকে ২০১২ সালের ১১ ফেব্রুয়ারি ভোরে রাজধানীর পশ্চিম রাজাবাজারের বাসায় হত্যা করা হয়। তখনকার স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী সাহারা খাতুনও এখন পরলোকে। তাৎক্ষণিকতায় তিনি বলেছিলেন, ৪৮ ঘন্টার মধ্যে ধরে ফেলবেন খুনিদের। খুনের দু’দিন পর তৎকালীন আইজিপি হাসান মাহামুদ খন্দকার বলেছিলেন, তদন্তের ইতিবাচক অগ্রগতি হয়েছে। প্রায় ১২ বছরেও সেই ৪৮ ঘন্টা শেষ হয়নি। কবে নাগাদ ৪৮ ঘন্টা হবে, ইতিবাচক অগ্রগতি হবেÑ সেই আলামতও কি আছে?
না, নেই। গত বছরের ৫ নভেম্বর র্যাব থেকে বলা হয়েছিল, সাগর-রুনি হত্যার তদন্ত কবে শেষ হবে তা নির্দিষ্ট করে বলা যাবে না। সেই কথা এখনো বহাল আছে। ভদ্রলোকের এক কথা। ১১ সেপ্টেম্বর এই মামলার তদন্ত প্রতিবেদন দাখিলের নতুন তারিখেও ঢাকার সিএমএম আদালতে কি প্রতিবেদন দাখিল হবে, বা আরেকটি তারিখ পড়বে?
তা এখনই বলা যাচ্ছে না। ধারণা করাও শোভন নয়। তবে, নমুনা সুখকর নয়। এ মামলার তদন্তের দায়িত্ব পাওয়ার ৬২ দিনের মাথায় ২০১২ সালের ১৮ এপ্রিল হাইকোর্টে ব্যর্থতা স্বীকার করে ডিবি। এরপর আদালত মামলাটি তদন্ত দেয় র্যাবের হাতে। তারিখের পর তারিখ পড়ছে। আদালত প্রতিবেদনের তাগিদ দিয়েই যাচ্ছে। আর কতো? এখন করণীয়ই বা কী?  তদন্ত রিপোর্ট জমা দেয়ার ঝামেলা থেকেই মুক্তি দেয়া যায় না? 
আদালতে জমা দেওয়া র্যাবের সর্বশেষ প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, অজ্ঞাত পরিচয় দুই পুরুষকে শনাক্ত করতে যুক্তরাষ্ট্রের ইনডিপেনডেন্ট ফরেনসিক সার্ভিসেস- আইএফএস ল্যাবে ডিএনএ পাঠানো হয়েছে। সেখান থেকে ছবি প্রস্তুতের চেষ্টা চলছে। অজ্ঞাত পরিচয় দু’জনের ডিএনএ থেকে ছবি তৈরির সন্তোষজনক ফল আসেনি- এমন কথা বলার চেষ্টাও হচ্ছে। এটা কোনো বিষয়ই নয়, এটি একটি বিচ্ছিন্ন ঘটনামাত্র- এভাবে বলে দেয়ার মতো ঘটনার দিকে চলে যাচ্ছে নাতো বিষয়টি? সাগর-রুনি নামের কেউ ছিলই না এই ধরাধামে বলে দিলেই বা ঠেকাবে কে? 
লেখক : সাংবাদিক-কলামিস্ট; ডেপুটি হেড অব নিউজ, বাংলাভিশন, ঢাকা।
 
                           
                           
                            
                       
     
  
 

 মোস্তফা কামাল
 মোস্তফা কামাল   
                                
 
                                                     
                                                 
                                                     
                                                 
                                                     
                                                 
                                                     
                                                 
                                                     
                                                 
                                                     
                                                
