Thikana News
২৩ ফেব্রুয়ারী ২০২৫
  1. ই-পেপার
  2. চলতি সংখ্যা
  3. বিশেষ সংখ্যা
  4. প্রধান সংবাদ
  5. আমেরিকার অন্দরে
  6. বিশ্বচরাচর
আমেরিকা রবিবার, ২৩ ফেব্রুয়ারী ২০২৫

ডাকাত-ছিনতাইকারীর কবলে অসহায় জীবন

ডাকাত-ছিনতাইকারীর কবলে অসহায় জীবন সংগৃহীত
‘অপরাধ বিস্তৃত হচ্ছে, ধরনও পাল্টাচ্ছে। এতে তথাকথিত মবজাস্টিসের একটা প্রভাব আছে। বিশেষ করে কিশোর গ্যাং এতে উৎসাহিত হচ্ছে। তারা দলবেঁধে অপরাধ করছে।’ 
-মোহাম্মদ তৌহিদুল হক, অপরাধ বিশ্লেষক


সাম্প্রতিক সময়ে ছিনতাই অনেক বেড়ে যাওয়ায় নিরাপত্তার আশায় আরো বেশি করে গণপরিবহন ব্যবহার করছিল সাধারণ মানুষ। কিন্তু গণপরিবহন ও বাসেও হানা দিচ্ছে অপরাধীরা। তাছাড়া তথাকথিত ‘মব জাস্টিসের’ সময়ে নতুন নতুন কিশোর গ্যাংও সক্রিয় হচ্ছে বলে মনে করছেন বিশ্লেষকরা। গত ১৭ ফেব্রুয়ারি ঢাকা থেকে রাজশাহীগামী চলন্ত বাসে ডাকাতির ভয়াবহ বর্ণনা দিয়েছেন ওই বাসের যাত্রী মোহাম্মদ ওমর আলী। ওই ঘটনায় টাঙ্গাইলের মির্জাপুর থানায় শুক্রবার যে মামলাটি দায়ের হয়েছে তার বাদী তিনি। তিনি ঢাকার গাবতলী থেকে নাটোরের বড়াইগ্রাম যাওয়ার জন্য রাজশাহীগামী ইউনিক রোড রয়েলস পরিবহনের বাসে উঠেছিলেন।
এজাহারে তিনি বলেন, গাজীপুরের কালিয়াকৈরে চা পানের বিরতির জন্য বাস থামলে ডাকাতরা বাসে ওঠে। এরপর বাস গন্তব্যে রওয়ানা দিলে ৮-৯ জন যাত্রীবেশী ডাকাত চালকের গলায় চাকু ধরে বাসের নিয়ন্ত্রণ নেয়। এরপর ডাকাতরা পুরো বাসে ভোর রাত চারটা পর্যন্ত ডাকাতি করে। তারা তাদের ইচ্ছে মতো বাসটির গতিপথ নিয়ন্ত্রণ করে। বাসের প্রত্যেক যাত্রীর টাকা, স্বর্ণালংকার সব কিছুই তারা নিয়ে নেয়। ডাকাত দল ডাকাতি করা ছাড়াও দুই নারীর শ্লীলতাহানি করে বাসের  পেছন দিকে নিয়ে। ৯৯৯-এ ফোন করলে ভোর রাতের দিকে পুলিশ আসে। ডাকাতরা তার আগেই বাস থামিয়ে নেমে যায়। এরপর টাঙ্গাইলের মির্জাপুর থানায় যাওয়া জন্য পুলিশ পরামর্শ দিলে বাসটি সেখানে নিয়ে যায় চালক। কিন্তু থানা কোনো ব্যবস্থা না নিয়ে বাসটিকে যাত্রীসহ রাজশাহী পাঠিয়ে দেয়। বাসটি নাটোরের বড়াইগ্রামে গেলে পুলিশ ড্রাইভার ও হেলপারদের আটক করে ৫৪ ধারায় আদালতে পাঠায়। ঘটনার তিনদিন পর শুক্রবার টাঙ্গাইলের মির্জাপুর থানায় মামলা হয়।
এদিকে আন্তঃজেলার তিন ডাকাতকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। শুক্রবার রাতে টাঙ্গাইল জেলা গোয়েন্দা পুলিশ ঢাকার সাভার থেকে তাদের গ্রেপ্তার করে। গ্রেপ্তারকৃতরা হলেন- মানিকগঞ্জের দৌলতপুর সদর উপজেলার লাউতারা গ্রামের মো. বদর উদ্দিন শেখের ছেলে মো. শহিদুল ইসলাম ওরফে মুহিত (৩০), শরীয়তপুরের জাজিরা উপজেলার রামকৃষ্ণপুর গ্রামের মো. ইসমাইল মোল্লার ছেলে মো. সবুজ (৩০) এবং ঢাকার সাভার উপজেলার টানগেন্ডা গ্রামের আবুল হোসেনের ছেলে মো. শরীফুজ্জামান (২৮)। এ সময় তাদের কাছ থেকে লুণ্ঠিত হওয়া তিনটি মোবাইল ফোন, একটি ছুরি ও ২৯ হাজার ৩৭০ টাকা উদ্ধার করা হয়। পুলিশ বলছে, গ্রেপ্তারদের মধ্যে শহিদুল ইসলাম ওরফে মহিদুল মুহিতের বিরুদ্ধে সিরাজগঞ্জ জেলার উল্লাপাড়া থানায় একটি এবং ঢাকা জেলার সাভার মডেল থানায় একটি বাস ডাকাতি মামলাসহ মোট পাঁচটি মামলা রয়েছে। ঘটনার দিন মির্জাপুর থানায় সেবা না পেয়ে নাটোরের বড়াইগ্রাম থানায় গিয়ে জানান ভুক্তভোগীরা। এসময় পুলিশ চালক, বাসের সুপারভাইজার ও সহকারীকে আটক করে ৫৪ ধারায় আদালতে পাঠায়। পরে তারা ওইদিনই জামিনে মুক্তি পান বলেও মামলায় উল্লেখ করা হয়েছে। এর আগে দুই থানার ঠেলাঠেলিতে ঘটনার তিনদিন পর শুক্রবার টাঙ্গাইলের মির্জাপুর থানায় একটি মামলা হয়। অজ্ঞাতপরিচয় ৮-৯ জনকে আসামি করে মামলাটি করেছেন বাসযাত্রী নাটোরের বড়াইগ্রাম উপজেলার ওমর আলী। এদিকে দায়িত্ব অবহেলার অভিযোগে দায়িত্ব অবহেলার কারণে মির্জাপুর থানার এএসআই আতিকুজ্জামানকে সাময়িক বরখাস্ত করা হয়েছে। এর আগে একই অভিযোগে নাটোরের বড়াইগ্রাম থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. সিরাজুল ইসলামকে প্রত্যাহার করে পুলিশ সদরদপ্তরে সংযুক্ত করা হয়েছে। এছাড়াও গতকাল টাঙ্গাইলের পুলিশ সুপার মো. মিজানুর রহমান বলেন, ওই বাসে ধর্ষণের কোনো ঘটনা ঘটেনি। তবে শ্লীলতাহানির ঘটনা ঘটেছে। গ্রেপ্তাররা প্রাথমিকভাবে ঘটনার সঙ্গে জড়িত থাকার বিষয়টি স্বীকার করেছেন।
এদিকে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়া ভিডিওতে গত ১৭ ফেব্রুয়ারি রাতের এক ঘটনায় দেখা যায়, সাদা ও জলপাই রঙের শার্ট পরিহিত দুই যুবক একজন পুরুষ ও তার সঙ্গে থাকা এক নারীকে রামদা দিয়ে কোপাচ্ছে। এ সময় জীবন বাঁচাতে ওই নারীকে হাত জোড় করে সন্ত্রাসীদের কাছে মাফ চাইতে দেখা গেছে। একপর্যায়ে স্থানীয়রা কিশোর গ্যাংয়ের দুই সদস্যকে ধরে গণপিটুনি দিয়ে পুলিশের হাতে তুলে দেয়।
ঢাকার উত্তরায় প্রকাশ্যে এক ‘দম্পতিকে’ কোপানোর মামলায় কিশোর গ্যাংয়ের আরও তিনজনকে রিমান্ড শেষে কারাগারে পাঠানো হয়েছে। শনিবার ঢাকার মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট ইসরাত জেনিফার জেরিন জামিনের আবেদন নামঞ্জুর করে কারাগারে পাঠানোর এই আদেশ দেন।
এদিকে খোদ রাজধানীতে বাসে দুর্বৃত্তদের হানার ঘটনা ঘটছে। উত্তরা এলাকায় চলন্ত বাসে অস্ত্র ঠেকিয়ে ‘ছিনতাইয়ের’ ঘটনা ঘটেছে। বুধবার  সকালে উত্তরা হাউজ বিল্ডিং এলাকায় একটি বাসে এ ঘটনা ঘটে। এক ভুক্তভোগী তার ফেসবুক পোস্টে জানান, সকাল ৮টার দিকে তিনি উত্তরা থেকে বিমানবন্দরের উদ্দেশে রওনা দেন। প্রথমে রিকশায় যাওয়ার পরিকল্পনা করলেও নিরাপত্তার কথা চিন্তা করে পাবলিক বাসে ওঠেন। কিন্তু বাসে ওঠার কিছুক্ষণের মধ্যেই পরিস্থিতি পালটে যায়। বাসটি যাত্রীতে পূর্ণ হয়ে যাওয়ার পর আরো পাঁচ-ছয় জন যুবক সাধারণ যাত্রীর মতো বাসে ওঠেন। এরপর হঠাৎ তারা ছুরি বের করে চিৎকার করে বলে, সবাই চুপ, যা আছে বের করে দে। মুহূর্তের মধ্যেই তারা বাসের যাত্রীদের কাছ থেকে মোবাইল, ওয়ালেটসহ মূল্যবান জিনিসপত্র ছিনিয়ে নেয়। এ সময় এক যাত্রীকে ছুরিকাঘাতও করে তারা। মাত্র দুই মিনিটের মধ্যেই কাজ সেরে বাস থেকে নেমেও যায় তারা। উত্তরা পূর্ব থানার ওসি মো. শামিম আহমেদ বলেন, এ ধরনের একটি ঘটনার কথা আমরা শুনেছি। তবে এখনো কোনো লিখিত অভিযোগ পাইনি। আমরা ঘটনার সত্যতা জানার চেষ্টা করছি। ফেসবুকে অভিযোগকারী নারীকে আমরা পাচ্ছি না। একইভাবে মালিবাগে দিনের বেলায় আবু রায়হান নামে এক ছাত্রকে ছুরিকাঘাত করে ৪৫ হাজার টাকা ছিনিয়ে নেয় ছিনতাইকারীরা। এর আগে ১৪ ফেব্রুয়ারি সাভারে যাত্রীবাহী বাসে ছিনতাই হয়। ছিনতাইকারীদের ছুরিকাঘাতে তিনজন আহত হন। ৫ আগস্টের পর থেকে এ পর্যন্ত শুধু ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কেই শতাধিক বাস ডাকাতির ঘটনা ঘটেছে। ছিনতাইও বেড়েছে ব্যাপক হারে। 
ডাকাতি ও ছিনতাই বেড়ে যাওয়ার কারণ হিসেবে জার্মানভিত্তিক গণমাধ্যম ডয়চে ভেলেকে এক সাক্ষাৎকারে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সমাজকল্যাণ ও গবেষণা ইনস্টিটিউটের অধ্যাপক ও অপরাধ বিশ্লেষক মোহাম্মদ তৌহিদুল হক বলেন, আগে সড়কে ও রিকশায় ছিনতাই হতো বলে মানুষ গণপরিবহন নিরাপদ মনে করে তাতে যাতায়াত বেশি শুরু করে। কিন্তু এখন বাস বা গণপরিবহনও নিরাপদ নয়। কারণ, অপরাধীদের টার্গেটে এখন গণপরিবহন। এটার কারণ হলো, অপরাধীরা আইনের আওতায় আসছে না। তাই তারা অপ্রতিরোধ্য হয়ে উঠছে। মানুষ ঘরে বাইরে কোথাও এখন আর নিরাপদ নয়। ৫ আগস্টের পর যে তথাকথিত মবজাস্টিস শুরু হয়েছে, এতে তার একটা প্রভাব আছে। বিশেষ করে কিশোর গ্যাং এতে উৎসাহিত হচ্ছে। তারা দলবেঁধে অপরাধ করছে। অপারেশন ডেভিল হান্ট বলেন আর যৌথ বাহিনী বলেন, কেউই কার্যকর উদ্যোগ নিচ্ছে না। অপরাধ বিস্তৃত হচ্ছে, ধরনও পাল্টাচ্ছে। আর পুলিশ এখনো তার অবস্থানে যেতে পারেনি। তারা দায়িত্ব এড়িয়ে চলছে। মনে হচ্ছে, তারা এখনো কী হয় তা দেখার অপেক্ষায় আছে।


 

কমেন্ট বক্স