অস্ট্রেলিয়ার নিকটবর্তী তাসমান সাগরে তাজা গোলাগুলির সামরিক মহড়া করছে চীন। এতে অস্ট্রেলিয়া ও নিউজিল্যান্ডের মধ্যে চলাচলকারী উড়োজাহাজগুলোকে অন্য দিক দিয়ে ঘুরে যেতে হচ্ছে। খবর বিবিসির।
তাসমান সাগরে চীনের নৌবাহিনীর তিনটি জাহাজের বিরল উপস্থিতির কারণে সাম্প্রতিক দিনগুলোতে দেশ দুটি সতর্ক অবস্থায় রয়েছে। অস্ট্রেলিয়া এ ঘটনাকে ‘অস্বাভাবিক’ বলে অভিহিত করেছে।
অস্ট্রেলিয়ার উড়োজাহাজ সংস্থা কোয়ান্টাসের পক্ষ থেকে বিবিসিকে জানানো হয়, তারা তাদের ফ্লাইটের গতিপথে ‘সাময়িক সামঞ্জস্যপূর্ণ’ পরিবর্তন এনেছে এবং অন্যান্য এয়ারলাইন্সগুলোও একই কাজ করেছে বলে জানা গেছে।
চীন বলেছে, আন্তর্জাতিক জলসীমায় অনুষ্ঠিত এই মহড়া আন্তর্জাতিক আইন অনুসারে করা হচ্ছে। দেশটির নৌবাহিনীর জাহাজগুলো এখন অস্ট্রেলিয়ার নিউ সাউথ ওয়েলস উপকূল থেকে ৩৪০ নটিক্যাল মাইল পূর্বে অবস্থান করছে বলে জানা গেছে। যদিও জাহাজগুলো একসময় সিডনি থেকে প্রায় ১৫০ নটিক্যাল মাইল দূরে চলে এসেছিল বলে জানা গেছে।
অস্ট্রেলিয়া ও নিউজিল্যান্ড গত সপ্তাহ থেকে চীনা নৌবহরে থাকা একটি ফ্রিগেট, একটি ক্রুজার ও একটি ট্যাঙ্কারকে নিবিড়ভাবে পর্যবেক্ষণ করছে এবং তারা পর্যবেক্ষণের জন্য নিজেদের জাহাজ পাঠিয়েছে।
সংবাদমাধ্যম নিউজিল্যান্ড হেরাল্ড জানায়, চলতি সপ্তাহের শুরুতে নিউজিল্যান্ডের প্রতিরক্ষামন্ত্রী জুডিথ কলিন্স বলেছেন, চীন তাদের অঞ্চলে যুদ্ধজাহাজ পাঠানোর কোনো তথ্য দেয়নি। তিনি বলেন, ‘তাসমান সাগরে তারা (চীন) কী করছে সে সম্পর্কে আমাদের জানানো হয়নি।’
এদিকে, অস্ট্রেলিয়ার প্রতিরক্ষামন্ত্রী রিচার্ড মার্লেস বলেছেন, জাহাজের উপস্থিতি ‘অভূতপূর্ব নয়, তবে এটি একটি অস্বাভাবিক ঘটনা’।
গতকাল ২১ ফেব্রুয়ারি (শুক্রবার) চীনের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় নিশ্চিত করেছে, তারা ‘দূরবর্তী জলসীমায়’ নৌ প্রশিক্ষণ ও মহড়া করছে। মুখপাত্র গুওজিয়াকুন বলেন, ‘সংশ্লিষ্ট আন্তর্জাতিক আইন ও প্রথা অনুসারে নিরাপদ, মানসম্মত ও পেশাদার পদ্ধতিতে মহড়া পরিচালিত হচ্ছে।’
অস্ট্রেলিয়ার প্রধানমন্ত্রী অ্যান্থনি আলবানিজ বলেছেন, চীনা নৌবহর শুক্রবার একটি সতর্কতা জারি করেছে যে, তারা মহড়া শুরু করবে, যার মধ্যে তাজা গোলাগুলি অন্তর্ভুক্ত থাকতে পারে। তিনি বলেন, ‘এই কার্যকলাপ এমন একটি জলসীমায় ঘটেছে, যা আন্তর্জাতিক আইনের সঙ্গে সম্পৃক্ত। অস্ট্রেলিয়ার কোনো সম্পদ বা নিউজিল্যান্ডের সম্পদের জন্য আসন্ন বিপদের কোনো ঝুঁকি নেই।’
তবে দেশটির প্রতিরক্ষামন্ত্রী রিচার্ড মার্লেস বলেন, চীনারা যখন সতর্কতা জারি করেছিল, তখন তারা সরাসরি অস্ট্রেলিয়ার কর্মকর্তাদের অবহিত করেনি।
শুক্রবার সিডনি থেকে ক্রাইস্টচার্চের উদ্দেশে উড্ডয়নের সময় এমিরেটসের একটি ফ্লাইটকে চীনা কর্তৃপক্ষ মহড়া সম্পর্কে অবহিত করেছে বলে জানা গেছে। বিবিসিকে দেওয়া এক বিবৃতিতে কোয়ান্টাস নিশ্চিত করেছে, তারা তাসমান সাগরের ওপাড়ে তাদের উড়োজাহাজের রুট পরিবর্তন করেছে এবং তারা ক্রমাগত আকাশসীমা পর্যবেক্ষণ করছে। ভার্জিন অস্ট্রেলিয়া ও এয়ার নিউজিল্যান্ডও একই কাজ করেছে বলে জানা গেছে।
অস্ট্রেলিয়া ও চীনের মধ্যে বেইজিংয়ে একটি প্রতিরক্ষা সংলাপ অনুষ্ঠিত হওয়ার কয়েকদিন পরেই এই মহড়াটি অনুষ্ঠিত হচ্ছে। ওই সংলাপে উভয় দেশ সামরিক স্বচ্ছতা রক্ষা ও যোগাযোগ বৃদ্ধিসহ অন্যান্য বিষয় নিয়ে আলোচনা করে।
সম্প্রতি দেশ দুটি বেশ কয়েকটি উত্তেজনাপূর্ণ সামুদ্রিক সংঘর্ষের মুখোমুখি হয়েছে। এই মাসের শুরুতে ক্যানবেরা কর্তৃপক্ষ বলেছে, দক্ষিণ চীন সাগরের উপর দিয়ে যাওয়ার সময় একটি চীনা যুদ্ধবিমান অস্ট্রেলিয়ার একটি সামরিক উড়োজাহাজের সামনে গোলা নিক্ষেপ করেছে। বেইজিং বলেছে, অস্ট্রেলীয় উড়োজাহাজটি ‘ইচ্ছাকৃতভাবে তাদের আকাশসীমায় অনুপ্রবেশ’ করেছে।
গত বছরের মে মাসে অস্ট্রেলিয়া অভিযোগ করেছিল, একটি চীনা যুদ্ধবিমান অস্ট্রেলিয়ান নৌবাহিনীর একটি হেলিকপ্টারের কাছে গোলা নিক্ষেপ করেছে। ওই হেলিকপ্টারটি পীত সাগরে জাতিসংঘের নিরাপত্তা পরিষদের মিশনের অংশ ছিল। এ ছাড়া ক্যানবেরা ২০২৩ সালের নভেম্বরে জাপানের কাছে আন্তর্জাতিক জলসীমায় বেইজিংয়ের নৌবাহিনীর ব্যবহৃত ‘সোনার পালসে’ অস্ট্রেলিয়ার ডুবুরিরা আহত হয়েছেন বলে অভিযোগ করেছে।
ঠিকানা/এএস