Thikana News
২২ ফেব্রুয়ারী ২০২৫
  1. ই-পেপার
  2. চলতি সংখ্যা
  3. বিশেষ সংখ্যা
  4. প্রধান সংবাদ
  5. আমেরিকার অন্দরে
  6. বিশ্বচরাচর
আমেরিকা শনিবার, ২২ ফেব্রুয়ারী ২০২৫

আমাদের পৃথিবীর ভবিষ্যৎ কী?

আমাদের পৃথিবীর ভবিষ্যৎ কী?
ড. গুলশান আরা : সর্বপ্রথম আমি অভিনন্দন জ্ঞাপন করতে চাই ঠিকানা পত্রিকার সম্মানিত সম্পাদক, আমার অত্যন্ত স্নেহভাজন ব্যক্তিত্ব, জনাব এম এম শাহীনকে, তাঁর বলিষ্ঠ নেতৃত্ব ও দূরদর্শিতার জন্য। আরও অভিনন্দন জানাই ঠিকানার সকল কর্মকর্তাকে, যাঁদের অদম্য পরিশ্রম ও একনিষ্ঠতার ফলে ঠিকানা একটি অন্যতম জনপ্রিয় পত্রিকা হিসেবে সংবাদজগতে স্থান করে নিয়েছে এবং অগণিত পাঠকের হৃদয়ে স্থান করে নিয়েছে। ঠিকানার ৩৫তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকীতে পত্রিকাটির সকল কর্মকর্তাকে জানাই আমার আন্তরিক অভিনন্দন। আমারও সৌভাগ্য হয়েছিল ঠিকানার সকল পাঠকের সঙ্গে দীর্ঘদিনের সখ্য স্থাপন করার! আগামীতে ঠিকানা আরও বলিষ্ঠ পদক্ষেপ রাখবে বিশ্বকে পাঠকের কাছে পৌঁছে দেওয়ার লক্ষ্যে- এই আমার প্রত্যাশা।
বর্তমানে পৃথিবী যেরূপ আশঙ্কজনক পরিস্থিতির সম্মুখীন হতে চলেছে, সেটা সম্বন্ধে পাঠকমণ্ডলীকে অবগত করার লক্ষ্যে আমি এই সংক্ষিপ্ত প্রবন্ধটি, ‘আমাদের পৃথিবীর ভবিষ্যৎ কী?’, প্রকাশ করছি। আশা করি, এর মাধ্যমে পাঠকমণ্ডলী উপকৃত হবেন।
আমাদের ছোট্ট গ্রহ পৃথিবী আজ মহা দুর্যোগময় পরিবেশে সূর্যকে প্রদক্ষিণ করছে। পাঁচ বিলিয়ন বছর পূর্বে জন্ম এই ছোট্ট গ্রহের। এর পর থেকে সে সূর্যকে কেন্দ্র করে তার আবর্তে অবিরত ঘুরে চলেছে। তবে আজ কি আমাদের পৃথিবী ধ্বংসের পথে যাত্রা করছে?
ফসিল জ্বালানি ব্যবহারের ফলে বৈশ্বিক তাপমাত্রা ক্রমশই বেড়ে চলেছে। ফলে উত্তর মেরুর বরফ দ্রুত গলে যাচ্ছে আর সমুদ্রের জলের উচ্চতা ক্রমশই বেড়ে চলেছে। জলবায়ুর তাপমাত্রা বিপজ্জনকভাবে বেড়ে যাওয়ার ফলে বন-জঙ্গলে প্রাণঘাতী অগ্নিকাণ্ড ঘটে চলেছে। একই সঙ্গে চলছে প্রলয়ংকর ঝড়বৃষ্টি। সামুদ্রিক জলোচ্ছ্বাসের কবলে পড়ে বিশ্বব্যাপী শতাধিক জনবসতি প্লাবিত হচ্ছে এবং বিলীন হওয়ার পথে। একই সঙ্গে চলছে বৈশ্বিক যুদ্ধবিগ্রহ, অবিরাম বোমা বর্ষণ ও ধ্বংসাত্মক কার্যকলাপ। ফলে পৃথিবী আজ সামগ্রিকভাবে ধ্বংসের মুখোমুখি।
পৃথিবী আজ খণ্ডিত। দেশ, কাল, জাতি, ধর্ম, বর্ণ, রাজনৈতিক চিন্তা-চেতনা বিশেষে জাতীয় ও আন্তর্জাতিক অঙ্গনে শত শত খণ্ডে খণ্ডিত। হিংসা-বিদ্বেষের দাবানল জ্বলে উঠছে চারপাশে। নটরাজের মতো প্রলয়ের নেশায় মেতে উঠেছে মানুষ। ধর্মের ভেলায় চড়ে দস্যুর পতাকা উড়িয়ে মানুষ চালাচ্ছে মানুষেরই ধ্বংসযজ্ঞ। মানবকল্যাণ সাধনের নামে মানুষের মৃতদেহের স্তূপের ওপর দাঁড়িয়ে মানুষ সোচ্চার করছে তার জয়গান। হাজার বছরের ঐতিহ্যবাহী সভ্যতার ধ্বংসস্তূপের পিরামিডের চূড়ায় দাঁড়িয়ে প্রচার করছে তার বিজয়, ভাষণ দিচ্ছে হাজার মানুষের শবযাত্রার মিছিলে। তাসের দেশের মতো ধসে পড়ছে একেকটা দেশ, একেকটা সভ্যতা, একেকটা ইতিহাস। নবজাত শিশুর প্রথম ক্রন্দনের শব্দ চাপা পড়ে যাচ্ছে আগ্নেয়াস্ত্রের গর্জনে। সে হাঁটতে শিখেই হাতে তুলে নিচ্ছে মারণাস্ত্র তার প্রথম খেলনা মনে করে। গণতন্ত্রের নামে, দেশপ্রেমের নামে চলছে তাণ্ডব নৃত্য, ধর্মের নামে চলছে জিঘাংসা। নিজ নিজ শক্তি প্রচার করার লক্ষ্যে অনেক দেশই এখন আণবিক বোমা সংগ্রহ করছে।
বিজ্ঞান মানুষকে দেখিয়েছে দুরারোগ্য ব্যাধি থেকে মুক্তি পাওয়ার পথ, শিখিয়েছে সূর্যের আলো, দুরন্ত জলপ্রপাত ও প্রাকৃতিক রসদ মানুষের উপকারে ব্যবহার করার পদ্ধতি। অথচ সেই বিজ্ঞানকে ব্যবহার করেই মানুষ বানাচ্ছে মানুষ মারার পদ্ধতি। আণবিক শক্তি ব্যবহার করে মানুষ আলোকিত করছে অন্ধকারাচ্ছন্ন বসতি, আবার সেই আণবিক শক্তি ব্যবহার করেই মানুষ বিশ্বের কাছে সোচ্চার করছে তার মারণঘাতী শক্তি।
দুটি কাল্পনিক ফিকশন আমাদের অন্তর্দৃষ্টি উন্মোচন করতে সহায়ক হবে।
Herbert George Wells, H.G. Wells (১৮৬৬-১৯৪৬) একজন প্রখ্যাত ইংলিশ ঔপন্যাসিক, যিনি ‘father of science fiction’ নামেও পরিচিত। তাঁর লেখা বই ‘The War of the World (1895’, এই ছায়াছবিতে পৃথিবীর মানুষের সঙ্গে অন্য গ্রহের এলিয়েনদের যুদ্ধ তুলে ধরা হয়। বর্তমান বিশ্বে মানুষই এলিয়েন বেশে চালাচ্ছে মানুষের ওপর ধ্বংসলীলা।
আরেকটি রোমহর্ষক উপন্যাস ‘The Day After (1983)’-এ জার্মানিকে কেন্দ্র করে NATO এবং Warsaw Pact-এর প্রচণ্ড মতানৈক্য ঘটার পরিপ্রেক্ষিতে এই দ্বন্দ্বের অবসান ঘটাতে রাশিয়া ও আমেরিকা আণবিক বোমা বিস্ফোরণ ঘটায়। ফলে পৃথিবীকে প্রায় ধ্বংসের দিকে ঠেলে দেয়।
দ্বিতীয় মহাযুদ্ধে দুটো আণবিক বোমার বিস্ফোরণে জাপানের যে ধ্বংসাত্মক ক্ষয়ক্ষতি হয়েছিল এবং জেনেটিক মিউটেশনে জীবিত মানুষ ও জীবজন্তুর যে বিকলাঙ্গতা ঘটেছিল, তার জের আজও বহন করছে মানুষ এবং পরবর্তী প্রজন্মও জেনেটিক মিউটেশনের অভিশাপ বহন করছে। বর্তমানেও ইসরায়েল যেভাবে ফিলিস্তিনিদের ভূমি জোর করে দখল করছে আর সম্পূর্ণ অবৈধভাবে তাদের রাজ্য বিস্তার করছে, তার সমাপ্তি কীভাবে ঘটবে, আমাদের জানা নেই।
আমার জানামতে, বর্তমানে পৃথিবীতে আণবিক বোমা রয়েছে রাশিয়া, আমেরিকা, উত্তর কোরিয়া, ফ্রান্স, পাকিস্তান, ইংল্যান্ড ও ভারতবর্ষে এবং যে যে যার যার অবস্থান থেকে তার শক্তি প্রয়োগ করতে প্রস্তুত। একটু তলিয়ে দেখলে বোঝা যায়, বিশ্বব্যাপী এই আণবিকযুদ্ধে কেউই জয়ী হতে পারবে না! পৃথিবীই যদি ধ্বংস হয়ে যায়, তবে দেশের অস্তিত্ব কোথায় থাকবে?
এ ছাড়া প্রযুক্তির অনিয়ন্ত্রক ব্যবহারের ফলেও অপ্রত্যাশিতভাবে আমাদের সৌরজগতে ঘটতে পারে বিশাল ধ্বংসযজ্ঞ। একসময় পৃথিবীর একমাত্র উপগ্রহ ছিল আমাদের চাঁদ। কিন্তু আজ মানুষের সৃষ্ট উপগ্রহ হাজারের উপরে, তারা যার যার আবর্তে পৃথিবীকে প্রদক্ষিণ করছে। এ ছাড়া ফৎড়হব ও উপগ্রহের মাধ্যমে চলছে শত্রুদেশের ওপর গোয়েন্দাগিরি। অকস্মাৎ কোনো উপগ্রহ তার আবর্ত থেকে ছিটকে পড়লে কি মহা দুর্যোগের কবলে পড়বে না আমাদের সৌরজগৎ?
অতএব, আমাদের গ্রহ পৃথিবীকে রক্ষা করার জন্য প্রয়োজন আমাদের একতা ও সদিচ্ছা। আন্তর্জাতিক অঙ্গনে সব দেশকে এগিয়ে আসতে হবে আমাদের এই ছোট্ট গ্রহ পৃথিবীকে সংরক্ষণ করতে। নতুবা কালের যাত্রাপথে আমাদের পৃথিবীর যাত্রা হয়তো-বা এখানেই শেষ এবং আমাদের পৃথিবী আমাদের সৌরজগতের লাল গ্রহ ‘মার্স’-এর মতো একটি প্রাণহীন পাথরের মতো অনন্তকালের জন্য সূর্যকে প্রদক্ষিণ করবে।
লেখক : নজরুল গবেষক ও প্রাবন্ধিক।

কমেন্ট বক্স