Thikana News
২২ ফেব্রুয়ারী ২০২৫
  1. ই-পেপার
  2. চলতি সংখ্যা
  3. বিশেষ সংখ্যা
  4. প্রধান সংবাদ
  5. আমেরিকার অন্দরে
  6. বিশ্বচরাচর
আমেরিকা শনিবার, ২২ ফেব্রুয়ারী ২০২৫
জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের প্রথম বৈঠক

দ্রুত নির্বাচনের পক্ষে মত রাজনৈতিক দলগুলোর

দ্রুত নির্বাচনের পক্ষে মত রাজনৈতিক দলগুলোর ছবি: সংগৃহীত
* নানা মতভেদ থাকলেও ঐক্য নষ্ট করা যাবে না : ড. ইউনূস
* দ্রুত নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে, এটাই আমাদের প্রত্যাশা : মির্জা ফখরুল
* পজিটিভ সিদ্ধান্তকে জামায়াত স্বাগত জানাবে : ডা. আবদুল্লা মোহাম্মদ তাহের


অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ও জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের সভাপতি অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইউনূসের সভাপতিত্বে রাষ্ট্র সংস্কারের প্রশ্নে রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের প্রথম বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়েছে। আজ ১৫ ফেব্রুয়ারি (শনিবার) বিকালে ফরেন সার্ভিস একাডেমিতে বৈঠকটি শুরু হয়। এতে অংশ নেন বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের নেতারা। বৈঠক সূত্রে জানা যায়, ঐকমত্য কমিশনের প্রথম বৈঠকে প্রাথমিক আলোচনা হয়েছে। সংস্কারের রূপরেখা নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা হয়নি। দলগুলো তাদের নিজেদের মতামত জানিয়েছে। নেতারা দ্রুত সংস্কার ও নির্বাচনের পক্ষে কথা বলেছে। কেউ পূর্ণাঙ্গ সংস্কার আবার কেউ ন্যূনতম সংস্কারের পক্ষে মত দিয়েছেন। এছাড়াও স্থানীয় নির্বাচন জাতীয় সংসদ নির্বাচনের আগে বা পরে এ বিষয়েও নিজ নিজ দলের অবস্থান জানিয়েছেন তারা। 
বৈঠকের শুরুতে সভাপতির বক্তব্য দেন প্রধান উপদেষ্টা ও জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের সভাপতি ড. মুহাম্মদ ইউনূস। এসময় তিনি বলেন, যে স্বপ্নের পেছনে আমাদের তরুণরা আত্মত্যাগ করেছে, আমরা যেন তেমন একটা দেশ গড়তে পারি। সংস্কার কমিশনের সদস্যরা এমনভাবে প্রস্তাব তৈরি করেছেন, যাতে ভবিষ্যৎ প্রজন্ম কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেন বর্তমানদের প্রতি। সংস্কার কমিশনের সদস্যরা তাদের অভিজ্ঞতার আলোকে প্রস্তাব তৈরি করেছেন। কিন্তু রাজনীতিকদেরই সিদ্ধান্ত দিতে হবে কতটুকু, কখন, কীভাবে এসব প্রস্তাব বাস্তবায়ন হবে। কারো ওপর কিছু চাপিয়ে দেয়ার জন্য ঐকমত্য কমিশন নয়। সংস্কারের গুরুত্ব আমরা সবাই বুঝি, কিন্তু আমাদের তা গ্রহণ করতে হবে, কাজে লাগাতে হবে। একটা লন্ডভন্ড অবস্থায় অবস্থায় দায়িত্ব নিয়েছি, চেষ্টা করেছি এটাকে কোনোভাবে সচল করতে। কিন্তু এই ছয় মাসের অভিজ্ঞতা ভবিষ্যতেও আমাদের সবাইকে প্রচণ্ড সাহস দেবে। দলমত নির্বিশেষে কী করে আমরা একত্র হতে পারি? 
ঐক্য নষ্ট না করার আহ্বান জানিয়ে তিনি বলেন, যারা পরাজিত হয়েছে, তারা ফিরে আসার জন্য ব্যাকুল, সেজন্য নানা মতভেদ থাকলেও ঐক্য নষ্ট করা যাবে না। যারা গণঅভ্যুত্থানকে ভন্ডুল করার চেষ্টা করেছে, তারা বহু গল্প রচনা করেছে, টিকাতে পারেনি। শেষমেশ ট্রাম্পের কাছেও গল্প চালাতে ব্যর্থ হয়েছে।
ঐকমত্য কমিশনের প্রথম বৈঠকে প্রাথমিক আলোচনা হয়েছে জানিয়ে বৈঠক শেষে বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেন, আমরা খুব পরিষ্কারভাবে বলেছি, জাতীয় নির্বাচন আগে হতে হবে, তারপর স্থানীয় সরকার নির্বাচন। আমরা আশা করব, এ সংস্কারের ন্যূনতম যে ঐকমত্য তৈরি হবে সেটার ওপর ভিত্তি করে অতি দ্রুত জাতীয় নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে। সেটাই আমাদের প্রত্যাশা।
বাংলাদেশ জামায়াত ইসলামীর নায়েবে আমির ডা. আবদুল্লা মোহাম্মদ তাহের বলেন, আমরা জাতীয় ঐকমত্য কমিটির এ উদ্যোগকে স্বাগত জানিয়েছি। সব পজিটিভ সিদ্ধান্তকে জামায়াত স্বাগত জানাবে। আমরা এটা ঘোষণা করেছি। সংস্কার কমিশনের চূড়ান্ত ব্যবস্থার পরে যথাশীঘ্রই নির্বাচনের প্রস্তুতির বিষয়ে আমরা আহ্বান জানিয়েছি। আজ খসড়া আলোচনা হয়েছে, এ বিষয়ে বিস্তারিত বইয়ের মাধ্যমে জানানো হবে, এবং তা নিয়ে আবার ঐকমত্য কমিটির সঙ্গে মতবিনিময় হবে সেখানে আমাদের মূল প্রতিক্রিয়া জানাবো। নির্বাচনের বিষয়ে তিনি বলেন, আমরা বলেছি, আগে সংস্কার বিষয়গুলো আসুক। আমরা ঐকমত্য হই। এরপর নির্বাচনের বিষয় আসবে। প্রধান উপদেষ্টা বলেছেন, ডিসেম্বরের মধ্যে নির্বাচন আমরা দেখি সেটা কতটুকু আগায়।
বাংলাদেশ খেলাফত মজলিসের আমির মামুনুল হক বলেন, প্রধান উপদেষ্টা আশা করেছেন আগামী ছয় মাসের মধ্যে ঐকমত্যের ভিত্তিতে সংস্কার করা যাবে। এটি নিয়ে মূল আলোচনা হয়েছে আজ। স্থানীয় নির্বাচন নাকি জাতীয় নির্বাচন কোনটি আগে হবে সেইসব বিষয় নিয়ে রাজনৈতিক দলগুলো প্রস্তাবনা দিয়েছে। আজ যেহেতু এরকম সিদ্ধান্তমূলক কোনো আলোচনার বৈঠক না, কাজে এ বিষয়ে কোনো সিদ্ধান্ত হয়নি। আমরা বলেছি, বাংলাদেশে যে সংস্কারের আলোচনা চলছে সেগুলো কিছু ভিত্তির ওপর দাঁড়িয়ে হওয়া উচিত। এছাড়া জুলাই বিপ্লবের যে ঘোষণাপত্র সেটি অতি দ্রুত তুলে ধরার আহ্বান জানিয়েছি। সেই সঙ্গে ৪৭, ৭১, ২৪ ভিত্তি ধরে আগামী দিনের প্রস্তাবনা আমাদের দলের পক্ষ থেকে দিয়েছি।
নাগরিক ঐক্যের সভাপতি মাহমুদুর রহমান মান্না বলেন, আমি মনে করি, ডিসেম্বরের নির্বাচনের আগেই এগুলো করা সম্ভব। তাদের এটিটিউডেও এ বিষয়টি আছে, যে সবকিছু দ্রুত সময়ের মধ্যে করার। পুরো জাতির মতামত নিয়ে তা একটি ওয়েবসাইটে প্রকাশ করাও কিন্তু ভালো উদ্যোগ। 
জাতীয়তাবাদী গণতান্ত্রিক আন্দোলনের (এনডিএম) চেয়ারম্যান ববি হাজ্জাজ বলেন, নির্বাচিত সরকারের বাইরে বড় কোনো সংস্কার সম্ভব নয়। তাই শিগগিরই একটা নির্বাচন দরকার। আমরা বলেছি ২০২৫ সালেই দিতে হবে এমন নয়, তবে অতি শিগগিরই যেন দেওয়া হয়। এর আগে প্রতিটি সংস্কার কমিশন যেন প্রতিটি দলের সঙ্গে বসে এবং সংস্কার নিয়ে আলোচনা করে। সংস্কার নিয়ে যদি ঐকমত্যে না আসা যায়, তাহলে সেই সংস্কার রাজনৈতিক সরকার করবে। আমরা শক্তভাবে জানিয়েছি জাতীয় নির্বাচনের আগে কোনোভাবেই স্থানীয় নির্বাচন নয়। আমরা মনে করি, স্থানীয় নির্বাচনকে ঘিরে প্রচুর দাঙ্গা-কোন্দল শুরু হতে পারে। পুলিশ বাহিনী এখনই আইনশৃঙ্খলা নিয়ন্ত্রণ করতে পারছে না, তখনও পারবে না। তাই জাতীয় নির্বাচনের আগে কোনোভাবেই যেন স্থানীয় নির্বাচন না হয়, সে কথা আমরা বলেছি।
বাংলাদেশ জাসদের সভাপতি শরীফ নুরুল আম্বিয়া বলেন, স্থানীয় সরকারের নির্বাচনের ব্যাপারে একটা কথা এখানে এসেছে, সে বিষয়ে আমরা আমাদের কথা বলেছি। দেশে যা রাজনৈতিক সমস্যা, সামনে যে নির্বাচন ও সংস্কার সে বিষয়ে ঐকমত্য খুবই গুরুত্বপূর্ণ। জাতীয় নির্বাচনের আগে যদি স্থানীয় সরকার নির্বাচন হয় তাহলে মানুষের অগ্রাধিকার বদলে যাবে। তাতে অনেক নতুন সমস্যার সৃষ্টি হবে। যারা এ অভ্যুত্থানকে সমর্থন করেছেন, নেতৃত্ব দিয়েছেন সবার কথা হলো জনগণ যেন অভ্যুত্থানের পক্ষে ঐক্যবদ্ধ থাকে। অভ্যুত্থানের শক্তি যেন ঐক্যবদ্ধভাবে আগামী দিনের কাক্সিক্ষত নির্বাচনে অগ্রসর হতে পারি সেটাই একান্ত কাম্য।
বিপ্লবী ওয়ার্কার্স পার্টির সাধারণ সম্পাদক সাইফুল হক বলেছেন, প্রধান উপদেষ্টা পরিষ্কারভাবে বলেছেন কোনো প্রস্তাবনা ঐকমত্য কমিশনের ভিত্তিতে বা সরকারের ভিত্তিতে চাপিয়ে দেওয়ার কোনো মনোভাব তাদের নেই। আলাপ-আলোচনা করে, একটি বোঝাপড়া তৈরি করে যে প্রশ্নে আমরা ঐকমত্য হতে পারব সেই ভিত্তিতে প্রফেসর আলী রীয়াজ চেষ্টা করবেন একটি জাতীয় সনদ তৈরি করার। জাতীয় সনদের ভিত্তিতে পরবর্তী সময়ে জাতীয় নির্বাচন বা সংবিধান সংস্কার প্রশ্নে আলোচনা হবে।
এবি পার্টির চেয়ারম্যান মুজিবুর রহমান মঞ্জু। তিনি বলেন, অন্তর্বর্তীকালীন সরকার ক্ষমতায় আছে ঠিকই কিন্তু তাদের কর্তৃত্ব এখনো সুস্পষ্ট হয়নি। এমন অবস্থায় যেকোনো নির্বাচন আমাদের জন্য হবে বিপজ্জনক। আপনারা আপনাদের কর্তৃত্ব নিশ্চিত না করে যদি নির্বাচনের দিকে যান তাহলে এ নির্বাচন হতে পারে অত্যন্ত খারাপ।
বৈঠকে বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরের নেতৃত্বে ৬ সদস্যের একটি প্রতিনিধিদল। এছাড়া জামায়াতে ইসলামীর সেক্রেটারি জেনারেল মিয়া গোলাম পরওয়ার, লিবারেল ডেমোক্রেটিক পার্টির (এলডিপি) চেয়ারম্যান কর্নেল (অব.) অলি আহমদ, নাগরিক ঐক্যের সভাপতি মাহমুদুর রহমান মান্না, জাতীয় পার্টির (জাফর) মোস্তফা জামাল হায়দার, বিজেপির চেয়ারম্যান আন্দালিব রহমান পার্থ, বাংলাদেশ এলডিপির চেয়ারম্যান শাহাদাত হোসেন সেলিম, ইসলামী আন্দোলনের প্রেসিডিয়াম সদস্য সৈয়দ মোহাম্মদ মোসাদ্দেক বিল্লাহ আল মাদানি, এবি পার্টির চেয়ারম্যান মুজিবুর রহমান মঞ্জু, গণঅধিকার পরিষদের সভাপতি নুরুল হক নূর, গণ ফোরামের প্রেসিডিয়াম সদস্য সুব্রত চৌধুরী, জাতীয়তাবাদী সমমনা জোট ও বাংলাদেশ লেবার পার্টির নেতারা অংশ নেন।

ঠিকানা/এসআার


 

কমেন্ট বক্স