Thikana News
২২ নভেম্বর ২০২৪
  1. ই-পেপার
  2. চলতি সংখ্যা
  3. বিশেষ সংখ্যা
  4. প্রধান সংবাদ
  5. আমেরিকার অন্দরে
  6. বিশ্বচরাচর
আমেরিকা শুক্রবার, ২২ নভেম্বর ২০২৪

“বঙ্গবন্ধুর প্রথম জীবনের রাজনীতি”

“বঙ্গবন্ধুর প্রথম জীবনের রাজনীতি”
সিরাজুল ইসলাম সরকার

১৯৩৯ সাল। বঙ্গবন্ধু কলকাতা বেড়াতে যান, কলকাতা যাওয়ার পর হোসেন শহীদ সোহরাওয়ার্দী সাহেবের সাথে দেখা করেন। আবদুল ওয়াসেফ সাহেব ছিলেন তখন ছাত্রনেতা। তার সাথেও বঙ্গবন্ধু আলাপ করেন এবং গোপালগঞ্জ আসতে আমন্ত্রণ জানান। বঙ্গবন্ধু সোহরাওয়ার্দী সাহেবকে বললেন গোপালগঞ্জ মুসলিম ছাত্রলীগ গঠন করব এবং মুসলিম লীগও গঠন করব। তখন খন্দকার শামসুদ্দিন সাহেব এম.এল.এ। তিনি মুসলিম লীগে যোগদান করেছেন। তিনি ছাত্রলীগের সভাপতি হলেন। আর বঙ্গবন্ধু হলেন সাধারণ সম্পাদক। মুসলিম লীগও গঠন করলেন। মোক্তার সাহেব সেক্রেটারি হলেন। কিন্তু বঙ্গবন্ধু নিজেই সকল কাজ করতেন। 

মুসলিম লীগ ডিফেন্স একটা গঠন করা হলো। বঙ্গবন্ধুকে করা হলো সেক্রেটারি। এবার বঙ্গবন্ধু আস্তে আস্তে রাজনীতির মধ্যে প্রবেশ করে পড়লেন। বঙ্গবন্ধুর বাবা কখনো বাধা দিতেন না। শুধু বলতেন, ‘যাই কর- লেখাপড়ার দিকে নজর রাখিও।’ তখন লেখাপড়ার দিকেও বঙ্গবন্ধুর প্রবল আগ্রহ ছিল। কারণ কয়েক বছর শারীরিক অসুস্থতার জন্য বঙ্গবন্ধুর লেখাপড়া বন্ধ ছিল। তবে বঙ্গবন্ধু ক্লাসের ক্যাপ্টেন ছিলেন। খেলাধুলার দিকে ছিল প্রবল আকর্ষণ। কিন্তু বঙ্গবন্ধুর বাবা বেশি খেলাধুলা করতে দিতে না। কারণ বঙ্গবন্ধুর ছিল হার্টের রোগ। বঙ্গবন্ধুর বাবাও ভালো খেলোয়াড় ছিলেন। বঙ্গবন্ধুর বাবা অফিসার্স ক্লাবের সেক্রেটারি ছিলেন। আর বঙ্গবন্ধু ছিলেন মিশন স্কুলে ক্লাশ ক্যাপ্টেন। বঙ্গবন্ধুর বাবা আর বঙ্গবন্ধুর নিজের টিমের মধ্যে খেলাধুলা হতো। আর এই খেলা জনসাধারণ খুব উপভোগ করতো। বঙ্গবন্ধুর স্কুল টিম খুব ভালো ছিল। গোপালগঞ্জ মহকুমায় যারা ভালো খেলতো বঙ্গবন্ধু তাদের ভর্তি করিয়ে নিতেন। হেডমাস্টারকে বলে বেতন ফ্রি করে দিতেন। ১৯৪০ সালে বঙ্গবন্ধুর টিম তার বাবার টিমকে সকল খেলায় পরাজিত করলো। বঙ্গবন্ধুর বাবার ছিল অফিসার্স ক্লাব টিম। তাদের টাকা পয়সার অভাব ছিলোনা। টাকা দিয়ে বাহির থেকে খেলোয়াড় নিয়ে আসতেন। সবাই ছিল নামকরা খেলোয়াড়। বছর শেষে দেখা গেলো বাবা-ছেলের টিমের খেলায় ৫ টি ম্যাচ ড্র হয়েছে। বঙ্গবন্ধু ছাত্র। নিজেরাই ১১ জন প্রতিদিন খেলতো। আর অফিসার্স ক্লাব নতুন নতুন খেলোয়াড় আনতো। বঙ্গবন্ধু খুব ক্লান্ত হয়ে পড়েছিলেন। 

একদিন বাবা ছেলেকে বললেন কাল সকালেই খেলতে হবে। বাইরের ছেলেদের রাখা যাবে না। অনেক খরচ। বঙ্গবন্ধু তার বাবাকে বললেন, আগামী দিন খেলতে পারবেন না। বললেন আমাদের পরীক্ষা। গোপালগঞ্জ ফুটবল ক্লাবের সেক্রেটারি একবার বাবার নিকট, আরেকবার ছেলের নিকট এভাবে কয়েকবার হাটাহাটি করলেন। সেক্রেটারি বললেন, তোমাদের বাপ-বেটার কি ব্যাপার? আমি আর হাটতে পারিছ না। তখন মিশন স্কুলের হেডমাস্টার ছিলেন রসরঞ্জন সেনগুপ্ত। এই হেডমাস্টার বঙ্গবন্ধুকে প্রাইভেট পড়াতেন। বঙ্গবন্ধুর বাবা হেডমাস্টারকে খবর দিয়ে আনলেন। অবশেষে বঙ্গবন্ধু তার দলবল নিয়ে এক গোলপোস্টে, বঙ্গবন্ধুর বাবা তার দলবল নিয়ে অন্য গোলপোস্টে। বাবা-ছেলে দুই গোলপোস্টে খেলতে শুধু করলেন। মানুষও প্রাণখুলে উপভোগ করতে লাগলো। কারণ বাবা-ছেলের খেলায় খুব আকর্ষণ। একপর্যায়ে হেডমাস্টার বললেন, ‘মুজিব তুমি তোমার বাবার নিকট হার মানো।’ আগামী দিন সকালে খেলা, তাদের অসুবিধা হচ্ছে। বঙ্গবন্ধু বললেন, ‘স্যার, আমাদের সকলেই ক্লান্ত। কারণ এই ১১ জনই আমরা সারা বছর খেলেছি। সকলের পায়ে ব্যথা। ২-৪ দিন বিশ্রামের দরকার। নতুবা হেরে যাব। এ বছরতো একটা খেলায়ও আমরা হারি নাই। আর এই খেলাটা ছিল “এ জেড খান শিল্ডের”। এটাই শেষ, ফাইনাল খেলা। এ জেড খান এসডিও ছিলেন। গোপালগঞ্জেই তিনি মার যান। এ জেড খানের ছেলেদের মধ্যে আমির ও আহমদ বঙ্গবন্ধুর বন্ধু ছিল। আমির বঙ্গবন্ধুর খুব ঘনিষ্ঠ বন্ধু ছিল। তারপর আমির তখনকার সময়ের কিছু পরে পাকিস্তান বেতারে (রেডিও) চাকরি করতেন। আামির গোপালগঞ্জ থেকে চলে যাওয়ায় সময় বঙ্গবন্ধু খুব মনোকষ্ট পেয়েছিলেন। 

শেষ পর্যাপ্ত হেডমাটার বাবুর কথা বঙ্গবন্ধুকে মানতে হলো। পরের দিন সকালে খেলা শুরু হলো, বঙ্গবন্ধু তার বাবার নিকট ১ গোলে পরাজিত হলেন। ১৯৪১ সালে বঙ্গবন্ধু মেট্রিক পরীক্ষা দিবেন। বঙ্গবন্ধুর মনোবল ছিল নিশ্চয়ই পরীক্ষায় পাস করবেন, সন্দেহ ছিল না। রসরঞ্জন বাবু ইংরেজির শিক্ষক ছিলেন। বঙ্গবন্ধুকে ইংরেজি পড়াতেন। আর মনোরঞ্জন বাবু ছিলেন অংকের শিক্ষক। বঙ্গবন্ধু অংককে ভয় পেতেন। কারণ ভুল করতেন বেশি। অংকের জন্যই হয়তো প্রথম বিভাগ পাননি। পরীক্ষার একদিন আগে জ¦র হলো এবং মাম্স হয়ে গলা ফুলে গেলো। একশত চার ডিগ্রি জ¦র। বঙ্গবন্ধুর বাবা রাতভর পাশে বসে রইলেন। গোপালগঞ্জ টাউনের প্রায় সব ডাক্তার আনলেন। জ্বর ছাড়ছে না। বঙ্গবন্ধুর বাবা পরীক্ষা দিতে নিষেধ করলেন। বঙ্গবন্ধু বললেন, ‘না- যা পারি শুয়ে শুয়ে পরীক্ষা দেব।’ বঙ্গবন্ধু বললো, ‘আমাকে বিছানা দিতে হবে।’ প্রথম দিন ছিল বাংলা পরীক্ষা। সকালের পরীক্ষায় মাথাই তুলতে পারলেন না। তবুও কিছু কিছু লিখলেন। বিকালে জ্বর কমলো। অন্য পরীক্ষা ভালোই হলো। পরে দেখা গেলো বাংলায় কম নম্বর এসেছে। অন্যান্য বিষয়ে দ্বিতীয় বিভাগে মার্ক পেয়েছেন। বঙ্গবন্ধুর মন ভেঙে গেলো। তখন রাজনীতি শুরু করেছেন ভীষণভাবে। সভা করেন, বক্তৃতা করেন, আবার খেলাধুলার দিকেও নজর রাখেন। তখন ছিল শুধু মুসলিম লীগ আর ছাত্রলীগ। পাকিস্তান আনতেই হবে। নতুবা মুসলমানদের বাঁচার উপায় নাই। খবরের কাগজ আজাদ যা লিখে তা-ই সবাই সত্য বলে মনে করেন। পরীক্ষা দেয়ার পর বঙ্গবন্ধু কলকাতা যান। সকল সভা সমাবেশে যোগদান করেন। মাদারীপুর গিয়ে মুসলিম লীগ গঠন করেন। আবার পড়তে শুরু করলেন। পাসও করতে হবে। 

সোহরাওয়ার্দীর কাছে প্রায়ই যান। সোহরাওয়ার্দী বঙ্গবন্ধুকে খুব স্নেহ করতেন। মুসলিম লীগ বললেই গোপালগঞ্জে বঙ্গবন্ধুকে বুঝাতো। যুদ্ধের সময় দেশের অবস্থা ছিল ভয়াবহ। ঐ সময় মোহাম্মদ আলী জিন্নাহর সাথে এ কে ফজলুল হক সাহেবের ছিল মনোমালিন্য। এ কে ফজলুল হক জিন্নাহর কথা মানতে না পেরে ফজলুল হক সাহেব মুসলিম লীগ ত্যাগ করে মন্ত্রী সভা গঠন করলেন শ্যামাপ্রসাদ মুখার্জির সাথে। মুসলিম লীগ ও ছাত্রকর্মীরা তার বিরুদ্ধে আন্দোলন শুরু করলো। বঙ্গবন্ধুও ঝাঁপিয়ে পড়লেন। ঐ সময় বঙ্গবন্ধু উচ্চ মাধ্যমিক দ্বিতীয় বিভাগে পাস করে কলকাতা ইসলামিয়া কলেজে ভর্তি হয়ে বেকার হোস্টেলে থাকেন। নাটোর ও বালুঘাটে ফজলুল হক সাহেবের সাথে মুসলিম লীগ মনোনিত প্রার্থীর দুইটি উপনির্বাচন হয়। বঙ্গবন্ধু দলবল নিয়ে সেখানে যান এবং অক্লান্ত পরিশ্রম করে সোহরাওয়ার্দীর হুকুম পালন করে নির্বাচনের কাজ করলেন।    

লেখক : নিউইয়র্ক

কমেন্ট বক্স