হোয়াইট হাউজে প্রত্যাবর্তনের পর প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের ইমিগ্রেশন ক্র্যাকডাউনে বিপর্যস্ত ও আতঙ্কিত নথিপত্রহীন অভিবাসীরা। অন্যান্য কমিউনিটি যেখানে তাদের দেশের অভিবাসীদের পাশে দাঁড়াচ্ছে, সেখানে বাংলাদেশি কমিউনিটির কিছু প্রতিহিংসাপরায়ন মানুষ স্বদেশের নিরীহ ও অসহায় নথিপত্রহীন অভিবাসীদের ঘুম ‘হারাম’ করে দিচ্ছে। তারা নথিপত্রহীন প্রবাসী বাংলাদেশিদের বিরুদ্ধে বিভিন্ন দপ্তরে অভিযোগ করছে। এসব অভিযোগ বিভিন্ন দপ্তর ঘুরে পৌঁছে যাচ্ছে ইমিগ্রেশন অ্যান্ড কাস্টমস এনফোর্সমেন্টের (আইস) কাছে।
বিশ্বস্ত একটি সূত্র জানিয়েছে, নিউইয়র্ক পুলিশের কাছে প্রতিদিন অসংখ্য অভিযোগ জমা পড়ছে। পুলিশ এসব অভিযোগের প্রাথমিক তদন্ত শেষে ফেডারেল এজেন্সির কাছে পাঠিয়ে দিচ্ছে। সূত্রটি বলছে, যাদের বিরুদ্ধে অপরাধের অভিযোগ রয়েছে শুধুমাত্র তাদের নামই আইসের কাছে যাচ্ছে। এ ব্যাপারে পুলিশের বিকল্প কোনো সিদ্ধান্ত নেওয়ার এখতিয়ার নেই বলে জানা সূত্রটি জানায়।
সূত্রটি আরো জানায়, আইসের তালিকায় প্রায় সাড়ে চার হাজার বাংলাদেশির নাম রয়েছে। কিন্তু এই তালিকার বাইরে প্রতিদিন গড়ে ১৬ জনের নাম যুক্ত হচ্ছে, যারা অবৈধভাবে যুক্তরাষ্ট্রে বসবাস করছেন। তাদের অনেকে অপরাধের সঙ্গেও সম্পৃক্ত। তবে পুলিশের কাছে যেসব অভিযোগ যাচ্ছে, সেসব অভিযোগের মধ্যে নিরীহ অভিবাসী রয়েছে। প্রতিহিংসা এবং ব্যক্তিগত আক্রোশের কারণে তাদের বিরুদ্ধে অভিযোগ করা হয়েছে। ফলে তারা আতঙ্কের মধ্যে দিন কাটাচ্ছেন। অনেকে কাজেও যাচ্ছেন না। গ্রেপ্তারের ভয়ে অনেকে একপ্রকার মানবেতর জীবনযাপন করছেন। তবে যারা মিথ্যা অভিযোগ করছে তাদের ব্যাপারে খোঁজখবর নেওয়া হচ্ছে বলে সূত্রটি জানিয়েছে।
এদিকে যুক্তরাষ্ট্র থেকে স্বেচ্ছায় সদ্য নির্বাসনে দেশে ফেরা সুপরিচিত সংস্কৃতিসেবী আলমগীর খান আলমের নামে আইসের কাছে অভিযোগ করেছিলেন এক বাংলাদেশি। তিনি নিয়মিত নিউইয়র্কে সবার সঙ্গেই চলাফেরা করলেও থাকেন পার্শেবর্তী অঙ্গরাজ্যে। তার সঙ্গে আলমের কোন বিরোধ নেই এবং ছিল না। আলমের বিরুদ্ধে বিভিন্ন তথ্য সংগ্রহ করে তিনি আইসের ওয়েবসাইটে গিয়ে একটি ফরম পূরণ করে অভিযোগটি দায়ের করেন। যদিও আলমগীর খান আলম তার মায়ের অগ্নিদগ্ধ হয়ে হাসপাতালে ভর্তি হওয়ার খবর পেয়ে দেশে ফিরে গেছেন বলে একাধিক সূত্র জানা গেছে। মায়ের অসুস্থতা, নাকি আইসের কাছে অভিযোগ আঁচ করতে পেরে এবং গ্রেপ্তার এড়াতে আলম যুক্তরাষ্ট্র ছেড়ে গেছেন তা নিয়ে কয়েকদিন ধরেই আলোচনা চলছে।
এর আগে জ্যাকসন হাইটস এলাকা থেকে সাব্বির আহমদ নামে যে বাংলাদেশিকে আটক করা হয়েছে, তার ব্যাপারেও আইসের কাছে অভিযোগ গিয়েছিল। বর্তমানে তাকে ডিটেনশন সেন্টারে রাখা হয়েছে বলে জানা গেছে।
এদিকে যুক্তরাষ্ট্রের বিভিন্ন স্টেটে ডিপার্টমেন্ট অব হোমল্যান্ড সিকিউরিটির তত্ত্বাবধানে গত ১৮ দিনে গড়ে প্রতিদিন ৬১১ জন অবৈধ অভিবাসীকে গ্রেপ্তার করছে ইমিগ্রেশন এবং কাস্টমস এনফোর্সমেন্ট (আইস) এজেন্টরা। এ পর্যন্ত প্রায় ১১ হাজার অবৈধ ও অপরাধী অভিবাসীকে গ্রেপ্তার করছে ফেডারেল আইন প্রয়োগকারী সংস্থা। যা সাবেক প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন প্রশাসনের অধীনে গত বছরে অবৈধ অভিবাসী গ্রেপ্তারের এক তৃতীয়াংশ। ডিএইচএস সূত্রে জানা গেছে, আইস গত বছর মোট ৩৩,০০০ জনকে গ্রেপ্তার করেছিলো।
নিউইয়র্ক পোস্ট তাদের প্রতিবেদনে জানিয়েছে, ডিপার্টমেন্ট অব হোমল্যান্ড সিকিউরিটির তত্বাবধানে আইস, এটিএফ, ডিইএ ও এফবিআইসহ ফেডারেল আইন প্রয়োগকারী সংস্থার সমন্বয়ে গণ ডিপোর্টেশন কার্যক্রমে শিকাগো, বোস্টন, ফিলাডেলপিয়া, টেক্সাস এবং নিউইয়র্কসহ সবকটি সিটিতে ব্যাপক অভিযান শুরু করে। এসব অভিযানে ১১ হাজার অভিবাসী গ্রেপ্তার করা হয়েছে। এদের মধ্যে মেক্সিকো, গুয়েতামালা, কলোম্বিয়া, কিউবার নাগরিক বেশি। গ্রেপ্তাকৃতদের মধ্যে গ্যাং সদস্য, ড্রাগ ডিলার, ভাড়াটে হত্যাকারী এবং আদালতে বিভিন্ন অপরাধে সাজাপ্রাপ্ত অপরাধী ও ডিপোর্টেশন আদেশ প্রাপ্ত।
এদিকে নিউইয়র্কে কয়েকদিনে আইসের অভিযানে ১০০ জন গ্রেপ্তার হয়েছেন। সংশ্লিষ্ট একটি সূত্রের বরাত দিয়ে নিউইয়র্ক পোস্ট জানিয়েছে, আইসের আটক কেন্দ্রে ৪১ হাজার ৫০০ জন বন্দীকে রাখার বেড রয়েছে। বর্তমানে আটক কেন্দ্রে ধারণ ক্ষমতার অতিরিক্ত গ্রেপ্তারকৃত অবৈধ অভিবাসী বন্দী রয়েছে। সংস্থাটি শুক্রবার কারাগার ব্যুরো দ্বারা পরিচালিত চারটি আটক কেন্দ্র খুলবে বলে আশা করা হয়েছিল। অবৈধ অভিবাসীদের জন্য আটকের স্থান বাড়ানোর পরিকল্পনা নভেম্বর থেকে চলছে, এই জিনিসগুলি চালু করতে কিছুটা সময় লাগে।
নিউইয়র্ক পোস্ট আরো জানিয়েছে, আইস রাজ্য এবং স্থানীয় আইন প্রয়োগকারী সংস্থাগুলির কাছ থেকেও গ্রেপ্তারকৃত বন্দীদের আটক রাখার সমর্থন পাচ্ছে। যা সংস্থার ২৮৭জি প্রোগ্রামের মাধ্যমে অবৈধ অভিবাসীদের গ্রহণ করতে ইচ্ছুক। আইস এ প্রোগ্রামের অধীনে অবৈধ অভিবাসীদের তাদের কারাগারে রাখার জন্য আইন প্রয়োগকারী সংস্থাগুলিকে নিযুক্ত করে।
ইতিমধ্যে পেন্টাগন থেকে কিউবার গুয়ান্তানামো বেতে কিছু ‘বিপজ্জনক’ অবৈধ অভিবাসীকে পাঠিয়েছে।
যুক্তরাষ্ট্রে বন্দী বিদেশী সন্ত্রাসী ও অপরাধীদের আটক রাখার জন্য গুয়ান্তানামো বেতে কারাগার ব্যবহার করা হয়। অনুপ্রবেশের চেষ্টা করতে গিয়ে ধরা পড়া অভিবাসীদের থাকার জন্য সবসময় প্রায় ১২০টি শয্যা রয়েছে।
রাষ্ট্রপতি ট্রাম্প অবৈধ অভিবাসীদের ধরে রাখার জন্য গুয়ান্তানামোর সক্ষমতা বাড়ানোর পরিকল্পনা করেছেন। ২৯ শে জানুয়ারী পেন্টাগন এবং হোমল্যান্ড সিকিউরিটি বিভাগকে ৩০,০০০ বন্দীদের জন্য নৌ ঘাঁটি প্রস্তুত করার নির্দেশ স্বাক্ষর করেছেন।