বলা হচ্ছিল বাংলাদেশে অবৈধ বিদেশি হাজারে হাজার, লাখে লাখ। নানা আজেবাজে কাজে লিপ্ত তাদের কেউ কেউ। এখন রাষ্ট্রীয় কর্তৃপক্ষে বলা হচ্ছে সংখ্যাটি ৩৩ হাজার ৬৪৮। এ সংক্রান্ত স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের ১১ সদস্যের টাস্কফোর্স জানিয়েছে, দেশে ৫০ হাজার বিদেশি নাগরিক অবৈধভাবে অবস্থান করছিল।
সরকারের এক নির্দেশনায় সাড়া দিয়ে জানুয়ারি পর্যন্ত ১৫ হাজার ৬১৮ জন বিদেশি বাংলাদেশ ছেড়ে গেছে। তারাই বা কী করছে এখানে? কথিত ওই ২৬ লাখেরই বা কী হলো? আইন উপদেষ্টা প্রফেসর ড. আসিফ নজরুলের এ তথ্য জুলাই-আগস্ট আন্দোলনকালে ছিল ব্যাপক ভাইরাল। বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরো-বিবিএসের তথ্য অনুযায়ী, দেশে শিক্ষিত বেকার ২৬ লাখ ৪০ হাজার। এই বিশাল সংখ্যক শিক্ষিত বেকারের দেশে ২৬ লাখ ভারতীয় কী করে- এ নিয়ে অনেক কথার কচলানিও চলেছে। বলা হয়েছিল তারা এখানে উচ্চবেতনে চাকরি করে। তাদের বেতন হয় ডলারে। হিসাব দিয়ে জানানো হয়েছিল, প্রতিবছর বাংলাদেশ থেকে প্রায় ৫ বিলিয়ন অর্থাৎ ৫০০ কোটি মার্কিন ডলার রেমিট্যান্স ভারতে চলে যায়। রেমিট্যান্স আয়ে ভারতের চতুর্থ বড় উৎস বাংলাদেশ। যেখানে বাংলাদেশের মেধাবী ছেলেমেয়েরা উচ্চশিক্ষার পাঠ চুকিয়ে চাকরির জন্য হাহাকার করে, সেখানে ভারতীয় লাখ-লাখ ব্যক্তি এখানে কিভাবে চাকরি পায়?
এ প্রশ্ন থাকাই স্বাভাবিক। ইদানিং আর এ নিয়ে কথা নেই। মানে কি ভারতীয়রা বিদেশি নয়? অথবা সংখ্যাটি ভুল ছিল? ওয়ার্ক পারমিট বা অনুমোদন ছাড়া বাংলাদেশে অবৈধ বিদেশি শ্রমিক নিয়ে অনেক কথা হলেও এর বিহিত হয়নি কখনো। বৈধতা না থাকায় তারা কোথায়, কতো টাকা বেতনে কী কাজ করছেন, কত টাকা বেতনে কাজ করছেন- তার হিসাব পাওয়া কঠিন। কী পরিমাণ টাকা বাইরে চলে যায়, সেই হিসাবও অজানা। সরকারি বিধি অনুযায়ী, কোনো বিদেশি নাগরিক বাংলাদেশে কোনো ধরণের কাজ করতে আগ্রহী হলে, তাকে ভিসা নিয়ে বাংলাদেশে এসে কাজের জন্য অনুমতি বা ‘ওয়ার্ক পারমিট’ নিতে হয়। এখন যখন এ নিয়ে টাস্কফোর্স কাজ করছে, তখন একটু তথ্য-সাবুদ জোগাড় করা কি কঠিন?
ভারত, পাকিস্তান, নেপাল, শ্রীলঙ্কা, ভুটান, মালদ্বীপ, থাইল্যান্ড, মালয়েশিয়া, সিঙ্গাপুর, চীন, জাপান, দক্ষিণ কোরিয়া, ফিলিপাইন, তুরস্ক, মরিশাস, ইন্দোনেশিয়া, উজবেকিস্তান, ইউক্রেন, যুক্তরাজ্য, যুক্তরাষ্ট্রসহ প্রায় অর্ধশত দেশের নাগরিক বাংলাদেশে কাজ করে। বিদেশি কর্মীদের ই-ভিসার মাধ্যমে বাংলাদেশ ইনভেস্টমেন্ট ডেভেলপমেন্ট অথরিটি- বিডা এই অনুমতি দেয়। তাদের অনুমতির পর স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় থেকে নিরাপত্তা ছাড়পত্র ও বাংলাদেশ ব্যাংক থেকে অনুমতি নিতে হয়। এরপর খুলতে হয় ই-টিআইএন এবং ব্যাংক হিসাব। যেই হিসাবে বিদেশি কর্মীর বেতন জমা হবে। তা ঠিকঠাক মতো হলে হিসাব বের করা কি কঠিন?
এসব নিয়ম না মানার কারণেই গোলমাল। বাংলাদেশে বসবাসকারী বিদেশি নাগরিকদের বাৎসরিক আয় সংশ্লিষ্ট তথ্য বাংলাদেশে ব্যাংকে থাকে না। বাংলাদেশে অবস্থানরত বিদেশিদের প্রকৃত সংখ্যা কতো- সে বিষয়ে সরকারের কোনো সংস্থা বা প্রতিষ্ঠানের কাছে সুনির্দিষ্ট তথ্য নেই। স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়, এসবি, এনবিআর, বিডা, বেপজা, এনজিও ব্যুরোর মতো রাষ্ট্রীয় গুরুত্বপূর্ণ প্রতিষ্ঠান ও সংস্থাগুলোর কোনোটির কাছেই বিদেশিদের সম্পর্কে নিশ্চিত তথ্য নেই। এক সংস্থা বা প্রতিষ্ঠানের দেয়া তথ্যের সঙ্গে অন্যটির তথ্য মেলে না কেনো? বাংলাদেশে অবস্থানরত বৈধ ও অবৈধ বিদেশি কর্মীদের প্রকৃত সংখ্যা অনুসন্ধানের মাধ্যমে নিরূপণ করতে হাইকোর্টের একটি নির্দেশনা রয়েছে। ওই নির্দেশনায় এসব বিদেশি কর্মী কীভাবে ও কোন চ্যানেলের মাধ্যমে তাদের অর্থ দেশের বাইরে পাঠায়, সে বিষয়েও অনুসন্ধান করে প্রতিবেদন দিতে বলা হয়েছিল। সেই নির্দেশনা কি পালন হয়েছিল?
লেখক : সাংবাদিক-কলামিস্ট; ডেপুটি হেড অব নিউজ, বাংলাভিশন, ঢাকা।


মোস্তফা কামাল


