সামরিক-বেসামরিক ও পুলিশ প্রশাসনে এখনো আওয়ামী লীগ সরকারের প্রতি অনুগত উল্লেখযোগ্য সংখ্যক কর্মকর্তা বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্বে রয়েছেন। আর আগস্ট বিপ্লবের পর বঞ্চিত কর্মকর্তা হিসেবে নিয়োগ ও পদোন্নতিপ্রাপ্ত কর্মকর্তাদের ৮০ শতাংশই বিএনপি ঘরানার। পতিত আওয়ামী লীগের পক্ষ থেকে ইতিমধ্যে হরতাল-ধর্মঘট-বিক্ষোভের মতো কর্মসূচি ঘোষণা করা হয়েছে। ঠিক এই সময়ে বিএনপির পক্ষ থেকে দ্রুত নির্বাচন করে গণতন্ত্রের পথে এগিয়ে নেওয়া ও নিত্যপণ্যের দাম বৃদ্ধির প্রতিবাদে কর্মসূচি ঘোষণার কথা জানানো হয়েছে।
এ অবস্থায় ড. মুহাম্মদ ইউনূসের নেতৃত্বাধীন অন্তর্বর্তী সরকার ব্যাপক সংস্কারের সুযোগ না থাকলে পরিকল্পিত সময়রেখার আগেই নির্বাচন অনুষ্ঠানে প্রস্তুত থাকার জন্য বার্তা দেওয়ার খবর পাওয়া গেছে। এ জন্য নির্বাচন কমিশনও তার প্রস্তুতিকে এগিয়ে আনতে চিন্তাভাবনা করছে।
সূত্র জানায়, নানামুখী চক্রান্তে অন্তর্বর্তী সরকারের শীর্ষ পর্যায়ে হতাশা তৈরি হয়েছে। তারা মনে করছে, আগামী ডিসেম্বর বা জুন, যখনই নির্বাচন হোক না কেন, বিএনপিরই ক্ষমতায় আসার কথা। রাষ্ট্রের স্বার্থে সংস্কার যদি এখনই বিএনপি না চায় অথবা সংস্কারের জন্য বিলম্বের সুযোগ পতিত স্বৈরাচার নিতে চায়, তাহলে অন্তর্বর্তী সরকার করণীয় সম্পর্কে নতুন চিন্তা করতে বাধ্য হবে। যে অবস্থায় আওয়ামী লীগ রাষ্ট্রকে রেখে গিয়েছিল, সেখান থেকে স্বাভাবিক অবস্থায় নিয়ে একটি গণতান্ত্রিক নির্বাচনের জন্য চেষ্টা করছে অন্তর্বর্তী সরকার। সেটি অসম্ভব হলে যত দ্রুত সম্ভব নির্বাচন করে নতুন সরকারের কাছে ক্ষমতা দিয়ে তারা বিদায় নেবে।
পতিত আওয়ামী লীগের একাধিক সূত্র জানিয়েছে, তাদের কৌশলের কারণে অন্তর্বর্তী সরকার অনেক চেষ্টার পরও পুলিশ প্রশাসনকে পুরোপুরি কার্যকর করতে পারছে না। অন্যান্য নিরাপত্তা প্রতিষ্ঠানের ওপরও এর প্রভাব পড়ার কারণে অতি সম্প্রতি বিভিন্ন পেশাজীবী দল ও ছাত্রদের আন্দোলনকে নিয়ন্ত্রণ কঠিন হয়ে পড়েছে। দলটির নীতি প্রণেতারা মনে করছেন, আওয়ামী লীগের চাপের পাশাপাশি বিএনপির নির্বাচনের দাবিতে কর্মসূচি অব্যাহত থাকলে প্রশাসনের নিষ্ক্রিয়তার কারণে অন্তর্বর্তী সরকার বেকায়দায় পড়বে। আর এ সময় কিছু বড় ধরনের সহিংস ঘটনা ঘটিয়ে ফ্যাসিবাদবিরোধী অন্য শক্তিগুলোকে কোণঠাসা করা সম্ভব হবে। সে ক্ষেত্রে আওয়ামী লীগ আবার ক্ষমতায় ফিরে আসার সুযোগ পাবে।
আওয়ামী লীগ সূত্র জানিয়েছে, আগামী রমজান শেষে একটি বড় ধরনের আন্দোলন তৈরি করা হবে। এর আগে কিছু গুপ্তহত্যা ধরনের ঘটনা ঘটিয়ে দলের নেতাকর্মীদের মধ্যে আস্থা ফেরানো হবে। এই আন্দোলনের বিষয়ে নিষিদ্ধ ছাত্রলীগের সাবেক কেন্দ্রীয় কমিটির এক নেতা জানিয়েছেন, তার সঙ্গে শেখ হাসিনার সম্প্রতি দুবার ফোনে কথা হয়েছে। যারা আওয়ামী লীগের ক্ষতি করেছে, নেত্রী তাদের একটি তালিকা তৈরি করতে বলেছেন।
তবে অন্তর্বর্তী সরকারকে অকার্যকর করতে পতিত আওয়ামী লীগের সহিংস কর্মসূচি বাস্তবায়নের উদ্যোগে বিএনপি গণতন্ত্রের পথে রাষ্ট্রকে এগিয়ে নিতে তার কৌশল পরিবর্তন করছে। দলটির হাইকমান্ডের একটি ঘনিষ্ঠ সূত্র জানিয়েছে, আওয়ামী লীগ হরতালসহ নতুন কর্মসূচি দেওয়ার পর বিএনপি জাতীয় ঐক্য তৈরির ব্যাপারে নতুন করে চিন্তাভাবনা করবে। পতিত সরকারকে ক্ষমতায় ফেরার জন্য বিএনপির কোনো কর্মসূচিকে ব্যবহারের সুযোগ দেওয়া হবে না। এ কারণে গণতন্ত্রের পথে সরকারকে চালিত করার জন্য যে কর্মসূচির কথা বলা হয়েছে, তার ধরন পুনর্বিবেচনা করা হবে।
দলটির শীর্ষ নেতৃত্ব মনে করছে, দ্রুত নির্বাচনের দাবি আদায়ে বিএনপির কর্মসূচি ঘোষণার কারণে অন্তর্বর্তী সরকার দুর্বল হওয়ার সুযোগ নিতে আওয়ামী লীগ পরিকল্পনা গ্রহণ করেছে। তারা দেশে একটি অচলাবস্থা সৃষ্টি করে সেনাসমর্থিত শাসন আনতে কাজ শুরু করেছে, যেটি বাস্তবায়িত হলে নির্বাচনই শুধু অনির্দিষ্টকাল পেছাবে না, সেই সঙ্গে পতিত শাসকেরা আবার ক্ষমতায় ফিরে আসার চেষ্টা করতে পারবে।
রাজনৈতিক বিশ্লেষকেরা মনে করছেন, প্রশাসনসহ রাজনৈতিক দলগুলো যদি একযোগে সরকারকে অসহযোগিতা করে, তাহলে অন্তর্বর্তী প্রশাসন ভেঙে পড়বে। সে ক্ষেত্রে সেনা সরকার বা সেনাসমর্থিত একটি তত্ত্বাবধায়ক সরকার ক্ষমতায় চলে আসবে, যারা আওয়ামী লীগ ও প্রতিবেশী দেশের স্বার্থের বিষয়ে অনুকূল থাকবে। নির্বাচনের আগে বর্তমান অন্তর্বর্তী সরকারকে সমর্থনকারী রাজনৈতিক শক্তির মধ্যে প্রধান দল বিএনপিকে আন্দোলনে নিয়ে আসা গেলে ড. ইউনূসের সরকারের নিয়ন্ত্রণ দুর্বল হয়ে যাবে। বিএনপিকে এ ধরনের কোনো ফাঁদে পা না দিয়ে সতর্ক থাকতে হবে। আর অন্তর্বর্তী সরকারের উচিত হবে, যত দ্রুত সম্ভব নির্বাচন দিয়ে নির্বাচিত সরকারের হাতে ক্ষমতা হস্তান্তর করা। তা না হলে চব্বিশের বিজয় হাতছাড়া হওয়ার শঙ্কা রয়েছে।



ঠিকানা রিপোর্ট


