Thikana News
২৮ অক্টোবর ২০২৫
  1. ই-পেপার
  2. চলতি সংখ্যা
  3. বিশেষ সংখ্যা
  4. প্রধান সংবাদ
  5. আমেরিকার অন্দরে
  6. বিশ্বচরাচর
আমেরিকা মঙ্গলবার, ২৮ অক্টোবর ২০২৫


পর্দার আড়ালে চলছে খেলা!

পর্দার আড়ালে চলছে খেলা!



 
নিজস্ব প্রতিনিধি : পরস্পরবিরোধী অবস্থানে থাকা দেশের দুই প্রধান ও প্রতিদ্বন্দ্বী রাজনৈতিক শক্তি দৃশ্যত সমঝোতা, সমাধানের অতীত এক অবস্থায় রয়েছে। প্রধান বিরোধী দল বিএনপি অনড় অবস্থানে থেকে বলছে, প্রধানমন্ত্রীর পদত্যাগ এবং নিরপেক্ষ তত্ত্বাবধায়ক সরকার ছাড়া তারা নির্বাচনে যাবে না। অন্যদিকে ক্ষমতাসীন আওয়ামী  লীগের সুস্পষ্ট ঘোষণা, তারা সংবিধানের বাইরে এক চুলও যাবে না। অর্থাৎ নিরপেক্ষ তত্ত্বাবধায়ক সরকারব্যবস্থায় তারা কোনো অবস্থাতেই ফিরে যাবে না। প্রশ্ন হচ্ছে, তাহলে সমাধান কোথায়? কীভাবে বৈরী দুই পক্ষের মধ্যে সমঝোতা সম্ভব! নিশ্চিতভাবে ঝুঁকিপূর্ণ, অনিশ্চিত ভবিষ্যতের পথে কি ধাবিত হচ্ছে দেশ!

পারস্পরিক অবিশ্বাস ও আস্থাহীনতা থেকেই আজকের সংকট। সরকারি দলের নেতাদের ভাষ্য অনুযায়ী, আগামীতে ক্ষমতায় আসার জন্যই বিএনপি তত্ত্বাবধায়ক সরকারব্যবস্থায় ফিরে যেতে চাচ্ছে। তাদের মতে, বিগত দুই তত্ত্বাবধায়ক সরকার বিএনপিকে সরকারে আনার জন্য ভূমিকা রেখেছে। অন্যদিকে বিএনপির দৃঢ়বিশ্বাস, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ক্ষমতায় না থাকলে নিশ্চিতভাবেই আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় যেতে পারবে না। আওয়ামী লীগ আবার ক্ষমতায় আসতে পারলে বিএনপিকে তারা অস্তিত্বহীন করে ফেলবে। বিএনপির দেশি-বিদেশিদের বন্ধুরা মনে করে, দেশের ভোটার সাধারণ পরিবর্তন চায়। এই সরকারের তিন মেয়াদের শাসন-দুঃশাসনে দেশের মানুষ অতিষ্ঠ। নির্বিঘ্নে, নিরাপদে ভোট দিতে পারলে মানুষ বিকল্প প্রার্থীদেরই নির্বাচিত করবে। এই সুযোগ নেওয়ার জন্য বিদেশিরা, বিশেষত পশ্চিমা শক্তি বিএনপিকে নানাভাবে উৎসাহিত করছে। বিএনপির একাধিক নেতৃস্থানীয় সূত্র জানিয়েছে, তারা নির্বাচনে অংশ নিতে আগ্রহী। কিছু ছাড় দিলেই তারা রাজপথ ছেড়ে নির্বাচনের পথ ধরবে। ঢাকাস্থ মার্কিন রাষ্ট্রদূত ও জাতিসংঘের আবাসিক প্রতিনিধি এবং ইউরোপীয় ইউনিয়নের প্রতিনিধিদের সঙ্গে আলোচনায় বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর সরকারের কাছ থেকে গ্রহণযোগ্য, সম্মানজনক ছাড় পাওয়া সাপেক্ষে নির্বাচনে অংশ নেওয়ার কথা জানান। এমনকি তারেক রহমানের সর্বাধিক ঘনিষ্ঠ ও বিশ্বস্ত আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরীও লেভেল প্লেয়িং ফিল্ড এবং নির্বাচনকালীন সরকারে প্রধানমন্ত্রীর প্রতিশ্রুতি অনুযায়ী বিএনপির উল্লেখযোগ্যসংখ্যক প্রতিনিধিত্বের কথা বলেছেন। প্রকাশ্য বক্তব্য, আলোচনায় সাংবাদিকদের কাছে এসব কথা স্বীকার করছেন না। প্রকাশ্যে নিরপেক্ষ তত্ত্বাবধায়ক সরকারের দাবিরই পুনরুল্লেখ করে চলেছেন।

দুই পক্ষের এমন বিপরীতমুখী অবস্থান রাজনৈতিক সংকট ঘনীভূত করেছে। নির্বাচনকে সামনে রেখে এই পরস্পর বৈরী অবস্থান সংঘাতময় পরিস্থিতির দিকে দ্রুত ধাবমান হচ্ছে। নিজেদের স্বার্থ উদ্ধারের জন্য বিদেশি কোনো কোনো প্রভাবশালী শক্তি সংকট তীব্রতর করে চূড়ান্ত পরিণতির দিকে নিয়ে যেতেই উৎসাহিত করছে। বঙ্গোপসাগরে গ্যাসের সুবিশাল একাধিক ক্ষেত্র রয়েছে। তেল থাকারও প্রচুর সম্ভাবনা রয়েছে। স্যাটেলাইটের মাধ্যমে যুক্তরাষ্ট্র এ সংক্রান্ত নিশ্চিত তথ্য পাওয়ার পরই এ খাতে বিনিয়োগে অস্বাভাবিক উৎসাহ দেখায়। গত প্রায় পাঁচ বছর ধরেই তারা এ ব্যাপারে সরকারকে অনুরোধ জানিয়ে আসছে। কিন্তু সরকার এতে তেমন একটা আগ্রহী হয়নি। নিজস্ব অর্থায়নে বঙ্গোপসাগরে তেল, গ্যাস অনুসন্ধানে নীতিগত সিদ্ধান্ত নেয়। প্রসঙ্গত, ভারত সরকার বঙ্গোপসাগরে নিজস্ব উদ্যোগে খনিজ সম্পদ অনুসন্ধান ও উত্তোলন কর্মসূচি বাস্তবায়ন করছে। দক্ষিণ তালপট্টি ও সংলগ্ন এলাকায় তারা বিপুল পরিমাণ গ্যাস ও তেলের সন্ধান পেয়েছে। বঙ্গোপসাগর থেকে তারা গ্যাস উত্তোলন করছে। দুটি রিগ থেকে গ্যাস ওঠাচ্ছে। আরও দুটি রিগ সম্প্রতি বসিয়েছে। সেন্টমার্টিন-সংলগ্ন এলাকায় মিয়ানমার গ্যাসক্ষেত্রের সন্ধান পেয়েছে। বঙ্গোপসাগরের এই অংশের বাংলাদেশ এলাকায় বিপুল পরিমাণ গ্যাস থাকার তথ্য রয়েছে মিয়ানমারের হাতে। উপকূলীয় এলাকায় ২০০ মাইলের মধ্যে ছাড়াও গভীর সমুদ্রে বিপুল গ্যাস, তেলসহ নানা প্রাকৃতিক সম্পদ থাকার তথ্য রয়েছে মার্কিন কোম্পানির কাছ, যে জন্য তারা তেল-গ্যাসক্ষেত্র দীর্ঘ মেয়াদে লিজ নিয়ে অনুসন্ধান কাজ চালানো এবং তেল, তেলসম্পদ আহরণে গভীরভাবে আগ্রহী। এ কাজে বিপুল বিনিয়োগ প্রয়োজন। সংশ্লিষ্টদের মতে, গভীর সমুদ্রে অনুসন্ধান এবং তেল-গ্যাস আহরণ, উত্তোলনের জন্য কমপক্ষে ৫০ হাজার কোটি টাকা বিনিয়োগ করতে হয়। ভারী সব যন্ত্রপাতি, রিগ আমদানি, বসানো, গভীর সমুদ্র থেকে সাগরপাড়ে পাইপলাইন বসানোসহ বিভিন্ন খাতে বিপুল পরিমাণে খরচ করতে হবে। বাংলাদেশের পক্ষে এ অর্থ ব্যয় করা সম্ভব হবে না বলে সরকার দীর্ঘ দিন প্রকল্প বিবেচনায় নেয়নি। বৃহত্তর জাতীয় স্বার্থে বিদেশি প্রস্তাবও ফেলে রাখে। এখন বঙ্গোপসাগরে তেল, গ্যাস অনুসন্ধান ও উত্তোলনে মার্কিন প্রস্তাব বিবেচনায় নেওয়ার ঘটনাও সংশ্লিষ্টদের কাছে রহস্যময়। মার্কিন কোম্পানির প্রস্তাব অনুযায়ী উত্তোলিত গ্যাস, তেল তারা বিদেশে রফতানি করতে পারবে। বাংলাদেশ সরকারের কাছেও নির্দিষ্ট পরিমাণে বিক্রি করতে পারবে। বিদেশে রফতানির ব্যাপারে বাংলাদেশ সরকার কোনো পর্যায়ে কোনো রকম আপত্তি জানাতে পারবে না। সংশ্লিষ্টদের তথ্যমতে, উত্তোলিত প্রাকৃতিক সম্পদ গ্যাস, তেলের ৮০ শতাংশেরই মালিকানা পাবে বিদেশি কোম্পানি। বাংলাদেশকে তারা দেবে অবশিষ্ট ২০ শতাংশ। সে হিসাবে বাংলাদেশ তেমন একটা লাভবান হবে না। তবে সংশ্লিষ্টরা মনে করেন, নিজস্বভাবে খনিজ সম্পদ অনুসন্ধান ও আহরণের জন্য যে বিপুল পরিমাণ অর্থ বিনিয়োগ করতে হবে, বাংলাদেশের সেই আর্থিক সক্ষমতা নেই। বছরের পর বছর এই প্রাকৃতিক সম্পদ সাগরের তলদেশে ফেলে রাখা কতটা যৌক্তিক, তা নিয়েও তারা প্রশ্ন তোলেন।

কূটনৈতিক ও রাজনৈতিক পর্যবেক্ষক মহলের প্রশ্ন, দেশের অর্থনৈতিক স্বার্থের পাশাপাশি সুদূরপ্রসারী রাজনৈতিক স্বার্থে সরকার মার্কিন কোম্পানিকে বেছে নিয়েছে। কানাডা ও রাশিয়ার কোম্পানিও বঙ্গোপসাগরে তেল-গ্যাস অনুসন্ধানে আগ্রহী ছিল। চীনও আগ্রহ প্রকাশ করে। কিন্তু সরকার এ পর্যায়ে মার্কিন কোম্পানির ব্যাপারেই ইতিবাচক দৃষ্টিভঙ্গি নিয়ে এগোচ্ছে। তবে পরবর্তী পর্যায়ে কানাডা, চীন, রাশিয়ার প্রস্তাবও বিবেচনার সম্ভাবনা নেইÑএ কথা বলা যাবে না। বঙ্গোপসাগরে বাংলাদেশের বিশাল এলাকার পৃথক ব্লক তাদেরও লিজ দেওয়া হতে পারে। একটা পর্যায়ে সরকার নিজস্বভাবেও অনুসন্ধান কাজ চালাবে। যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে বাংলাদেশ সরকারের অমø-মধুর সম্পর্কের প্রেক্ষাপটে সে দেশীয় কোম্পানির কাছে বঙ্গোপসাগরের সবচেয়ে সম্ভাবনাময় ব্লকটি লিজ দেওয়ার পেছনে রাজনৈতিক প্রশ্ন রয়েছে বলে সংশ্লিষ্ট অনেকেই মনে করেন।

প্রসঙ্গত উল্লেখ্য, বিল ক্লিনটন বাংলাদেশ সফরে এসে এখান থেকে গ্যাস নেওয়ার আগ্রহ প্রকাশ করেছিলেন। অপর্যাপ্ত মজুদ নিয়ে গ্যাস রফতানির বিপক্ষে অবস্থান নেন সে সময়ের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। পরে আওয়ামী লীগ নেতৃবৃন্দ, শেখ হাসিনা নিজেও বলেন, যুক্তরাষ্ট্রকে গ্যাস দিতে রাজি হননি বলেই নির্বাচনে আওয়ামী লীগকে তার মাশুল দিতে হয়। সংগতভাবেই রাজনৈতিক পর্যবেক্ষক মহলের প্রশ্ন, আগামীতে ক্ষমতায় আসা নিশ্চিত করার জন্যই কি বঙ্গোপসাগরের গুরুত্বপূর্ণ ব্লক মার্কিন কোম্পানিকে লিজ দেওয়া হয়েছে।

বিরোধী দল তত্ত্বাবধায়ক সরকারের দাবিতে যে পরিস্থিতি সৃষ্টি করছে এবং আগামী কিছুদিনের মধ্যে এই পরিস্থিতি আরও যে মারাত্মক রূপ নিতে যাচ্ছে, তা সামাল দেওয়া সরকারের জন্য বড় ধরনের চ্যালেঞ্জ হয়েই দেখা দেবে। ক্ষমতাপ্রত্যাশী বিএনপি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও তার সরকারকে হটানোর সর্বাত্মক আন্দোলনে অবতীর্ণ হয়েছে। তাদের এ আন্দোলনের ব্যর্থতার দায় যে কত ভয়ংকর হবে, তা উপলব্ধি করার মতো অভিজ্ঞ রাজনীতিবিদ দলটিতে রয়েছেন। তবে দলে তাদের কর্তৃত্ব কতটা আছে, আদৌ আছে কি না, সে প্রশ্ন রয়েছে। তরুণদের পক্ষে তারেক রহমানের মুখ্য উপদেষ্টা ব্যবসায়ী, সাবেক বাণিজ্যমন্ত্রী আমীর খসরু মাহমুদ চেšধুরী, মির্জা আব্বাস, আমানউল্লাহ আমানের মতো নেতাও রয়েছেন; যারা রাজনীতিবিদের চেয়ে ভিন্নতর পরিচয়ে পরিচিত। কিন্তু তারা এবং তাদের মতো নেতারাই বিএনপির রাজনীতির কর্তৃত্বে রয়েছেন। তবে রাজনৈতিক পর্যবেক্ষক মহল এ কথাও মনে করেন, দলটিকে ধ্বংস, অপরিণামদর্শী পরিণতির দিকে কেউই নিয়ে যাবেন না। সরকারের পতন ঘটানোর এক দফা আন্দোলনের নামে দলীয় রাজনীতিকে একেবারে শেষ প্রান্তে এসে দাঁড় করিয়েছেন দলের এই নেতৃত্ব। সমঝোতার কোনো জায়গাই তারা দৃশ্যত রাখেননি।

কমেন্ট বক্স