এগ্রো রিসার্চ অ্যান্ড ডেভেলপমেন্ট ইনিশিয়েটিভ খামারে প্লট ভাগ করে বিভিন্ন ধরনের দেশি-বিদেশি ফল-সবজি চাষ করা হয়েছে। কুল গাছে ধরেছে কুল, পেয়ারা গাছে ঝুলছে পেয়ারা, বিদেশি ফল রকমেলন আর হানিডিউ দেখলে যেন চোখ জুড়িয়ে যায়। বাগানে প্লট আকারে মালচিং পদ্ধতিতে চাষ হচ্ছে টমেটো, ক্যাপসিকাম, ক্যান্টালুপ, লেটুস, ক্ষিরাই, কাচা মরিচ। একপাশে পরীক্ষামূলকভাবে চাষ করা হচ্ছে সূর্যমুখী ফুল। আরেকটা অংশে করা হয়েছে আঙুরের চাষ। ব্যবহার করা হয় জৈব সার। বাগানের গাছগুলোতে নেই কোন রোগ বালাই, ফলনও ভালো। আর প্লট আকারে ছোট-বড় তিনটি পুকুরে আলাদাভাবে চাষ হচ্ছে বিভিন্ন জাতের মাছ।

প্রান্ত এগ্রোর রিসার্চ অ্যান্ড ডেভেলপমেন্ট ইনিশিয়েটিভের কর্মশালায় প্রশিক্ষণ কর্মশালা শুরুর আগে প্লট ঘুরে ঘুরে দেখছেন আধুনিক পদ্ধতির কৃষিকাজ। কেউবা জমিতে নেমে হাত দিয়ে গাছের পাতা উল্টিয়ে গোড়া দেখছেন। আধুনিক প্রশিক্ষণ কর্মশালায় আসা কৃষকদের সাথে কথা বলে জানা যায়, তারা তাদের বাপ-দাদার আমলের পদ্ধতিতে চাষাবাদ করলেও আধুনিক পদ্ধতি সম্পর্কে তাদের ধারণা নেই। জমিতে রোগবালাই লেগেই থাকতো। প্রান্ত এগ্রোর আধুনিক পদ্ধতিতে তরমুজ চাষ দেখে হরিপুরের কৃষক ইসমাইল কয়েকবছর আগে চাষ করেছিলেন তরমুজ। কিন্তু লোকসান গুনতে হয়েছে। কর্মশালায় তিনি জানান, এজন্য বাজার থেকে বীজও সংগ্রহ করেন। কিন্তু বীজ থেকে গাছ হলেও আর ফল আসেনি। কর্মশালায় এসে অনেক কিছু শিখলাম। শুধু বীজ কিনলেই হবে না, কোন জাতের বীজ কিনতে হবে সেটাও জানতে হবে। মমিন ইসলাম নামের কৃষক বলেন, আমি আগের নিয়মে চাষাবাদ করি। মরিচ, টমেটো চাষ করতাম। আধুনিক পদ্ধতি সম্পর্কে ধারণা ছিল না। এখানে আধুনিক পদ্ধতির মরিচ আর টমেটো ক্ষেত দেখেছি। দেখলাম মাটিতে প্লাস্টিক বিছিয়ে এসব চাষ করেছে, পোকার আক্রমণও কম। কিন্তু আমাদের ফলনে রোগবালাই লেগেই থাকে।
প্রান্ত এগ্রোর রিসার্চ অ্যান্ড ডেভেলপমেন্ট ইনিশিয়েটিভ প্রকল্পের জেনারেল ম্যানেজার ফরিদ উদ্দীন আহমেদ বলেন, ‘আমাদের কাজের মূল লক্ষ্য হলো গবেষণার মাধ্যমে কৃষির উন্নয়ন ঘটানো। নতুন-নতুন জাত বিশেষ করে বিদেশি জাতের উদ্ভাবন করা আমাদের লক্ষ্য, যাতে আমরা এর মধ্য দিয়ে বৈদেশিক মুদ্রা আয় করতে পারি। আমরা যে কাজগুলো করছি সেগুলোর সাথে আমাদের কৃষক ভাইদের পরিচয় করে দিতে চাই। তাদেরকে এসবের সাথে সম্পৃক্ত করতে চাই। যাতে তারা প্রথাগত চাষ বাদ দিয়ে আধুনিক চাষাবাদের মাধ্যমে প্রত্যাশিত ফলন পায়। প্রান্ত এগ্রোর কৃষি কর্মকর্তা তরিকুল ইসলাম বলেন, আমাদের কৃষক ভাইয়েরা এখনো তাদের বাপ-দাদার আমলের কৃষি থেকে বের হতে পারেনি। একটা জমিতে যে একাধিক ফলন পাওয়া যায় তারা সেটা জানে না। তারা জানে না কিভাবে একটা জমি থেকে বছরে দুই থেকে তিনটা ফসল পাওয়া যায়। ফলে তারা লাভের মুখ দেখে না। আমরা এই প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা করেছি মূলত তাদের আধুনিক কৃষি সম্পর্কে জানানোর জন্য। আমরা চাই আমাদের কৃষক ভাইরা আধুনিক উপায়ে চাষ করে লাভের মুখ দেখুক।
প্রান্ত এগ্রোর রিসার্চ অ্যান্ড ডেভেলপমেন্ট ইনিশিয়েটিভ উৎপাদনশীলতা ও দক্ষতা বাড়াতে আধুনিক কৃষি যন্ত্রপাতি, নির্ভুল কৃষি এবং টেকসই পদ্ধতিতে কৃষকদের তাদের কৃষি পণ্যের জন্য ন্যায্য মূল্য নিশ্চিত করে দেশীয় এবং আন্তর্জাতিক বাজারে এক্সেস করতে সহায়তা এবং রপ্তানিতে উৎসাহিত করছে। বিলুপ্তপ্রায় মহিশুর মাছ ও বাঙ্গি, মিষ্টিআলু ছাড়াও বিভিন্ন ধরনের ফল-ফলাদি নিয়ে গবেষণা চালিয়ে যাচ্ছে প্রান্ত এগ্রোর রিসার্চ অ্যান্ড ডেভেলপমেন্ট ইনিশিয়েটিভ।
ঠিকানা/এসআর