প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের ঘোষণা অনুযায়ী যুক্তরাষ্ট্র কানাডার পণ্য আমদানিতে ২৫ শতাংশ শুল্ক আরোপের পর পাল্টা ব্যবস্থা হিসেবে মার্কিন পণ্যে একই হারে শুল্ক আরোপের ঘোষণা দিয়েছে কানাডা।
দেশটির প্রধানমন্ত্রী জাস্টিন ট্রুডো শনিবার রাতে (বাংলাদেশ সময় রবিবার ভোর) এক সংবাদ সম্মেলনে বলেছেন, ১৫৫ বিলিয়ন ডলারের মার্কিন পণ্যের ওপর এই শুল্কহার প্রযোজ্য হবে।
এর মধ্যে ৩০ বিলিয়ন ডলারের মার্কিন পণ্যের ওপর নতুন শুল্কহার কার্যকর হবে মঙ্গলবার থেকেই। আরো ১২৫ বিলিয়ন ডলারের মার্কিন পণ্যের ওপর ২৫ শতাংশ হারে শুল্ক আরোপ করতে ২১ দিন সময় দেওয়া হবে, যাতে কানাডার কোম্পানিগুলো সমন্বয় করার সময় পায়।
যেসব পণ্য আমদানিতে কানাডা শুল্ক আরোপ করছে, তার মধ্যে আছে আমেরিকান বিয়ার, ওয়াইন, বরবন উইস্কি, ফল, কমলার রসসহ ফলের জুস, সবজি, পারফিউম, পোশাক এবং জুতোর মত পণ্য।
এছাড়া গৃহস্থালীর সামগ্রী, ক্রীড়া সামগ্রী, আসবাবপত্র এবং কাঠ ও প্লাস্টিকের মত কাঁচামালও নতুন হারে শুল্কের আওতায় পড়বে।
এর বাইরে গুরুত্বপূর্ণ কিছু খনিজ আমদানি এবং যুক্তরাষ্ট্র থেকে কেনাকাটার ক্ষেত্রে শুল্ক বহির্ভূত বিধিনিষেধ আরোপ করবে কানাডা। তবে ট্রুডো সংবাদ সম্মেলনে এ বিষয়ে বিস্তারিত বলেননি।
সংবাদ সম্মেলনের শুরুতেই ট্রুডো সরাসরি আমেরিকার জনগণকে উদ্দেশ করে বলেন, এই পাল্টাপাল্টি শুল্কের ধাক্কা বাজার দর আর যুক্তরাষ্ট্রের অর্থনীতির ওপর সরাসরি প্রভাব ফেলবে।
দুই দেশের মধ্যে গভীর ঐতিহাসিক সম্পর্কের কথা মনে করিয়ে দিয়ে কানাডার প্রধানমন্ত্রী বলেন, এ এমন এক বন্ধুত্ব, যা নিয়ে বিশ্বের অনেক দেশ হিংসা করে।
ট্রুডোকে জিজ্ঞাসা করা হয়েছিল, তিনি শুল্ক আরোপের বিষয়টি নিয়ে মার্কিন প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের সঙ্গে কথা বলেছেন কি না। উত্তরে কানাডার প্রধানমন্ত্রী বলেন, জানুয়ারিতে ট্রাম্পের অভিষেকের পর তিনি কথা বলার চেষ্টা করেছিলেন, এরপর আর করেননি।
শুল্ক নিয়ে এই লড়াই এড়াতে গত ডিসেম্বরে ফ্লোরিডায় ট্রাম্পের রিজোর্টে গিয়ে তার সঙ্গে বৈঠক করেছিলেন ট্রুডো।
তিনি বলেছেন, মার্কিন নেতার সঙ্গে আলোচার জন্য তার দরজা খোলা আছে।
প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত হওয়ার আগে থেকেই শুল্ক বাড়ানোর হুমকি দিয়ে আসছিলেন ডনাল্ড ট্রাম্প। জানুয়ারিতে হোয়াইট হাউজে বসার পর তিনি ধীরে ধীরে তার পরিকল্পনা বাস্তবায়ন শুরু করেছেন।
তার ঘোষণা অনুযায়ী শনিবার থেকেই মেক্সিকো ও কানাডার পণ্যে ২৫ শতাংশ এবং চীনের পণ্য আমদানিতে ১০ শতাংশ শুল্ক কার্যকর করেছে যুক্তরাষ্ট্র।
ট্রাম্প শুক্রবার বলেছেন, কানাডিয়ান তেলের উপর ১০ শতাংশের কম শুল্ক আরোপ করা হবে, যা ১৮ ফেব্রুয়ারির পরে কার্যকর হতে পারে।
কানাডা, মেক্সিকো ও চীনের ওপর নামছে ট্রাম্পের নতুন শুল্ক-খড়্গ
ভবিষ্যতে ইউরোপীয় ইউনিয়নের (ইইউ) ওপরও শুল্ক আরোপের পরিকল্পনার কথা তুলে ধরে ট্রাম্প বলেন, এই জোট যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে ভালো আচরণ করেনি।
ট্রাম্প বলে আসছেন, যুক্তরাষ্ট্রের সীমান্ত পেরিয়ে বিপুল পরিমাণ অবৈধ অভিবাসী আসার প্রতিক্রিয়ায় এবং প্রতিবেশীদের সঙ্গে বাণিজ্য ঘাটতি মোকাবেলায় এই পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে।
আর হোয়াইট হাউসের প্রেস সেক্রেটারি ক্যারোলিন লেভিট বলেছেন, কানাডা ও মেক্সিকো ‘অবৈধ ফেন্টানিল’ যুক্তরাষ্ট্রে প্রবেশের সুযোগ দেওয়ার প্রতিক্রিয়ায় এই শুল্ক আরোপ করা হয়েছে। ওই মাদকের কারণে কোটির বেশি আমেরিকানের মৃত্যু হয়েছে।
এর জবাবে ট্রুডো তার সংবাদ সম্মেলনে বলেন, সাধারণ পণ্যে শুল্কের বোঝা চাপানো অবৈধ ফেন্টানিলের কারবার বন্ধের ভালো কৌশল নয়।
তার ভাষ্য, যুক্তরাষ্ট্রে যে পরিমাণ ফেন্টানিল ঢোকে, তার ১ শতাংশেরও কম কানাডা থেকে যায়। যুক্তরাষ্ট্রে যত অবৈধ অভিবাসী প্রবেশ করে, তার ১ শতাংশেরও কম কানাডা সীমান্ত দিয়ে প্রবেশ করে।
“আমি বলছি না যে ওইটুকু বন্ধের জন্য আমাদের কিছু করার নেই। তবে মানুষের জীবন বাঁচাতে একসঙ্গে কাজ করতে চাইলে এভাবে শুল্ক আরোপ ভালো কোনো পন্থা নয়।”
ট্রুডো সতর্ক করে বলেন, আগামী কয়েক সপ্তাহ কানাডা আর আমেরিকার নাগরিকদের জন্য কঠিন সময় যাবে।
“শুল্ক আরোপের যে পদক্ষেপ যুক্তরাষ্ট্র নিয়েছে, আর তার পাল্টায় আমাদের যে জবাব, তার সরাসরি প্রভাব পড়বে সীমান্তের দুই পাড়ের কর্মজীবী মানুষের ওপর।
“এটা আমরা চাইনি। কিন্তু কানাডার দিক থেকে আমরা পিছিয়ে যাব না।”
ঠিকানা/এসআর