ক্ষমতাসীন দল বলে কথা। আন্দোলন সংগ্রামের লেশ থাকে না। রাজনৈতিক কর্মকাণ্ড থাকে অনেকটা সীমিত। কিন্তু জেলা মর্যাদার অঙ্গ সংগঠন যুক্তরাষ্ট্র আওয়ামী লীগ এক্ষেত্রে ব্যতিক্রম ছিল। সবসময় সংগঠনটি সোচ্চার থেকেছে বিভিন্ন ইস্যুতে। কিন্তু বর্তমান সময়ে অজ্ঞাত কারণে যুক্তরাষ্ট্র আওয়ামী লীগের কিছু নেতার দেখা মিলছে না। ত্যাগী নেতারা সেই আগের মতই সোচ্চার এখনো।
জানা গেছে, যুক্তরাষ্ট্র আওয়ামী লীগের কিছু নেতা বছরের পর বছর শুধু নেতৃত্বের বিরোধিতা করেছেন। অর্থাৎ কিছু নেতা সভাপতি সিদ্দিকুর রহমানের নেতৃত্বের বিরোধিতা করতে গিয়ে দলের সক্রিয় ও কার্যকর কার্যক্রম থেকে বিরত ছিলেন। কিছু নেতা মনঃপুত পদ না পেয়ে দূরে দূরে থেকেছেন। সরকারি দল করেন বলে আখের গোছাতে ব্যস্ত ছিলেন কিছু নেতা। তবে সাম্প্রতিককালে কিছু নেতা সংগঠনের কার্যক্রম থেকে দূরে থাকছেন নিজেদের ‘নিরাপদ’ রাখতে। দল যদি ক্ষমতায় না আসে, ‘পিঠ’ বাঁচাতে তাই আগেভাগে তারা নিজেদের নিষ্ক্রিয় করে রেখেছেন। এমন সুবিধাবাদী চরিত্রের নেতা যুক্তরাষ্ট্র আওয়ামী লীগে একেবারেই কম নয়।
২০১১ সালে নিউইয়র্কের ম্যানহাটনের হোটেল হিলটনে যুক্তরাষ্ট্র আওয়ামী লীগের কমিটি ঘোষণা করেছিলেন দলের সভাপতি ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। তিন বছর মেয়াদের কমিটি পার করেছে ১২ বছর বা এক যুগ। এই দীর্ঘ সময়ে দেশের দলীয় রাজনীতির স্বার্থে যুক্তরাষ্ট্র আওয়ামী লীগ সকল আন্দোলনে সক্রিয় ভূমিকা রেখেছে। দলের সভাপতির কাছে সেই ভূমিকা ব্যাপক প্রশংসিত হয়েছে বিভিন্ন সময়। তবুও নতুন নেতৃত্ব চান দলের নেতা-কর্মীরা। নিজেরাও আসতে চান নেতৃত্বে। এসব নিয়ে বিভিন্ন সময়ে নেতৃত্বের সংকট তৈরি হলেও নতুন কমিটির ব্যাপারে কোনো সিদ্ধান্ত আসেনি দীর্ঘদিনেও।
প্রথম তিন বছর পেরিয়ে যাবার পর প্রতি বছর যখনই শেখ হাসিনা নিউইয়র্কে এসেছেন, নেতৃত্ব প্রত্যাশী নেতা-কর্মীরা কমিটি চেয়েছেন। কিন্তু তাতে সায় দেননি দলের প্রধান। ফলে প্রত্যাশিত পদের লোভে রাজনীতি করা কিছু নেতা ধীরে ধীরে নিষ্ক্রিয় হয়ে গেছেন।
যুক্তরাষ্ট্র আওয়ামী লীগের সভাপতি ড. সিদ্দিকুর রহমানের সঙ্গে সাধারণ সম্পাদক ছিলেন সাজ্জাদুর রহমান সাজ্জাদ। কিন্তু সভাপতির সঙ্গে নেতৃত্বের দ্বন্দ্বে তাকে সরে দাঁড়াতে হয়েছে। নিয়ম অনুযায়ী প্রথম যুগ্ম সম্পাদক নিজাম চৌধুরীর ভারপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদক হবার কথা ছিল। কিন্তু একই ধরনের কোন্দলে জড়িয়ে নিজাম চৌধুরীর বদলে ভারপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদকের দায়িত্ব পান যুগ্ম সম্পাদক আব্দুস সামাদ আজাদ। সেই থেকে দীর্ঘসময় ধরে ভারপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদকের দায়িত্ব পালন করছিলেন তিনি। গত ৬ আগস্ট রোববার দলের সভাপতি ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নির্দেশে ভারমুক্ত হয়েছেন তিনি। কিন্তু বর্তমান রাজনৈতিক প্রেক্ষাপটে নিষ্ক্রিয় নেতারা কতটা সক্রিয় হবেন, নাকি নেতৃত্বের কোন্দলে আরো নিষ্ক্রিয় হবেন, তা দেখার বিষয়।
যুক্তরাষ্ট্র আওয়ামী লীগের একাধিক ত্যাগী নেতা অভিযোগ করেছেন, দেশে বিএনপি’র নৈরাজ্যের প্রতিবাদে যুক্তরাষ্ট্র আওয়ামী লীগ বিভিন্ন কর্মসূচি পালন করছে। কিন্তু ইদানিং এসব কর্মসূচিতে বহু নেতাকে দেখা যাচ্ছে না। তারা গা বাঁচিয়ে চলছেন। এসব নেতারা মনে করছেন, দল যদি ক্ষমতায় আসতে না পারে তাহলে পিঠ বাঁচাতে তারা দূরে দূরে থাকছেন। তারা সাংগঠনিক কর্মকাণ্ডে নিষ্প্রভ থাকছেন।