যুক্তরাষ্ট্রজুড়ে এখন চলছে ইউএস ইমিগ্রেশন অ্যান্ড কাস্টমস ইনফোর্সমেন্টের (আইস) অভিযান। এই অভিযানের মাধ্যমে ডিপোর্টেশন অর্ডার রয়েছে, অবৈধভাবে আছেন এমন ব্যক্তিদের যুক্তরাষ্ট্র থেকে বের করে দেওয়া হবে। আইস অফিসাররা যখন কোনো ব্যক্তিকে আটকে জিজ্ঞাসাবাদ করবেন, তখন তিনি যদি তার লিগ্যাল কোনো স্ট্যাটাসের প্রমাণ দিতে না পারেন, তাহলে তাকে ধরতে পারেন। এ কারণে অবশ্যই সবাইকে নিজ নিজ স্ট্যাটাস অনুযায়ী নথিপত্র তার কাছে রাখতে হবে, যাতে আইসের অফিসাররা কাউকে কিছু জিজ্ঞাসাবাদ করলে তিনি তার উত্তর দিতে পারেন এবং নথিপত্র দেখাতে পারেন। তবে আইসের অফিসাররা সাধারণত রাস্তায় কাউকে আটকান না। তারা বিভিন্ন রেস্টুরেন্ট, অফিস, দোকানসহ বাসাবাড়ি ও স্থাপনায় যেতে পারেন। তবে বিমানবন্দরের বাইরে, ডিএমভি অফিসের বাইরে, কোর্টের বাইরে থাকতে পারেন। সেখান থেকে যাদের বিরুদ্ধে রিমুভাল অর্ডার রয়েছে, ডিপোর্টেশন অর্ডার রয়েছে, এমন ব্যক্তিদের আটক করবে এবং যাদের ডিপোর্টেশন করার মতো তাদেরকে ডিপোর্ট করবেন। এসব কথা বলছিলেন খায়রুল বাশার ল’ অফিসের খ্যাতনামা অ্যাটর্নি খায়রুল বাশার।
তিনি বলেন, যাদের এ দেশে লিগ্যাল কোনো স্ট্যাটাস রয়েছে এবং তাদের বিরুদ্ধে অপরাধের কোনো অভিযোগ নেই, কোনো মামলায় ইতিপূর্বে কোনো ডিপোর্টেশন অর্ডার হয়নি, এমন ব্যক্তিদের সমস্যা নেই। যারা সিটিজেন বাই বার্থ, তারা সঙ্গে আইডি কার্ড রাখলেই হবে। এ ছাড়া সিটিজেনশিপ প্রমাণের জন্য চাইলে জন্মসনদের কপি অথবা পাসপোর্টের কপি সঙ্গে রাখতে পারেন। যারা ন্যাচারালাইজেশনের মাধ্যমে এ দেশে সিটিজেন হয়েছেন, তারা যদি এনহেন্সড আইডি কিংবা রিয়েল আইডি করে থাকেন, তাহলে সেটি রাখলেই হবে। এটি প্রমাণ করবে তার লিগ্যাল স্ট্যাটাসের বিষয়টি।
অ্যাটর্নি খায়রুল বাশার আরও বলেন, এ দেশের সিটিজেন নন, কিন্তু গ্রিনকার্ডধারী হলে গ্রিনকার্ড সঙ্গে রাখবেন। কারও গ্রিনকার্ড না থাকলে ওয়ার্ক পারমিট সঙ্গে রাখবেন। অ্যাসাইলাম কেস গ্র্যান্ট হয়েছে, এমন কোনো নথি থাকলে সেটি সঙ্গে রাখবেন। কারও যদি কোনো নথি না থাকে, তাহলে কোর্টে কেস পেন্ডিং থাকলে অথবা ইমিগ্রেশনে জমা থাকলে সেই কেসের এলিয়েন নাম্বার দিতে পারেন। কোনো নোটিশ থাকলে সেটিও দেখাতে পারবেন। এটিও তারা চেক করতে পারবে। সুতরাং যারা কোনো না কোনোভাবে যুক্তরাষ্ট্রে আছেন এবং তাদের বৈধ যেকোনো স্ট্যাটাস রয়েছে, তারা কোনো ধরনের অপরাধের সঙ্গে সম্পৃক্ত না থাকলে তাদের কোনো ভয় নেই। কিন্তু কেউ অপরাধের সঙ্গে সম্পৃক্ত আছেন বা ছিলেন এবং আদালতে শাস্তি হয়েছে, তারা সাবধান। এ ছাড়া যিনি এখন বৈধ স্ট্যাটাস নিয়ে আছেন কিন্তু আগে বৈধ ছিলেন না, তার বিরুদ্ধে কখনো ইমিগ্রেশন বিভাগ অভিযোগ তুলেছিল, তারা সাবধান।
তিনি বলেন, যারা বাংলাদেশ থেকে ভিজিটে এসে এখানে অবৈধভাবে কাজ করছেন, তারা ধরা পড়লে তাদের রিমুভ করা হবে। এ জন্য কোনো আপিল করার সুযোগ থাকবে না। কারণ ভিজিটে এসে এ দেশে কাজ করার কোনো আইনি নিয়ম নেই। সম্প্রতি ডোনাল্ড ট্রাম্প প্রেসিডেন্টের দায়িত্ব নেওয়ার পর অবৈধ অধিবাসীদের এ দেশ থেকে বিতাড়ন করার উদ্যোগ নিয়েছেন এবং এই সিদ্ধান্ত কার্যকর হওয়ার পর থেকে অভিযান অব্যাহত রয়েছে। এই অভিযানে ধরপাকড় চলছে। এ অবস্থায় অনেকেই ভয়ে ও আতঙ্কে আছেন। আইনজীবীরা পরামর্শ দিচ্ছেন, যারা এ দেশে বৈধভাবে আছেন, যাদের লিগ্যাল স্ট্যাটাস আছে, তাদের ভয়ের কারণ নেই। বিশেষ করে, যারা সিটিজেন ও গ্রিনকার্ডধারী। তারা তাদের স্ট্যাটাস প্রমাণের জন্য নথিপত্র সঙ্গে রাখতে হবে। যারা এখনো কোনো ফাইল করেননি, তারা এখনই বা যত দ্রুত সম্ভব একটি স্ট্যাটাসের জন্য আবেদন করতে পারেন।
বিশেষজ্ঞ আইনজীবীরা বলছেন, কারও ডিপোর্টেশন অর্ডার হয়ে থাকলে তাদেরকে ধরতে পারলে বিতাড়ন করা হবে, এটা মোটামুটি নিশ্চিত। এটিকে বলে এক্সপ্রিডাইট রিমুভাল। এর বিরুদ্ধে আপিল করার সুযোগ নেই। যারা বছরের পর বছর এখানে নথিপত্রহীন আছেন, ধরা পড়লে তারা বিপদের মুখে পড়বেন। তাদের পরামর্শ হলো কারও বাসায় যদি আইসের অফিসাররা গিয়ে গ্রেপ্তারের কথা বলেন, তাহলে দরজা খুলবেন না। দরজার নিচ দিয়ে গ্রেপ্তারের কোর্টের আদেশ দেখাতে বলতে হবে। গ্রেপ্তারের জন্য ওয়ারেন্ট থাকলে তাকে তারা ধরতে পারবে। কিন্তু ওয়ারেন্ট না থাকলে গ্রেপ্তার করতে পারবে না। তখন ওই ব্যক্তি দরজা খুলতে বাধ্য নন। তিনি তার আইনজীবীর সঙ্গে এ ব্যাপারে কথা বলবেন। তবে কেউ আইসের কোনো অফিসারের কাছে ধরা পড়লে এবং তার নথিপত্র থাকলে তিনি অত্যন্ত ভদ্র ও বিনয়ীভাবে তাদের সঙ্গে আচরণ করবেন। কোনোভাবেই কোনো ধরনের ঔদ্ধত্যপূর্ণ আচরণ করা যাবে না। তাকে জিজ্ঞাসাবাদ শেষে আইসের অফিসার স্যাটিসফায়েড হওয়ার পর যাওয়ার অনুমতি দিলে তিনি স্থান ত্যাগ করবেন। কেউ যদি মনে করেন, তিনি কোনো কথা বলবেন না, তার আইনজীবীর মাধ্যমে কথা বলবেন, সেটিও করতে পারেন। এ জন্য সময় ও স্থান জানতে পারেন, সেখানে গিয়ে আইনজীবীকে নিয়ে কথা বলতে হবে। তবে যারা এখানকার বৈধ অধিবাসী, তাদেরকে আইনীজীবীর জন্য অপেক্ষা না করলেও চলবে। সে ক্ষেত্রে তিনি তার বৈধ স্ট্যাটাস দেখাতে পারলেই হবে। যারা অবৈধ, তারা কথা বলতে না চাইলে তার আইনজীবীকে ফোন করতে পারেন এবং সেই আইনজীবীর মাধ্যমে কথা বলতে পারেন। কোনোভাবেই অফিসারদের সঙ্গে খারাপ আচরণ করা যাবে না এবং পালনোর চেষ্টা করা যাবে না। পালানোর চেষ্টা করলেও লাভ হবে না। কারণ তারা সব রকম প্রস্তুতি নিয়েই মাঠে রয়েছে।
অ্যাটর্নি খায়রুল বাশার বলেন, এ দেশে যারা ফরেন স্টুডেন্ট হিসেবে রয়েছেন, তারা তাদের কলেজ কিংবা বিশ্ববিদ্যালয়ের আইডি সঙ্গে রাখবেন। সেই সঙ্গে তিনি যে কলেজে ক্লাস রেজিস্ট্রেশন করেছেন, সেই প্রমাণ রাখবেন। কলেজের আই-২০টি সঙ্গে রাখতে হবে। তবে কোনো স্টুডেন্টেরই এই সময়ে কলেজের অনুমোদন রয়েছে এমন কোনো প্রতিষ্ঠানের বাইরে কাজ করা ঠিক হবে না। কর্মস্থলেও অভিযান চালাতে পারে। ধরা পড়লে ব্যবস্থা নেবেই। তাই ফরেন স্টুডেন্টরা এখন লেখাপড়া করা ও কেবল কলেজে কিংবা কলেজ কাজ করার জন্য অনুমোদন দিয়েছে এমন প্রতিষ্ঠানে কাজ করতে পারবেন।
এদিকে মসজিদ, মন্দির, গির্জা, স্কুলের বাউন্ডারি কিংবা এর ভেতর থেকেও চাইলে আইসের অফিসাররা গ্রেপ্তার করতে পারেন- এমন কথা শোনা গেলেও এখন তা হবে না। তবে এর বাইরে থেকে আইস গ্রেপ্তার করতে পারে। সে ক্ষেত্রে সবাইকে সতর্ক থাকতে হবে।