নির্বাচনী আচরণবিধিতে কিছু পরিবর্তন আনতে যাচ্ছে নির্বাচন কমিশন (ইসি)। এতে প্রার্থীর প্রার্থিতা বাতিল, মোটা অঙ্কের আর্থিক জরিমানা, প্রার্থীকে গ্রেপ্তার করার ক্ষমতাও থাকবে। এমনকি ফলাফল বাতিলের ক্ষমতাও পাবে ইসি। নির্বাচন কমিশন সূত্রে জানা যায়, সন্ত্রাস ও প্রভাবমুক্ত স্বচ্ছ, নিরপেক্ষ নির্বাচন নিশ্চিত করতে ইসি বিভিন্ন পদক্ষেপ কঠোরভাবে প্রয়োগ করবে। এসব কঠোর আইন ও বিধিগত ব্যবস্থার আওতায় স্থানীয় নির্বাচনী, প্রশাসনিক কর্মকর্তা, আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর কর্মকর্তা-কর্মচারীরা আসবেন। তাদের দায়িত্বহীনতা, কর্তব্যে ইচ্ছাকৃত অবহেলা, পক্ষপাতিত্ব থাকলে তারা শাস্তির আওতায় আসবেন।
বিদ্যমান ব্যবস্থায় প্রার্থীরা নির্বাচনী এলাকায় অনির্দিষ্ট সংখ্যক সমাবেশ, মিছিল করতে পারেন। প্রস্তাবিত ব্যবস্থায় তারা আর তা করতে পারবেন না। স্থানীয় প্রশাসনের লিখিত অনুমতি ছাড়া কেউ নির্বাচনী এলাকার কোথাও নির্বাচনী মিছিল, সমাবেশ করতে পারবেন না। একটি ইউনিয়নে চার থেকে পাঁচটির বেশি জনসমাবেশ করা যাবে না। কোনো প্রার্থী প্রতিদ্বন্দ্বী কোনো প্রার্থীর বিরুদ্ধে ব্যক্তিগত আক্রমণাত্মক, উসকানিমূলক বক্তব্য রাখলে তাকে জরিমানা, গ্রেপ্তার, প্রার্থিতা বাতিলও করা হবে। কোনো প্রার্থী, তার কর্মী-সমর্থকেরা প্রতিদ্বন্দ্বী কোনো প্রার্থী ও তার কর্মী-সমর্থকদের নির্বাচনী মিছিল, সমাবেশে হামলা করলে তাৎক্ষণিক সংশ্লিষ্টদের গ্রেপ্তার, প্রার্থীকে সর্বোচ্চ তিন লাখ টাকা জরিমানা করা হবে। সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি বিনষ্ট হতে পারে এমন কোনো বক্তব্য ও কাজ করলে সংশ্লিষ্ট প্রার্থীকে মোটা অঙ্কের আর্থিক জরিমানা, গ্রেপ্তার, প্রার্থিতা বাতিল করা হবে। হিন্দু ও অন্য ধর্মাবলম্বীদের ওপর, তাদের বাড়িতে কোনো প্রার্থী বা তার কর্মী-সমর্থকেরা হামলা চালালে সংশ্লিষ্ট প্রার্থীকে তাৎক্ষণিক গ্রেপ্তার, তার প্রার্থিতা বাতিল করার বিধান থাকবে। হিন্দু ধর্মাবলম্বীসহ ধর্মীয় সংখ্যালঘুদের ওপর কোনো প্রার্থীর কর্মী-সমর্থকেরা হামলা চালালে তার দায় সংশ্লিষ্ট প্রার্থীর ওপর বর্তাবে এবং তাকে আইনগত কঠোর ব্যবস্থার মুখোমুখি হতে হবে। কোনো নির্বাচনী এলাকায় কমিশন কর্তৃক নির্ধারিত সংখ্যকের বেশি লিফলেট, পোস্টার ছাপানো ও বিতরণ করা যাবে না। কোনো প্রার্থীর বক্তব্য ধর্মীয় আঘাত-সংক্রান্ত হলে তার প্রার্থিতা বাতিল করা হবে।
জানা যায়, আর্থিকসহ বিষয়-সম্পত্তির হিসাব সম্পর্কে মিথ্যা তথ্য প্রদান করলে প্রার্থীর প্রার্থিতা বাতিল ও মোটা অঙ্কের আর্থিক জরিমানা করা হবে। অভিযুক্ত ও দণ্ডিতরা অবশ্য আপিল করার সুযোগ পাবেন। তবে আপিল নিষ্পত্তি না হওয়া পর্যন্ত সংশ্লিষ্ট প্রার্থীর সব রকম নির্বাচনী প্রচারণা বন্ধ থাকবে।
জানা যায়, নির্বাচন কমিশন আরও একটি আকর্ষণীয় নতুন ব্যবস্থার প্রস্তাব করতে যাচ্ছে। প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থী দলীয় ও স্বতন্ত্র উভয় ক্ষেত্রেই তা প্রযোজ্য হবে। প্রতিটি দলের ও স্বতন্ত্র প্রার্থীদের নির্বাচনী এলাকায় একসঙ্গে সমাবেশ করার সুযোগ দেওয়া হবে। উপজেলা সদরে এই সভা হবে। আয়োজন করবে নির্বাচন কমিশন। জেলা, উপজেলা প্রশাসন, পুলিশ প্রশাসন এতে সার্বিক সহযোগিতা দেবে, বিশেষ করে নিরাপত্তার দায়িত্বে থাকবে। প্রার্থীরা একই মঞ্চে একসঙ্গে বসে বক্তব্য রাখবেন। তাদের প্রত্যেককে নির্দিষ্ট পরিমাণ সময় দেওয়া হবে। ব্যক্তিগত আক্রমণ, রাজনৈতিক প্রতিহিংসাপরায়ণ বক্তব্য রাখতে পারবেন না কোনো প্রার্থী। কোনো প্রার্থী তা করলে তাকে মোটা অঙ্কের আর্থিক জরিমানা ছাড়াও নির্দিষ্ট সময় পর্যন্ত নির্বাচনী প্রচারণা থেকে বিরত রাখা হবে। প্রথম পর্যায়ে উপজেলা সদরে এ রকম সমাবেশ করা হবে। পরে প্রতিটি ইউনিয়নে বা পাশাপাশি দুটি ইউনিয়নে একটি করে অনুরূপ সমাবেশ করার পরিকল্পনা রয়েছে নির্বাচন কমিশনের। প্রত্যেক প্রার্থীর ব্যক্তিগত নিরাপত্তা বিধানে সার্বক্ষণিক সশস্ত্র পুলিশ থাকবে। নির্বাচন কমিশন প্রস্তাবিত বিধিব্যবস্থা চূড়ান্ত করার পরই তা গেজেট আকারে প্রকাশ করবে।