দেখা দিতে পারে পাকস্থলীর নানান সমস্যা, ডায়ারিয়া, বদহজম, ফোলাভাব, বমি বমিভাব, ভিটামিনের বিষাক্ততা, স্বাদের পরিবর্তন।
ওমেগা থ্রি ফ্যাটি অ্যাসিডস শক্তির উৎস যা হৃদপিণ্ডের জন্য চমৎকার কাজ করে। মস্তিষ্কের বিকাশ, সংযোগস্থলসহ দেহের সার্বিক সুস্থতায় ভূমিকা রাখে।
জ্ঞানীয় দক্ষতা বৃদ্ধির পাশাপাশি প্রদাহ কমাতে এটা ভালো কাজ করে। এগুলো এক ধরনের পলিঅ্যানস্যাচুরেইটেড ফ্যাটি অ্যাসিডস যা সুস্বাস্থের জন্য জরুরি।
হেল্থশটস ডটকম’য়ে প্রকাশিত প্রতিবেদনে ভারতের ‘ম্যাক্স সুপার স্পেশাল্টি হসপিটাল’য়ের পুষ্টিবিদ ও ডায়টেটিক্স ডা. নিধি সাহাই এই সম্পর্কে বলেন, “সাধারণত মাংস ও অন্যান্য অনিরামিষ ধরনের খাবারে এগুলো পাওয়া যায়। অতিরিক্ত ওমেগা থ্রি ফ্যাটি অ্যাসিডস গ্রহণে দেহে নানারূপ জটিলতা দেখা দিতে পারে।”
ওমেগা থ্রি ফ্যাটি অ্যাসিডস কী?
পলিঅ্যানস্যাচুরেটেড ফ্যাটি অ্যাসিড ওমেগা থ্রি শ্রেণীবদ্ধ যা কিছু ওমেগা থ্রি তেল, এন-থ্রি ফ্যাটি অ্যাসিডস। মানুষের শরীরবৃত্তীয় এই ‘আবশ্যিক’ লিপিডের ওপর অনেকটা নির্ভর। লিনোলেনিক অ্যাসিড (এএলএ), আইকোসাপেন্টিনইক অ্যাসিড (ইপিএ) এবং ডোকোসাহেক্সেনোইক অ্যাসিড (ডিএইচএ) এই তিনটি হল মানবদেহের জন্য প্রয়োজনীয় প্রাথমিক ধরনের ওমেগা থ্রি ফ্যাটি অ্যাসিডস।
আখরোট ও ভোজ্য বীজ এএলএ সমৃদ্ধ ভেষজ তেল যা উদ্ভিদ থেকে গ্রহণ করা হয়। অন্যদিকে ইপিএ এবং ডিএইচএ মাছ ও মাছের তেলে পাওয়া যায় যা তৈলাক্ত মাছের তেলের কোষে পাওয়া যায়।
এগুলোতে রয়েছে স্বাস্থ্যকর ওমেগা থ্রি ফ্যাটি অ্যাসিডস যা দৈনিক চাহিদা পূরণে ভূমিকা রাখে বলে জানান ডা. সাহাই।
গবেষণায় দেখা গেছে, আমাদের দেহ প্রয়োজনীয় পুষ্টি উপাদান যেমন- ওমেগা থ্রি ফ্যাটি অ্যাসিডস নিজে তৈরি করতে পারে না। তাই চাহিদা পূরণের জন্য বাহ্যিক খাবার থেকে তা গ্রহণ করতে হয়।
স্যামন, টুনা, সার্ডিন, সয়াবিন তেল, তিসির বীজ, চিয়া বীজ, আখরোট ও কাঠবাদাম খাবার তালিকায় যোগ করার মাধ্যমে ওমেগা থ্রি’র ঘাটতি পূরণ করা যায়। এছাড়াও ক্যাপ্সুলের মাধ্যমে নানান রকম মাছের তেল খাবারে যোগ করা যায়।
পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া
ওমেগা থ্রি ফ্যাটি অ্যাসিডস স্বাস্থের জন্য উপকারী হলেও অতিরিক্ত গ্রহণে নানান রকম পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া সৃষ্টি করে।
‘স্ট্যাট পার্ল’ সাময়িকীতে প্রকাশিত গবেষণার উদ্ধৃতি দিয়ে এই চিকিৎসক জানান, ওমেগা থ্রি গ্রহণ করা সাধারণত নিরাপদ। তবে অতিরিক্ত গ্রহণে মেছো স্বাদ, ডায়রিয়া, গ্যাস, বমি বমিভাব, আর্থ্রালজিয়া, বদহজম এবং ক্ষরণ ইত্যাদি দেখা দেয়।
ডা. সাহাই বলেন, “অতিরিক্ত ওমেগা থ্রি সম্পূরক গ্রহণে ডায়ারিয়া, বদহজম, ফোলাভাব, বমি বমিভাব, ভিটামিনের বিষাক্ততা, স্বাদের পরিবর্তন, পাকস্থলীর জটিলতা ও পেট পরিষ্কারে নানান জটিলতা সৃষ্টি করে।”
পুষ্টি ও বিভিন্ন ওজন কমানো ব্যবস্থাপনা বিশেষজ্ঞ, কার্ডিওলজিস্ট এবং ‘সাওল’য়ের পরিচালক ও প্রতিষ্ঠাতা ভারতীয় চিকিৎসক বিমল ছাজের বলেন, “অতিরিক্ত ওমেগা থ্রি’স গ্রহণে ‘অ্যান্টিকোয়াগালান্ট’ প্রভাব হ্রাস পায়।
এর মানে হল, এরা রক্ত জমাট বাঁধা কমায় যা রক্তপাত ও ক্ষত সারাতে সাহায্য করে। যদিও এটা হৃদপিণ্ডের জন্য ভালো। তবে অতিরিক্ত গ্রহণে তা রক্তপাত ও ক্ষত হওয়ার প্রবণতা বাড়াতে পারে। বিশেষত যদি রক্ত পাতলা করার ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়।
অতিরিক্তমাত্রায় ওমেগা থ্রি ফ্যাটি অ্যাসিডস গ্রহণে অনেকসময় লো-ডেনসিটি লিপোপ্রটিন (এলডিএল) কোলেস্টেরলের মাত্রা কমে। এই সমস্যা ছাড়া ওমেগা থ্রি’স লিপিড উন্নত করতে সহায়তা করে।
ডা. বিমল উল্ল্যেখ করেন যে, “ওমেগা থ্রি ফ্যাটি অ্যাসিডস (এএলএ, ইপিএ এবং ডিএইচএ একসাথে) প্রতিদিন ০.৫ থেকে ১.৬ গ্রাম গ্রহণ করা হলে প্রায়শ এমনটা দেখা যায়।”
তবে এর প্রভাব বয়স ও লিঙ্গের ওপর নির্ভর করে।
সুস্থ থাকতে পরিমিত ওমেগা থ্রি ফ্যাটি অ্যাসিডস গ্রহণ করা উচিত। সম্পূরক হিসেবে গ্রহণ করার আগে অবশ্যই বিশেষজ্ঞের পরামর্শ গ্রহণ করতে হবে।
ফ্যাটি অ্যাসিড সমৃদ্ধ মাছ যেমন- স্যামন, ম্যাকারেল, সার্ডিন ও উদ্ভিজ্জ খাবার থেকে ওমেগা থ্রি ফ্যাটি অ্যাসিডস’য়ের চাহিদা মেটানো যায়।
ঠিকানা/এসআর