ড. মুহাম্মদ ইউনূসের অন্তর্বর্তী সরকার ক্ষমতায় আসার পরই স্থানীয় সরকার সংস্থাসমূহ বাতিল করে দেয়। নির্বাহী আদেশে নির্বাচিত স্থানীয় সরকার সংস্থাসমূহ বাতিল করে অধ্যাদেশবলে প্রশাসক নিয়োগের ব্যবস্থা করা হয়। এখন সেসব স্থানীয় সরকার সংস্থার নির্বাচনের পরিকল্পনা নিয়েছে সরকার। এসব নির্বাচনের পরই হবে জাতীয় নির্বাচন। অবশ্য এ নিয়ে রাজনৈতিক  মহলে মতভিন্নতা থাকায় সরকারের উচ্চতর পর্যায়ও দ্বিধায় পড়েছে। স্থানীয় সরকার সংস্থাগুলোর মধ্যে সর্বাধিক জনসম্পৃক্ততা থাকে সর্বনিম্ন স্তর ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনে। এই সংস্থার গুরুত্বও অনেক বেশি। ইউনিয়ন পরিষদসমূহের মেয়াদ আরো এক বছর রয়েছে। সরকার এ সংস্থাকে বাতিল করেনি। তা সত্ত্বেও অধিকাংশ পরিষদই অকার্যকর হয়ে আছে। কারণ নির্বাচিত প্রতিনিধিদের অনুপস্থিতিতে এগুলো অচল, নিষ্ক্রিয় হয়ে আছে গত প্রায় ৬ মাস যাবৎই। নির্বাচিত চেয়ারম্যানদের অনেকেই পরিষদে আসছেন না। অনেকেই সরকার পরিবর্তনের পর আত্মগোপনে চলে যান। তারা বিগত আওয়ামী লীগ সরকারের সময়ে অনুষ্ঠিত নির্বাচনে নির্বাচিত। স্থানীয় সরকারের এই নির্বাচনে, বিশেষ করে নির্বাচনী সভা-সমাবেশ, মিছিল, প্রচারমূলক কর্মকাণ্ডে প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থীদের কর্মী-সমর্থকদের মধ্যে মারামারি, গোলযোগ হয়েছে। অনেক ক্ষেত্রে রক্তক্ষয়ী সংঘাত-সংঘর্ষও হয়েছে। তবে নির্বাচনের দিন গোলযোগ, সংঘাত, সংঘর্ষ খুব কমই হয়েছে। গ্রামের ভোটার সাধারণের ভোটে নির্বাচিত হয়েও চেয়ারম্যানদের অধিকাংশ এখনো পলাতক। সরকার উপজেলার বিভিন্ন পর্যায়ের কর্মকর্তাদের অতিরিক্ত দায়িত্ব দিয়ে পরিষদগুলো কার্যকর রাখা ও স্থানীয় জনসাধারণের দুর্ভোগ লাঘবের চেষ্টা করছে। কিন্তু সরকারের সে চেষ্টা পুরোপুরি সফল হয়নি। স্থানীয়রা প্রয়োজনীয় অনেক নাগরিক সেবা থেকে বঞ্চিতই থাকছেন।
জানা যায়, অন্তর্বর্তী সরকার ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচন অনুষ্ঠানের পরিকল্পনা করছে। পরিষদের মেয়াদ আছে আরও এক বছর। বিধান অনুযায়ী মেয়াদ শেষ হওয়ার ছয় মাস আগে সরকার নতুন নির্বাচন করতে পারে। সে অনুযায়ী আগামী জুন-জুলাইয়ে ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচন অনুষ্ঠানের সম্ভাবনা রয়েছে।
এদিকে অন্তর্বর্তী সরকার সরাসরি রাজনৈতিক কর্মকাণ্ডে সম্পৃক্ত না হলেও তাদেরকে যারা ক্ষমতায় অধিষ্ঠিত করছেন, সেই বৈষম্যবিরোধী শিক্ষার্থী-জনতা আন্দোলনের নেতাকর্মীরা রাজনৈতিকভাবে নিজেদের সংগঠিত করছেন। তারা স্থানীয় সরকারের নির্বাচন চান। প্রতিটি ইউনিয়নে তারা প্রার্থী দেবেন এবং তাদের নেতৃত্বেই ইউনিয়ন পর্যায়ে রাজনৈতিক দল গড়ে তুলবেন। ইউনিয়ন পরিষদসমূহের নির্বাচিত চেয়ারম্যান, মেম্বারদের সীমিত সংখ্যকরা বাদে সবাই আওয়ামী লীগের স্থানীয় নেতা, বিশিষ্ট কর্মী। সরকার ক্ষমতাচ্যুত হওয়ার পর তারা পলাতক রয়েছেন। সরকার সমর্থক সংশ্লিষ্টরা তাদের সঙ্গে যোগাযোগ গড়ে তুলেছেন। এদের অধিকাংশই বৈষম্যবিরোধীদের সমর্থনে নির্বাচনে অংশ নেওয়া ও জয়লাভের ব্যাপারেও গভীরভাবে আশাবাদী।
স্থানীয় সরকারের অপর সংস্থা উপজেলা পরিষদ ও সিটি করপোরেশন এবং পৌরসভা ও মিউনিসিপ্যাল করপোরেশন গুরুত্বপূর্ণ স্থানীয় সরকার সংস্থা। ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনের পরপরই উপজেলা পরিষদ নির্বাচনের পরিকল্পনা করা হচ্ছে বলে আভাস পাওয়া যায়। বৈষম্যবিরোধী শিক্ষার্থী-জনতার আন্দোলন এই নির্বাচনে প্রার্থী দেবে প্রতিটি উপজেলায়। অধিকাংশ ক্ষেত্রে বর্তমান চেয়ারম্যানরাই তাদের প্রার্থী হতে পারেন। পৌরসভার ক্ষেত্রেও বৈষম্যবিরোধীরা প্রার্থী দেবেন। তারা রাজনৈতিক দল গঠনপ্রক্রিয়া সম্পন্ন করবেন স্থানীয় সরকার সংস্থাসমূহের নির্বাচনের আগেই।
আওয়ামী লীগকে তারা বড় ধরনের প্রতিদ্বন্দ্বী ভাবছেন না। যোগ্য, জনপ্রিয় প্রার্থীদের অনেকেই আওয়ামী লীগ থেকে নির্বাচন করতে আগ্রহী নন। ব্যক্তিগত নিরাপত্তার স্বার্থে তারা হামলা, মামলা-নির্যাতনের শিকার হতে চান না। তারা পদ-পদবিও ফিরে পেতে আগ্রহী। বৈষম্যবিরোধীদের সঙ্গে তাদের ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক, যোগাযোগ রয়েছে। অপরদিকে বিএনপি স্থানীয় সরকার সংস্থাসমূহ দখলে নিতে চাইলেও অনেক জায়গায়ই তাদের জনপ্রিয় ও যোগ্য প্রার্থীর অভাব রয়েছে। সরকার পরিবর্তনের পর স্থানীয় পর্যায়ে ব্যাপক দলবাজি, চাঁদাবাজি দলের সম্ভাব্য প্রার্থীদের ভাবমূর্তি ক্ষুণ্ন করছে।
                           
                           
                            
                       
     
  
 


 ঠিকানা রিপোর্ট
 ঠিকানা রিপোর্ট  
                                
 
                                                     
                                                 
                                                     
                                                 
                                                     
                                                 
                                                     
                                                 
                                                     
                                                 
                                                     
                                                
