নোবেল বিজয়ী ড. মুহাম্মদ ইউনূসের বিরুদ্ধে শ্রম আইন লঙ্ঘনের মামলায় অভিযোগ গঠন বাতিল প্রশ্নে রুল শুনানিতে তার আইনজীবী বলেছেন, আপনার আদালতে এমন একজন ব্যক্তির মামলার শুনানি হচ্ছে যিনি বর্তমান বিশ্বের সবচেয়ে সম্মানিত ব্যক্তি নোবেল বিজয়ী ড. মুহাম্মদ ইউনূস। সরকারও মনে করে তিনি সরকার ও বিশ্বব্যাংকের সিদ্ধান্ত পাল্টে দিতে পারেন।
আইনজীবী ব্যারিস্টার আবদুল্লাহ আল মামুন আরও বলেন, ড. ইউনূস জাতিসংঘের মহাসচিবের উপদেষ্টা হওয়ায় জাতিসংঘও এ মামলার বিচার পর্যবেক্ষণ করছে।
আজ ৭ আগস্ট (সোমবার) বিচারপতি এস এম কুদ্দুস জামান ও বিচারপতি সাহেদ নুর উদ্দিনের হাইকোর্ট বেঞ্চে রুল শুনানিতে তিনি এসব কথা বলেন।
আদালতে ব্যারিস্টার আবদুল্লাহ আল মামুন বলেন, আগের এক আদেশে মতামতে একটি ভুল ছিল। তাই আমরা আপনার আদালতে ন্যায়বিচার না পাওয়ার শঙ্কার কথা বলেছিলাম। কিন্ত আপিল বিভাগ বলেছেন, আপনার আদালত আগে যেহেতু এই মামলা শুনেছেন এ কারণে আপনার আদালতে পাঠিয়েছেন।
তখন হাইকোর্ট বলেন, আপনি তো আমাদের বেঞ্চে না পাঠানোর জন্য রিভিউ করতে পারতেন। আপিল বিভাগ না পাঠালে আমরা শুনানির দিন নির্ধারণ করতাম না।
এর আগে রোববার ড. মুহাম্মদ ইউনূসের বিরুদ্ধে শ্রম আইন লঙ্ঘনের মামলায় অভিযোগ গঠন কেন বাতিল করা হবে না এই মর্মে জারি করা রুল শুনানির জন্য আজ (সোমবার) দিন ধার্য করেন হাইকোর্ট। বিচারপতি এস এম কুদ্দুস জামানের নেতৃত্বাধীন হাইকোর্ট বেঞ্চ রুল শুনানির জন্য এ দিন ধার্য করেন।
গত ৩ আগস্ট ড. মুহাম্মদ ইউনূসের বিরুদ্ধে শ্রম আইন লঙ্ঘনের মামলায় অভিযোগ গঠন কেন বাতিল করা হবে না এই মর্মে জারি করা রুল শুনানির জন্য বেঞ্চ পরিবর্তন করে নতুন বেঞ্চে পাঠান আপিল বিভাগ।
ইউনূসের মামলা বাতিলে রাষ্ট্রপক্ষের আবেদন নিষ্পত্তি করে প্রধান বিচারপতি হাসান ফয়েজ সিদ্দিকীর নেতৃত্বে ৬ বিচারপতির আপিল বেঞ্চ এ আদেশ দেন। বিচারপতি এস এম কুদ্দুস জামান ও বিচারপতি শাহেদ নূর উদ্দিনের হাইকোর্ট বেঞ্চে দুই সপ্তাহের মধ্যে রুল নিষ্পত্তি করতে বলা হয়।
আদালতে ইউনূসের পক্ষে শুনানি করেন ব্যারিস্টার আবদুল্লাহ আল মামুন। রাষ্ট্রপক্ষে অ্যাটর্নি জেনারেল এ এম আমিন উদ্দিন শুনানি করেন।
গত ২৩ জুলাই ড. মুহাম্মদ ইউনূসের বিরুদ্ধে শ্রম আইন লঙ্ঘনের মামলায় অভিযোগ গঠন কেন বাতিল করা হবে না তা জানতে চেয়ে রুল জারি করেন হাইকোর্ট। বিচারপতি মো. রুহুল কুদ্দুস ও বিচারপতি আশিষ রঞ্জন দাশের হাইকোর্ট বেঞ্চ এ রুল জারি করেন। পরে এই রুল বাতিল চেয়ে আপিল বিভাগে আবেদন করে রাষ্ট্র
গত ২১ জুন শ্রম আইন লঙ্ঘনের মামলায় অভিযোগ গঠনের বৈধতা চ্যালেঞ্জ করে হাইকোর্টে আবেদন করেন নোবেল বিজয়ী ড. মুহাম্মদ ইউনূস। আবেদনে অভিযোগ গঠনের আদেশ বাতিল চাওয়া হয়।
এর আগে ৬ জুন ড. মুহাম্মদ ইউনূসসহ চারজনের বিরুদ্ধে অভিযোগ গঠন করেন আদালত। অভিযোগ গঠনের মাধ্যমে এই মামলায় ড. ইউনূসসহ চারজনের বিরুদ্ধে আনুষ্ঠানিক বিচার শুরু হয়। অন্য তিনজন হলেন, মো. আশরাফুল হাসান, পরিচালক নুরজাহান বেগম ও মো. শাহজাহান। ঢাকার শ্রম আদালতের বিচারক বেগম শেখ মেরিনা সুলতানা অভিযোগ গঠন করে আদেশ দেন।
গত ৮ মে শ্রম আইন লঙ্ঘনের মামলা বাতিলের আবেদন খারিজের বিরুদ্ধে গ্রামীণ টেলিকমের চেয়ারম্যান নোবেল বিজয়ী ড. মুহাম্মদ ইউনূসের লিভ টু আপিল খারিজ করে দেন আপিল বিভাগ।
গত বছরের ১৭ আগস্ট বিচারপতি এস এম কুদ্দুস জামান ও বিচারপতি ফাহমিদা কাদেরের হাইকোর্ট বেঞ্চ মামলা বাতিলে ইউনূসের আবেদনে জারি করা রুল খারিজ করে রায় দেন। এরপর ড. মুহাম্মদ ইউনূস আপিল বিভাগে আবেদন করেন।
২০২১ সালের ৯ সেপ্টেম্বর ঢাকার তৃতীয় শ্রম আদালতে কলকারখানা ও প্রতিষ্ঠান অধিদপ্তরের শ্রম পরিদর্শক আরিফুজ্জামান বাদী হয়ে ড. ইউনূসসহ চার জনের বিরুদ্ধে এ মামলা করেন। ইউনূস ছাড়াও গ্রামীণ টেলিকমের এমডি মো. আশরাফুল হাসান, পরিচালক নুরজাহান বেগম ও মো. শাহজাহানকে মামলায় বিবাদী করা হয়।
মামলায় শ্রমিক কল্যাণ ফাউন্ডেশনে নির্দিষ্ট লভ্যাংশ জমা না দেওয়া, শ্রমিকদের চাকরি স্থায়ী না করা, গণছুটি নগদায়ন না করায় শ্রম আইনের ৪-এর ৭, ৮, ১১৭ ও ২৩৪ ধারায় অভিযোগ আনা হয়। পরে ওই মামলার বৈধতা চ্যালেঞ্জ করে হাইকোর্টে আবেদন করা হয়।
একই বছরের ১২ ডিসেম্বর হাইকোর্ট মামলার কার্যক্রম স্থগিত করে রুল দিয়েছিলেন। এরপর রাষ্ট্রপক্ষ আপিল বিভাগে আবেদন করে। ওই আবেদনের শুনানি নিয়ে মামলা বাতিলে জারি করা রুল দুই মাসের মধ্যে নিষ্পত্তির নির্দেশ দেওয়া হয়।
ঠিকানা/এসআর