টিকটকের বিভিন্ন ভিডিও লাইভস্ট্রিম যৌন আচরণকে উৎসাহিত করার পাশাপাশি শিশু নিপীড়ন করে চলেছে, আর এটি দীর্ঘদিন ধরেই টিকটকের জানা বলে সম্প্রতি দাবি উঠেছে যুক্তরাষ্ট্রের ইউটাহ অঙ্গরাজ্যের একটি মামলায়। এরপরও চোখ বন্ধ করে রেখেছে কোম্পানিটি। কারণ এর মাধ্যমে ‘অনেক বেশি লাভবান’ হয়েছে টিকটক— এমনই দাবি রয়েছে মামলায়। শুক্রবার প্রকাশ্যে এ অভিযোগ আসার খবর জানিয়েছে রয়টার্স।
যুক্তরাষ্ট্রে পাশ হওয়া নতুন আইন অনুসারে প্রেসিডেন্ট জো বাইডেনের প্রশাসনের শেষ দিনটিতে অর্থাৎ যুক্তরাষ্ট্রে ১৯ জানুয়ারী বিভিন্ন অ্যাপ স্টোরে টিকটক নিষিদ্ধ হয়ে যাবে, যদি না এর মালিক কোম্পানি চীনা মালিকানাধীন বাইটড্যান্স অ্যাপটির যুক্তরাষ্ট্র অংশের ব্যবসা অন্য কোথাও বিক্রি করে।
যুক্তরাষ্ট্রের পরবর্তী প্রেসিডেন্ট ডনাল্ড ট্রাম্প দেশটির সুপ্রিম কোর্টের কাছে ওই নিষেধাজ্ঞা স্থগিত রাখার আহ্বান জানিয়েছেন। টিকটক বরাবরই বলে এসেছে, তারা সমসময়ই নিরাপদ ভিডিও লাইভ-স্ট্রিমিংকে অগ্রাধিকার দেয়। টিকটকের বিরুদ্ধে শিশু নিপীড়নের অভিযোগ এনে ইউটাহ অঙ্গরাজ্যের এই মামলাটি গত জুনে দায়ের করেছিল রাজ্যটির ভোক্তা সুরক্ষা বিভাগ।
ওই সময় ইউটাহের অ্যাটর্নি জেনারেল শন রেয়েস বলেছিলেন, রিয়েল টাইমে প্রাপ্তবয়স্ক নিপীড়নকারীদের সঙ্গে ভুক্তভোগীদের যোগাযোগ করিয়ে দিয়ে এক ধরনের ‘ভার্চুয়াল স্ট্রিপ ক্লাব’ তৈরি করেছে টিকটকের লাইভ স্ট্রিমিং ফিচারটি। টিকটকের অভ্যন্তরীণ এক কর্মীর ‘কমিউনিকেশন অ্যান্ড কমপ্লায়েন্স’ রিপোর্টের বরাত দিয়ে শুক্রবারের অভিযোগপত্রে বলা হয়, ফিচারটির অভ্যন্তরীণ পর্যালোচনার মাধ্যমে লাইভের হুমকি সম্পর্কে জানতে পেরেছে টিকটক।
অভিযোগপত্রে উঠে এসেছে, ২০২২ সালের গোড়ার দিকে ‘প্রজেক্ট মেরামেক’ নামে পরিচিত এক তদন্তে উন্মোচিত হয়েছিল কীভাবে ১৩ থেকে ১৫ বছর বয়সী লাখ লাখ টিনএজার লাইভের ন্যূনতম বয়সের বিধিনিষেধ এড়িয়ে গেছে টিকটকে। ভার্চুয়াল উপহারের বিনিময়ে অনেক শিশুকে প্রাপ্তবয়স্করা কখনো কখনো নগ্নতার সঙ্গে জড়িয়ে যৌন কর্মকাণ্ডেও ‘গ্রুমিং’ করত।
অভিযোগে উল্লেখ রয়েছে, ২০২১ সালে শুরু হওয়া ‘প্রজেক্ট জুপিটার’-এ দেখা গেছে, টিকটকের লাইভকে অর্থ পাচার, মাদক বিক্রি ও জঙ্গি সংগঠন ইসলামিক স্টেট’সহ সন্ত্রাসবাদে অর্থায়নের জন্য ব্যবহার করত অপরাধীরা। গত ১৯ ডিসেম্বর আগে এ মামলার বেশিরভাগ তথ্য প্রকাশের নির্দেশ দিয়েছেন ইউটাহ রাজ্যের বিচারক কোরাল সানচেজ।
শুক্রবার টিকটকের এক মুখপাত্র বলেছেন, “কমিউনিটি বা সম্প্রদায়ের সুরক্ষা ও ভাল বিষয়গুলোকে সমর্থন করার জন্য টিকটকের স্বেচ্ছায় নেওয়া বিভিন্ন সক্রিয় পদক্ষেপকে উপেক্ষা করা হয়েছে এই মামলায়।”
“অভিযোগপত্রটি বিভ্রান্তিকর উদ্ধৃতি ও পুরানো বিভিন্ন নথি বাছাই করেছে এবং সেগুলােকে প্রসঙ্গের বাইরে নিয়ে গিয়ে উপস্থাপন করেছে, যেটি আমাদের কমিউনিটির সুরক্ষার প্রতি আমাদের প্রতিশ্রুতিকেও বিকৃত করেছে।”
অক্টোবরে যুক্তরাষ্ট্রের ১৩টি অঙ্গরাজ্য ও ওয়াশিংটনে দেশটির বড় দুই রাজনৈতিক দল মিলে টিকটকের বিরুদ্ধে শিশু নিপীড়ন ও অ্যাপে আসক্ত করার অভিযোগে আলাদাভাবে মামলাটি করে।
আগামী ১০ জানুয়ারি টিকটকের বিরুদ্ধে নিষেধাজ্ঞা স্থগিত রাখা হবে কি না সেই বিষয়ে শুনানি হবে সুপ্রিম কোর্টে। মামলাটির দ্রুত নিষ্পত্তি হবে বলে আশা করা হচ্ছে।
ঠিকানা/এসআর