Thikana News
০৫ ফেব্রুয়ারী ২০২৫
  1. ই-পেপার
  2. চলতি সংখ্যা
  3. বিশেষ সংখ্যা
  4. প্রধান সংবাদ
  5. আমেরিকার অন্দরে
  6. বিশ্বচরাচর
আমেরিকা বুধবার, ০৫ ফেব্রুয়ারী ২০২৫

শাশ্বত নারী

শাশ্বত নারী
নারী আজ স্বয়ংসিদ্ধা। তারা এখন কারও ওপর নির্ভরশীল নয়। উল্টো তাদের ওপরই দাঁড়িয়ে আছে পরিবার। আবার কখনো তাদের ওপরই নির্ভর করছে কোনো দেশের ভাগ্য বা কোম্পানির ভবিষ্যৎ। নারীর পরিচয় তুমি নারী, তুমি মমতার ভান্ডারী, তুমি জননী, তুমি নারী। নারীর শাশ্বত এই রূপ আমরা আজীবন ধরেই দেখেছি। নারীও যে রুদ্ররূপ ধারণ করে অন্যায়ের প্রতিবাদ করতে জানে, নিজের দক্ষতা ও যোগ্যতা দিয়ে সমাজে সম্মানজনক অবস্থানে জায়গা করে নিতে পারে, তা এখন দেখছে বিশ্ববাসী।
প্রত্যেক মানুষের সফলতার পেছনেই রয়েছে একজন নারীর আত্মত্যাগের কাহিনি। যারা সব সময় থেকে যান পর্দার অন্তরালে। তাই নারীর প্রতি সহানুভূতি নয়, সম্মান প্রদর্শন করুন। যে জাতি নারীদের সম্মান করতে পারে না, সে জাতির উন্নতি অসম্ভব। শুধু আন্তর্জাতিক নারী দিবস উপলক্ষে এক দিন নয়, বছরের ৩৬৫ দিনই নারীর প্রতি সম্মান প্রদর্শন করা উচিত।
নারী না থাকলে রাখী হতো না; নারী না থাকলে পৃথিবীটা এত সুন্দর হতো না; নারী না থাকলে আমাদের জন্মটাই হতো না; হে নারী, তোমরা না থাকলে সৃষ্টিটাই সম্ভব হতো না। তাই নারীদের সম্মান জানাতে, তাদের যোগ্যতা ও মেধাকে কুর্নিশ জানাতে আমরা নারীত্ববাদ নিয়ে কিছু আলোচনা করতে ইচ্ছে পোষণ করছি।
এভাবে বসতে নেই, ওভাবে চলতে নেই, এটা বলতে নেই, ওটা করতে নেই! ব্যস, অনেক হয়েছে। এভাবে আর নারীদের দমিয়ে রাখা যাবে না। দেয়ালে পিঠ ঠেকে গেলে তো বিড়ালও বাঘ হয়ে যায় আর আমরা তো মানুষ। যুগ যুগ ধরে নারী শোষিত হয়ে অনেক সহ্য করে এবার তারাও ঘুরে দাঁড়িয়ে যাচ্ছে। হে নারী, তোমার ডানায় আগুন, দীর্ঘ হোক তোমার উড্ডয়নতা। এই পৃথিবী সুষ্ঠুভাবে নারীরাই চালাতে পারে। যারা নারীদের পায়ে বেড়ি পরায়, পায়ের তলা থেঁতলে দেয়, তারা কেউ পুরুষ নয়। তারা মানুষও নয়। পুরুষেরা খালি মেয়েদের দোষ দেয়। অথচ বিপদে পড়লে কখনো মা আবার কখনো স্ত্রীর আঁচলের তলায় লুকিয়ে পড়ে।
নারীদের মধ্যে আছে অনন্ত শক্তির আধার। নারীবাদী হওয়া মানে মেয়েদের শক্তি হরণ করা, তারা এমনিতেই শক্তিশালী। যে লক্ষ্মী আর সরস্বতীর মতো শান্ত সে চণ্ডীর মতো আগুন হয়েও জ্বলতে পারে। একটা অসুরকে বধ করতে গিয়ে কিন্তু নাকানি-চোবানি খাচ্ছিলেন দেবতারা। সেই তো একটা মেয়ে এসেই বাঁচিয়ে দিয়েছিলেন। তেমনি আজকের দুনিয়ায় এমন কোনো কাজ নেই, যা মেয়েরা পারে না। মেয়েরা যখন শক্তিরূপা হয়ে ওঠে, তখন পৃথিবীতে অনেক বড় পরিবর্তন আসে। বাধা এলে তার মুখোমুখি দাঁড়াব।
ছেলের জন্ম দিতে না পারলে নাকি মেয়েদের দোষ হয়। তা-ই যদি হয়, তাহলে সেই মেরুদণ্ডহীন সমাজে আমি চাই না কোনো প্রাণের জন্ম দিতে। কারণ আমার কাছে ছেলেমেয়ে দুজনই সমান। আঠারোয় পা দিলেই বিয়ের চিন্তা না করে বাবা-মায়ের উচিত মেয়েদের যোগ্য করে তোলা। তোমার শরীর নয়, যেদিন সবাই তোমার মন বুঝবে, সেদিনই হবে যথার্থ নারী দিবস। সেদিনই বিকশিত হবে নারীর মন। নারী দিবস এক দিনে পালন করা যায় না। সেটা সম্ভবও নয়, কারণ সমুদ্রের জল একটা গ্লাসে রাখা যায় না। আগে নিজের বাড়িতে নিজের মা ও বোনকে একজন মানুষ হওয়ার সম্মান দিন। তারপর বাইরে বেরিয়ে বাকি মেয়েদের দিকে তাকাবেন। মেয়েদের শুধু অন্যের ভালো স্ত্রী হয়ে ওঠা শেখালে চলবে না, তাদেরকে সবার আগে যোগ্য করে তুলতে হবে।
আজকাল কারও পক্ষে বলা সম্ভব নয় যে নারীরা পুরুষদের থেকে পিছিয়ে আছে, সব ক্ষেত্রে তারা পুরুষদের টক্কর দেওয়ার ক্ষমতা রাখে। তাই আপামর নারী জাতিকে আমি জানাতে চাই, নিজেকে কখনো দুর্বল ভেবো না, কারণ তুমি নারীশক্তির অংশ। তোমরা কন্যাসন্তান হিসেবে মিষ্টি, তোমরা বোন হিসেবে যত্নবান, তোমরা প্রেমিকা হিসেবে সুন্দরী, তোমরা স্ত্রী হিসেবে প্রিয়তমা, তোমরা মা হিসেবে পরম মমতাময়ী, তোমরা শক্তির আধার, তোমরা নারী! জীবন যদি রংধনু হয়, তবে তুমি তার রঙের বাহার, জীবনের যদি নাম হয় আঁধার, তুমি হয়ে ওঠো তার আশার আলো।
জগতের যেখানেই যে জাতি নারীর অসম্মান করবে, সেই জাতিরই পতন নিশ্চিত। নারীদের সম্মান করো। সকল কথা শোনার অভিলাষী হও। সবকিছু বুঝতে চাওয়ার ধৈর্য থাকতে হবে। পুরুষের অসময়ে তার শক্তি হয়ে ওঠা। সব কষ্ট মুখ বুজে সহ্য করা। এটা আপাতভাবে ছোট কিন্তু জরুরি গুণগুলোই বাড়িয়ে দেয় নারীর সৌন্দর্য। তারা চায় মুক্ত আকাশ, তারা চায় উড়তে। ডানার দাবি তারা জানায় না কখনো, কারণ ইচ্ছেশক্তি তাদের রক্তে। আমার মা, তিনি আমার বাবাকে খুব ভালোবাসেন। আমাদের যত্ন নেন। সংসার তাঁকে ছাড়া অচল হয়ে পড়ে। তিনিই আমার দেখা সবচেয়ে সবল ও সফল নারী। মায়ের চাওয়া ও চেষ্টা আমাদের সব স্বপ্ন সফল হোক, উচ্চাশা হোক পূরণ, আমরা হয়ে উঠি পাহাড়সম উঁচু।
নারীদের সম্মান করতে শিখুন। কারণ তাদের ছাড়া আমাদের জীবন অসম্ভব হয়ে পড়ত ও পড়বে। সারা পৃথিবীর মনের কথা এটা, সবাই তোমায় জানাতে চায় যে তুমি ছাড়া আমরা অস্তিত্বহীন। সব সফল ও স্বাধীন মহিলারা অতীতে একটি বাচ্চামেয়ে ছিল, যে বারবার পড়ে গিয়ে উঠে দাঁড়িয়েছে এবং বুঝতে শিখেছে যে কারও ওপর নির্ভর করে বেঁচে থাকার নাম জীবন নয়। তোমরা নারী, যেকোনো কাজ তোমরাও করতে পারো! নারী শব্দটাই তো শক্তির সঙ্গে জড়িত। তাই আলাদা করে নিজেকে শক্তিশালী প্রমাণ করার দরকার নেই।
নারী কখনো প্রেয়সী আবার কখনো চামুণ্ডা কালীও হয়ে উঠতে পারে। তাদের অনেক রূপ। সময় বিশেষে তারাই হয়ে উঠতে পারে দশভুজা। তারাই একমাত্র সক্ষম জাতি, যারা প্রাণের সৃষ্টি করতে পারে। এর চেয়ে গর্বের আর কী আছে! হে নারী, তোমার মতো নারী খুঁজে পাওয়া খুব মুশকিল। তুমি অনন্যা, তোমার জন্য রইল অনেক অনেক শুভেচ্ছা ও অভিনন্দন। তুমি দারুণ, তুমি আলাদা, তুমি সুন্দর আর তাই তো তুমি নারী। তুমি নিজেও জানো না, তোমার মধ্যে কতটা ক্ষমতা লুকিয়ে আছে। সবাইকে নিজের আলোয় আলোকিত করেছ তুমি। নিজেকে এতটাই যোগ্য করে তোলো, যেন তোমাকে ভিড় অনুসরণ করতে না হয়, উল্টো ভিড় তোমায় অনুসরণ করুক।
তোমার এতটাই ক্ষমতা আছে যে একবার হাসলেই এই পৃথিবী সুন্দর হয়ে যায়। তুমি আগুন দিয়ে তৈরি অগ্নিকন্যা। রক্ষা করো সবাইকে, ভালোবাসায় ঘিরে রাখো সবাইকে। সব সময় আনন্দে থাকো, কখনো কোনো অবস্থাতেই ভেঙে পড়ো না। এই পৃথিবীর সবচেয়ে সুন্দর ফুল আর সবচেয়ে বর্ণময় কবিতার চেয়েও আকর্ষণীয় তুমি। এই বিশ্বে যা কিছু সেরা জিনিস আছে, সব যেন তুমি পাও। এই কামনাই করি।
নারী তুমি আমার ক্ষমতার উৎস, আমার প্রেরণা, তুমি আমার ভালোবাসার অনন্ত নদী। একজন আদর্শ নারী হয়ে ওঠো। হয়ে ওঠো সবার অনুপ্রেরণা। নারীরা সব সময়ই কোমল হৃদয়ের হয়। তারা ভালোবাসার মানুষকে সব সময় মনের গভীরে স্থান দেয়। নারী হলো পরিবারের স্তম্ভ, তার অনুপ্রেরণা ছাড়া কোনো কিছু সম্ভব নয়। তাই তাকে জানাই অনেক অনেক শুভেচ্ছা ও সম্মান। নিজেকে সব সময় স্পেশাল ভাববে, জানবে তুমি সবার চেয়ে এগিয়ে আছ। বিশ্বের নারী নেতারা নারীদের প্রতিনিধি নয়; তারা সবাই রুগ্্ণ পিতৃতন্ত্রের প্রিয় সেবাদাসী। জেনে রেখো, মেয়েমানুষ এরকম হয়, ওরকম হয়, সব রকম হয়, শুধু মনের মতো হয় না।
একটি একা মেয়ে ইচ্ছে করলেই বাজারে যেতে পারে, ডাক্তারের সঙ্গে দেখা করে ওষুধ আনতে পারে। কিন্তু এসব করণীয় কাজ সবার আন্তরিকতার সঙ্গে দেখা উচিত। কেননা ছেলেদের জন্য পৃথিবীতে সবচাইতে মূল্যবান হলো মেয়েদের হাসি। মেয়েরা গণেশের মতো, মা দুর্গার চারপাশে পাক দিয়ে যে জগৎ দেখে তাতেই তৃপ্তি আর পুরুষেরা কার্তিকের মতো সারা পৃথিবী ঘুরে আসে অথচ কী দেখে তা তারাই জানে না।
নিম্ন-মধ্যবিত্ত বা মধ্যবিত্ত পরিবার থেকে আসা মেয়েগুলো তাদের সব রকম কনজারভেটিভ ধারণা বুকে পুষে রেখে এমন ভাবভঙ্গি করে, যেন পৃথিবীর সব ছেলেই তাদের দিকে হামলে পড়ছে। সেসব মানসিকতা ও চিন্তা-চেতনা থেকে মেয়েদের বের করে আনতে হবে। ভদ্র ছেলেদের জন্য মেয়েদের মনে কখনো নাকি প্রেম জাগে না। যা জাগে সেটা নাকি হলো সহানুভূতি। মেয়েরা প্রথমবার যার প্রেমে পড়ে, তাকে ঘৃণা করলেও ভুলে যেতে পারে না। যেমনি পরিষ্কার জল কাগজে পড়লে দেখবেন শুকিয়ে যাওয়ার পরেও দাগ রেখে যায়।
যদিও নারীর বয়স তার দেহে, পুরুষের বয়স তার মনে। একজন পুরুষ যেমনটি সহসা একজন নারীকে গ্রহণ ও বর্জন করার মানসিকতা রাখে, নারী তা পারে না। বিজ্ঞান মতে, পুরুষ উত্তেজিত হয় দেহে আর নারী হয় মনে অর্থাৎ মন থেকে সায় না পাওয়া পর্যন্ত পুরুষের সঙ্গে মিলিত হয় না। পুরুষের বুদ্ধি খড়গের মতো; শাণ বেশি না দিলেও কেবল ভারেই অনেক কাজ করতে পারে। মেয়েদের বুদ্ধি কলম ও ছুরির মতো; যতই ধার দেওয়া হোক না কেন, তাতে বৃহৎ কাজ চলে না। ছেলেদের দৃষ্টিশক্তি বেশি, অন্যদিকে মেয়েদের কর্ণশক্তি বেশি।
স্ত্রীলোকদের ওপর যেমন কঠিন শাসন, পুরুষের ওপর তেমন কিছু নেই। কথায় কিছু হয় না, ভ্রষ্ট পুরুষের কোনো সামাজিক দণ্ড নেই। একজন স্ত্রী সতিত্ব সম্বন্ধে কোনো দোষ করলে সে আর মুখ দেখাতে পারে না। নিজেদের অধিকারের ব্যাপারে সামান্য সচেতন হলে মেয়েরা নিশ্চয়ই বুঝত, জগতে যত নির্যাতন আছে মেয়েদের বিরুদ্ধে সবচেয়ে বড় নির্যাতন হলো মেয়েদেরকে সুন্দরী হওয়ার জন্য লেলিয়ে দেওয়া।
সাধারণত স্ত্রীজাতি স্বামীকেই সবচাইতে বেশি ভালোবাসে। যে দুর্ভাগ্য পুরুষ নিজের স্ত্রীর ভালোবাসা হতে বঞ্চিত, সে যে কুশ্রী অথবা নির্ধন তা নয়; সে নিতান্ত নিরীহ। আবার যে পুরুষ অসংশয়ে অকুণ্ঠিতভাবে নিজেকে প্রচার করতে পারে, সেই সামর্থ্য পুরুষ সহজেই নারীর দৃষ্টি আকর্ষণ করতে পারে। তাই বলতে চাই, বঁধু তোমার গরবে গরবিনী নাম রূপসী তোমার রূপে হেন মনে হয় ও দুটি চরণ সদা নিয়ে রাখি বুকে।
কবি নজরুল ইসলামের লেখায় মিলেছে, ‘কোন কালে একা হয়নিকো জয়ী, পুরুষের তরবারী; প্রেরণা দিয়াছে, শক্তি দিয়াছে, বিজয়ালক্ষ্মী নারী।’ একজন মেয়ে একজন পুরুষকে বিয়ে করে পুরুষটির চরিত্রের জন্য, তারপর সারা জীবন চেষ্টা করে সেই চরিত্রটি বদলানোর। পৃথিবীর ইতিহাসে কোনো অন্ধকার সমাজে যখনই কোনো নারী পুরুষতন্ত্রের বিরুদ্ধে রুখে উঠেছে, নিজের স্বাধীনতার কথা বলেছে, ভাঙতে চেয়েছে পরাধীনতার শেকল, তখন তাকেই গালি দেওয়া হয়েছে পতিতা বলে।
হে নারী, কেউ যদি তোমাকে অপমান করতে আসে, তুমিও তাকে অপমান করে দাও। পুরুষদের দেখিয়ে দাও, অপমান শুধু তারা নয়, তোমরাও করতে পারো। বিধির বিধান, চরিত্রহীনা নারী চরিত্রহীন পুরুষের জন্য, আর চরিত্রহীন পুরুষ চরিত্রহীনা নারীর জন্য। সৎ চরিত্রবতী নারী সৎ চরিত্রবান পুরুষের জন্য, আর সৎ চরিত্রবান পুরুষ সৎ চরিত্রবতী নারীর জন্য।
জেনে রাখুন, শুধু পরনারীর সঙ্গ নিয়ে সারা জীবন কাটানো যায় না। পুরুষ শেষ অবধি চায় না মেয়ের মধ্যে পুরুষের অনুকরণ, যেমন মেয়ে চায় না মেয়েলি পুরুষ। একজন পুরুষ সর্বদা অর্থ উপার্জনের জন্য ব্যস্ত থাকেন আর একজন মহিলা তার সহযোগী হয়ে ব্যস্ত থাকেন। নারী দাসী বটে, কিন্তু সেই সঙ্গে নারী রানিও বটে। মেয়েদের চরিত্রের মাধুর্য পাওয়া যায় মায়াবী অবস্থায়। মা তো মা-ই হয়, সে তো সকল নারীর ঊর্ধ্বে। যে গর্ভ আমাকে ধারণ করেছে, সে গর্ভধারিণী মায়ের প্রতি কর্তব্য করা ও শ্রদ্ধা নিবেদন করা সকল পুরুষের দায়িত্ব ও কর্তব্য। পুরুষতান্ত্রিক সভ্যতার শ্রেষ্ঠ শহীদের নামই হলো আমার মা।

 

কমেন্ট বক্স