Thikana News
২৬ ডিসেম্বর ২০২৪
  1. ই-পেপার
  2. চলতি সংখ্যা
  3. বিশেষ সংখ্যা
  4. প্রধান সংবাদ
  5. আমেরিকার অন্দরে
  6. বিশ্বচরাচর
আমেরিকা বৃহস্পতিবার, ২৬ ডিসেম্বর ২০২৪
নিউইয়র্ক টাইমসের প্রতিবেদন

যেসব শিক্ষার্থী সরকারের পতন ঘটিয়েছে তারাই এখন গণতন্ত্র পুনর্নির্মাণ করছে

যেসব শিক্ষার্থী সরকারের পতন ঘটিয়েছে তারাই এখন গণতন্ত্র পুনর্নির্মাণ করছে সংগৃহীত ছবি
সম্প্রতি এক সন্ধ্যায়, একটি বাণিজ্যিক ভবনের প্রথম তলার নির্মাণাধীন একটি অফিসে (যার সিলিং থেকে তার ঝুলে ছিল এবং তখনও ফ্লোরের কাজ চলমান ছিল) বসে একদল বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষার্থী বাংলাদেশের জন্য একটি নতুন ভবিষ্যৎ নির্মাণের পরিকল্পনা করছিলেন। কয়েক মাস আগে, তারা হাজারো জনতার সঙ্গে একত্রে আন্দোলনের মাধ্যমে ১৫ বছরের কর্তৃত্ববাদ, বর্বর ও দুর্নীতিগ্রস্থ শেখ হাসিনাকে ক্ষমতা থেকে অপসারণ করেছিলেন।

যত জটিল বা কঠিন পরিস্থিতি হোক না কেন এই শিক্ষার্থীরা এখন তাদের এই সুযোগ কাজে লাগিয়ে বাংলাদেশকে একটি দৃঢ় গণতান্ত্রিক দেশ হিসেবে পুনর্গঠনের বিষয়ে সংকল্পবদ্ধ। তারা এমন একটি ব্যবস্থা কল্পনা করে, যেখানে থাকবে অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচন, সামাজিক ন্যায়বিচার এবং স্বেচ্ছাচারের বিরুদ্ধে শক্ত প্রতিরোধ যা কোনো নেতা অপসারণ করতে পারবে না।

“আমাদের রাজনৈতিক ক্ষমতা এখন খুবই নমনীয় অবস্থায় রয়েছে,” বলছিলেন আরিফ সোহেল নামক ২৬ বছর বয়সী একজন ছাত্র সংগঠক। তিনি আশা প্রকাশ করেন, শিক্ষার্থীদের একত্রিত করে এবং রাজনৈতিক দলগুলোর সমর্থন অর্জনের মাধ্যমে তারা একটি শক্ত বার্তা দিতে পারবেন: “আমরা স্থিতিশীল এবং অগ্রসরমান একটি দেশ চাই ।”

বাংলাদেশের জন্য কাজটি বেশ চ্যালেঞ্জিং- ৫৩ বছর আগে সহিংসতার মধ্য দিয়ে জন্ম নেওয়া এই জাতি শুরু থেকেই অস্থির। এখন দায়িত্ব অর্পিত হয়েছে একটি অনির্বাচিত ব্যক্তিবর্গের অভিনব সমন্বয়ে গঠিত অন্তর্বর্তী সরকারের উপর, যেখানে রয়েছেন উচ্চ অভিজ্ঞতা সম্পন্ন প্রসিদ্ধ পেশাজীবীগণ এবং শিক্ষাজীবনে সদ্য পা দেওয়া তরুণেরা, যারা ইতিহাসের সাথে সাথে নানামুখী প্রচণ্ড চাপ সামলে কাজ করে চলেছেন।

শেখ হাসিনার শাসনামলে নিপীড়িত একটি বড় রাজনৈতিক দল দাবি করছে যে, যেকোনো সংস্কার আনুষ্ঠানিকভাবে কার্যকর হওয়ার আগেই কয়েক মাসের মধ্যে নতুন নির্বাচন অনুষ্ঠিত হোক। তীব্র মূল্যস্ফীতির কারণে তেল ও চালের মতো নিত্যপ্রয়োজনীয় জিনিসপত্রের মূল্য বেড়ে যাওয়ায় বিধ্বস্ত জনগণের ভোগান্তি বেড়েই চলেছে। রাজধানী ঢাকায় প্রতিবাদের কারণে জনজীবনে বিঘ্ন ঘটছে। এরই মধ্যে বাংলাদেশে হিন্দু সংখ্যালঘুদের ওপর মুসলিমদের আক্রমণের খবরে প্রতিবেশী ভারতের সঙ্গে উত্তেজনা বেড়েছে। এবং পরিস্থিতিকে আরো জটিল করে তুলেছে। চরমপন্থী ইসলামের পুনরুত্থানেরও আশঙ্কা রয়েছে। পুরনো শাসনব্যবস্থা অপসারণ দ্রুত সম্ভব হলেও, নতুন একটি সুষ্ঠু ব্যবস্থার পুনর্গঠন সময়সাপেক্ষ—এবং শিক্ষার্থী ও বিশেষজ্ঞগণের এই অন্তর্বর্তীকালীন দল সম্ভবত সেই সময় পাবে না।

বৈষম্যবিরোধী শিক্ষার্থীবৃন্দ
অন্তর্বর্তী সরকারের নেতৃত্বদানকারী নোবেলজয়ী মুহাম্মদ ইউনূসের প্রধান ছাত্র উপদেষ্টা মাহফুজ আলম (২৬)। “এগিয়ে চলছে, এগিয়ে চলছে, এগিয়ে চলছে,” অন্তর্বর্তী সরকারের নেতৃত্বদানকারী নোবেল শান্তি পুরস্কারজয়ী মুহাম্মদ ইউনূসের প্রধান ছাত্র উপদেষ্টা মাহফুজ আলম সরকারের অগ্রগতি সম্পর্কে জানাতে এভাবে মত প্রকাশ করছিলেন।

আগস্টের ৫ তারিখে শেখ হাসিনার পতনের পর সরকার শুধুমাত্র আইন-শৃঙ্খলা নিয়ে ব্যস্ত ছিল, এমনটি উল্লেখ করে মাহফুজ আলম বলেন, “দুই মাস ধরে দেশ স্থবির ছিল, এখন দেশ এগিয়ে যাচ্ছে, এবং আমাদের অর্থনীতি সুস্থ হয়ে উঠছে।”

২৬ বছর বয়সী আলম, আন্দোলনের নেপথ্যের মূল কারিগর দাবি করে বলেন, “একটি ফ্যাসিবাদী শাসনের বিলুপ্তি এবং ‘নতুন রাজনৈতিক বন্দোবস্তের’ ধারণার কথাটি আমারই ছিল।”

বাংলাদেশের মতো একটি রক্ষণশীল মুসলিম সমাজে, শিক্ষার্থীরা বামপন্থী বিপ্লবী রাজনীতির ভাষাকে তাদের লক্ষ্য পূরণে ব্যবহার করছে। আলম বলেন, বর্তমানে, নতুন সরকার দৃশ্যমান এবং স্বল্পমেয়াদি সংস্কারের দিকে মনোযোগ দিচ্ছে, যেমন নির্বাচনী বিধি হালনাগাদ করা। তবে নারীদের সরকারে অংশগ্রহণ বৃদ্ধি এবং বাংলাদেশের তরুণ জনগোষ্ঠীর জন্য নতুন কর্মসংস্থান সৃষ্টি করার মতো বড় পরিবর্তন করতে সময়ের প্রয়োজন যেখানে দেশের ১৭ কোটির বেশি জনগোষ্ঠির প্রায় ৮০ শতাংশ মানুষ কর্মক্ষম বয়সের মধ্যে রয়েছেন।

এক সাক্ষাৎকারে, ৮৪ বছর বয়সী ক্ষুদ্রঋণের অগ্রদূত মুহাম্মদ ইউনূস বলেছেন যে তার সরকার জনগণের পূর্ণ সমর্থন পেয়েছে। সংস্কারের ক্ষেত্রে ধীরগতির জন্য সমালোচনা সম্মুখীন হলেও, তিনি বললেন, “তারা বলেনি, ‘আমরা আপনাকে চাই না।”

“এর জন্য কয়েক বছর সময় লাগতে পারে, তবে শিক্ষার্থীরা ‘বাংলাদেশ ২.০’ বাস্তবায়নে সফল হবে,” বলেন ইউনূস।

ইউনূস জাতীয় টেলিভিশনে নিয়োগ ঘোষণার  কয়েক মিনিট আগে ৭৮ বছর বয়সী বাংলাদেশি অর্থনীতিবিদ, সমাজকর্মী এবং নির্বাচন বিশেষজ্ঞ বদিউল আলম মজুমদার প্রথম জানতে পারেন যে তিনি তার দেশের নির্বাচনী ব্যবস্থার সংস্কারের তত্ত্বাবধান করবেন।

ইলিনয় স্টেট ইউনিভার্সিটির রাষ্ট্রবিজ্ঞানী আলী রীয়াজের ক্ষেত্রেও বিষয়টি একই রকম ছিল, যিনি সংবিধান সংস্কার কমিশনের দায়িত্বে রয়েছেন। গত সেপ্টেম্বরে ইউনূস ছয়টি প্যানেল গঠন করেন। রাজনৈতিক দল ব্যতীত একাডেমিয়া, সরকার এবং সিভিল সোসাইটি গ্রুপ এবং ছাত্র প্রতিনিধিবৃন্দের সমন্বয়ে এগুলো গঠন করা হয়েছে। কমিশনগুলোকে ডিসেম্বরের শেষ নাগাদ পুলিশ এবং বিচার বিভাগ সংস্কার, দুর্নীতি হ্রাস এবং জনপ্রশাসনের উন্নয়নের মতো বিষয়ে সুপারিশ প্রদান করতে হবে।
 
শেখ হাসিনার পতনের পর অন্তর্বর্তী সরকার প্রথমে আইনশৃঙ্খলা ফিরিয়ে আনতে উদ্যোগী হয়। অন্তর্বর্তীকালীন সরকার বড় বড় পরিকল্পনা উপস্থাপন করতে চায়, এরপর নির্বাচিত প্রতিনিধিগণ বিস্তারিত সিদ্ধান্ত নিবে। জনসাধারণ এবং সম্ভাব্য পরবর্তী সরকার পরিচালনাকারী রাজনীতিবিদগণের মাধ্যমে বড় বড় সংস্কারগুলো কার্যকর হবে বলে সরকার আশা করছে।

মজুমদার কমিশনে এমন কিছু পদক্ষেপ বিবেচনা করছে যা বাংলাদেশি প্রবাসীদের ভোটাধিকার নিশ্চিত করবে, নারী ভোটারদের অংশগ্রহণ বাড়াবে এবং ভোটার তালিকা হালনাগাদ করবে।
 
বাংলাদেশিরা তাদের মতামত দিতে দ্বিধা করেনি, শত শত ইমেইল লিখেছে, যেখানে বলা হয়েছে যে যেকোনো প্রার্থীকে নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করার জন্য নির্দিষ্ট শিক্ষাগত যোগ্যতা পূরণ করতে হবে।

“তারা মনে করেন, এতে তারা কোনো সংগঠন বা অফিস চালানোর জন্য প্রয়োজনীয় বিষয়গুলো ভালোভাবে বুঝতে পারবেন,” বলেন মজুমদার। তিনি আরও বলেন, “কিন্তু আমি সবাইকে বলে চলেছি, সবচেয়ে দুর্নীতিপরায়ণ এবং খারাপ লোকগুলো খুব উচ্চশিক্ষিত।”

শহরের অন্য প্রান্তে, কয়েক দশক ধরে অর্থের অবৈধ প্রবাহ পর্যবেক্ষণ করা ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশের দীর্ঘদিনের প্রধান ইফতেখার জামান বিদ্যমান দুর্নীতি দমন কমিশনকে শক্তিশালী করার কাজ করছেন।

“যা প্রয়োজন তা হলো সঠিক জায়গায় সঠিক মানুষের স্থান দেওয়া, খারাপ লোকদের প্রতিষ্ঠান থেকে অপসারণ এবং একটি মালিকানার অনুভূতি তৈরি করা,” জামান বললেন। তবে তিনি এটিকে “একটি বিশাল কাজ” বলে বর্ণনা করেছেন।

ইলিনয় স্টেটের অধ্যাপক আলী রীয়াজ বলেন, গ্রীষ্মে ছাত্র বিক্ষোভে শেখ হাসিনার দমন অভিযানে শত শত জীবনহানি ঘটার পর তাঁর এই দায়িত্বকে তিনি “নৈতিক দায়িত্ব” বলে মনে করেন।

ফাঁকা সংসদ ভবনের একটি অফিসে কর্মরত আলী রীয়াজ বলেন, তার লক্ষ্য হলো বাংলাদেশের সংবিধানকে তার মূল ধারণাগুলোর উপর ভিত্তি করে পুনঃপ্রতিষ্ঠা করা, যা “সমতা, মর্যাদা এবং সামাজিক ন্যায়বিচারের” আদর্শ দ্বারা পরিচালিত।
 
অন্তর্বর্তীকালীন সরকারে তাঁর লক্ষ হচ্ছে সংবিধানকে তার মূল ধারণাগুলোর উপর ভিত্তি করে পুনঃপ্রতিষ্ঠা করা, যা “সমতা, মর্যাদা এবং সামাজিক ন্যায়বিচারের” আদর্শ দ্বারা পরিচালিত।
 
আলী রীয়াজ বলেন, সংবিধানে এক ডজনেরও বেশি সংশোধনী এটিকে প্রায় সম্পূর্ণরূপে স্বৈরাচারী ক্ষমতা বাড়ানোর একটি হাতিয়ারে পরিণত করেছে।

তিনি আলোচনা স্বাগত জানিয়েছেন যে সংবিধানটি পুনরায় লেখা উচিত নাকি সংশোধন করা উচিত। তবে যারা শেখ হাসিনার "অগণতান্ত্রিক স্বৈরাচারী শাসন"-এ অংশগ্রহণ করেছেন, সমর্থন করেছেন বা বৈধতা দিয়েছেন, তাদের আমন্ত্রণ জানানো হবে না বলে তিনি উল্লেখ করেছেন।

"দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পর যখন জার্মানি পুনর্নির্মিত হয়েছিল, তারা কি নাৎসিদের সঙ্গে কথা বলেছিল?" রীয়াজ প্রশ্ন করেন। "আমার মনে হয় না তারা তা করেছিল।"

চতুর্দিকে চাপ
বাংলাদেশি একজন আইনজীবী ও হিন্দু নেতা, গোবিন্দ চন্দ্র প্রামাণিক বাংলাদেশের অন্তর্বর্তী সরকার এবং ভারতের মধ্যে সম্পর্ক তিক্ত হওয়ায় এক অস্বস্তিকর অবস্থানে রয়েছেন।

শেখ হাসিনার ভারত পালানোর পর থেকে বাংলাদেশে ভারত-বিরোধী মনোভাব বৃদ্ধি পেতে শুরু করেছে, যে দেশটির প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি শেখ হাসিনার ঘনিষ্ঠ মিত্র।

গত সোমবার, অন্তর্বর্তী সরকার আনুষ্ঠানিকভাবে ভারতকে অনুরোধ জানিয়েছে বিচারের মুখোমুখী হওয়ার জন্য শেখ হাসিনাকে বাংলাদেশে প্রত্যর্পণ করার। ভারতের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের একজন মুখপাত্র বলেছেন, তারা অনুরোধ পেয়েছে তবে এই বিষয়ে “কোনো মন্তব্য নেই” বলে জানিয়েছেন।

একটি সাম্প্রতিক ইউটিউব ভিডিওতে শেখ হাসিনা অভিযোগ করেছেন যে ইউনূস বাংলাদেশি হিন্দুদের "গণহত্যার" সঙ্গে যুক্ত, যা ভারত সরকারের সমর্থক ডানপন্থী ভারতীয়দের কাছেও প্রতিধ্বনিত হয়।

প্রামাণিক এই ধরনের অভিযোগকে "রাজনৈতিক" বলে উড়িয়ে দিয়ে, উল্লেখ করেন যে শেখ হাসিনার পতনের পরে যেসব সহিংসতায় শত শত বাংলাদেশি নিহত হয়েছিল, তাতে হিন্দুদেরকে উদ্দেশ্যমূলকভাবে লক্ষ্যবস্তু করা হয়নি।

তিনি ইউনূস সরকারের বার্তার সঙ্গে ঘনিষ্ঠভাবে একমত এবং আশা প্রকাশ করেছেন যে বাংলাদেশের পুনর্গঠনের সময় জনসংখ্যার প্রায় ৯ শতাংশ হিন্দু জনগোষ্ঠী আলোচনার টেবিলে জায়গা পাবেন।
 
তবে দুই দেশের মধ্যে উত্তেজনা বৃদ্ধি পেয়েছে। উদাহরণস্বরূপ, গত মাসে বাংলাদেশের অন্তর্বর্তী সরকার একজন হিন্দু সন্ন্যাসীর বিরুদ্ধে জাতীয় পতাকার প্রতি অসম্মান দেখিয়েছেন বলে রাষ্ট্রদ্রোহের অভিযোগ তোলে। এ প্রসঙ্গে ভারতের বক্তব্য হচ্ছে হিন্দুদের সুরক্ষার জন্য বৈধ দাবি উত্থাপনকারী একজন ধর্মীয় নেতাকে বাংলাদেশ টার্গেট করেছে, যিনি।

ইউনূসের সঙ্গে এক সাক্ষাৎকারে তিনি বলেন, শেখ হাসিনা এবং তার সঙ্গে ভারতও বাংলাদেশের জন্য একক বৃহত্তম অস্থিতিশীলতার কারণ। তিনি বলেন, আপনারা তাকে রাখতে চাইলে, রাখুন। তবে আপনাকে নিশ্চিত করতে হবে যে তিনি আমাদের রাজনীতিতে হস্তক্ষেপ করবেন না।

উভয় দেশের সরকারি কর্মকর্তারা তখন থেকে উত্তেজনা প্রশমিত করার চেষ্টা করেছেন। এই মাসের শুরুর দিকে, ভারতের পররাষ্ট্র সচিব বিক্রম মিশ্রি ঢাকায় ইউনূসের সঙ্গে সাক্ষাৎ করেন। যদিও তিনি উল্লেখ করেছিলেন যে হিন্দু ও অন্যান্য সংখ্যালঘুদের উপর হামলার প্রতিবেদন নিয়ে ভারত উদ্বিগ্ন, তবে তিনি বলেন যে দুই দেশের সম্পর্ক শুধুমাত্র একটি রাজনৈতিক দলের মধ্যে সীমাবদ্ধ নয়, যার দ্বারা তিনি শেখ হাসিনার আওয়ামী লীগকে ইঙ্গিত করছিলেন।

বাংলাদেশের আরেকটি প্রধান রাজনৈতিক দল, বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল (বিএনপি), অন্তর্বর্তী সরকারের উপর আরেকটি বড় চাপ। এই দলটি সাবেক প্রধানমন্ত্রী খালেদা জিয়ার ছেলে এবং শেখ হাসিনার চিরপ্রতিদ্বন্দ্বী তারেক রহমান পরিচালনা করেন। বাংলাদেশের পুনর্গঠনের জন্য কাজ করা কমিশনগুলোর সঙ্গে কাজ করার সুযোগ না থাকায় তিনি ক্ষুব্ধ হয়েছেন।

বিএনপি বলছে যে ইউনূস নির্বাচনের রোডম্যাপ প্রদান করা বা সংস্কার বাস্তবায়নের বিষয়ে খুব ধীর। গত সপ্তাহে ইউনূস বলেছিলেন যে নির্বাচন ২০২৫ সালের শেষ থেকে ২০২৬ সালের মাঝামাঝি সময়ের মধ্যে অনুষ্ঠিত হতে পারে যা প্রস্তাবিত সংস্কারের মাত্রার উপর নির্ভর করবে।

এনিয়ে বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর এক সাক্ষাৎকারে বলেন, নির্বাচন যত দ্রুত সম্ভব অনুষ্ঠিত হওয়া উচিত, কারণ একটি অনির্বাচিত সরকার অনেক সমস্যার সম্মুখীন হবে।

তিনি ঢাকাসহ অন্যান্য শহরে বাড়তে থাকা সংঘর্ষ ও বিক্ষোভের দিকে ইঙ্গিত করছিলেন, যার মধ্যে রয়েছে অটোরিকশা চালকদের মজুরি নিয়ে আন্দোলন।

সেইসঙ্গে দুই অঙ্কের মুদ্রাস্ফীতি আরেকটি চাপ যোগ করেছে। সম্প্রতি সময়ের এক সকালে, ঢাকায় একটি সরকারি ট্রাকের সামনে প্রায় ১০০ জন নাগরিক সারিতে দাঁড়িয়েছিলেন, যা ভর্তুকিযুক্ত দামে তেল, চাল এবং শাকসবজি বিক্রি করছিল।

নাসিমা নামে একজন দর্জি বললেন, “আপনি এখানে যত খুশি তত নিতে পারবেন না,  তবে যদি আমাকে বাজার থেকে কিনতে হতো, তাহলে দ্বিগুণ দাম দিতে হতো।”

ব্যক্তির ভবিষ্যৎ
ঢাকার পরিত্যক্ত সংসদ ভবনের একটি কোণে, শেখ মুজিবুর রহমানের উপর একটি বিশাল গ্রন্থ ময়লার স্তূপে পড়ে ছিল, এর পৃষ্ঠাগুলো পানি লেগে জড়িয়ে গিয়েছিল। শেখ হাসিনার বাবা এবং বহুদিন ধরে বাংলাদেশের প্রতিষ্ঠাতা নেতা হিসেবে বিবেচিত শেখ মুজিবের জীবন নিয়ে রচিত শহরজুড়ে প্রায় ৩৫,০০০ বই আটকানো হয়েছে।

বিপ্লবের সময়, শিক্ষার্থীরা হাজার হাজার ভাস্কর্য ভেঙে ফেলেছিল বা বিকৃত করেছিল, যা শেখ হাসিনা তার বাবার নামে স্থাপন করেছিলেন। “শিক্ষার্থীরা বলেছে, তিনি দেবতা নন,” বলেন সংবিধান সংস্কার কমিশনের প্রধান রীয়াজ।

কিন্তু যে ক্রোধ একসময় অবিশ্বাস্য ভাঙ্গচুরের দৃশ্য তৈরি করেছিল, তা এখন শান্ত হয়ে গেছে। শিক্ষার্থীরা এখন আবার পড়াশোনা এবং ক্যারিয়ার নিয়ে ভাবতে শুরু করেছে।

অনেকেই, যেমন একটি কমিশনের একমাত্র মহিলা সদস্য নিশিতা জামান নিহা বিদেশে উচ্চ শিক্ষার জন্য সুযোগ পেলে সেখানে পড়াশোনা করতে চান। এমনকি ইউনূসের প্রধান ছাত্র উপদেষ্টা আলম বলেন, তিনি একদিন তাঁর আগ্রহের বিষয় ভাষা ও ইতিহাসে ফিরে যেতে চান। তবে এখন তারা রাজনীতিকে একটি ইতিবাচক শক্তিতে রূপান্তরিত করার উপর মনোযোগ দিয়েছে।

ইনডিপেনডেন্ট ইউনিভার্সিটি, বাংলাদেশ-এর একজন ছাত্র আসিফুল হক রবিন বললেন, “আমরা যা করতে চাই তা হল বাংলাদেশের জন্য একটি নতুন রাজনৈতিক প্ল্যাটফর্ম তৈরি করা। যদি আমাদের জন্য না হয়, তবে পরবর্তী প্রজন্মের জন্য।” ইত্তেফাকের সৌজন্যে।

ঠিকানা/এসআর

কমেন্ট বক্স