দুবাইয়ে আবারও সেই রূপকথা—শিরোপা জয়ের গল্প। অনূর্ধ্ব-১৯ এশিয়া কাপের ফাইনালে ভারতকে ৫৯ রানে হারিয়ে টানা দ্বিতীয়বার চ্যাম্পিয়ন হয়েছে বাংলাদেশের যুবারা। রোববার (৮ ডিসেম্বর) দুবাই আন্তর্জাতিক ক্রিকেট স্টেডিয়ামে আগে ব্যাটিংয়ের আমন্ত্রণ পেয়ে বেশ সুবিধা করতে পারেনি তারা। মোহাম্মদ শিহাব জেমস-রিজান হোসেনদের কার্যকর কয়েকটি ইনিংসের সৌজন্যে ৪৯.১ ওভারে সব কটি উইকেট হারিয়ে তোলে ১৯৮ রান।
১৯৯ রানের মাঝারি মানের লক্ষ্য তাড়ায় নেমে বাংলাদেশের পেস আক্রমণের তোপে পোড়ে ভারতের ব্যাটিং অর্ডার। ইকবাল হোসেন ইমন-আল ফাহাদদের দুর্দান্ত বোলিংয়ে ৩৫.২ ওভারে ১৩৯ রানে অল আউট হয়ে যায় তারা।
শুরু থেকেই নিয়মিত বিরতিতে উইকেট হারাতে থাকে ভারত। এক প্রান্ত আগলে লড়ে যান অধিনায়ক মোহামেদ আমান। কিন্তু সঙ্গ না পেয়ে শেষ পর্যন্ত আর পেরে উঠলেন না বাংলাদেশের যুবাদের বিপক্ষে। দ্বিতীয় ওভারে ওপেনার আয়ুশ মাত্রেকে (১) দারুণ এক বলে বোল্ড করেন ফাহাদ। টুর্নামেন্টের দ্বিতীয় সেরা (১২ উইকেট) উইকেটশিকারিও বাংলাদেশের এই পেসার।
৫ম ওভারে ছন্দে থাকা বৈভব সূর্যবংশীকে ফেরান মারুফ মৃধা। ৭ বলে ৯ রান আসে এই বিস্ময়বালকের ব্যাট থেকে। ১৩ বছর বয়সে আইপিএলে দল পেয়ে রীতিমতো হইচই ফেলে দিয়েছিলেন তিনি। যুব এশিয়া কাপেও আগের দুই ম্যাচে করেছিলেন ফিফটি।
তিন ও চার নম্বরে নেমে আন্দ্রে সিদ্ধার্থ-কেপি কার্তিকেয়া থিতু হয়েও ইনিংস বড় করতে ব্যর্থ হন। দলীয় ৪৪ রানে তৃতীয় উইকেট হারায় ভারত। ২০ রানে রিজানের শিকার হন সিদ্ধার্থ। চতুর্থ উইকেটে আমান ও কার্তিকেয়া দলের বিপর্যয়ে প্রতিরোধের চেষ্টা করেন। কিন্তু বোলিং আক্রমণে এসেই টানা দুই বলে দুই উইকেট নিয়ে ভারতকে উল্টো কঠিন চাপে ফেলে দেন ইমন। ৪৩ বলে কার্তিকেয়াকে ২১ রানে এবং নিখিল কুমারকে ফেরান রানের খাতা খোলার আগেই।
নিজের পরের ওভারে হরবংশ পাঙ্গালিয়াকে ৬ রানে ইমন আউট করলে ৮১ রানে ৬ উইকেট হারায় ভারত। তারপর কিরন চরমালে ১ রানে আউট হন ফাহাদের বলে। ৩২তম ওভারে ভারতীয় অধিনায়ক আমানের প্রতিরোধ থামিয়ে দেন বাংলাদেশ অধিনায়ক আজিজুল হাকিম তামিম। তার ঘূর্ণি জাদুতে ৬৫ বলে ২৬ রানে বোল্ড হন আমান। শেষ দিকে হার্দিক রাজ করেছেন ২১ বলে ২৪ রান।
বাংলাদেশের হয়ে ইমন ৩টি উইকেট নিয়েছেন। টুর্নামেন্টের সর্বোচ্চ উইকেটশিকারিও তিনি (১৩ উইকেট)। তামিমও নিয়েছেন ৩টি উইকেট। ফাহাদের শিকার ২ উইকেট।
ফাইনাল ম্যাচে টস জিতে বাংলাদেশকে আগে ব্যাটিংয়ের আমন্ত্রণ জানান ভারতের অধিনায়ক মোহামেদ আমান। ২০২৩ অনূর্ধ্ব-১৯ এশিয়া কাপে সেমিফাইনালে দেখা হয়েছিল বাংলাদেশ-ভারতের। সেবার ভারতকে হারিয়ে ফাইনালে উঠে শিরোপা জিতেছিল বাংলাদেশ। এবার দেখা হলো ফাইনালে। ১৭ রানে প্রথম উইকেট হারিয়ে বাংলাদেশ খেলতে থাকে তুলনামূলক রক্ষণাত্মক ভঙ্গিতে। পাওয়ার প্লেতে ১ উইকেটে ৪১ রান তোলে বাংলাদেশ।
প্রথম ১০ ওভার পেরোনোর পর কিছুটা চাপে পড়েন তামিমরা। ২৫ রানের ব্যবধানে ২ উইকেট হারিয়ে ১৮.৪ ওভারে ৩ উইকেটে ৬৬ রানে পরিণত হয় বাংলাদেশ। অধিনায়ক তামিম উইকেটে থিতু হওয়ার পরও ইনিংস বড় করতে পারেননি। ২৮ বলে ১ চার ও ১ ছক্কায় করেন ১৬ রান। কিরণ চোরমালের বল স্লগ সুইপ করতে গিয়ে ডিপ স্কয়ার লেগে যুধাজিত গুহর তালুবন্দী হয়েছেন তামিম।
চাপে পড়া বাংলাদেশকে এরপর টেনে তোলেন শিহাব জেমস ও রিজান হোসেন। চতুর্থ উইকেটে শিহাব ও রিজান করেছেন ৬২ রানের জুটি। বেশি আক্রমণাত্মক হতে গিয়েই শিহাব তার উইকেট হারিয়েছেন। ৩২তম ওভারের শেষ বলে শিহাব স্লগ সুইপ করতে যান আয়ুশ মাত্রেকে। এজ হওয়া বল লং অফে ধরেছেন আন্দ্রে সিদ্ধার্থ। ৬৭ বলে ৩ চার ও ১ ছক্কায় ৪০ রান করেন শিহাব।
এখান থেকেই ধস নামতে থাকে বাংলাদেশের ইনিংসে। রানরেটও কমতে থাকে। ১৯০ বাংলাদেশ করতে পারবে কি না, সেই শঙ্কাও জেগেছিল। শেষ পর্যন্ত বাংলাদেশ করেছে ২০০ ছুঁই-ছুঁই স্কোর। ৪৯.১ ওভারে ১৯৮ রানে গুটিয়ে যায় তামিমের দল। ৩ উইকেটে ১২৮ রান থেকে ১৯৮ রানে অল আউট, অর্থাৎ ৭০ রানে বাংলাদেশ হারিয়েছে শেষ ৭ উইকেট।
দলের হয়ে ইনিংস সর্বোচ্চ ৪৭ রান করেন রিজান। ৬৫ বলের ইনিংসে মেরেছেন ৩ চার। ৪৯ বলে ৩৯ রান আসে ফরিদ হাসানের ব্যাট থেকে। ভারতের হার্দিক রাজ, চেতন শর্মা ও যুধাজিত পেয়েছেন ২টি করে উইকেট।
ম্যান অব দ্য ফাইনাল ও ম্যান অব দ্য সিরিজ হয়েছেন ইকবাল হোসেন ইমন।
বড় মঞ্চে পারছেন না বড়রা; কিন্তু পাঁচ বছর ধরে ক্রিকেট দেখছে বাংলাদেশ উনিশের ‘দাপট’। গত চার যুব এশিয়া কাপে তৃতীয়বার ফাইনাল খেলেছে তারা। ২০১৯ যুব এশিয়া কাপে রানার্সআপ, ২০২৩ ও ২০২৪ এ চ্যাম্পিয়ন। মাঝে ২০২০ যুব বিশ্বকাপের চ্যাম্পিয়ন।
ঠিকানা/এনআই